Steem steemit এর চেয়ে অনেক বড়|| Steem is bigger than steemit [১০% shy-fox]
ভূমিকাঃ
ব্লকচেইন ও স্টিম ব্লকচেইন বিষয়ে আমি আমার পূর্ববর্তী দুইটি পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং সেই আলোচনার মাধ্যমে অনেকেই বুঝতে পেরেছেন ব্লকচেইন প্রযুক্তি হচ্ছে আসলে একটি প্রযুক্তি এবং সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো ইন্টারফেস বা front-end সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা যায়। steemit.com হচ্ছে তেমনি একটি সাইট যেটি মূলত স্টিম ব্লকচেইন কে কাজে লাগিয়ে তৈরিকৃত একটি ব্লগিং সাইট।
স্টিম এবং স্টিমিট এই দুইটি ব্যাপার অনেকটা ভিন্ন এবং আমরা বলতে পারি স্টিম হচ্ছে স্টিমিট এর চেয়ে অনেক বড় বিষয়। স্টিম এবং স্টিমিট এ দুইটি ব্যাপারকে আমরা অনেক সময় এক করে ফেলি বা গুলিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে এই বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করব যে স্টিমিট সাইটটি স্টিম ব্লকচেইনের উপর ভিত্তি করে চলে এবং স্টিম হচ্ছে স্টিমিট থেকে অনেক বড় একটা বিষয়। তো চলুন শুরু করা যাক।
Steem, steemit এর চেয়ে অনেক বড় বিষয়ঃ
ব্লকচেইন প্রযুক্তির পোষ্ট গুলোতে এবং এবিবি স্কুল (শেয়াল পন্ডিতের পাঠশালা)-র ক্লাসে এ বিষয়টি বুঝানোর জন্য আমি আপনাদেরকে একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম। আমরা মোবাইল ফোনে যে সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করি সেগুলো মূলত একটি অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। যেমনঃ কম্পিউটারে আপনারা জানেন উইন্ডোজ হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেম এবং সেই অপারেটিং সিস্টেম যদি আপনার কম্পিউটারে থাকে তাহলে আপনি সেখানে অনেক সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারবেন। ঠিক তেমনিভাবে অ্যান্ড্রয়েড কিংবা সিমবিয়ান হচ্ছে মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম এবং সেই অপারেটিং সিস্টেম যদি আপনার মোবাইলে থাকে তাহলে সে অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তৈরিকৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি।
ঠিক একইভাবে স্টিম-কে সেই প্রযুক্তি অথবা অপারেটিং সিস্টেমের সাথে আপনারা তুলনা করতে পারেন এবং এই প্রযুক্তিতে ডাটা কিভাবে রেকর্ড হবে, কারা রেকর্ড করবে এবং কিভাবে এই ডাটাগুলো সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত হবে এই সমস্ত বিষয় গুলো এই প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। স্ট্রিম ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে উইটনেস সিস্টেমের মাধ্যমে ব্লক প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ডাটা সংরক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ, ভ্যালিডেশন, সার্ভার মেনটেনেন্স ও সাইটের কাজগুলো করা হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি যখন থাকবে তখন এই প্রযুক্তির লেজারে সংরক্ষিত ডাটা গুলোকে আমরা বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে পারি এবং কাজে লাগাতে পারে ঠিক যেভাবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম আপনার মোবাইলে থাকলে আপনি সেই অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা অনেকগুলো এপ্লিকেশন তৈরি করতে পারছেন একইভাবে এখানে ব্লকচেইন প্রযুক্তি থাকলে সেই প্রযুক্তির ডাটাগুলোকে ব্যবহার করে অথবা ঐ প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে অনেক ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি তৈরি ও ব্যবহার করা যাবে।
