আমার রান্নাবান্না || পর্ব ০১ || ব্যাচেলর লাইফ স্পেশাল ডিম রেসিপি (Bachelor Special Egg Recipe) [10% for @shy-fox]
ভূমিকাঃ
বাসায় যখন গিন্নি থাকেনা এবং আমার মত আনাড়ি পাচকদের রান্না করতে হয় তখন সহজ এবং সাধারণ রেসিপি রান্না করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। যারা বাড়ির বাইরে বিভিন্ন মেসে থেকেছেন তারা জানেন মেসের জীবনে ডিম হচ্ছে আমাদের অত্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় একটি খাবার উপাদান কারণ যখন রান্নার বুয়া কোন কারণে ছুটিতে থাকেন অথবা আসতে পারেন না তখন আমাদের জন্য ডিম স্বর্গীয় স্বাদ নিয়ে আসে।
ডিমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এটি রান্না করা অনেক সহজ। আমার মত আনাড়ি পাচকদের জন্য অবশ্য ডিম রান্না করাটাও অনেক কঠিন কাজ তাই বাসায় ফোন দিয়ে ইনস্ট্রাকশন নিয়ে ডিম রান্না করেছি এবং সেখান থেকে কিছু ছবি আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি।
তবে আগেই বলে নেওয়া ভাল, আমি রান্নাবান্না খুব বেশি একটা তেমন পারিনা তবে প্রয়োজনের তাগিদে এখন মনে হচ্ছে রান্না শিখে নিতে হবে। তাই বাইরের খাবার না খেয়ে বরং ঘরেই ছোটখাটো কিছু দিয়ে ফোনে ইনস্ট্রাকশন নিয়ে রান্না করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, এভাবে একসময় হয়তোবা মোটামুটি প্রয়োজনীয় খাবারগুলো নিজেই জন্য রান্না করতে পারব বিশেষ করে যেগুলো খুব সহজ যেমন খিচুড়ি, ডিম ইত্যাদি।
গতকালকের হ্যাংআউটে ওপার বাংলা থেকে নির্মল্য (@kingporos) দাদা বলেছেন তিনি আমার মত রান্নাবান্না করতে পারতেন না কিন্তু আস্তে আস্তে প্রয়োজনের তাগিদে কিছু শিখে নিচ্ছেন। জরুরী প্রয়োজন মেটাতে আমাকেও মনে হয় এভাবে করে শিখে নিতে হবে। তবে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস এর ছোটখাটো রান্না দেখে যারা এখানে প্রফেশনাল কুক রয়েছেন তারা হাসাহাসি করবেন না বরং কোন গঠনমূলক মন্তব্য থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
আর সবকিছুর আগেই বলে নিচ্ছি এটি কোন রান্নার রেসিপি নয় কেবলমাত্র কিছু ছবি এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনার মাধ্যামে শেয়ার করছি যার মূল অনুপ্রেরনা পেয়েছি (@rme) দাদার একদিনের লুম রান্নার রেসিপি থেকে। যদিও এটি কোনো প্রফেশনাল রেসিপি না তারপরও রেসিপির মতো করেই কিছু জিনিস শেয়ার করা যাক।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
অনেকেই রান্নার রেসিপি শেয়ার করছেন কিন্তু কি কি যন্ত্রাংশ লাগবে সেটা কিন্তু বলছেন না। আমি কিন্তু তাদের মত নই বরং আমি যন্ত্রাংশ এর তালিকা আগে দিচ্ছি।
- স্টপওয়াচঃ সময় দেখার জন্য
- রান্নার এপ্রোনঃ সাবধানতার জন্য
- একটি বটি বা ছুড়িঃ পেয়াজ কাটার জন্য
- একটি পাত্রঃ ডিম সেদ্ধ করার জন্য
- একটি কড়াইঃ মূল রান্নার জন্য
- একটা চা চামচঃ ডিমের খোসা ছাড়ানোর জন্য
- একটি মগঃ পানি ঢালার জন্য
- একটি নাড়ানি চামচঃ নাড়ানোর জন্য
- প্রয়োজনীয় বাটিঃ মশলা গুলো রাখার জন্য
