আজ- ২৪ জ্যৈষ্ঠ / ৭ জুন | ১৪২৮, বঙ্গাব্দ/২০২২ খ্রিস্টাব্দ| মঙ্গলবার | গ্রীষ্মকাল |
আসসালামু-আলাইকুম।
কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। একটা গল্প বলি, এক রাজা গিয়েছেন নৌ ভ্রমণে। সঙ্গে ছিল রাজার মন্ত্রীবর্গ ও সভাসদরা। রাজার সহচর এবং মাঝি-মাল্লাদের ভিড়ে নৌকাটি ছিল একেবারে ভরপুর। বলতে গেলে প্রায় টালমাটাল অবস্থা। রাজার সাথে ছিল তার প্রিয় একটি কুকুর। নৌকাটি যখন গভীর সমুদ্রে হঠাৎ রাজার কুকুরটি নৌকার মধ্যে আনন্দে লাফালাফি শুরু করে দিল। কুকুরের লাফালাফিতে নৌকা যখন তখন ডুবে অবস্থা। রাজা এবং তার সহচররা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কুকুরটিকে শান্ত করতে পারছিলেন না। এদিকে নৌকায় পানি উঠতে উঠতে প্রায় ভড়ে যাচ্ছিল। এমন সময় নৌকার মাঝি বললেন রাজামশাই অনুমতি দিলে আমি কুকুরটিকে শান্ত করতে পারি। অনুমতি পাওয়া মাত্রই মাঝি কুকুরটির পা ধরে পানিতে ছুড়ে ফেলে দিলেন। উত্তাল সমুদ্রে পড়ে কুকুরটি হাবুডুবু খেতে লাগলো বেশ কিছুক্ষণ। হাবুডাবু খাওয়ার পরে কুকুরটি যখন সাঁতার কেটে নৌকার কাছে আসলো তখন মাঝি তাকে আবার তুলে নিলেন নৌকায়। দেখা গেল কুকুরটি এবার একেবারেই শান্ত হয়ে গেছে। আসলে বিষয়টা ছিল অনুভবের। কুকুরটি বুঝতে পারছিল না বিপদের গুরুত্ব। সমুদ্রের পানিতে পড়া মাত্রই বিপদ এর তীব্রতা আচ করতে পেরেছিল ফলে পরবর্তীতে উদ্ধার পাওয়ার পর সে শান্ত হয়ে যায়। যাই হোক এবার আমার কথায় আসি।
চোখ মানুষের অমূল্য সম্পদ। যার চোখ নেই তার কাছে বেঁচে থাকা আর না থাকা প্রায় সমান। বিষয়টা আমরা যতটা সহজে বলি তেমন ভাবে অনুভব করি না। গতকাল ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাম চোখের উপরের পর্দা ফুলে ঢোল হয়ে আছে। সেইসঙ্গে হালকা ব্যথা। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো চোখের পর্দায় কোন ফুসকুড়ি বা গোটা জাতীয় কিছু হয়েছে কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলাম সেরকম কিছু না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফোলাভাব যেন বাড়তেই থাকল। তাই আজ বাধ্য হয়েই চলে গেলাম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষের অল্প খরচে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বহির্বিভাগ চালু আছে। যেখানে মাত্র 10 টাকার একটি টিকিটের বিনিময়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকে। আমিও দশ টাকার বিনিময়ে একটি টিকেট সংগ্রহ করে পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট স্থানে কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি দীর্ঘ লাইন। প্রায় 40/50 জন মানুষ আমার আগেই সিরিয়াল দিয়ে বসে আছে। যেখানে প্রাইভেট চেম্বারে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভিজিট প্রায় 600 টাকা। সেখানে 10 টাকায় ভালো একজন ডাক্তার দেখাতে গেলে ভিড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমিও ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে বসে পড়লাম ওয়েটিং রুমে।
দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর যখন ওয়েটিং রুম প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল তখন ডাক পরলো আমার। ভিতরে গিয়ে দেখতে পেলাম এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। আমার সমস্যা বলা মাত্রই খসখস করে লিখে দিলেন একটি ব্যবস্থাপত্র। কি সমস্যা, কি জন্য এমন হলো, পরবর্তীতে কোন সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে কিনা কিছুই তিনি বললেন না। সত্যি বলতে এতগুলি রোগী দেখার পরে বেশি কথা বলার মানসিকতা না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই আমিও আর আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। দেখা যাক ওষুধে কতটুকু কি হয়। তারপর না হয় আবার যাবো।
বাড়ি ফিরে একটা এক্সপেরিমেন্ট করলাম। অন্ধকারে আসলে কেমন লাগে সেটা বোঝার জন্য বিছানায় শুয়ে তোয়ালে দিয়ে চোখ বেধে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গেই আমার চিরচেনা জগৎটা অন্ধকার হয়ে গেল। রাতে ঘুমিয়ে পড়লে চোখের সামনে যে অন্ধকার নেমে আসে এটা তেমন অন্ধকার নয়। সম্পূর্ণ সচেতন অবস্থায় আপনার চারিদিকে গভীর অন্ধকার। আপনি বেশিক্ষণ এই অবস্থা সহ্য করতে পারবেন না এটা লিখে দিতে পারি। বড়জোর দশ মিনিট, 30 মিনিট বা 1 ঘন্টা এরপর আপনি পাগলের মত হয়ে যাবেন। এই এক্সপেরিমেন্ট এর পরই এটা অনুভব করলাম। চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার। সবকিছু কালো আর কালো। সেখানে নেই অন্য কোন রং, কোন আকৃতি বা কোন গভীরতা। সরাসরি মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে এই সীমাহীন অন্ধকার। যদি কখনো ঘুম থেকে উঠে দেখেন জগত আপনার অন্ধকার হয়ে গেছে। চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না কেমন লাগবে আপনার। জাস্ট ইমাজিন।
অন্ধদের প্রতি সদয় হোন আর সময় থাকতে চোখের যত্ন নিন। আজকের মতো এতোটুকুই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
সত্যি তাই । যা হোক ডাক্তার দেখিয়েছেন দেখেন কি হয়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করুন। চোখ কিন্তু খুবি সেনসেটিভ বিষয়। চোখে নিশ্চই চাপ পড়েছে ইদানিং। যে কারনে সমস্যা হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।ভাল থাকুন আর প্রথমের গল্পটি কিন্তু দারুন শিক্ষনীয়। আমারও ইচ্ছে হয় কিছু মানুষ কে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিতে কারন ওরা যে বেশ লাফা লাফি করছে । ওদের শান্ত হওয়া দরকার। হা হা।
ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। যারা লাফালাফি করে তারা একসময় এমনিতেই শান্ত হয়ে যাবে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
চোখের সমস্যা যেটা অনেক মারাত্মক বিষয় এটা ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করে নেওয়ায় ভালো। কারণ চোখ অন্ধ হয়ে গেলে খুবই বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হবে। যাই হোক আপনার ডাক্তার দেখানোর এক্সপেরিমেন্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
জি ভাই ডাক্তার দেখিয়েছি বেশ কয়েকদিন হলো। তবে এখন কিছুটা কমে এসেছে। দেখাযাক আর দু এক দিন পরে কি হয়। ধন্যবাদ
ভাই প্রথমেই আপনাকে খুবই সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যদিওবা গল্পটি জানা ছিল তবুও আজ গল্পটি পড়তে খুবই ভালো লাগলো। ভাই চোখ হচ্ছে খুবই সেনসেটিভ জিনিস। আর তাই খুবই সতর্কতার সাথে চলতে হয়। চোখ এমন একটি জিনিস যা না থাকলে মানুষ কোন ভাবেই চলতে পারে না। চোখে রুমাল দিয়ে বেঁধে দিলে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যায়। আর তাই আপনার চোখের পরিণতি দেখে খুবই খারাপ লাগলো। তাই পারতপক্ষে চেষ্টা করুন ডাক্তারের দেয়া ঔষুধগুলো সময়মত খাওয়ার জন্য। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনার দ্রুত সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। আপনার দ্রুত সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করছি। ভালো থাকবেন।