ট্রন ব্লকচেইনে যেমন ব্লকচেইন প্রযুক্তি তৈরি করা আছে এবং এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন যেমন ভিডিও শেয়ারিং, টোকেন তৈরি, কন্টেন্ট শেয়ারিং ইত্যাদি করা যায় এবং কাজ করা যায়। ঠিক অনেকটা তেমনিভাবে স্টিম ব্লকচেইনও আমাদেরকে আমাদের তথ্যগুলো রেকর্ড করার ও ম্যানেজ করার ব্যবস্থাপনার জন্য একটা সিস্টেম করে দিয়েছে এবং এই সিস্টেমটি হচ্ছে নিরাপদ ও বিকেন্দ্রীকরণকৃত।
আমরা আমাদের তৈরিকৃত কোন ওয়েবসাইট বা প্রোগ্রাম সব সময় ইন্টারনেট সার্ভার এ কারো থেকে হোস্টিং ভাড়া নিয়ে সেখানে আমাদের ডাটাগুলোকে সংরক্ষণ করে থাকি। যেমনঃ আপনি যদি একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেন তাহলে সেই সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য আপনি সার্ভার এবং ডোমেইন (এড্রেস) কিনে নেবেন এবং সার্ভার মেনটেনেন্স এর কাজ গুলো আপনাকে করতে হবে এবং ডাটাকে লেজারে আপনাকেই সংরক্ষন করে রাখতে হবে। এখানে ব্লকচেইন প্রযুক্তি আমাদেরকে ডাটা সংরক্ষন, লেজার মেইনটেনেন্স ও সার্ভার মেনটেনেন্স এর কাজগুলোকে সহজ করে দিয়েছে এবং বিকেন্দ্রীকরণ করার মাধ্যমে এটি অনেক নিরাপদ হয়েছে।
Source
তাই এই প্রযুক্তি বা ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে কেউ তার প্রয়োজনীয় যে কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবে এবং সেই অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়ারের ডাটাগুলো স্টিম ব্লকচেইন এর মাধ্যমে সার্ভার মেনটেনেন্স হবে ও সংরক্ষিত হবে। আপনারা জানেন, এ পি আই (API- Application Programming Interface) ব্যবহার করে কোন জায়গা হতে প্রাপ্ত ডাটাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং এই বিষয়টি নির্ভর করে যারা ওয়েবসাইট তৈরি করছেন তাদের প্রোগ্রামিং স্ক্রিনের উপরে। অর্থাৎ আপনার কাছে ব্লকচেইন এর তথ্য রয়েছে এবং সেই তথ্যগুলো কে আপনি কাজে লাগিয়ে অনেক রকম ইন্টারফেস তৈরি করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন যেগুলোকে আমরা এক একটি ওয়েবসাইট অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার বলছি।
steemit.com ঠিক তেমনই একটি ওয়েবসাইট যেখানে আমরা ব্লগিং সংক্রান্ত কার্যক্রম গুলো করছি কিন্তু এর ডাটা সংরক্ষণ, সার্ভার মেনটেনেন্স সবকিছুই হচ্ছে স্টিম ব্লকচেইনে। অন্যান্য এরকম ওয়েবসাইট যেমন টুইটার বা facebook.com তারা তাদের ডাটা সংরক্ষণ ও সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্টের এবং সার্ভার মেনটেনেন্স এর কাজ গুলোর জন্য নিজস্ব সার্ভার ও লেজার ব্যবহার করছেন কিন্তু এখানে ডেটা সংরক্ষণের ব্যাপারটি পুরোটাই থেকে যাচ্ছে স্টিম ব্লকচেইন এর অধীনে যে কারণে ডাটা গুলো খুব নিরাপদ থাকছে এবং বিকেন্দ্রীকরণ অবস্থায় সবার কাছে একটা নিরাপত্তা এনে দিচ্ছে।
স্টিম ব্লকচেইন কে কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র যে steemit.com ইন্টারফেস আছে তা নয় বরং steem হচ্ছে মূল ভিত্তি যাকে কেন্দ্র করে অনেক সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা আছে। যেমন আপনারা যারা আগে থেকে এখানে ব্লগিং এর কাজ করছেন তারা তারা partiko, steemhunt, busy.org, steempeak, tasteem, sportstalk ইত্যাদি সহ আরো অনেক সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন দেখেছেন যেগুলো সবই মূলত স্টিম ব্লকচেইন-কে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি এখন আমরা যে steemyy, steemworld.org, steemdb, steemnow ইত্যাদি সাইটে তথ্য দেখি তাও steem ব্লকচেইনের তথ্য বা API নিয়ে তৈরি করা।
শেষকথাঃ
