উৎসবের ভ্রমণ কাহিনী। প্রতিযোগিতা-১৭। 10% লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজ- ২৩ বৈশাখ / ৬ মে | ১৪২৮, বঙ্গাব্দ/২০২২ খ্রিস্টাব্দ| শুক্রবার | গ্রীষ্মকাল |


আসসালামু-আলাইকুম।

কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব ঈদ পরবর্তী আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন কারণে এই ঈদটি আমার কাছে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর প্রধান একটি কারণ, আমার বাংলা ব্লগ এর বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম ঈদ উদযাপন। বহুদিন বাদে @rme দাদার কাছ থেকে ঈদ সালামি পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লেগেছিল। সেইসঙ্গে যখন জানতে পারলাম ঈদকে কেন্দ্র করে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তখন আনন্দের মাত্রা আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিবছর আমরা বন্ধুরা চেষ্টা করি ঈদ পরবর্তী সময়ে নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করতে। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে অংশগ্রহণকারী বন্ধুদের সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সবমিলিয়ে আমরা মাত্র ৯ জন।

20220505_150914.jpg
ট্রলারের সামনের অংশে সবাই একসাথে

20220505_145818.jpg
তরমুজ খাওয়া চলছে

এবারের ভ্রমণের আয়োজক/ উদ্যোক্তা ছিল বন্ধু রূপক। নদী ভ্রমণ আমার খুবই পছন্দের। আমার মত আমার বন্ধুদের কাছেও নদী ভ্রমণ অনেক ভালো লাগে। পদ্মা নদীতে যখন স্রোত থাকে না, এ সময় বড় ট্রলারে নদীতে ভ্রমনের মজা বলে বোঝানো যাবে না। পরিকল্পনা ছিল একটি ইঞ্জিন চালিত বড় ট্রলার ভাড়া করে দুপুর 12 টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করবো। এর মধ্যে থাকবে নদীতে গোসল, দুপুরে খাওয়া-দাওয়া আর বিকেলের নাস্তা। এছাড়া নদী তীরবর্তী বিভিন্ন হাটে বা বাজারে নেমে গিয়ে ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করা আমাদের ভ্রমণের একটা আবশ্যিক অংশ। পার্শ্ববর্তী একটি উপজেলার হাজিগঞ্জ নামক বাজারের দই এবং মিষ্টি খুবই বিখ্যাত। সেটা খাবার পরিকল্পনাও ভ্রমণের মধ্যেই ছিল।

20220505_145844.jpg
রোদ যখন বেশি মাঝি ভাই একা বসে আছে
20220505_180216.jpg
তরমুজ হাতে নিয়ে এক বন্ধুর ছবি তোলার জন্য পোজ

পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি, রূপক আর অন্য আরেক বন্ধু ঈদের দুই দিন আগে ট্রলার ঘাটে গিয়ে একটি ট্রলার ভাড়া করে আসি। সারাদিনের জন্য তেল খরচ বাদে ট্রলারের খাড়া 5000 টাকা হলেও আমরা একটি কৌশলে 3000 টাকা তে রাজি করাই। পরিকল্পনার সময় সবাই অংশগ্রহণ করতে চাইলেও ভ্রমণের দিন বিভিন্ন ব্যস্ততা আর কাজের অজুহাত দেখিয়ে অনেকেই আসতে পারল না। দুপুর 12 টায় ট্রলার ছাড়ার কথা থাকলেও আমরা ট্রলারে উঠলাম প্রায় আড়াইটায়। সঙ্গে দুপুরের খাবার হিসেবে নিলাম বাড়িতে রান্না করা খিচুড়ি, মুরগির মাংস, কোক, তরমুজ, চিপস আর মিনারেল ওয়াটার।

20220505_150940.jpg
দূরে দেখা যাচ্ছে হাজিগঞ্জ বাজার
20220505_150227.jpg
আমার একটি সেলফি