কিছুক্ষণ চোখ বেঁধে থাকার পর সত্যিই অন্য রকম একটা অনুভূতি হয়েছিল। এমন একটা অনুভূতি যা বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। তখনই বুঝতে পারলাম অন্ধদের কষ্ট। আপনারা আছেন বলেই কমিউনিটিতে কাজ করা এত ভালো লাগে। ধন্যবাদ ভাই
প্রথমে বলি ভাই আপনার গল্পের কথা, বিপদ না আসলে তুই আসলে বুঝতে পারেনা। যতক্ষণ নিজে বিপদে না পড়ে ততক্ষণ বুঝার সম্ভাবনা। কুকুরটার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আপনি ঠিক বলেছেন আমাদের অমূল্য সম্পদ। যেখানে 600 টাকা গুনতে হয় সব জায়গায় সেখানে আপনি 10 টাকা দিয়ে দেখাচ্ছেন বিষয়টা আমার খুবই অন্যরকম লেগেছে। কয়েকদিন আগে আমিও একজন চক্ষু ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ভালোভাবে চোখের যত্ন নিন আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।
সরকারি হাসপাতাল তাই 10 টাকার টিকিট। ওই একই ডাক্তারের চেম্বারে গেলে হয়তো বা ৪০০/ 500 টাকার নিচে হবেনা. আপাতত কিছুটা কমেছে। দেখা যাক কতটা কি হয়।ধন্যবাদ ভাই
আপনার গল্পটা পড়ে ভালো লাগলো আসলেই কুকুরটা যখন বুঝতে পেরেছে তার বিপদ আছে তখন কিন্তু সে শান্ত হয়েছিল। আর ভাই সরকারি হাসপাতালগুলো এরকমই হয়। হয়তো 10 টাকা টিকেট দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো যায় কিন্তু তারা ভালোভাবে দেখেনা কোন রকম দেখে ছারতে পারলেই বাঁচে।
আমার ক্ষেত্রে এই মহিলা ডাক্তার কে কিন্তু বেশ ভালই মনে হয়েছে। যদিও তিনি আমাকে কিছুই বলেননি যে কি হয়েছে বা কি সমস্যা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার কথা ঠিক। ধন্যবাদ
মানুষের শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ অতি মূল্যবান। কিন্তু তার মধ্যে চক্ষু এমন একটা অঙ্গ যা না থাকলে পৃথিবীর আলো ছায়া দেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। আর বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া টাই অনেক ভালো। অসাধারণ ছিল আপনার অনুভূতি। তবে ডাক্তারখানায় গেলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। আবার যখন ডাক্তারের সামনে যাই তখন আর কিছু বলার মত প্রশ্ন থাকেনা। কারণ ওরা তো আমাদের মত রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, যাইহোক অসাধারণ ছিল আপনার অনুভূতিগুলো। আশা করি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। আমাদের সাথে আপনার মনের ভাবগুলো এত সুন্দর করে গল্প আকারে লিখার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
যার চোখ নেই শুধুমাত্র সেই এই কষ্ট সত্যিকারে উপলব্ধি করতে পারে। তবে আপনি ঠিক বলেছেন ডাক্তারের কাছে না গেলে এর ভোগান্তি সম্পর্কে বোঝা যায় না। ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন
সত্যিই তাই ভাই চোখ না থাকলে বেঁচে থাকা বেশ কঠিন আর অর্থহীন। যাক আপনি ডাক্তার দেখিয়েছেন। ঔষধ নিয়মিত খান আর দেখুন কি হয় ভালো না বুঝলে আবার যাবেন। চোখ নিয়ে অবহেলা করবেন না।
দোয়া রইল।
দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।
এখন কিছুটা কমেছে। আরো কয়েকদিন দেখব যদি পুরোপুরি সুস্থ না হই তাহলে হয়তো আবার যাবো। আপনিও ভালো থাকবেন ভাই। দোয়া রইল