দাদি যে আর নেই

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

গত পোস্টে দাদিকে নিয়ে লিখেছিলাম।লিখেছিলাম তার সাথে আমার কিছু স্মৃতি নিয়ে,লিখেছিলাম তার স্বভাব আর কিছু কাজকর্ম নিয়ে।আর গল্পের শেষে বলেছিলাম যে হঠাৎ দাদিকে নিয়ে লেখার পিছনে একটি কারণ আছে।হ্যাঁ, সেই কারণটি হলো আমার দাদি আর বেচে নেই।গত শুক্রবার সকাল ৬ টা ২৬ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাদি মারা গেছেন।

একদম সুস্থ ছিলেন।পর্যাপ্ত বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন।এমনকি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলাও চাচু গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দাদিকে একদম সুস্থ দেখে এসেছিল।কিন্তু হঠাৎ কিজে হয়েছিল,রাত ১১ঃ৩০ নাগাদ ঘর থেকে বের হয়ে পাশের বাড়ির নাতি মানে আমার ভাই তাকে ডাক দিয়ে নাকি বলেছিল,বাবা আমাক বাচা।ভাইয়া অবস্থা খারাপ বুঝে সাথে সাথে বাবাকে ফোন দেয় আর বাবা বলে কোনো গাড়িতে করে আমাদের এখানে হাসপাতালে আনতে।কথা শেষে বাবাও হাসপাতালে গিয়েছিল এবং ৩০/৩৫ মিনিটের ভেতর দাদিকে নিয়ে অই ভাইও চলে এসেছিল।আর এখান থেকে বাবার সাথে আমার বড় ফুফু এবং মেজো ফুফুও গিয়েছিল।আমি অবশ্য তখন ঘুমে ছিলাম।একসময় আম্মু আমায় ঘুম থেকে তুলে সব বললো এবং হাসপাতালের দিকে যেতে বলেছিল।আমাদের এখানে ডাক্তার দেখার পর জানিয়েছিলেন যে তার হার্ট এটাক হয়েছে এবং চিকিৎসা এখানে করা যাবেনা, বগুড়া নিয়ে যেতে হবে।এখান থেকে গাড়ি ছাড়ার আগেই আমি পৌছে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। আমায় দেখে দাদি বলেছিল,ভাই তুই আসছিস।উত্তর না দিয়ে সরাসরি বলেছিলাম কি অসুবিধা হচ্ছে দাদি?দাদি বলেছিল কিছু না ভাই,আমি ঠিকই আছি।
দাদির সাথে ওটুকুই ছিল আমার শেষ কথা।
ইচ্ছা ছিল তাদের সাথে বগুড়া যাওয়ার কিন্তু গাড়িতে জায়গা না থাকায় আর যাইতে পারিনি।গাড়ি ছেড়ে দিলে আমি রিক্সা নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছিলাম।ফিরে এসে আমি ঘুমিয়ে গেলেও আম্মু একটুও ঘুমায়নি।তখন বাজে ৬ঃ৩০ এর মতো,হঠাৎ আম্মুর হৃদয়বিদারক কান্নার আওয়াজ এসেছিল কানে।চোখ খুলে দেখি ঘরের ভেতোর মানুষ,আম্মুকে সামলাচ্ছে।বুঝে গেলাম দাদি আর নেই।নানান রকম কথা ভেবে নিজেও আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।
কিছুক্ষন পর বাবা আমায় ফোন করে বলেছিল যে,আমরা এম্বুলেন্স নিয়ে যাচ্ছি,তুমি কাফনের কাপড় আর অন্যান্য জিনিস সব কিনে ফেলো।তারপর হুজুরকে সাথে নিয়ে আমি সব কিনে এনেছিলাম।একাত ঘন্টা পর এম্বুলেন্স বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছিল এবং সাথে সাথে কান্নার রোল পড়ে গেছিল।
IMG20211001090220.jpg

মিনিট দশেক এখানে থাকার পর এম্বুলেন্সে করেই আমরা দাদিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম।সেখানেও লোকের ভিড় ছিল।গ্রাম তো,তাই সেখানে লোকের ভিড়ও বেশি ছিল এবং আর্তনাদও বেশি।আমার দুই ফুফাতো ভাই ঢাকা থেকে আসবে জন্য জানাজার সময় নেয়া হয়েছিল বাদ আসর।এদিকে কবর খোড়া, কবরের ফ্রেম বানানো দাদিকে গোসল করানো সব কাজ সেরে ফেলা হয়েছিল।
IMG20211001123851.jpg
কবর খোড়া শেষে জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য সবাই মসজিদে গিয়েছিলাম।এরই মাঝে মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল।সুন্নত চার রাকাত নামাজ পরেই সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বাড়ি এসে বডি উঠান থেকে বারান্দায় তুলেছিলাম এবং কবরে যাতে পানি না ঢোকে সেজন্য কবরের উপর টিন আর ত্রিফলা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম।
IMG20211001140247.jpg

আল্লাহর অশেষ রহমতে ঘন্টাখানেকের মাঝেই বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল এবং ঠিক সময়েই জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।প্রায় তিনশো লোকের উপস্থিতিতে জানাজা হয়েছিল।তারপর মাটি দিয়ে এসে সামান্য দোয়া করে সবাই বাড়ি চলে গিয়েছিল।আর আমরা সবাই মিলে পারিবারিক কিছু সিদ্ধান্ত এবং আলোচনা করেছিলাম।
দুনিয়ার জীবন ছেড়ে সবাইকেই যেতে হবে।আর সেই জীবন অনন্তকালের। তাই এখানে নিজের আখের গুছিয়ে নিন যাতে পরকালের জীবন সুখে শান্তিতে কাটাতে পারেন।

cc. @farhantanvir
Shot on. Oppo f19 pro
Location
Date. 05/10/21

Sort:  
 3 years ago 

আপনার দাদির জন্য দোয়া করি। আল্লাহ আপনার দাদিকে জান্নাত দান করুক আমীন। আপনার দিনটি খুবই কষ্টে গিয়েছে পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম।

 3 years ago 

জি,ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য🥰

 3 years ago 

সত্যি বলতে আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত কোন ভাষা আমার জানা নেই তবে একটাই দোয়া করতে পারি আপনার দাদি যেন জান্নাত বাসী হোন। আমিন।।

 3 years ago 

আমিন😥

সবকিছুই পোস্টে আনার অর্থ আমি খুজে পাইনা।

 3 years ago 

😟দুঃখিত

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57346.65
ETH 3107.45
USDT 1.00
SBD 2.40