একটা বিল্ডিং এর ভবনের দেয়ালে নোনা ধরলে যা করতে হবে by @engtariqul |১০% লাজুক খ্যাঁক এর জন্য
আসসালামু আলাইকুম
আমি @engtariqul ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে
আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।আজ আমি আপনাদের সাথে একটি পোস্ট শেয়ার করব। আর আজ আমি শেয়ার করব একটি শিক্ষামুলক পোস্ট। ধরেন অনেক এর বাড়ির বিল্ডিং অনেক দিন হয়ে গেছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে দেয়ালে লোনা ধরে গেছে। সেই অবস্থায় সবাই হতাশ হয়ে যান,যে কি করবো অনেক নতুন বাড়ির দেয়ালে এমন হয়ে যায়।এই বিষয় নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ।
ভবনের দেয়ালে নোনা ধরলে যা করবেন
প্রায় ভবনের দেয়ালেই নোনা ধরতে দেখা যায়। যে রং করা হোক না কেন, তার ওপর হালকা থেকে গাঢ় সাদা রঙের আস্তরণ পড়ে।এই নোনা ধরার ফলে ইট বা পাথরের তৈরি দেয়ালে সাদা সাদা লবণের অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়। যা দেয়ালের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করে । এ থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নেই সেইসব উপায় বা কৌশল গুলো।
কি কি কারনে লক্ষণ দেখা দিতে পারে :
প্রথম প্রথম দেয়াল ঘেমে যেতে থাকে বা ভেজা ভেজা ভাব চলে আসে। এর কিছুদিন পর থেকে দেয়ালে সাদা সাদা আস্তরণ দেখা দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে সাদা লবণের ভারি আস্তরণ দেখা দেয় এবং পড়ে প্লাস্টার ঝরে পড়তে থাকে।
নোনা ধরার কারণগুলো:
১. ভবণ নির্মাণের সময় কম পড়ানো ইট ব্যবহার করা।
২. যে মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হয়,সে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি ছিল।
৩. বাড়ি তৈরির উপকরণ,যেমন-বালি, সিমেন্ট,পানি প্রভৃতির মধ্যে লবণের পরিমাণ ২.৫% এর বেশি।
৪. সঠিক পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থার অভাব।
৫. দেয়ালের মাঝের পানির লাইনে ছিদ্র থাকা।
৬. প্লাস্টার শুকানোর আগেই রং করে ফেলা।
৭. ঘরের ভিতরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাব।
৮. মেঝে এবং ঘরের মাঝের দেয়ালে সঠিকভাবে সিক্ততা স্তর না দেওয়া।
করণীয় গুলো কি কি হতে পারে:
ভবণ নির্মাণের আগেই নোনা ধরার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত অবশ্যই। নোনা ধরার মূল কারণ নির্মাণ সামগ্রী আর নির্মাণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।তবে সাধারণত দুটি উপায়ে নোনা প্রতিরোধ করা যায়-
স্বাভাবিক উপায়: প্রথমত সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। তাই বাড়ি নির্মাণের আগেই সেই স্থানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বাড়ির চারপাশে ভালো ড্রেন স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন পানি জমে না থাকে। ছাদে সঠিক ঢাল রাখতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া বৃষ্টির ঝাপটা থেকে রক্ষার জন্য দেয়ালে সানশেডের প্রয়োজন। ইটের পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই বেশি। ফলে বৃষ্টির পানি থেকে দেয়ালকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। ইটের গাঁথুনির ফ্লাশ পয়েন্টিং করলে অতিরিক্ত পানি দেয়ালের গায়ে জমা হতে পারে না। অনেক সময় ছিদ্রযুক্ত দেয়াল দিয়েও আর্দ্রতা দূর করা যায়।
