আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২০ || আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি(১০% লাজুক খ্যাকের জন্য)
অন সাইড লাভ,এটাই আমার প্রথম প্রেম তথা শেষ প্রেমের ফিগার।
made with. Canva
সাল ২০২১,এসএসসি পরিক্ষার্থী আমি।সেদিনও অন্য দিনগুলোর মতোই কেমিস্ট্রি প্রাইভেটে গিয়েছিলাম।সবই আগের মতোই ছিল,শুধু পরিবর্তন এসেছিল ছাত্রদের পাশাপাশি তিনজন ছাত্রী যুক্ত হয়েছিল ওই ব্যাচে।
রুমে ঢুকে আমি কোন বেঞ্চে বসবো,সেটা এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবছি।চোখ পরলো বোরকা পরে থাকা ওই তিন রমনীর মাঝের জনের চোখের দিকে।সেকেন্ড দুই তিনেক আমার চোখ দুটো থ মেরে গিয়েছিল।নিজের চোখ ঝারা দিয়ে অন্য দিক আর না তাকিয়ে ওই মেয়ের পাশের বেঞ্চটাতেই বসেছিলাম আরেকজনকে সরে দিয়ে।মানে,শয়তান তখন কেবোল ভর করেছে আমার ভেতর।
ভাই লেকচার দিচ্ছে,আমি শুনছি।কিন্তু আমার চোখ দুটো যেন খানিকক্ষন পর পরই আমার নিজের সাথে যুদ্ধ করে আপন শক্তিতে ওই মেয়ের দিকে যাচ্ছিলো।প্রথম দিনটা এভাবেই উনিশ বিশ করতে করতেই কেটে গিয়েছিল।
বাসায় এসেও রাতের বেলা কেনজানি ওই দুই চোখের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়েছিলাম।পরেরদিন সবার আগেই প্রাইভেট গিয়েছিলাম আর ঠিক আগের বেঞ্চটাতেই বসেছিলাম।তারা তিনজন সময় মতো এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম ওই চোখ দুটো দেখার পরেই যেন আমার বুকের ভেতর ধরাস ধরাস করতে শুরু করেছিল।গতদিনের মতো সেদিনও ঠিক এভাবেই কেটেছিল।
সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেছে তখন।এতোদিন শুধু তাকে দেখেছি কিন্তু সত্য বলছি তার বিষয়ে একটা খোজ-খবরও কোথাও থেকে নেয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করিনি।এমনকি নামটাও জানতাম না।
বন্ধু রাফি আর নাসিমের সাথে শেয়ার করেছিলাম এই নিয়ে।ওরা একটু একটু সাহস দিলো তাই একদিন কেমিস্ট্রি প্রাইভেট থেকে পিছু নিয়ে ফিজিক্স প্রাইভেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম।এটাই ছিল তার পিছে প্রথম সময় নষ্ট করা।
সাহস বাড়লো আর সাথে বাসনাও।নাম জানলাম,বাসার ঠিকানা জানলাম,কখন কোন প্রাইভেট পড়ে তাও জানলাম।আমি এগুলো করে ভেবেছি আমি অনেকটা এগিয়েছি,অথচ আমায় না জানিয়ে রাফি আর নাসিম ঘটনা আরো গভীরে নিয়ে গিয়েছিল।
ওই মেয়ের ফেসবুক আইডি ওরা কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিজেদের ফেইক আইডি দিয়ে ওর সাথে কথা বলেছিল।একটা সময় কথা বলতে বলতে প্যাচে ফেলে মেয়েটাকে বাধ্য করায় যাতে আমার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে।অথচ,এদিকে আমি জানিই না এতোকিছু হয়ে গেছে।করনার জন্য প্রথম লকডাউন দিয়েছে তখন।এপ্রিলের ৯ তারিখ,দিন ছিল শুক্রবার।সকাল বোধয় ৯/১০ টা বাজে তখন।রাফি ম্যাসেজ দিয়ে বললো, ওই মেয়ের আইডি এটা আর ওকে এই মুহুর্তেই রিকোয়েস্ট দে,নয়তো পরে এক্সেপ্ট করবেনা।
