হারিয়ে যাওয়া স্কুলজীবন (১০% বেনিফিশিয়ারি লাজুক খ্যাকের জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

সময় বয়ে যায়, শুধু রয়ে যায় স্মৃতি।আর সেই স্মৃতির সাথে জড়িয়ে থাকে হাসি,কান্না,মায়া,ক্ষোভ।

IMG_20220822_083442.jpg

যখন স্কুল লাইফে ছিলাম,বুঝি নাই যে কোনো একসময়ে এসে স্কুললাইফটাকে এতো তীব্রভাবে মিস করতে হবে।ক্ষানিকটা সময় মুড অফ করে স্কুলে বসে কাটানো স্মৃতিগুলো চারণ করতে হবে। তখন তো চাইতাম,কবে এসব স্কুলের প্যারা থেকে বের হতে পারবো।ভালোই লাগতোনা যে!

এখন এসে মনে হয়,হয়তোবা সেই অবুঝ চাওয়াটা এক প্রকার পাপই ছিল।যদিও আমার চাওয়া কিংবা না চাওয়ায় কিছু যাবে আসতো না,স্কুল লাইফ তো শেষ হতোই।তবুও নিজে থেকে চাওয়াটাই যেন এখন অপরাধ বলে মনে হয়।এখন তো আর চাইলেও সম্ভব নয়,লাইফটাতে ফিরে যাওয়া।

IMG_20220822_083626.jpg

কলেজে কিছু কাজের জন্য এস,এস,সি এক্সামের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট প্রয়োজন ছিল।সেটা তোলার জন্যই সেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম।
ভেতরে গিয়ে দেখি পালটে গেছে অনেককিছুই।দুই একটা রুম হয়েছে,একটা অতিরিক্ত কম্পিউটার ল্যাব হয়েছে,বাগানের চারপাশে বাউন্ডারি দেয়া হয়েছে।

IMG20220810112702.jpg

যখন আমি গিয়েছিলাম তখন কেরানি স্যার কোনো এক কাজে বাহিরে গিয়েছিলেন।তো তার জন্য অপেক্ষা করার সময় টুকুতে আমি স্কুলটাতে একবার চক্কর দিয়েছিলাম।
IMG_20220822_083738.jpg
এইটা অফিস রুম।এটা মূলত অফিসিয়াল কাজের জন্য,এখানে কেরানি আর মাঝে মাঝে হেড ম্যাডাম বসেন।কতই না স্মৃতি আছে এই রুমে।স্কুলের পরিক্ষা শেষে মার্কশীট নিতে গিয়ে এ ওর গায়ের ওপর ঢলে পড়তো, ও ওর গায়ের ওপর।কে আগে নেবে তা নিয়ে কথা কাটাকাটি হতো।মাঝে মাঝে কেরানি অতিষ্ট হয়ে উঠেই যেতো।আবার ভিড় কমানোর জন্য কখনো কখনো শিশির স্যার লাঠি নিয়ে এলোপাতাড়ি মাড় শুরু করে দিতেন।

IMG_20220822_081943.jpg

আমাদের স্কুলটার সেপের কথা বলতে গেলে বলতে হবে কিছুটা O সেপ।তো বাইরে একটা বড় মাঠ তো আছেই আর ভেতরে একটা ছোট মাঠও আছে।ছোট মাঠটাতেই পিটি করানো হতো।ছোট মাঠটার গেইটে তালা লাগানো জন্য ভেতরে ঢুকতে পেরেছিলাম না,গেটের বাইরে থেকেই দুই তিনটা ছবি তুলেছিলাম।
IMG_20220822_083558.jpg
সবচেয়ে প্যারা দেয় পিটির সময়ের স্মৃতিগুলো।পিটি করবোনা জন্য একবার এমনি একটা দরখাস্ত লিখেছিলাম আর তাতে বলেছিলাম,শ্বাসকষ্টের জন্য ডাক্তার ধুলাবালিতে যেতে নিষেধ করেছেন আর তাই পিটিতে যেতে পারবো না কিছুদিন।প্রিয়তোষ স্যার সেই দরখাস্ত পড়ার পর থেকে আমার নামই দিয়েছিলেন শ্বাসকষ্ট।
পিটিতে গেলে সবার উদ্দেশ্যেই থাকতো বকুল গাছের ছায়াত নিচে দাঁড়ানো।আর সোনার বাংলা গাওয়ার সময় হুদাই তাল মেলানো।
একপাশে দাড়াইতো মেয়েরা আর একপাশে ছেলেরা।কখনো কখনো দেখা যেতো দুই একটা নিব্বা-নিব্বি পিটি করা ছেড়ে চোখে চোখে যুদ্ধ শুরু করে দিতো।আবার কোনো কোনো ছেলে আজাইরা টিস করতো আর তারপরে স্যারের হাতে বেদম পিটানি খেতো।
IMG20220810112629.jpg
আমরা যখন ছিলাম,তখন এই স্টোরটা ছিলনা।নতুন করা হয়েছে।ভিতরে কি আছে না আছে সে সম্পর্কে জানা নেই।তবে আমি মনে করি,এটা অনেক ভালো একটা উদ্দ্যেগ।
IMG20220810113436.jpg
এই ছবিটা ভাল করে খেয়াল করলে দুইটা কবর দেখতে পারবেন গ্রিলের ভেতরে।আমাদের স্কুলের প্রথম হেড টিচার জনাব মোহাম্মদ আলী স্যার এবং তার সহধর্মিণীর কবর আছে ওখানে।
IMG_20220822_082004.jpg
এন্ড ফাইনালি,লেটস টক এবাউট মাই ক্লাসরুম।এই রুমের স্মৃতি কখনো ভোলা সম্ভব না।ফার্স্ট বেঞ্চার ছিলাম।যত দেরি করেই যাই না কেন,ফার্স্ট বেঞ্চে একটা সিট ফাকা থাকতোই।
প্রথম ক্লাস নিতে আসতো এরোম স্যার।নাম প্রেজেন্ট করার সময় যারা আগেরদিন মিস দিতো,তাদের কনুইতে ডাস্টার দিয়ে কি পেটানটাই না পিটতো।আরিফ স্যার বায়োলজি ক্লাস নিতে এলে,পুরো ক্লাস চুপ থাকতো।অবশ্য পড়ার টানে না,স্যারের ভয়েই।ওদিকে কেমিস্ট্রি ক্লাস হতো মাছের বাজার।শিমু স্যার ছিলেন খুব নরম আর শান্ত মানুষ।আর সেই সুযোগ নিয়েই সবাই চিল্লাচিল্লি করতো।
কাগজ কুটিমুটি করে এর ওর গায়ে মারতো আবার কখনো ঘুতা দিয়ে ভালো মানুষের মতো বসে থাকতো।
টিফিনের সময় এ ওর বক্স থেকে মাংস তুলে খেতো কিংবা ডালের বোতলটা নিয়ে নিজের ভাতে ঢেলে নিতো।

