মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয় এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ নৈতিকতা ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আমার নিতান্তই কিছু ব্যক্তিগত ধারণা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। নৈতিকতা (ইংরেজি: Morality), যার অর্থ হলো ভদ্রতা, চরিত্র, উত্তম আচরণ। এটি মূলত উদ্দেশ্য,সিদ্ধান্ত এবং কর্মের মধ্যকার ভালো-খারাপ,উচিত-অনুচিত এর পার্থক্যকারী। নৈতিকতা হলো কোনো মানদন্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। উইকিপিডিয়ার দেয়া নৈতিকতার এই সংজ্ঞা আমাদের সবার কাছেই প্রায় এক ও অভিন্ন। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ শৈশবের দিকে তাকাই তাহলেই আমরা বর্তমান সময়ের সঙ্গে পার্থক্যটা সুস্পষ্টভাবে পৃথক করতে পারব। ৯০ এর দশকে যাদের শৈশব কেটেছে আমার মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে তারা প্রত্যেকেই ব্যথিত হবেন এবং একবাক্যে স্বীকার করবেন যে বর্তমান সময়ে নৈতিকতার চরম অধঃপতন হয়েছে। গুরুজনকে সম্মান প্রদর্শন শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান এবং খারাপ কাজে বাধা প্রদান এই ছিল মূলত তখনকার সময়ের সাধারণ নৈতিক জ্ঞান। ব্যতিক্রম যে ছিল না তা অবশ্য নয়। তবে ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরণ হতে পারে না।

20230124_161250.jpg

এই এক বিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ এবং নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। যে শিক্ষকরা ছিলেন জাতি গড়ার কারিগর এবং পিতা মাতার পরেই ছিল যাদের স্থান তারা আজ পদে পদে হেয় হচ্ছেন শিক্ষার্থীদের কাছে। বিভিন্ন কোটা ব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং অনিয়মের ফলে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা নীতিমালয় অসামঞ্জস্যতার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে আমার ধারণা। শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থী ধর্ষণ,আবার শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের লাঞ্ছনাও এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাস্তাঘাটে বা হাটে বাজারে বয়স্ক গুরুজনদেরকে আমরা যেমন সম্মান দেখাতাম এখন আর তেমন দেখা যায় না। প্রত্যেকেই তাদের নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।

20230124_173201.jpg

20230116_164936.jpg

পরিবার হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষের প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। সাধারণত মানুষ পরিবার থেকেই সমস্ত নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ, ও নৈতিকতার প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে বর্তমান সময়ে সেই পরিবার ব্যবস্থায় দেখা দিচ্ছে ভাঙ্গন। যৌথ পরিবার এখন আর দেখা যায় না বললেই চলে। পরকীয়া আর অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাইরাসের মতো প্রবেশ করেছে। আধুনিকতার নামে প্রতিনিয়তই আমরা স্বেচ্ছাচারী ও লাগামহীন হয়ে পড়ছি। যে ধর্মীয় অনুভূতি মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে ও নিয়ম-নীতি মানতে শেখায় তা ক্রমেই মানুষের মধ্য থেকে বিবর্জিত হচ্ছে। আধুনিকতার নামে আমরা যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি সে দিকে ধ্বংস ছাড়া আর কিছু নেই। মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অবক্ষয় কখনোই আধুনিকায়ন হতে পারে না। সবমিলিয়ে আমার কাছে মনে হয় আমরা যদি এখনই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারি জাতি হিসেবে আমাদের ধ্বংস খুব বেশি দূরে নয়। আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationDholarmor, Faridpur
Sort:  
 last year 