পদ্মা নদীর বুকে প্রায় এক ঘণ্টা একটানা ট্রলার চালিয়ে আমরা পৌঁছালাম একটা চর এলাকায়। যেখানে বালি জমা করে পাহাড়ের মত তৈরি করা হয়েছিল। ট্রলার থামিয়ে আমরা সবাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম একসাথে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পদ্মার জলে ঝাপাঝাপি করার পর ক্লান্ত হয়ে আবার উঠে পড়লাম ট্রলারের ছাউনির নিচে। ততক্ষণে পেটের মধ্যে ছুঁচোর কেত্তন শুরু হয়ে গেছে। যার যার মত প্যাকেট করা খিচুড়ি আর মুরগির মাংস শশা আর পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। খাওয়া শেষে বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাসে ট্রলারের ছাদে গিয়ে বসলাম সবাই। গন্তব্য এবার হাজিগঞ্জ নামে একটি বড় বাজার। সেখানে পৌঁছে এক নামকরা ময়রার দোকানের মিষ্টি খাওয়া হলো। সেই সঙ্গে অনেকেই ডিম সেদ্ধ, কলা, সিঙ্গারা যার যার পছন্দমত খাবারগুলো খেয়ে নিল। ঘোরাঘুরি শেষে আবার ফিরে এলাম ট্রলারের ছাদে। এবার শুরু হলো ছাদে বসে কয়েক বন্ধুর কার্ড খেলা। দুই তীরের মনমুগ্ধকর পরিবেশ, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, কার্ড খেলা সবমিলিয়ে কোথা দিয়ে যে সময় চলে গেল বুঝতেই পারলাম না। সন্ধ্যা নামতেই ট্রলার ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। আর এভাবেই দারুন একটি আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো এবারের ঈদ পরবর্তী ভ্রমণ।

আজকের মতো এতোটুকুই। আপনাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শোনার অপেক্ষায় রইলাম। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationLink
Sort:  
 2 years ago 

আপনাদের ভ্রমণ কাহিনি আমার কাছে সবচেয়ে বেস্ট মনে হয়েছে। আসলে খুব ইনজয় করেছেন ঈদ উপলক্ষে। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক, প্রতিনিয়ত যেন এভাবেই পার করতে পারেন প্রত্যেকটা ঈদের দিন। সেই দোয়া ও শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়। আপনিও হয়তো ছোটবেলা যেভাবে ঈদ আনন্দ করেছেন এখন সেভাবে করতে পারেন না। তাই চেষ্টা করা উচিত প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো ভাই আপনার ভ্রমণ কাহিনীটি পড়ে। আসলে ঈদের সময় আমি এরকম করতে গিয়েছিলাম।তবে আপনার ভ্রমণটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।প্রকৃতির মাঝে ভ্রমণ করেছেন। দেখে অনেক ভালো লাগলো। নদী আমার খুব ভীষণ পছন্দের। যাইহোক বন্ধুদের সাথে খুব সুন্দর একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন। এরকম একটি মুহূর্তে আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

আসলে বন্ধুরা থাকলে যে কোন জায়গাতেই ঘুরতে ভালো লাগে। আপনার মত নদী আমারও অনেক পছন্দের। তাই বেশিরভাগ ভ্রমণই নদীকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। ধন্যবাদ ভাই

 2 years ago 

সবমিলিয়ে ভালোই ছিল । বেশ উপভোগ করেছি।

 2 years ago 

আমার কাছেও অনেক ভালো লেগেছে। বেশ কয়েক বছর পর আবার এমন একটি ভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারলাম।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনাদের ভ্রমণ কাহিনী টা পড়ে বেশ মজা লাগল।দারুন সময় কাটিয়েছেন বন্ধুরা মিলে।এভাবে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে সত্যি অনেক ভালো লাগার কথা।আপনার ফটোগ্রাফি গুলো খুবই ভালো ছিল।তরমুজ খাওয়ার দৃশ্য টা বেশ ভালো লেগেছে।ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সঙ্গে আপনার ভ্রমণ কাহিনী শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আরো অনেক খাবার ছিল কিন্তু সেগুলোর ছবি তোলার কথা মনে ছিল না। আসলে গোসল করার পর প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে তখন আর ছবি তোলার মুড থাকে না। আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার উৎসবের ভ্রমণকাহিনিটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আর সেই সাথে অনেক আফসোস হচ্ছে। কেননা আমি ভ্রমণ করতে খুবই ভালোবাসি। আর তাই বারবার মনে হচ্ছিল আপনাদের সঙ্গের সাথী যদি আমিও হতে পারতাম তাহলে আমার কাছে খুবই ভালো লাগতো। এভাবে বন্ধু-বান্ধবসহ নৌকা ভ্রমণ সত্যিই অনেক ভালো লাগার বিষয়, যা আপনাদের দেখে উপলব্ধি করতে পারছি।অনেকটা আনন্দময় সময় এবং মনমুগ্ধকর পরিবেশ ভ্রমণ করতে পেরেছেন। ভাইয়া, আপনার বন্ধুদের সাথে আমাকেও ডেকে নিলে ভীষন ভালো লাগতো। আপনার ভ্রমণের দিন যে ফটোগ্রাফি গুলো করেছেন তা অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে, বিশেষ করে আপনার সেলফিতে আপনাকে নায়কের মত লাগছে। যাইহোক ভাইয়া, উৎসবের ভ্রমণ কাহিনী আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আপনারাও বন্ধু-বান্ধব মিলে এমন ভ্রমণের আয়োজন করে দেখতে পারেন। সত্যি বলতে কি বন্ধু থাকলে নদী, পাহাড় মাঠ-ঘাট সবজায়গাতেই ভালো লাগে। পরেরবার ভ্রমণ করলে আপনাকে জানাবো। চলে আসবেন সময় মত। শুভেচ্ছা রইল