IMG20220810113354.jpg

আপনি আমি চাইলেও এই কাজগুলো আর করতে পারবনা।করতে গেলে বাধা আসবে ম্যাচিউরিটি থেকে।এখন তো বড় হয়ে গেছি,এগুলো কি আর মানায়!

জীবনে কি একবারই মৃত্যু আসে?আমার কিন্তু মনে হয় না।এই যে স্কুল লাইফটা হারিয়েছি,এটাও কিন্তু এক প্রকার মৃত্যু। চাইলেও ফিরে যেতে পারবেন না।নিজের শৈশব হারিয়েছি,এটাও মৃত্যু।

যখন সময় ছিল তখন বুঝিনি,যখন বুঝি তখন দেখি সময় নেই।

cc.@farhantanvir
Shot on. Oppo f19 pro
Location
Date.22/08/22

Sort:  
 2 years ago 

আপনার স্কুল জীবনের পোস্টটা পড়ার সময় আমার স্কুলের কথা অনেক মনে পড়েছিল ভাই। খুবই সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন আসলে ভালো লাগলো পোস্ট টি পড়ে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা 😊

 2 years ago 

বাহ,আপনার স্কুলটি খুবই সুন্দর এবং মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো।আসলে যেটি হারিয়ে যায় তা আর ফিরে আসে না কিন্তু স্মৃতি থেকে যায়।আমার কাছে আপনার স্কুলের সবুজ প্রকৃতি অনেক ভালো লেগেছে, ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

হ্যাঁ, সেই ১৯১২ সালে তৈরি হয়েছে বলে কথা।পুরানো তো হবেই।

 2 years ago 

ভাইয়া স্কুল জীবনের কথা মনে পড়লে অনেক খারাপ লাগে। আমি কিছুদিন আগে স্কুল জীবন হারিয়ে ফেললাম ভাইয়া। স্কুল জীবনে বন্ধুদের সাথে অনেক আনন্দ আড্ডা দেওয়ার সময় থাকে সেই সময় অনেক ভালো লাগে ভাইয়া। এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমারো খুব বেশিদিন হচ্ছেনা।২১ সালে এস,এস,সি দিয়েই তো হারিয়ে ফেলেছি সেই সোনালী দিনগুলো।

 2 years ago 

হারিয়ে যাওয়া স্কুলজীবন এর কথা মনে হলে অনেক কষ্ট হয়‌ কারণ স্কুল জীবন মানে হাসি তামাশা এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডার জীবন আসলে স্কুল জীবনে সবাই অনেক মজা করে থাকে। তার মধ্যে আমি একজন বিদায় অনুষ্ঠানের দিন আমি খুব কেঁদেছিলাম। আর দেখছি ভাই আপনিও খুব চমৎকার ভাবে স্কুল জীবন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভালোবাসা নিবেন ভাই 😊🖤

 2 years ago 

স্কুল জীবনের সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে কতই না সুন্দর ছিল সেই মুহূর্তগুলো ।সত্যিই সেই মুহূর্তগুলো এখন মাঝে মাঝে খুবই মনে পড়ে। অনেকদিন বাদে পুরনো স্মৃতি মনে করে দিলেন ভাই।

 2 years ago 

মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করাও দরকার তো!!😁

 2 years ago 

ছোট বেলার স্কুল জীবন খুব মিস করি। কতো খেলাধূলা কতো স্মৃতি মনে পড়ে।স্কুল জীবন ই তো আমাদের প্রথম ধাপ লেখাপড়া করার জায়গা।আপনার লেখা পড়ে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

 2 years ago 

মিস করাই স্বাভাবিক ভাই।সে সময়গুলো তো আর ফিরে যাওয়া যাবেনা।

 2 years ago 

আসলেই ভাই এই স্কুল জীবন কখনও ভোলা যায় না। আপনার পোস্ট পড়ে খুবই আবেগী হয়ে গেলাম। দারুণ কিছু ফটোগ্রাফি ও করেছেন। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট টি।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাই,এ স্মৃতিগুলো আজীবন অন্তরে গেথে থাকবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59508.12
ETH 2603.38
USDT 1.00
SBD 2.39