আপনার পুরো পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে যত দিন যাচ্ছে ততই আমাদের বর্তমান প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। সকল বিষয় তারা খুবই উদাসীন। বিশেষ করে পিতা-মাতা সহ বয়স্ক লোকদের কোনভাবে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করে না। আপনি অনেক গুলো বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন । আসলে সত্যি পরিবার হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার বাতিঘর। যৌথ পরিবার তেমন একটা দেখা যায় না। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসাদ আচরণ হচ্ছে তা সত্যি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। বিষয়গুলো সুন্দরভাবে আলোকপাত করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

 last year 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সময় নিয়ে সম্পুর্ণ লেখাটা পড়ার জন্য। বেশিরভাগ মানুষই এখন জেনারেল পোষ্ট পড়তে চায়না সেখানে আপনার এই কমেন্ট আমার কাছে খুবই ভালো লাগলো। শুভকামনা আপনার জন্য।

 last year 

আপনি আজকের যে পোস্ট করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো একটি টপিক নিয়ে করেছেন। আপনার প্রত্যেকটি কথাই পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। এটা কিন্তু আপনি ঠিকই বলেছেন পরিবার হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষের প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। আসলে সবাই এখন যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে শুধু ধ্বংসই হতে পারবে। এখন তো শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ভাইরাসের মতোই প্রবেশ করছে এটা কিন্তু একেবারে সত্যি। আপনার এক একটি কথা এমন ছিল যে সেগুলোর সাথে আমি একেবারেই একমত। পুরোটা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে।

 last year 

সময় দিয়ে আমার সম্পুর্ন লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আসলে নীতি বিবর্জিত মানুষ আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আশাকরি আমাদের দেশে আবার মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ফিরে আসবে।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বর্তমান সমাজে নৈতিকতার অধঃপতনের প্রধান কারণ হলো শিক্ষা ব্যবস্থার খারাপ অবস্থা। আগেকার দিনের শিক্ষকরা ছাত্রদের শাসন করতে পারতো। কিন্তু বর্তমান যুগে শিক্ষকরায় উল্টা ভয়ে থাকে। বাচ্চাদের শাসন তো দূরের কথা। তাছাড়া বর্তমান সময়ে মানুষের হাতে হাতে মোবাইল এই অধঃপতনের আরেকটি কারণ বলে আমার মনে হয়। যাই হোক খুব সুন্দর ভাবে বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। ভালো লাগলো।

 last year 

মতামত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু। মোবাইল এবং ইন্টারনেট যে এই অবক্ষয়ের অন্যতম কারন তাতে মনে হয় কারো কোন সন্দেহ নেই। তবে আমরা এগুলোর ভালো দিক গুলো বাদ দিয়ে খারাপ দিক গুলোতেই বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ধন্যবাদ।

 last year 

আপনি কিন্তু বেশ ভালোভাবে সবকিছু বুঝিয়েছেন এই পোস্টের মাধ্যমে যেগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি প্রত্যেকটি কথায়ই একেবারে বাস্তব এবং সত্যি বলেছেন। আসলে আমরা যদি নিজেদের শৈশবের দিকে তাকাই তাহলে এই আমরা বর্তমান সময়ের সঙ্গে পার্থক্যটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাবো। পুরোটা খুবই সুন্দর ভাবে লিখলেন। ভালোই ছিল তাহলে আপনার আজকের লেখার টপিক।

 last year 

আমার লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু। আসলে এ ধরনের লেখা কেও খুব একটা পড়তে চায়না। আপনারা দু একজন আছেন বলেই লেখার স্বার্থকতা। আবারো ধন্যবাদ।

বেশ ভালো একটা টপিকস এবং সুন্দর কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। এখনকার ছেলে মেয়েই বলেন বা শিক্ষক বলেন সবারই নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও দেখেছি কলেজের ছেলেপেলেরা শিক্ষকদের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। যেখানে আমাদের সময় আমরা কিছু কিছু শিক্ষকদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পর্যন্ত সাহস পেতাম না।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাই। কিছু কিছু কুলাঙ্গার শিক্ষকদের জন্য যেমন সমগ্র শিক্ষকদের প্রতি ছাত্র সমাজের আস্থা উঠে গেছে ঠিক তেমনি কিছু ছাত্র নামের কলঙ্ক আছে যারা সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার সম্মান হানি করছে। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64534.17
ETH 3150.15
USDT 1.00
SBD 4.01