তাই আজকের আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন steemit.com হচ্ছে একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট যেখানে ডাটা সংরক্ষণ বা মেনটেনেন্স এর কাজ করা হচ্ছে স্টিম ব্লকচেইন দ্বারা। তার মানে আমরা বুঝতে পারছি, স্টিম হচ্ছে মূল বিষয় এবং স্টিমিট হচ্ছে এর একটা ইন্টারফেস (যা আসলে মূল বা প্রধান ইন্টারফেস)। আমরা বলতে পারিঃ স্টিম স্টিমিটের চেয়ে অনেক বড় একটি বিষয়।
এই পোস্টের সম্পূর্ন লিখা আমার নিজস্ব ও কোথায় থেকে কপি করা হয়নি। কোথাও হতে কোন তথ্য বা ছবি নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কে
আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক, সাবেক ব্যাংকার। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো এবং ক্রিকেট খেলা আমার শখ। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস এবং সবার থেকে শিখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমার লেখা থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার লেখালেখি সার্থক। |
---|
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। আমারা এখানে কাজ করি আমাদের সবারই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা দরকার।
আপনি যেভাবে স্টিম এবং স্টিমিট ডট কম নিয়ে ধারনা দিছেন, সত্যি একদম ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পারছি। প্রত্যেকটা উদাহরণ দারুন ছিলো।
আশা করি ক্লাশের পাশাপাশি এমন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন। যাতে আপনার মাধ্যমে আমরাও অনেক কিছু জানতে পারি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো প্রিয় ভাই। 💕💕
ধন্যবাদ ও আপনার জন্যও শুভকামনা
সত্যি বলতে স্টিম এবং স্টিমিটের মধ্যে পার্থক্য কতখানি আমার জানা ছিল। ধন্যবাদ, আমি একটা বিশুদ্ধ ধারণা পেলাম। আপনার বুঝানোর দক্ষতা অতি উত্তম। আপনি মোবাইল দিয়ে একটি উদাহরণের মাধ্যমে খুব সুন্দর করে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন!
ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
ভাই আপনার পোস্ট গুলো বরাবর উন্নত মানের হয়ে থাকে। আপনার পোস্ট পড়ে এত কিছু শিখতে পারি যা হয়ত বা এক জীবনে শিখতে পারবো কিনা জানিনা। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে স্টিম ব্লক চেইন সহ বিভিন্ন বিষয়ে ডিটেইলস ধারণা পেলাম যদিও আমি পুরো পোস্টটি বুঝে উঠতে পারিনি তবে আরো কয়েকবার পোস্টটি আমি বুঝে বুঝে পড়ব । প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে এত সুন্দর শিক্ষনীয় পোস্ট তুলে ধরার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাই ধন্যবাদ।
আপনি ঠিকই বলেছেন আরো কয়েকবার পড়লে হয়তোবা আপনার যেসব ঘাটতি রয়েছে সেগুলো কেটে যাবে। ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য
বাহ দারুণ তো। অজানা একটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করলাম। এতদিন সত্যি স্টিম এবং স্টিমিট এক মনে করতাম। কিন্তু দুটো যে আলাদা জিনিস এটা ধারণাও করি নাই। আজ আপনার পোস্ট থেকে মোটামুটি পরিষ্কার ধারণা পেলাম।।
আশা করি এখন থেকে দুই টার মাঝে যে পার্থক্য রয়েছে সেটি ভালো করে অনুধাবন করে মনে রাখতে পারবেন। ধন্যবাদ।
ভাইয়া আপনার আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ টপিকটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। স্টিম এবং স্টিমিট এর পার্থক্য খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন আজকে। আমিও অনেক কিছু জেনে গেলাম আজকে আপনার এই পোস্ট থেকে।
আপনি জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন এটা জেনেই আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। ধন্যবাদ।