- একটি চূলাঃ এটা-ত লাগবেই রান্নার জন্য
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
এবার দেখে নেয়া যাক কি কি উপকরন লাগছে।
- ৫ টি মুরগির ডিম
- চার পাঁচটে মাঝারি আঁকারের পেঁয়াজ
- প্রয়োজনমতো মরিচের গুঁড়ো
- প্রয়োজনমতো হলুদের গুঁড়ো
- আরো কি কি যেন মসলা। ধনিয়া, জিরা আরো কি কি যেন। এগুলোর নাম পরে একসময় শিখে নেওয়া যাবে।
- প্রয়োজনমতো লবণ
- পরিমান মত পানি
- পরিমাণমতো সরিষার তেল অথবা সয়াবিন তেল যেটি আপনি পছন্দ করেন কিংবা নারকেল তেলও আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
এত উপকরণ দেখে আমার মত যারা আনাড়ি রেসিপি তৈরি করা লোকজন তারা ঘাবড়ে যাবেন না। আসলে এখানে পেঁয়াজ, ডিম, হলুদ-মরিচ হচ্ছে মূল উপাদান।
রন্ধনপ্রণালীঃ
প্রথমেই পাঁচটি ডিমকে খুব ভাল করে সিদ্ধ করে নিতে হবে সেজন্য পানি বসিয়ে দিবেন। সেই পানিতে ডিমগুলোকে আলতো করে ছেড়ে দেবেন। যদি আলতো করে না ছাড়েন তাহলে ডিম ছাড়ার সময় ডিম ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই সাবধান!
ডিমগুলো সিদ্ধ হওয়ার জন্য একটি পাত্রে পানি ও ডিম চূলায় বসিয়ে আপনাকে স্টপ ওয়াচ নিয়ে বসে থাকতে হবে কারন একটা পূর্ণ বয়স্ক মুরগির ডিম পানি ফুটতে থাকা শুরু হওয়ার পাঁচ ছয় মিনিটের মধ্যে সিদ্ধ সম্পন্ন হয়। তাহলে পানি ফুটতে শুরু করা এবং ডিম সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ মিনিট আপনি স্টপ ওয়াচ ধরে এবার চুলা বন্ধ করে দিন। ডিমের পানিতে এখন তৎক্ষণাৎ হাত দেয়া যাবে না কারণ পানি এখনো গরম রয়েছে সেজন্য কিছুটা সময় দিতে হবে আর এই সময়টাতে আপনি পেঁয়াজগুলো কে কেটে ফেলতে পারেন।
একদিকে পেঁয়াজ কাটা হয়ে গেল অন্যদিকে ডিমের পানি কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসলো। তাই এবার ডিমগুলোকে খোসা ছাড়িয়ে নিন। খোসা ধরনের প্রক্রিয়া আপনারা সবাই জানেন। ডিমকে আগে শক্ত কিছুর মধ্যে আঘাত করতে হবে তবে সাবধান নিজের মাথায় আঘাত করবেন না। তারপর একটা অংশ ভেঙে গেলে বাকি অংশ থেকে আস্তে আস্তে করে ডিমের খোসা গুলোকে ছাড়িয়ে নেবেন। আমার মত এক্সপার্ট হলে অবশ্যই এখানে আপনার একটু কষ্ট হবে সেক্ষেত্রে আপনি চামচ ব্যবহার করেও এই কাজটি করতে পারবেন। একটি ডিম একটু চ্যাপ্টা হয়ে গেছে এর জন্য আমি দায়ী নই। ডিমটিই এরকম ছিল।
এবার একটি ভালো কড়াই নিন এবং অবশ্যই কড়াইটি একবার ধৌত করে নেবেন কারন অনেকদিন কড়াই কিচেনে অব্যবহৃত থাকলে সেখানে তেলাপোকা বা অন্য কিছু দিয়ে ডিম পাড়তে পারে বা জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে। কড়াইটি চুলায় বসানোর পরে কড়াই এর ওপরে যেটুকু পানি থাকবে সেটি বাষ্প হওয়া পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে এই ব্যাপারটি কিন্তু আমাকে গিন্নি খুব সতর্কতার সাথে বলে দিয়েছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পরেই আপনাকে সেখানে তেল দিতে হবে। যদি আগে তেল দিয়ে দেন তাহলে সেই তেল ফুটে আপনার গায়ে লাগতে পারে যাতে আপনি ইনজুরি হতে পারেন। তাই এখানেও সাবধান!
