স্বরচিত কবিতা: আমি স্টেশন থেকে বলছি। Original Poetry by @emran hasan
আমি স্টেশন থেকে বলছি, বার্ধক্যের ভারে আজ আমি দুচোখে আবছা দেখি। ছেড়া জামা-জুতা আমার পরার ভুষন, তবুও অমানুষ সন্তানদের ছেড়ে আসতে বাধ্য হলাম। স্ত্রী গত হবার পর থেকেই যেন সব কেমন বদলাতে থাকে। একসময় শুনতে পেলাম আমি নাকি আজ বোঝা হয়ে গেছি, আর তাদের অন্ন ধ্বংস করে চলেছি। নিজের চোখ আর কান বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কারন সব আমার গুছিয়ে দেয়া, তবে কিছু দিন আগেই তাদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন আমি নিঃস্ব তাই হয়তো আমাকে আর তাদের প্রয়োজন নেই। তুচ্ছতাচ্ছিল্য দিনের পর দিন। সবমিলিয়ে এমন পরিবেশ মনে হলো গলায় ধাক্কা পরবে, না আর সহ্য হলোনা বেরিয়ে পরেছি ধুলামাখা অজানা প্রান্তরে। কেউ আমাকে ঠায় দেইনি এতো মানুষের ভিড়ে। অবশেষে এই স্টেশনের এক কোনায় আজ আমার বসবাস।
আমি আজ ভিক্ষুক, দুবেলা খাবার জোটে না মাঝে মাঝেই তবুও কেউ বলার নেই আমি তাদের বোঝা। হঠাৎ কদিন ধরেই তীব্র কাশি লেগেই রয়েছে আর মাঝে মাঝেই জ্বর আসছে। ভিক্ষার থালাটা সামনে পরে থাকে যে যার মতো কিছু পয়সা ছড়িয়ে যায় ।
এই স্টেশনে কত মানুষ হেঁটে চলেছে কারোর আমার দিকে তাকানোর সময় নেই। তখন মনে পরলো আমার ঔরসজাত সন্তানদের কথা, এরাই নিশ্চয়ই তাদের মতোই আভিজাত্যে মোড়ানো অমানুষ। থাক আর ভাববো না, রাত হলেই যদি পঞ্চাশ টাকা থালায় জমে তাহলে রহিমের মা এক প্লেট খাবার দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে টাকা কম পেলে খাবার দিতে চায়না।
আজ বড্ড শীত পরেছে, শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। ছেড়া শার্ট ছাড়া কিছুই নেই, মনে মনে উপর ওয়ালাকে স্মরন করছিলাম যাতে যমদূত তাড়াতাড়ি এসে নিয়ে যায়। হঠাৎ মাঝ বয়সী এক যুবক এসে শরীরে কম্বল জড়িয়ে দিল, আর আমার ভিক্ষার থালায় একশো টাকা। মনে হলো একজন মানুষ দেখছি, চোখদুটো আমার জলে ভিজে এসেছে। আমি দুহাত সামনে প্রসারিত করে তারজন্য দোয়া করলাম। মানুষটা মুখে হাসি দিয়ে বললো চাচা আমি মাঝে মাঝেই এদিক দিয়ে যাই আর হঠাৎ আমার মনে হয়েছে আপনার একটা গরম কাপড় আর কম্বল দরকার বেশ ঠান্ডা পরেছে। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে মনে মনে বললাম ধন্য তোমার পিতা-মাতা এমন একটা সন্তান পেয়েছে, যার ভেতর মনুষ্যত্বের আলো বর্তমান। দোয়া অবিরাম বেঁচে থাকো দুনিয়ার বুকে সব অমানুষের ভিড়ে।
তোমরা কি আমায় দেখতে পাও?
ঐ যে ছেঁড়া জামা আর ধুলো মাখা গা
সেটাই আমি কুঁজো বৃদ্ধ বেচারা।
সব হারিয়ে আজ বড় কষ্টে রই
সন্তান আর বড় যত্নের সংসার
সবেতেই যেন আমায় নিয়ে হাহাকার।
জীবনের পথ আমার বড্ড সোজা
ধুলো মাখা ফুটপাত আর ভিক্ষার ঝুলি
দু-বেলা খাবার আজোও জুটেনি।
হয়তো তাড়াতাড়ি নেবে যমদূত
কষ্ট নেই আমার তবু মনের মাঝে
দোয়া করি সন্তানদের সকাল সাঝে।
প্রশ্ন জাগে আসলেই কি তারা মানুষ?
নাকি আধুনিকতার চাদর মোড়ানো
স্বার্থের বেড়াজালে বড় অভিনেতা?
