আমার প্রিয় গ্রাম || "🌿 আমার বাংলা ব্লগ 🌾" এ দ্বিতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ
সূচনাঃ
গ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের বসবাসের প্রধান জায়গা। যদিও বর্তমান সময়ে শহরে অনেক মানুষ বসবাস করে থাকে কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা বইতে পড়ে এসেছি যে, এদেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ গ্রামে বাস করে। তাই গ্রাম কেন্দ্রিক হচ্ছে এদেশের বেশিরভাগ মানুষের বসবাস। আজকে আমি আমার গ্রাম সম্বন্ধে কিছু বিষয় এখানে শেয়ার করব যা আমার বাংলা ব্লগ
কমিউনিটির কনটেস্টে অংশগ্রহণের পোস্ট। আজকের কনটেস্টে আমি আমার নিজের গ্রাম অর্থাৎ যেখানে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং বেড়ে উঠেছি সেই গ্রাম নিয়েই বর্ণনা করব।
নাম ও অবস্থানঃ
আমার গ্রামের নাম হচ্ছে নেয়ামতকান্দি যেটি কিনা মুরাদনগর উপজেলায় কুমিল্লা জেলার বাংলাদেশে অবস্থিত। এটি একটি নিচু এলাকা অর্থাৎ চর এলাকার মত নিন্মভূমি যেখানে বর্ষাকালে ৪/৫ মাস মাঠে পানি থাকে। তবে বর্তমান সময়ে এই গ্রামের সাথে ঢাকা এবং কুমিল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। গ্রামের প্রকৃত অবস্থানের জন্য আমি অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমা রেখা এখানে শেয়ার করছি। অক্ষাংশ 23.58594466416885 ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা 90.8704412138314 ডিগ্রি পূর্ব।
প্রকৃতি পরিবেশঃ
আমাদের গ্রামটি অন্যান্য গ্রামের মতো সবুজ শ্যামল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। বাংলাদেশে দুই মাস পর পর ঋতু পরিবর্তন হয় আর সে কারণেই আমরা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রামের সৌন্দর্য্যকে অনেক কাছ থেকে উপভোগ করতে পারি। আমাদের গ্রামে বর্ষাকালে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস ধরে মাঠে জমিতে পানি থাকে। এ সময় কোন ফসলের আবাদ করা হয় না এবং শুধুমাত্র নৌকা চলাচল করে এবং এই রীতি বর্তমান সময়েও কিছুটা প্রচলিত আছে যদিও রাস্তাঘাট এখন অনেক উন্নত হয়েছে। আবার শীতকালে খেজুরের রস আরোহন করা এবং শীতের বিভিন্ন পিঠা পুলির আনন্দ সেটা গ্রামের পরিবেশে এখনো রয়ে গেছে।
ছোটবেলা থেকেই আমি এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মাঝে বড় হয়েছি এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রামের সৌন্দর্য্য যেমন পরিবর্তিত হয় পাশাপাশি ফলমূল শাকসবজি মানুষের কর্ম ব্যস্ততা সবকিছুই ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। আর এই পরিবর্তনের মাঝেই আমরা গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।
আমার গ্রামে কোন পাহাড় পর্বত নেই তবে সুন্দর একটি খাল এবং পাশে একটি নদী রয়েছে যার নাম গোমতী নদী। নদী ও খাল এর পানি দিয়ে চাষাবাদ করা খুব সহজ হয়। মাছ শিকারের জন্য আমার গ্রামটা অনেক বিখ্যাত কারণ যেহেতু বর্ষাকালে আশেপাশে পানি থাকে সুতরাং জমি থেকে এবং বিভিন্ন পুকুর থেকে প্রচুর মাছ সংগ্রহ করা হয়। বর্তমান সময়ে অনেক পুকুরে এবং জমিতে বানিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আগে মাছ আহরণ করা হত নদী ও খাল থেকে এবং বর্ষাকালে জমি থেকে।
জনসংখ্যা ও পেশা