- ডিম নাকি আগে একটু ভেজে নিলে ভাল হয় তবে না ভেজেও রান্না করা যায়। তাই দেখুন হাল্কা হলুদ মাখিয়ে আগে ভেজে নিতে হল। পরেরবার না ভেজে সাদা ডিম দিয়েই চেষ্টা করা হবে কারন সময় বাঁচবে।
- এরপর কড়াইতে আরো তেল দিয়ে সেটা কিছুটা গরম হয়ে আসলে সেখানে পেঁয়াজগুলো দিয়ে দিবেন যেগুলো আগেই কেটে টুকরো টুকরো করে রেখেছিলেন। এবার এগুলোকে আস্তে আস্তে নাড়া চাড়া করতে থাকুন সাথে লবণ হলুদ মরিচ গুলো দিয়ে দিন। একটা সময়ে গিয়ে দেখবেন পেঁয়াজগুলো একটু নরম হয়ে এসেছে এবং আপনি কিন্তু আপনার নাড়াচাড়া অব্যাহত রাখবেন যাতে করে পেঁয়াজগুলো কোনভাবে কড়াইয়ের সাথে লেগে পুড়ে না যায়। পেঁয়াজগুলো নরম হয়ে আসতে ৫ মিনিটের মত সময় লাগবে তবে এই ব্যাপারটা কিন্তু নির্ভর করবে আপনি কত বেশি আগুনের তাপ দিচ্ছেন। যাই হোক, এবার যেই মসলাগুলো কথা বললাম সেগুলো আপনি যেটা ভালো মনে করেন কিছুটা করে দিয়ে দিবেন। অথবা হাতের কাছে যত মসলা আছে তার কিছুটা টুকটাক একটু একটু করে দিতেই পারেন এতে কোনো অসুবিধা হবে বলে আমি মনে করি না।
- এবার হচ্ছে পানি দেয়ার পালা। পানি ইচ্ছামত দিবেন। মোটেও কার্পণ্য করবেন না। কারন ব্যাচেলর লাইফের রান্নাতে অনেক ঝোল পাবেন কই? যত খুশি পানি দিন আর এতে ঝোল বেশি হবে। যদিও গিন্নি বলেছে পানি কম দিলে স্বাদ ভাল হবে তাই এবার একটু কম করেই দিলাম। পরেরবার বাড়িয়ে দিব।
- এবার ডিমগুলোকে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রান্না করতে হবে তবে এ অবস্থায় ঢেকে রান্না করুন যতক্ষনে আপনার দরকারী পানি ছাড়া বাকিটা বাষ্প না হয়। এইতো রান্না শেষ। গরম গরম খেয়ে ফেলুন।
শেষকথাঃ
দেখতে যেমন হোক, স্বাদ কিন্তু খারাপ হয়নি। নিজের হাতের রান্না বলে কথা।
প্রথমেই আপনার উপস্থাপনার কথা বলবো। সেরা হয়েছে ভাইয়া। রেসিপিটি অনেক লোভনীয় হয়েছে। দেখে খেতে ইচ্ছা করছে। ডিম আমারও খুবই প্রিয়। ডিমের রেসিপিটি অনেক সুন্দর ভাবে রান্না করেছেন। শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া।
ভাই ব্যাচেলর লাইফে এতো দারুন রান্না উপস্থাপন করেছেন সত্যি আপনি প্রশংসার দাবিদার বটে।
আপনি নিখুত এবং খুবই লোভনীয় একটি রেসিপি উপস্থাপন করেছেন।দেখে খুবই ভালো লাগলো ধাপ গুলো খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।শুভ কামনা রইলো।
ভাইয়া অনেক সুন্দর করে ডিম রেসিপি রান্না করেছেন আপনি। আসলেই ব্যাচেলার লাইফ খুবই কষ্টকর। ভাইয়া আপনার এই রেসিপি অনেক লোভনীয় হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটা রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
