অযাচিত বন্ধুত্ব

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

একদা আমার লেখা একটি আর্টিকেলে স্বল্প পরিসরে আমি একটি মেয়ের বর্ণনা দিয়েছিলাম।আমার দিন শুরু হয় তাকে গুড মর্নিং বলার মধ্য দিয়ে আর শেষ হয় তাকেই গুড নাইট বলে। ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্যানজানি তাকে নিয়েই একটা আর্টিকেল লিখতে মন চাইলো।তাই,মনের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাকে নিয়ে লেখার জন্য মনস্থির করে ফেললাম।

তার নাম আফসানা মিমি মৌ। পরিচয় দেওয়ার খাতিরে তার নাম বলাটা বৃথা,কেননা একেকজন তাকে ভালোবেসে একেক নামে ডাকে।আমিও আমার দেওয়া একটা নামেই তাকে ডাকি।আমার বাসা থেকে তার বাসার দুরত্ব মিনিট বিশেকের।আমার ব্যাচমেট হওয়ায় একটা প্রাইভেটেই প্রথম দেখা।সবসময় বোরকা আর হিজাব পড়ে থাকে বিধায় তার অসম্ভব সুন্দর চোখযুগল বাদে,মুখটা দেখতে আমায় বেশ কাঠখর পোড়াতে হয়েছিল।আমার ফ্রেন্ডসার্কেলের ভেতোর বেশ অনেক মেয়ে আছে,তবে আমি তাদের কারো সাথেই তার তুলনা করতে পারিনা।এর পিছে যে কোন বিশেষ কারণ কাজ করে তা আমারো অজানা।যেদিন প্রথম দেখলাম সেদিন থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ মতো আমি তার নামটা ভালোভাবে জানতাম না।মোদ্দা কথা তার বিষয়ে কিচ্ছুই জানতাম না বা জানার তেমন কোনো ইচ্ছাও ছিলোনা।তবে কিছু ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তার নামটাও জানা হইছিল এবং পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডটাও।রাজনৈতিকভাবে তার পরিবার একটু সমৃদ্ধশালী হওয়ায় একটু ভীত হয়ে গেছিলাম।সেজন্য মাথা থেকে ওসব চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে দিয়ে নিজের অন্যান্য কাজে মজে গিয়েছিলাম।তবে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তার মুখখানা দেখার সৌভাগ্য অবশ্য হয়েছিল।

আমি হার মানলেও আমার বন্ধুরা হার মানতে নারাজ ছিল। আমায় না জানিয়েই আমার এক ফ্রেন্ড তার ফেক আইডি দিয়ে মেয়েটির সাথে কিছুদিন কথা বলে।এরই মাঝে একদিন কথার জালে পেচিয়ে মেয়েটিকে আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সেপ্ট করায়।দিনটি ছিল এপ্রিলের ৯ তারিখ। ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সেপ্ট করার যে নোটিফিকেশনটা আসছিলো সেটা তখন ৮ মিনিটে পা দিয়েছে, আমি কিংবা সে কেউই ততক্ষনে কেউ কাউকে মেসেজ দেইনি।অবশেষে নিজের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ করে তার ইনবক্সে একটা স্মাইলি পাঠালাম।দেওয়া মাত্রই সিন,আমি তো অবাক।তারপরে তার রিপ্লাইটা ছিলো এমন " একটা হেল্প করতে পারবে?"
একটু ভীত হয়ে বললাম,"অভবিয়াসলি।"তার নানা রকম প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে রাত বাজে তখন ১১ঃ০৩।আমায় বললো," এখন ভাগো,কাল থেকে আর মেসেজ দিবানা।"কথা শুনে লাইন থেকে বের হয়ে গেলাম।রাতে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা করায় খুব বেশি ঘুম হয় নাই।তার নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও একটা বাম্পার অজুহাতের ধরা পেয়ে পরেরদিন সকালেও মেসেজ দিয়েছিলাম।ঐদিনও ভালোই কথা হয়েছিল।এভাবে দুই তিনদিন চলার পর দুজনেরই সঙ্কোচ কেটে যায়।কথা চলতে থাকে। যেদিন মে মাসের ২১ তারিখ সেদিন সে আমায় বললো আমি তার জীবনের প্রথম ছেলে বন্ধুর জায়গাটা পেয়েছি।হইতে চাইলাম কি আর হইলাম কি। যাক ,নাই মামার থেকে তো কানা মামা ভালো।আজ তার সাথে ফ্রেন্ডশিপের প্রায় ৭২ দিন চলে। তার সঙ্কোচ,লজ্জাবোধ এবং অভিজ্ঞতার অভাবে আজও তার সাথে আমার সরাসরি কথা হয় নাই।যত কথা,ফাইজলামি সবই ভার্চুয়ালি।তবুও আমি তাকে ভালোই চিনতে পেরেছি।তার যেমন লাবণ্যতা তেমনই সব গুণ।সে স্কেচ করতেও সিদ্ধহস্ত।দুই-একটা স্কেচ আপনাদেরও দেখাই।
169307853_308192214058563_4089782209423849608_n (1).jpg
এইটা আদিবা। তার মামাতো বোন।
191278333_475051310244698_594698968918227356_n (1).jpg
ছবির ব্যক্তিটির পরিচয় সে আমায় দিলেও আমার অকেজো মস্তিষ্ক তা মনে রাখতে পারেনি।
170789826_268074785017088_6004853224328786991_n (1).jpg
শুধু স্কেচ দেখলেই কি চলে?জলরঙও তো দেখতে হবে।
198709572_331285198407765_6157953889114644314_n (1).jpg
হয়তো ভাবতেছেন স্কেচ,জলরং দেখাতে দেখাতে মাকড়সা কেনো দেখাচ্ছি,তাইনা?দেখতে আসলের মতো হলেও এটি তার নিজ হাতে তৈরি ।সে নাকি এটি আটা এবং আঠার সাহায্যে মাকড়সাটি তৈরি করেছিল।

সে অনেক ভালো মনের একজন মানুষ।কথা-বার্তা,চলাফেরা,দৃষ্টিভঙ্গি সব মিলিয়ে একজন অনন্যা।আশা করি,জীবনে তার যা কিছু চাওয়া-পাওয়ার আছে সবই পূরন হবে।তার প্রত্যেকটা কাজই সফলতার ছোঁয়া পাবে ইনশাল্লাহ।

তুমি তো আমার আকাশের তারা নও যে রাতে আলো ছড়িয়ে দিনে দূরে কোথাও হারাবে । তুমি তো আমার বাগানের ফুল নও যে সুভাষ ছড়িয়ে ঝরে যাবে । তুমি তো আমার বন্ধু , যে চিরদিন রয়ে যাবে ।

Sort:  

অসাধারণ একটি পোস্ট পরলাম, মনের প্রশান্তি খুজে পেলাম।

 3 years ago 

সুন্দর একটা পোষ্ট পড়লাম। সবথেকে ভালো হয়েছে গল্পের কাহিনী গুলো জেনে। এবং ছবিগুলো অনেক সুন্দর এঁকেছে এবং সঙ্গে মাত্র মাকড়সাটাও ভালো বানিয়েছে৷

 3 years ago 

লেখাটি আসলেই খুবই ভালো হয়েছে , এই রকম লেখা আরো চাই কিন্তু :)

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ।ইনশাল্লাহ চালিয়ে যেতে পারবো।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 58075.38
ETH 2463.77
USDT 1.00
SBD 2.38