মেছো ভূতের গল্প। ১০ শতাংশ লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। ভূতের গল্প আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি। আর ভূতের গল্প শুনতে পছন্দ করেনা এমন মানুষের সংখ্যাও কম। আমার দাদা বাড়ি গ্রামে। শৈশবে দাদা-দাদির কাছ থেকে অসংখ্য ভূতের গল্প শুনেছি। গ্রামে গেলে সন্ধ্যার পরে একমাত্র কাজই ছিল দাদার পাশে শুয়ে নানা রকম ভূতের গল্প শোনা। তখনকার পরিবেশে ছিল ভিন্ন রকমের। বিদ্যুৎবিহীন গ্রাম গুলোতে সন্ধ্যার পর ঘরে ঘরে জ্বলে উঠতো কুপি বাতি অথবা হারিকেন। সন্ধ্যা হতে না হতেই গ্রামগুলোতে নেমে আসত শুনসান নীরবতা। ঐরকম পরিবেশে গল্পগুলোকে বিশ্বাস না করার কোন কারণই ছিল না। ভূতে বিশ্বাস না করলেও ভয় ঠিকই পেতাম।

20221121_162430.jpg

আজ এমনই একটা গল্প শোনাবো আপনাদের। আমাদের গ্রামে নানা রকমের ভূতের বসবাস ছিল। কন্দকাটা, ভুলো, মেছো এমন নানা ধরনের ভূতের সঙ্গে পরিচিত ছিল গ্রামের মানুষ। আজকের গল্প মেছো ভুতে নিয়ে। এমন ভূত যা সচরাচর জলাশয়ের পাশে বসবাস করে আর মাছ খেতে খুব পছন্দ করে। তার এলাকার মধ্য দিয়ে যদি কেউ মাছ নিয়ে যায় তাহলে এই ভূত মাছ খাবার জন্য তার পিছু পিছু বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে। যাই হোক আমার দাদা বাড়ি থেকে একটু দূরেই ছিল একটা শ্যাওড় গাছ। তার অদুরেই ছিল ছোটকোল নামে একটি বড় জলাশয়। গ্রামে সাধারণত দুই দিন হাট বসে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই হাটে গ্রামের মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে। আর সন্ধ্যা নামতেই হাট শেষ হয়ে যায়।

20221116_165901.jpg

আদু নামে এক রাখাল ছিল আমার দাদা বাড়িতে। তিনি আমার দাদা বাড়িতে থাকতেন আর পরিবারের টুকটাক কাজকর্ম করে দিতেন। বহুকাল ধরে প্রচলিত ছিল হাটের পথে ওই শ্যাওড়া গাছটিতে একটি মেছো ভুতের আস্তানা আছে। যদিও এটা খুবই নিরীহ ধরনের ভুত। কারো কোন ক্ষতি করার রেকর্ড না থাকায় কেউ তেমন একটা ভয় পেত না। শুধু সন্ধ্যার পরে ওই রাস্তায় কেউ যাতায়াত করত না। আমার দাদা বাড়ির ওই রাখাল যাকে আমরা আদু কাকা বলে ডাকতাম তাকে একবার জিনে ধরেছিল, যে গল্প আপনাদের আগেই বলেছি। জিনে ধরার পর থেকে তার সাহস যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল। কোন কিছুতেই তেমন একটা ভয় পেতেন না। হাট থেকে টুকটাক বাজার সদাই তিনিই করতেন। তার ছিল আবার বিড়ি খাবার নেশা। দাদার ভয়ে বাড়িতে কখনো না খেলেও বাড়ির বাইরে গিয়ে সুযোগ পেলেই বিড়ি ধরাতেন। গ্রামের হাট যারা দেখেছেন তারা জানেন এই হাটগুলো সাধারণত ফাকা মাঠের মধ্যে বসে থাকে। ছোট্ট ছোট্ট অস্থায়ী দোকানপাটে সবাই পন্য সামগ্রী নিয়ে বসে আর বেচাকেনা শেষে আবার আগের মত ফাঁকা হয়ে যায় সবকিছু। যেদিন এর ঘটনা সেদিন আদু কাকা হাট শেষে একটি বড় বোয়াল মাছ কিনে বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। বাড়ি ফেরার জন্য প্রধান রাস্তা বাদ দিয়ে তিনি শ্যাওড়া গাছের ওই রাস্তাটি দিয়ে রওনা হলেন কারণ এই রাস্তা কিছুটা শর্টকাট তাই সময় কম লাগে। সন্ধ্যা গড়িয়ে তখন চারিদিকে বেশ গাড়ো অন্ধকার হয়ে গেছে। শ্যাওড়া গাছের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ তার মনের মধ্যে কুহু ডাক থেকে উঠল। মনে মনে ভাবলেন এ রাস্তাতে না আসলেই ভালো হতো। দূর থেকেই অন্ধকারের মধ্যে শ্যাওড়া গাছের নিচে যেন আরো বেশি গাঢ় অন্ধকার মনে হচ্ছিল।....