দাদা এই ব্যাচেলর লাইফের শ্রেষ্ঠ খাবার হল ডিম 🤗😊। আর আপনি সেই অসাধ্য কাজটিই সাধন করেছেন। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করছিনা তাই 🤪। আপনি যতই বলুন না কেন রান্না করতে পারেন না, কিন্তু রান্নার ধাপ গুলো তো একদম পাকা রাধুনির মত করে লিখেছেন। আমার খুব মজা লাগলো সব টা পড়ে। 😊
মজা করেই লিখার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ।
রেসিপি টা দেখে মনে হচ্ছে অনেক সুস্বাদু হয়েছে। কিং পরশ ভাইয়াও এভাবেই রেসিপি তৈরি করেন। আপনার এই ডিপিটা দেখে এখন আমার খেতে ইচ্ছে করছে যাইহোক আম্মুকে বলে বানিয়ে নিব ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
কমেন্ট করার আগে একবার বানান দেখে নিবেন। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
যারা বেচেলার তাদের কাছে ডিম রেসিপি খুবই পরিচিত। এমন কোনো মানুষ নেই যে এই ডিম রেসিপি তৈরি করে খায় নাই। সত্যি আজ মনে পড়ে গেল ম্যাচের সেই থাকাকালীন সময়ের কথা। কতইনা ডিম রেসিপি করে খেয়েছি। খুবই মনে পড়ছে সেই দিনটির কথা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
কে বলেছে ভাই আপনি আনাড়ে পাচক। আমার তো পড়ে মনে হলো আপনার মোটামুটি রান্নার প্রতি ধারণা আছে। যাইহোক রেসিপি টা বেশ ভালোই তৈরি করেছেন। এবং দেখে মোটামুটি সহজই লাগছে রেসিপি টা। এবং আপনিও নির্মাল্য দাদার মতো প্রফেশনাল রাধুনি হয়ে উঠুন সেই দোয়া করি।
অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার ডিম রেসিপি। আর ডিমগুলোর কালার এত সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে আপনি রান্নায় অনেক দক্ষ।
ব্যাচেলর লাইফ স্পেশাল ডিম রেসিপি অনেক সুন্দর হয়েছে ভাই আসলে এই রেসিপি তৈরি করতে সময় লাগে খুব কম আর এভাবে রান্না করে খেলে অনেক সুস্বাদু লাগে। আপনি অনেক সুন্দর করে রেসিপি তৈরি করেছেন সাথে উপস্থাপনা ও অনেক সুন্দর করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
পোস্ট পড়ার প্রথমে আপনি হাসতে মানা করেছিলেন
এইজন্য আমি একেবারে ভেবে রেখেছিলাম কোনভাবেই হাসবো না ।কিন্তু উপরের এই লাইনটি পড়ে একেবারে না হেসে পারলাম না। আপনি যে শিক্ষক এটা কেউ না বললেও চিনে যাবে। কারণ আপনি প্রত্যেকটা বিষয় এমন ভাবে ডিটেলসে লিখেন যে ,যে কেউ না পারলেও পারতে বাধ্য ।আর রান্নাটা কিন্তু মন্দ হয়নি দেখতে ।খুব ভালোই হয়েছে আর এই রান্নাটা আমার খুব প্রিয়। কারণ করতেও সময় কম লাগে আর মজাও ভালো ।
প্রথম বারেই বাজিমাত। পারব তাহলে রান্না মনে হচ্ছে।