 2 years ago 

ভ্রমণে বেশ মজার সময় কাটিয়েছেন দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে নৌকায় তরমুজ খাওয়ার দৃশ্যটি সেই রকম ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

প্রথম দিকে প্রচন্ড গরম ছিল। আর তরমুজটিও ছিল অনেক মিষ্টি। তাই এই গরমের মধ্যে তরমুজ খেতে খুবই ভালো লেগেছিল। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য

 2 years ago 

সারাদিনের জন্য তেল খরচ বাদে ট্রলারের খাড়া 5000 টাকা হলেও আমরা একটি কৌশলে 3000 টাকা তে রাজি করাই।

ভাইয়া,আপনাদের এই কৌশলটা আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে 😊এত দাম চাওয়ার পরেও প্রায় 2000 টাকা কমিয়ে ফেলেছেন ভাবতে অবাক লাগছে। ভাইয়া, সামনে যে প্রতিযোগিতাটা আসছে সে প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য অনেকেই আনন্দ ভ্রমণ করছে খুবই ভালো লাগেছে। ভাইয়া, আনন্দ ভ্রমণ করতে বিশেষ করে নদীর মধ্যে নৌকা দিয়ে অথবা ট্রলার দিয়ে ভ্রমণ করার মজাই আলাদা।আর ভাইয়া,আপনারা ভ্রমণে যেই খাবারের মেনু গুলো লিখেছেন সে খাবারের মেনু গুলোর মধ্যে বেশি সুস্বাদু মনে হয়েছে খিচুড়ি আর মুরগির মাংস তাই না?অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া,আপনাদের আনন্দ ভ্রমনের পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

খিচুড়ি আর গরুর মাংস আমার ব্যক্তিগতভাবে বেশি পছন্দ। তবে কয়েকজন হিন্দু বন্ধ থাকায় মুরগির মাংস রান্না করা হয়েছিল। খেতে কিন্তু চমৎকার হয়েছিল। তবে ছবি তোলার কথা মনে ছিল না। আপনারাও চেষ্টা করলে এভাবে ভ্রমণ করে দেখতে পারেন। আশা করি অনেক ভাল লাগবে। ধন্যবাদ আপু

 2 years ago 

খুব সুন্দর ছিল মূহুর্তগুলো। তবে তরমুজ খেয়েই তো দিন পার করলেন মনে হয়। হা হা। খিচুরি আর মাংসের দেখা পেলাম না। সত্যি বলতে এই সময় আস্তে আস্তে পদ্মার জল বাড়তে শুরু করে। আমি একবার হাজীগঞ্জ থেকে ফরিদপুর ট্রলারে এসেছিলাম। তখন যদিও পদ্মা আরো বড় ছিল। যাই হোক সব মিলিয়ে খুবি আন্দন করেছেন তা আপনার হাসি মুখ খানি দেখে বুঝতে পেরেছি। ভাল থাকবেন । প্রতি বছর এভাবেই অনন্দে কাটুট এই কামনা করি।

 2 years ago 

ভরা পদ্মায় নৌকা ভ্রমণ করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে। কারণ তখন পদ্মার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ অনেক বেড়ে যায়। সঙ্গে থাকে প্রচুর স্রোত। নিরাপদে ভ্রমণের জন্য এমন সময়ই উপযুক্ত। আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়েছেন ভাই,উপস্থাপনা এবং ছবি সবই বেশ ভালো ছিল।শুভ কামনা রইলো 🌺

 2 years ago 

আমার পোস্টে আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন

 2 years ago 

আপনি খুব চমৎকার একটি ভ্রমণ কাহিনী আমাদের মাঝে উপস্থাপন করলেন। বিশেষ করে নৌকার ভেতর তরমুজ খাওয়ার দৃশ্যটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আর আপনার সেলফি তো মারাত্মক সুন্দর 😍
সব মিলিয়ে একটি চমৎকার এবং তথ্যবহুল পোষ্ট উপস্থাপন করেছেন শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনার অসাধারণ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। বাস্তবে ভ্রমণটি আসলেই অনেক আনন্দের ছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32