দ্বিতীয়ত প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচলের মাধ্যমে নোনা রোধ করা যায়। ঘরের মাঝে সব দেয়ালে সমানভাবে রোদের আলো প্রবেশ করতে পারে না, সেক্ষেত্রে নকশা তৈরির সময়ই যেসব দেয়ালে রোদের আলো কম পড়ে; সেসব দেয়ালে সঠিকভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে বৃষ্টির পানি আর রোদের অভাবে দেয়ালটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে নোনা ধরার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই সূর্যতাপ এবং বাতাস চলাচলের উপর নির্ভর করে নির্মাণ করতে হবে ভবন।
কৃত্রিম উপায়: এক্ষেত্রে প্রথমত গাত্রক পানি নিরোধক ব্যবস্থার মাধ্যমে রোধ করা যায়। এ ব্যবস্থা দু’ভাবে হতে পারে, যেমন- বাইরের দিকের গাত্র এবং ভেতরের দিকের গাত্র। যেহেতু বাইরের দিক থেকেই পানি বুনিয়াদ বা কাঠামোতে প্রবেশ করে। সেজন্য বাইরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থা ভেতরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থার চেয়ে বেশি কার্যকরী। বাইরের দিকের গাত্রের সিক্ততা নিরোধ করার সহজ ব্যবস্থা হচ্ছে, ইটের জোড়ায় মুখগুলো খুলে পয়েন্টিং করা এবং পরে ভালো করে প্লাস্টার করা। ভেতরের দিকে প্লাস্টারের ওপর সাধারণত মোম বা সিলিকেট দ্রবণ লাগানো হয়। তবে এ ব্যবস্থা ২-৩ বছর পরপর করতে হবে।
দ্বিতীয়ত পানি নিরোধক আচ্ছাদন সংযোজনের মাধ্যমেও রোধ করা যায়। বিটুমিন শিট, প্লাস্টিক শিট, মেটাল শিটের মাধ্যমে পানি প্রতিরোধী একটি স্তর গড়ে তোলা হয়।
প্রতিকারের উপায়: ভবন নির্মাণের পর নোনা দেখা যাওয়া আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বেশ কমন। একে তো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বছরজুড়ে; সেই সাথে নির্মাণের সময়ে সতর্কতার অভাব। শখের বাড়িতে নোনা ধরে গেলে সেটা প্রতিকারের ব্যবস্থা করার কিছু উপায় রয়েছে।
এদের ব্যবহারবিধি নিচে দেওয়া হলো-
১. ভবনের যেসব স্থানে নোনা দেখা দিয়েছে,সেসব জায়গার রং, চুন ইত্যাদির প্রলেপ ভালোভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
২. আক্রান্ত স্থানে ক্যামিকেল এইচবিআরআই-এসপি তিন-চার বার এমনভাবে লাগাতে হবে, যেন বালি-সিমেন্টের আস্তরণটি সম্পূর্ণভাবে ভিজে যায়। একদিন অপেক্ষা করার পর এইচবিআরআই-এসপি লাগানোর স্থানসমূহ পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ভেজা আস্তরণকে ভালোভাবে শুকানোর পর চুনকাম, রং, ডিসটেম্পার ইত্যাদি প্রলেপ দিতে হবে।
৩. ভবনের যেসব স্থানে এইচবিআরআই-ডিপি প্রয়োগ করতে হবে; সেসব জায়গার রং, চুন, পুটিং ইত্যাদির প্রলেপ ভালোভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। শুকনো আস্তরণে এইচবিআরআই-ডিপির দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হয়। ৩ ঘণ্টা পর ৩-৪ বার এইচবিআরআই-ডিপি দ্রবণের আস্তরণ প্রয়োগ করতে হবে। একদিন পর পানি দিয়ে অতিরিক্ত এইচবিআরআই-ডিপি সরিয়ে ফেলতে হবে। ভালোভাবে শুকানোর পর চুনকাম, রং, ডিসটেম্পার ইত্যাদির প্রলেপ দিতে হবে। অর্থাৎ একই উপায়ে প্রয়োগ করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী।
ভবনের নোনা হলো দ্রবণীয় লবণের দ্রবণ হতে পানির বাষ্পীভবনের ফলে ভবনের দেয়ালে লেপ্টে থাকা লবণের অধঃক্ষেপ। সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে আর্দ্র জলবায়ু, প্রবল বৃষ্টিপাত ও গাঁথুনিতে জমা পানির প্রভাবেই নোনা ধরে। নোনা ধরার ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, ছোপ ছোপ দাগ প্লাস্টার এমনকি চুনকামেও ঢাকা পড়ে না। নোনার সংস্পর্শে কাগজপত্র, কাপড়-চোপড়, কাঠ ইত্যাদি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। প্লাস্টার নরম হয়ে খসে পড়ে। সর্বোপরি ভবনের সৌন্দর্যহানী ঘটে।
