মিশন যখন সিঙ্গারা খাওয়া। ১০ শতাংশ লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। পৃথিবীতে খাবার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পেছনে অন্যতম কারণ ক্ষুধা নিবৃত্তি। মানুষের যদি খাবার চাহিদা না থাকতো তাহলে হয়তো এই পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকাণ্ডই থমকে যেত। পিতা-মাতা তার সন্তানের মুখে খাদ্য তুলে দেবার জন্য কতইনা পরিশ্রম করে থাকে। এক কথায় পৃথিবীতে খাবারের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। আজ আমার এই পোষ্টের বিষয় এই খাদ্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ ভজন রসিক। বাইরের খাবার আমার খুবই পছন্দের। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তেলে ভাজা খাবারগুলো। যদিও জানা কথা এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর, তা সত্ত্বেও আমার কাছে কেন যেন এ ধরনের খাবারগুলোই অমৃতের মত লাগে। বেশ কিছুদিন বাড়িতে থাকার কারণে ঘরে বসে বসে যখন বোর হচ্ছিলাম তখন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম বাইরে থেকে ঘুরে আসার। আর আমার সবসময়ের ভ্রমণ সঙ্গী বন্ধু রূপক এক কথাতেই রাজি।

20230208_170807.jpg

মোটরসাইকেল নিয়ে দুজনে রাস্তায় বের হয়েই চিন্তা করলাম সিঙ্গারা খেতে যাব। আমাদের ফরিদপুর জেলা সদরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা সদরপুরে একটি মোটামুটি বিখ্যাত সিঙ্গারার দোকান আছে। ওই এলাকায় এ সিঙ্গারার দোকানটি খুবই জনপ্রিয়। আমিও এর আগে কয়েকবার খেয়েছি এই সিঙ্গারা। পাঁচ টাকা দামের ছোট ছোট সাইজের এই সিঙ্গারা তৈরি হয় আলু দিয়ে। ভেতরে থাকে খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির কিছু মুরগির মাংসের টুকরা। যে জন্য এর স্বাদ হয় অতুলনীয়। গরম গরম সিঙ্গারা সঙ্গে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, বিট লবণ আর সস। যার যেটা লাগে। আমাদের বাসা থেকে দোকানের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। মোটরসাইকেল নিয়ে যখন সেখানে পৌঁছলাম প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। দোকানে খুব একটা ভিড় না থাকলেও সিঙ্গারা বানানো চলছিল পুরো দমে। দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম তিনি দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ সিঙ্গারা তৈরি করেন। যা বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়।

20230208_170846.jpg

20230208_170837.jpg

আমরা দুজনে দোকানে বসেই ১৫ টি সিঙ্গারা সাবার করে দিলাম। আর বাসার জন্য নিয়ে আসলাম ১৫ টা। আসলে এত দূরে এসে দু'চারটা সিঙ্গারা খেলে কি আর হয়। দেখলাম সব কাস্টমারদের অবস্থাই আমাদের মত। যা খায় তার চাইতে বেশি বাসায় নিয়ে যায়। এই আধুনিক যুগে পন্য বিপননের অনেক সুবিধা। কেউ যদি তার তৈরি প্রোডাক্ট এর গুণগতমান আর কাস্টমারদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে। তাহলে তার আর নিজস্ব প্রচারণার দরকারই হয় না। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া আর মুখে মুখেই প্রচার হয়ে যায় চতুর্দিকে। এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে তার সৌখিনতা। তাইতো দূরত্ব এখন আর কোন ব্যাপারই নয়। একটুখানি তৃপ্তির জন্য মানুষ ছুটে যায় দূর দূরান্তে। তবে সব কথার শেষ কথা ভোগে সুখ নেই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। নিজের আত্ম তৃপ্তির জন্য আমরা যেমন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করি না ঠিক তেমনি মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত আমাদের আশেপাশের দরিদ্র অসহায় মানুষদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া। যাতে তারাও পেট ভরে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারে। সেক্ষেত্রে নিজের জন্য লক্ষ টাকা খরচ করাতেও দোষের কিছু নেই। আর যদি আপনার বাড়ির পাশের দরিদ্র পরিবারটি খাবার অভাবে রাতে না খেয়ে থাকে তাহলে বলতেই হচ্ছে মানুষ হিসেবে আপনি নিকৃষ্ট। আশা করি আমাদের সবার মধ্যেই একদিন শুভ বোধের উদয় হবে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারব।