যখন তীব্র শীত যেন কাঁপিয়ে হাড়
মাঝ বয়সী এক যুবক দাঁড়িয়ে
কম্বল দিল আমায় জড়িয়ে ।
আমি অবাক চোখে মানুষ দেখছি
চোখ দুটো আমার শুধুই ছলছল
মুখের ভাষা হারিয়ে আজ বিরল।
আজ আমি মানুষ দেখেছি
ধন্য তোমার সেই পিতা-মাতা
এমন সন্তান যারা করেছে লালন।
আমরা আভিজাত্যের চাদরে মোড়া মানুষ, চোখ আর মন সবসময়ই প্রাপ্তির সমীকরণ টানতে ব্যাস্ত থাকে। তবুও যদি সম্ভব হয় চোখ দুটো খোলা রেখে নিজের সামান্য সামর্থ্য দিয়ে একটি মানুষের একটু কষ্ট লাঘোব করা যায় তাহলে হয়তো অমানুষের খাতায় একটি নাম বাদ যেতে পারে। হয়তোবা পিতা-মাতা হয়ে উঠতে পারে মহিমান্বিত দানের উসিলায়। আর সম্পদ লোভী সন্তান হয়তো একটি ভুলের কারণে দোযখের খাতায় নাম লিখিয়ে দুনিয়াতে এর ফল ভোগ করবে। উপর ওয়ালা সবার বোঝার তৌফিক দান করুন।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1615641915541835776?t=XeDglTf5r_bw_5oZsbh7ew&s=19
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে প্রিয়জন হারিয়ে যায়। এটাই জীবনের বাস্তবতা। জীবন বড়ই অদ্ভুত। প্রিয় মানুষগুলো কিংবা কাছের মানুষগুলো যখন বদলে যায় তখন মানুষ অনেক অসহায় হয়ে যায়। হয়তো এভাবেই বেঁচে আছে হাজারো মানুষ। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে এবং কবিতা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। দারুন লিখেছেন আপনি।
অনেক ধন্যবাদ আপু আমার কবিতাটি পড়ার জন্য। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সম্পর্ক মূল্যহীন হয়ে পরে।
এখন তো ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে এভাবে বোঝা মনে করে তাড়িয়ে দেয়। যারা তাদের জন্য এত কিছু করেছে তাদের প্রয়োজন শেষ হলে তারা তাদেরকে বোঝা মনে করে। বাবা-মাকে কষ্ট দেয়। তারা কিছু খেতে এবং করতে না পেরে রাস্তার ধারে অথবা স্টেশনে গিয়ে বসে থাকে কিছু টাকার জন্য। আমাদের যতটুকু স্বার্থ আছে আমরা যদি ততটুকু দিয়ে চেষ্টা করি তাদেরকে কিছু দেওয়ার জন্য তাহলে তারাও কিছু পাবে এবং আমাদের নিজেদের কাছেও ভালো লাগবে। যাই হোক আপনার কবিতাটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। কবিতার টপিক টিও ভালোই ছিল। প্রত্যেকটি লাইন পড়েই ভালো লাগলো।
এখনকার সময়ে আসলে সবকিছু সম্ভব। যারা রাস্তায় বসবাস করে তাদের সবার এরকম অজস্র গল্প রয়েছে।
ধন্যবাদ আপু চমৎকার মন্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
যারা এভাবে নিজের আপন বাবা মাকে বোঝা মনে করে তারা কখনোই মানুষ হতে পারে না তারা এক একটা অমানুষ এটা আমাকে বলতেই হচ্ছে। সত্যিই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে প্রিয়জন হারিয়ে যায়। এটা আমাদের সবাইকে মানতেই হবে এটা একেবারেই সত্যি এবং বাস্তব কথা। "আমি স্টেশন থেকে বলছি"এই কবিতাটি সত্যি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে পড়ে। আসলে আমি কবিতা লিখতে যেমন পছন্দ করি পড়তে আরও বেশি পছন্দ করি। ভালোই লিখেছেন ধন্যবাদ।
এরকম অজস্র অমানুষ আমাদের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এদের জন্য এরকম গল্প তৈরি হচ্ছে। মানবতা বোধ সবার মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
কবিতাটি পড়ে অনেক খারাপ লেগেছে আর কবিতার পটভূমি তো দারুন লিখেছেন ভাইয়া।আপনি আজকে যা লিখেছেন তা হচ্ছে আমাদের আজকের বর্তমান সমাজের পরিস্থিতি এবং অবস্থা।এমন অমানুষ সন্তান নিজের মা-বাবাকে বোঝা মনে করেন শেষ বয়সে।আসলে আমাদের সকলের উচিত রাস্তার ধারে যারা ভিক্ষার থালা নিয়ে বসে থাকেন তাদের কিছু সহযোগিতার হাত বাড়ানোর।আপনার কবিতা এবং কবিতার পটভূমি পড়ে আমার মন ছুয়ে গেছে বলার আর কিছু নেই।ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি অনুভূতি মূলক কবিতা শেয়ার করার জন্য।
জি আপু আমাদের সবার উচিত তাদের যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা।
ধন্যবাদ আপু চমৎকার মন্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
পুরাই আউটস্ট্যান্ডিং হয়েছে ভাইয়া! সমাজের বাস্তব চিত্র এটা! রহিমের মতো কত ভিখারী আজ থালা নিয়ে বসে থাকে রেলস্টেশনে! রেলস্টেশনে আসার পিছনের ইতিহাসটাও সুদীর্ঘ! দীর্ঘশ্বাস শেষে বেচারা মনে করে তার মতো সুখী আর কেউ নেই! ভালো থাকুক মানুষগুলো! চমৎকার হয়েছে ভাইয়া কবিতাটি 💟🌼
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
চমৎকার মন্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
গল্পগুলো বেশ কষ্টের।
আসলে ভাই আপনি একেবারে বাস্তব কথাগুলো কবিতার ছন্দের মাধ্যমে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার লেখা কবিতার প্রতিটি ছন্দ হৃদয় গেঁথে গেছে। বিশেষ করে এই লাইন গুলো খুবই দুর্দান্ত মনে হয়েছে আমার কাছে
আসলে বাবা-মা কখনো বোঝা হতে পারে না। বোঝা যারা মনে করে তাদের মনুষত্ববোধ বিবেক বলতে কিছু নেই। তারা মানুষ রূপে নরক পশুতে রূপান্তর হয়েছে। কবিতায় টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
কিছু অমানুষের কাছে তারা বোঝা হয়ে যায়। এরা মানুষ রুপি হলেও মানুষ নয়।
ধন্যবাদ আমার কবিতাটি পড়ার জন্য।
আপনার কবিতার কথাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। কবিতাটিতে একদম বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ একটি বাস্তব ভিত্তিক কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।