আমার গ্রামের জনসংখ্যা চার হাজারেরও অধিক। এটা অন্যান্য গ্রাম গুলোর তুলনায় অনেক বড় একটি গ্রাম। মানুষের প্রধান পেশা হচ্ছে কৃষিকাজ করা পাশাপাশি কিছু লোকজন গ্রামের ভিতরে বিভিন্ন রকম ব্যবসার কাজে নিয়োজিত। গ্রামের জনসংখ্যার একটা ভালো অংশ যারা শহরে বিভিন্ন চাকরিতে রয়েছে। আর বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের মধ্যে কৃষি কাজ করে থাকে এবং অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের যুবক শ্রেনীর একটা ভালো অংশের মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছে প্রবাসী হিসেবে। তবে গ্রামে কোন শিল্প কারখানা নেই। তাই শিল্প কারখানায় কর্মরত হিসেবে যাদের পেশা রয়েছে তারা শহরের বিভিন্ন কাজকর্ম করে থাকেন যারা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না।
অবকাঠামোঃ
এক সময় নৌকাতে করে চলাচল প্রধান চলাচলের মধ্যাম হলেও বর্তমান সময়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢাকা শহর এবং কুমিল্লা শহরের সাথে অনেক উন্নত। পাকা রাস্তা দিয়ে উপজেলা শহর, জেলা শহর, বিভাগীয় শহর এবং রাজধানী শহরে সহজে যাতায়াত করা যায়। গ্রামের উপর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মিত হয়েছে যা দিয়ে বাস চলাচল করে এবং সেই বাসে করে উপজেলা শহর, জেলা শহর, বিভাগীয় শহর এবং রাজধানী শহরে খুব সহজে ও অল্প সময়ে যাতায়াত করা যায়।
আমাদের গ্রামে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই এবং কোন মহাবিদ্যালয়ও নেই। তবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুইটি মাদ্রাসা রয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য তিনটি মসজিদ রয়েছে। গ্রামে হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী একেবারে নেই বললেই চলে তাই কোনো এসব ধর্মের কোণ উপসনালয় নেই। আমাদের গ্রাম প্রায় সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ এর আওতায় রয়েছে তবে গ্যাসক্ষেত্র গ্রামের পাশে হওয়ার পরও এখনো গ্যাস সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। পানির জন্য প্রায় সারা গ্রামের অধিকাংশ বাড়ীতে নলকূপ রয়েছে এবং তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
গ্রামের মানুষের বাজার করার জন্য একটি বড় বাজার এবং একটি ছোট বাজার রয়েছে। সে বাজারে মোটামুটি সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।
মানুষজনঃ
গ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তারা খুব পরিশ্রমী এবং সহজ সরল প্রকৃতির। আমার গ্রামের মানুষের মধ্যে এর ভিন্নতা নয়। মানুষের আচার-আচরণ কথাবার্তা খুবই স্বাভাবিক এবং সহজ সরল। যে কেউ এখানে এসে অনেক বেশি আতিথেয়তা গ্রহণ করতে পারবে কারন মানুষ অতিথীকে খুব সম্মান করে এবং সহজভাবে বরণ করে নেয়। আমি আমার গ্রামেই বড় হয়েছি এবং সবচেয়ে বেশি ভালোলাগা গ্রামের মানুষদের জন্য কারণ তাদের কাছ থেকে সবসময় সহযোগিতা পেয়েছি বিভিন্নভাবে।
এখানে মানুষজনের খুব বেশি চাহিদা নেই। বরং অল্প এবং সামান্য কিছুতেই তারা তুষ্ট থাকে। আর যেহেতু গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই চাষাবাদের সাথে জড়িত তাই সবাই তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং শাকসবজি চাষাবাদ করে থাকে। তারপরও কারো জায়গা জমি কম থাকলে সে বাজার থেকে অল্প দামে পেয়ে যায় এবং চাহিদা পূরণ করে নেয়। সবচেয়ে ভালো কথা হচ্ছে মানুষজন খুব পরিশ্রম করে এবং আন্তরিক।
আনন্দ এবং বিনোদনঃ
গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। যেমন এখন কোপা আমেরিকা এবং ইউরো চলছে। এ অবস্থায় একটা মহল্লার সব মানুষ একত্রিত হয়ে একটি বড় টিভিতে ঘরের উঠোনে খেলা দেখবে এবং সবাই মিলে আনন্দ করবে এটাই হচ্ছে গ্রামের মজা। এতে আমি খুব ইনজয় করি যখন খেলার সময় গ্রামে থাকি। বিভিন্ন ক্রিকেট এবং ফুটবল ম্যাচ গুলোতে চারদিকে হৈ-হুল্লোড় এবং একসাথে হয়ে খেলা দেখার যে আনন্দ সেটা উপভোগ করতে সবাই ভালবাসে।
পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষ সময়ে যেমন বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময়গুলোতে গ্রামের ছেলেদের মধ্যে এবং পুরুষরা মিলে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করে সেটা ফুটবল কিংবা ক্রিকেট। সেক্ষেত্রে আমরা দেখি বিবাহিত এবং অবিবাহিত দের মধ্যে খেলা হয় আবার এক পাড়া বনাম অন্য পাড়ার মধ্যে খেলা হয় যাতে অনেক দর্শক হয় কারণ শুধু নিজের গ্রামের নয় বরং বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষজন এসে খেলা দেখে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আশেপাশের গ্রামের সাথে আমাদের গ্রামের মানুষের যোগাযোগ খুব ভালো এবং সহযোগিতার হাত একজন আরেকজনকে বিভিন্ন সময় বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন দুর্যোগ এবং সমস্যার সময়ে সব গ্রামবাসী একত্রিত হয় সেটাকে সমাধানের চেষ্টা করে এবং বর্ষাকালে কখনো ডাকাত দলের আক্রমণ হলে পুরো গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে পাহারা দেয় এবং সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এরকম একীভূত হওয়া এবং মিলেমিশে কাজ করার প্রবণতা গ্রামে পাওয়া যায় সেজন্য আমি গ্রামকে খুব পছন্দ করি।
শেষকথাঃ
প্রত্যেকে আমরা যেই গ্রামে বড় হয়েছে সেই গ্রাম ঘিরে অনেক মজার মজার স্মৃতি রয়েছে এবং সেই সবগুলো বিষয়কে অল্প কথায় এই ছোট পরিসরে শেয়ার করে শেষ করা সম্ভব হবে না। তদুপরি এই গ্রামে বড় হওয়ার সময় এই গ্রামের বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খেলাধুলা করা যেমন নৌকাভ্রমণ, সাঁতার কাটা আরও নানাবিধ কাজ কর্ম এবং খেলাধুলা সহ ঘুরাঘুরি করার স্মৃতি নিয়ে বড় হয়েছি। তাই আমার গ্রামের স্মৃতিগুলো আমার কাছে সারা জীবনের জন্য আমার স্মৃতির ক্যানভাসে অম্লান।
আমাকে কর্মস্থল এবং পড়াশুনার কাজে গ্রামের বাইরে থাকতে হয়েছে তবুও আমি গ্রামের জন্য সবসময় নস্টালজিক হয়ে যাই ও গ্রামে ফিরে যেতে চাই বার বার। তাই আজকে আমার গ্রাম সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু কথা শেয়ার করতে পারার জন্য আনন্দিত বোধ করছি এবং সবাইকে এই লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার গ্রাম সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনি এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন যেখানে কিছু তথ্য খুজে পাবেন।
এই পোস্টের সম্পুর্ন লিখা আমার নিজস্ব ও কোথায় থেকে কপি করা হয়নি। কোথাও হতে কোন তথ্য বা ছবি নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কে
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
আপনার লেখাগুলো অনেক গোছানো। আমার অনেক ভাল লাগে। আপনার গ্রাম সমন্ধে পড়ে অনেক ভাল লাগল।
ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ আমার লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
অনেক ভালো লিখেছেন। বেশ গোছানো
ভালো উপস্থাপনা করেছেন ভাইয়া
অসাধারণ ভাবে আপনি আপনার গ্রাম সম্পর্কে আমাদের সকলের কাছে তুলে ধরেছেন। অনেক ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ তোমাকে