তাই নোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা ভবন তৈরির অংশ বলে গণ্য করা উচিত। আমাদের দেশের আবহাওয়াজনিত কারণে নোনা ধরা সমস্যাটি বহুতভাবে দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের ভবন নির্মাণের আগে সতর্ক হওয়া জরুরি।
আশা রাখছি সবাই বুঝতে পেরেছেন এবং পোস্ট টা পড়ে অনেকের উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আরেকদিন আরেকটি বিষয় নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ। আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। এইজন্য আপনাদের সাথে বিল্ডিং তৈরি করার ধাপসমূহ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা করবো আছতে আছতে ইনশাআল্লাহ। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাহ! অনেক তথ্যবহুল পোস্ট করছেন ভাই আমাদের অনেক উপকার হবে।এইরকম পোস্ট খুবই কম পাই যে সমস্যা এবং সমস্যার সমাধান। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এতো সুন্দর পোস্ট করার জন্য শুভ কামনা রইল আপনার জন্য
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। সবসময় পাশে থাকবেন আশা করছি। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
ভাই আপনার পোস্টটি আমার জন্য খুবই কাজে লাগলো। আমাদের বাড়ির দেয়ালে অনেক দিন যাবত নোনা ধরে আছে কিভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম কিন্তু কি একটা এইচ বি আর আই এর কথা বললেন এটা কি জিনিস বুঝতে পারলাম না। যাই হোক পোস্টটি বেশ ভালো ছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। ভাইয়া এটা একটা কেমিক্যাল এর নাম। ভাইয়া বাজারে অনেক ধরণের কেমিক্যাল পাওয়া যায়। সেগুলো যে কোন একটি দিলে হয়ে যাবে আশা করছি।
👍❤️
খুব সুন্দর তথ্য দিয়েছেন তো আপনি আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং শিখতে পারলাম ধন্যবাদ আপনাকে শিক্ষামূলক একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য শুভকামনা রইল আপনার জন্য
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে আমার পোস্টটি সুন্দর ভাবে পড়ে সুন্দর কমেন্ট করে উৎসাহিত করার জন্য। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া আপনার জন্য।
আসলে আপনি অনেক মূল্যবান একটি পোস্ট করেছেন। এটা আসলে অনেকের দেওয়ালে দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের ঘরের দেওয়ালে এরকম নোনা ধরেছে। তবে এসব করণীয়গুলো আসলে আপনারাই ভালো জানেন, এটা আমাদের মাথায় তেমন একটা ঢুকবে না। কেননা আমার স্বামীও আর্কিটেকচারের কাজ করে উনারাই ভালো বুঝেন এগুলা। অনেক ধন্যবাদ তথ্যমূলক একটি পোষ্টে উপহার দেওয়ার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
উপকারী একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাই। এই পোস্টের মাধ্যমে অনেকেরই উপকার হবে। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে সব কিছু স্পষ্ট ভাবে লিখেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। দোয়া করবেন যেন সবসময় এই ধরনের শিক্ষা মুলক পোস্ট করতে পারি। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া আপনার জন্য।