20221114_162736.jpg

বাকি অংশ পরবর্তী পর্বে সমাপ্ত। আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationGoldangir char, Faridpur
Sort:  
 2 years ago 

মেছো ভূতের গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আপনাদের গ্রামে তো দেখছি ভূতের খুবই নাম ডাক রয়েছে। কন্দকাটা, ভুলো, মেছো এরকম অনেক ভূতের নাম আজকে আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ভূতের গল্প পড়তে বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে। বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চারা তাদের দাদা, দাদু ,নানা, নানুর কাছ থেকে শুনতে একটু বেশি পছন্দ করে। আপনার পরের পর্বটি দেখার অপেক্ষায় থাকবো। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মাঝে পরের পর্ব নিয়ে উপস্থিত হবেন।

 2 years ago 

একসময় ভূত বসবাসের জন্য দারুন উপযুক্ত পরিবেশ ছিল আমাদের গ্রামে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূত গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ধন্যবাদ ভাই আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য।

 2 years ago 

ভূত বলতে আসলে কিছু হয়না, তবে জিন রয়েছে। কিছু কিছু জিন মানুষের বেশ ক্ষতি করে বসে। আমি নিজেও একবার এরকম বাস্তবতার শিকার হয়েছিলাম। যাক আপনার ঐ কাকা এই গাছের নিচ দিয়ে এসে ঠিক করেননি। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি ঘটে। ধন্যবাদ ভাই চমৎকার গল্পটি উপস্থাপন করার জন্য।

 2 years ago 

আমি যদিও ভূতে বিশ্বাস করিনা কিন্তু ভূতের গল্প পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। আশা করি বাস্তব গল্পটি থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না।

 2 years ago 

এটা কি হলো,কি মনোযোগ টা দিয়েই না পড়ছিলাম। আমি তো খেয়ালেই করিনি,আপনি এখানেই শেষ করে দিবেন।যদিও ভূত বলে কিছু নেই তবে জিন আছে তা জানি।আর এরা মাছ আর মিষ্টি পছন্দ করে।বোয়াল মাছ নিয়ে কি হলো😜।

 2 years ago 

ভূতের গল্প গুলা এমনই হয় সবচাইতে আকর্ষনীয় জায়গাতে এসে শেষ হয়ে যায় হাহাহা। তা না হলে কে আর পরের পর্ব পড়তে আসবে বলুন।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া ভূত বলতে কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই। আসলে ভাইয়া ছোটবেলার দাদা ও দাদীর পাশে বসে এভাবে গল্প শোনা সবারই কাজ ছিল। আর আপনার কাকার গাছের নিচে বসা ঠিক হয়নি।দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জনসংখ্যা বৃদ্ধির অব্যাহত চাপে দিন দিন ভূতগুলো সব মনেহয় বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমি একটু ঝামেলায় আছি, ঝামেলা কমলেই লিখে ফেলব বাকিটুকু। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

এইভাবে কেউ শেষ করে। কেবল গল্পের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম আর আপনি ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন
আগেকার দিনে এরকম ভূতের গল্প আব্বুর কাছে অনেক শুনেছি। সন্ধ্যার সময় কারেন্ট গেলে আমরা সবাই গোল হয়ে বসতাম আর আব্বু বিভিন্ন ধরনের ভূতের গল্প শুনাতো। খুব ভালো লাগতো শুনতে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ভূতের গল্পগুলো এমনই হয় আপু, আমার কিচ্ছু করার নেই। কিছুটা আকর্ষন না রাখলে কে আর পরের পর্ব পড়তে আসবে বলুন। তবে ভূত যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে তেমনি ভূতের গল্প গুলোও মনে হয় সব হারিয়ে যাচ্ছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 64439.19
ETH 2775.41
USDT 1.00
SBD 2.64