ভয়ে ভয়ে রিকোয়েস্ট দিয়ে দুইটা মিনিট অপেক্ষা না করতেই নোটিফিকেশন এলো,.....এক্সেপ্টেড ইওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।সত্যি বলছি ভাই,ঘড়ি ধরে পাক্কা ৮ মিনিট আমি ম্যাসেজ দেইনি এই ভেবে যে হয়তো ও আগে ম্যাসেজ দেবে,কারণ আমি তো জানতাম ও নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে ফ্রেন্ড হয়েছে।কলকাঠি যে রাফি নাসিম নেড়েছিল তা তখনো ছিল আমার অজানা।
নাহ,ম্যাসেজ দিলোনা।নিজের ভেতরের ভয়কে গুলি মেরে একটা স্মাইলি আমিই পাঠিয়েছিলাম।ম্যাসেজ দেয়া আর তড়িৎ গতিতে রিপ্লাই এলো,একটা হেল্প করতে পারবে?
ওকে হেল্প করার দরুনে আমি জানতে পারি,রাফি আর নাসিম বলেছিল ওই আইডি নাকি আমার আর আমিই ফেইক আইডি দিয়ে ওর সাথে কথা বলেছিলাম এবং ও শুরুতে ভেবেছিল এটা ওর কোনো কাজিনের আইডি যে ওর সাথে ফাইজলামি করছে।এসব শোনা মাত্রই আমি ওকে সব সত্য বলেছিলাম এবং এও বলেছিলাম যে,তোমায় আমার ভাল্লাগে।ও সাথে সাথে বলে দিয়েছিল,তুমি বেশ ভালো ছাত্র এবং হয়তোবা তোমাকে নিয়ে তোমার বাবা-মায়ের অনেক আশা।এসব বাজে কাজে সব নষ্ট করিওনা।আর হ্যাঁ, আমায় আর কখনো নক দেবেনা।
প্রশ্ন করা,উত্তর দেয়া এসব সেদিন চলেছিল রাত ১১ টা ৪৭ পর্যন্ত।ও তো চলে গেলো ওয়ার্নিং দিয়ে।কিন্তু আমার চোখে তারপর আর ঘুম আসেনি।সারাটা রাত যেন জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখেছিলাম।
আর তো কথা হওয়ার কোনো স্কোপ ছিলনা।অনেক খোজাখুজির পরে একটা জোরালো অজুহাত বের করে সকালে আবার নক দিয়েছিলাম,সেদিনও অনেক কথাই হয়েছিল।এভাবে আবার পরেরদিন চলেছিল।৪/৫ দিন চলার পর ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড ভাব এসেছিল একটা।আর অজুহাতকে ব্যবহার করতে হয়নি নক দেয়ার জন্য।
আল্লাহর ওয়াস্তে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাইতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওর সাথে কথা হতো।পুরাটা লকডাউন এমনে চলেছিল।
শুরুতে বুঝিনি এর ফলাফল এতোটা খারাপ হবে।ও তো শুধু ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতো কিন্তু এদিকে আমার ভালো লাগা তলিয়ে গিয়ে ভালোবাসায় মোড় নিয়েছিল।
সময় যত যাচ্ছিলো,তাতে আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে-এই মেয়ের মতো ভালো এবং ভদ্র মেয়ে আমার পুরো লাইফে আর একটা দেখিনি এবং সত্যিই তাই।বুঝেছিলাম,তাকে প্রস্তাব দেয়াটা বৃথা।