20230208_170841.jpg

20230208_170612.jpg

আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationSadarpur, Faridpur
Sort:  
 last year 

আপনার এই পোস্ট পড়ে আমার হঠাৎ করে মনে আসলো কিছুদিন আগে মারুফের জিলাপি খাওয়ার কথা। সে হঠাৎ করে আমাকে বলছিল কিছুদিন ধরে আমার জিলাপি খেতে মন চাচ্ছে। আপনার আজকের এই সিঙ্গারা খাওয়ার বিষয়টা যেন ঠিক তেমনি মনে হল। তবে মাঝেমধ্যে ঝালমুড়িটা খেতে বেশি ইচ্ছে করে এভাবে। আর খাওয়া শুরু করলে জেনো শেষ হয় না। বারবার নিতে মন চায় খেতে মন চায়। আপনারা ১৫ টি খেয়ে সাভার করেছেন আবার ১৫টী নিয়ে গেছেন জেনে খুবই অবাক লাগলো।

 last year 

আসলেই কিছু কিছু খাবারের প্রতি মানুষের যেমন দুর্বলতা থাকে তেমনি কিছু কিছু খাবারের সুনামও বহুদুর ছড়িয়ে যায়। আশাকরি আপনার ঝালমুড়ি বা জিলাপির গল্প কোন একদিন শুনতে পাব। ধন্যবাদ।

 last year 

আসলে পৃথিবীতে এই খাবারের জন্য আমাদের এতো পরিশ্রম করা। যাক ২৫ কিঃমিঃ পারি দিয়ে সিঙ্গারা খেতে গিয়েছেন আর আমাদের চমৎকার একটি পোস্ট উপহার দিয়েছেন। আমাদের এদিকে এরকম সিঙ্গারা পাওয়া যায় তবে এর ভেতর আলু আর পেঁয়াজ ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একটা সিঙ্গারা খেলে আর খেতে ইচ্ছে করে না।

পাশের বাসায় কেউ যদি খাবারের অভাবে না খেয়ে রাত কাটায় তাহলে এই ব্যার্থতা আমাদের কাঁধে বর্তায়। সবার এই বিষয়টি সত্যিই বিবেচনা করা উচিত।
ভালো লিখনী ছিল ভাই।

 last year 

সিঙ্গারা এমনিতেই আমার খুব প্রিয় খাবার তার উপর সিঙ্গারা গুলো আসলেই অনেক সুস্বাদু ছিল। ধন্যবাদ ভাই সময় নিয়ে আমার সম্পুর্ন পোষ্টটি পড়ার জন্য।

 last year 

আপনার বাসা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সিঙ্গারা খেতে গেলেন। তবে অনেকে বাইরের খাবার খেতে অনেক পছন্দ করে। তবে আমিও বাইরের খাবার খেতে একটু পছন্দ করি। আসলে সিঙ্গারা গুলো পেঁয়াজ টমেটো সস বিট লবণ দিয়ে খেতে অনেক মজা। তবে দোকানে ৫০০ থেকে ৭০০ সিঙ্গারা বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তাহলে তো দোকানের কাস্টমার অনেক বেশি। আর সিঙ্গারা পোস্ট দেখে আমার জিভে জল এসে গেল। অনেক সুন্দর করে পোস্টে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 last year 

আমার মনে হয় প্রত্যেক এলাকাতেই এমন কিছু স্বনামধন্য দোকান বা খাবার থাকে। আশেপাশের সবাই যা এক নামে চেনে। এই সিঙ্গারার দোকানটিও ইদানিং বেশ নাম করেছে। তাই বিক্রিও অনেক বেশি। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

সিংগারার ছবিটি খুব পরিচিত দেখে পোস্টে ঢুকে দেখি আপনি রুপক ভাইয়ার ফ্রেন্ড সেই ফেরদৌস ভাইয়া খুব অবাক কান্ড। খুবই অবাক হয়ে পোস্ট পড়ে বুঝলাম।তবে আপনি যে সেই বন্ধু ফেরদৌস আজ ই বুঝলাম।😂 অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

এই রুপকের জন্য আর পারা গেলনা। কতবার বললাম নাম না লিখতে তাও প্রত্যেকটা পোষ্টেই নাম দিবেই। আর কাউকে বলবেন না যেন আপু হাহাহা।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 65900.16
ETH 3470.80
USDT 1.00
SBD 2.68