আকার ইঙ্গিতে বুঝাচ্ছিলাম এবং আমি যাতে আসকাড়া না পাই সেজন্য সে বুঝেও না বোঝার ভান করতো সবসময়। বছর পার হয়ে গেলো কথা বলার।এইতো মাস দেড়েক আগের ঘটনা।নিজেকে সামলাইতে না পেরে বলেই ফেলেছিলাম,মণি(আমি ডাকতাম এই নামে)আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ম্যাসেজটা দিয়েই ডাটা অফ করেছিলাম কারণ ওর রিয়েক্ট সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমার ছিলনা।ঘন্টা দুয়েক পর ডাটা অন করে ইনবক্সে ঢুকে দেখি বেশ ভালোভাবে বুঝিয়েছে,আমায় আমার ভবিষ্যত সম্পর্কে সচেতন করেছে।
কিন্তু,আমার ভেতর শয়তানটা জেকে বসেছিল বেশ ভালোভাবে।বারবার ওকে বলেছি।ও এটা অন্তত বুঝেছিল,যদি ওর কখনো কোনো বিপদ হয় তাহলে ওর ফ্যামিলির পর আমিই একমাত্র যে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ওকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবো।এতোকিছুর পরেও কেনজানি ও সেদিন আমায় বলেছিল,আমি সুবিধার না।আমার মানসিকতার সমস্যা এবং আমি নাকি ভালো না।
কথাগুলো আমার ইগোতে লাগে এবং তার সাথে এখন অব্ধি আমার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
আপাতত আমার প্রথম ভালো লাগা,ভালোবাসা এখানেই সমাপ্ত।
একটা বছরের বেশিই কথা বলেছি,যদিও কখনো সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি তবুও তার সাথে পার করা মুহুর্তগুলো এখনো আমাকে নাড়িয়ে তোলে।
লাস্ট কথাগুলো হয়তো আপনাদের এটা ভাবাবে যে,আমার অ্যাটিচিউডের জন্য সম্পর্ক এমন হয়েছে।হ্যাঁ, তা সত্যই কিন্তু ওই একটা বছর যে আমি কতটা নিচু করেছি নিজেকে ওর সামনে তা বলার বাহিরে।আর কত কি যে করেছি তাও বলার মতো না।
ইন্ড অফ দ্যা ডে,ভালো থাকুক সে এবং নিজেকে যতটা পবিত্র রেখেছে তার থেকেও আরো হাজারগুণ বেশি পবিত্র রাখুক,এই চাওয়াই ব্যক্ত করি।
অনেক অব্যক্ত কথা নিয়েই বিদায় নিচ্ছি।চাইলেও বলতে পারবোনা আর আমি বলতে পারলেও আপনারা বুঝতে পারবেন না।
আমি লাটিম ঘোরানোর বয়সে,ঘুরিয়েছি আমায়।
Cc.@farhantanvir
Shot on. Oppo f19 pro
Location
Date.19/07/22
বেশ ভালো,যাক ডিপ্রেশন যান নি।এই বয়সে এই রকম একটা পরিস্থিতি সবাই ঠিক থাকতে পারে না।ভালোভাবে পড়াশোনা করুন।আর সব ভুলে কাজে মনযোগ দেন।ধন্যবাদ
ডিপ্রেশনে যাইনি তা ঠিক না।মাঝে মাঝে সবটাই অন্ধকার হয়ে যায় এখনো😅
ইনশাল্লাহ আপু,পড়াশুনা ভালোভাবেই চালিয়ে যাবো।দোয়া রাখিয়েন।
আপনার প্রথম প্রেমের অনুভূতি পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো। আশা করছি আপনি এই প্রতিযোগিতার প্রথম সারিতে অবস্থান করবেন । এত চমৎকারভাবে আপনার মনের অনুভূতিগুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
যদিও সব বলতে পারিনি তবুও যা বলেছি তাতেই অনেকটা হাল্কা হয়েছি।এটাই আমার বড় পাওয়া।ভালোবাসা নিয়েন ভাই 🥰🌸