স্বাধীনতা দিবস এবং আমার ভাবনা। || We are not free in 53 years.
We are not free in 53 years. |
---|
সবাইকে স্বাধীনতার দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। সত্যি বলতে এই দিনটা আসলে ভীষণ ভাবনায় পরে যাই। ১৯৭১ সালের এই দিনটাতে বীর বাঙালি ভয় ডর রেখে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধের ময়দানে শামিল হয়। সেদিন সাহসী বাঙালি শত্রু সেনাদের সামনে বুক ফুলিয়ে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে যায় এবং চৌকস গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। ৯ মাস ব্যাপী চলে এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। অবশেষে অজস্র মানুষের আত্মত্যাগ আর বলিদানের ফলে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
কিন্তু আজকে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে আমরা ঠিক কতটুকু স্বাধীন এবং কতটুকু স্বাধীন ভাবে এই সোনার বাংলাদেশে বসবাস করতে পারছি? এই প্রশ্নটা শুধু যে আমার মনে উঁকি দেয় তা কিন্তু নয়, আমার মত এরকম অসংখ্য মানুষ হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ায়।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা এই পাঁচ মৌলিক অধিকার আসলে কতটুকু মানুষ ভোগ করতে পারছে?
অবৈধ আরৎদারের দখলে খাদ্যের দাম :
সকালে যে খাবারটি ২০ টাকা দাম সেটি বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে হতেই ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়ে যায়। আমরা কোন দেশে বসবাস করি যেখানে একটি জিনিসের দাম রাতারাতি তিনগুণ হয়ে যেতে পারে। আমি এটাকে মগের মুল্লুকের দেশ বলে থাকি কারণ এখানে যে যার ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই করতে পারে। সেটা খাদ্যের দাম বাড়িয়ে হোক কিংবা ওষুধের দাম বাড়িয়ে। আমরা আজকে পরাধীন এই অবৈধ আরৎদার এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কবলে।
বস্ত্র শিল্প আজ হুমকির মুখে বিভিন্ন কারসাজিতে:
আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে বস্ত্র অন্যতম। অথচ প্রতিটি কাপড়-চোপড়ের দাম অনবরত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দিন দিন হুমকির মুখে চলে যাচ্ছে। হুট করে অগ্নি দুর্ঘটনা, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক কারসাজি সবমিলিয়ে আমাদের বস্তশিল্প দিন দিন হুমকির মুখে চলে যাচ্ছে। আমরা কি সত্যিই বস্ত্রশিল্পে স্বাধীন?
বাসস্থান ভূমি দস্যুদের দখলে:
অনেক মানুষ আছে যাদের বাসস্থান ভূমিদস্যদের দখলে চলে যাচ্ছে। এখনকার সময়ে যার সম্পদ রয়েছে তার আরো অঢেল সম্পদের প্রয়োজন। দেখবেন এরা রাজনৈতিক শক্তি খাটিয়ে ভূমি দখলের মত অবৈধ এবং অনৈতিক কাজ করে চলেছে একটি কুচক্রী মহল। দেখা যায় অনেক গরিব এবং অসহায় মানুষ এদের পাল্লায় পড়ে নিজেদের ভিটেমাটি হারাচ্ছে। ভূমি দস্যুরা কেড়ে নিয়েছে আমার বাসস্থানের স্বাধীনতা।
শিক্ষা এখন পাশ্চাত্যের আদলে রঙিন তকমা:
একটা সময়ে একজন শিক্ষিত মানুষের সাথে কথা বললেই বোঝা যেত সেই লোকটার জ্ঞানের পরিধি কতখানি। কিন্তু এখনকার সময়ে আপনি অনার্স কিংবা মাস্টার্স পাস একটি শিক্ষার্থী থেকে যদি বাংলাদেশের খুব সাধারণ কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন দেখবেন সে কিছুই জানে না। তাছাড়াও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে প্রকৃত শিক্ষা, মানবিকতা এবং সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনকার সময়ে ছাত্ররা শুধুমাত্র ডিগ্রী অর্জন করে কিন্তু শিক্ষার সঠিক আলো তাদের ভেতরে জাগ্রত হয় না। কারণ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের সন্তানদের দিন দিন বেয়ারা করে তুলেছে। আমরা পরাধীন পাশ্চাত্যেও শিক্ষা ব্যবস্থার কাছে।
চিকিৎসা এখন ডাক্তার নামক কসাইয়ের কাছে পরাধীন:
বাংলাদেশের অলিতে গলিতে এখন গড়ে উঠেছে ক্লিনিক সহ অসংখ্য ডাক্তারের চেম্বার। এ যেন এক লোভনীয় ব্যবসা যেখানে একজন চিকিৎসক তার ডিগ্রী এবং চিকিৎসার ধরণ নিয়ে প্রচুর মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করে থাকেন। কোন মতে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারলেই ঠিক কসাইয়ের মত রোগীর আর্থিক সক্ষমতার ওপর ছুরি চালাতে থাকে। যদি তার আর্থিক সক্ষমতা থাকে তাহলে তার চিকিৎসা হয় আর নয়তো তাকে ধুকে ধুঁকে মরতে হয়। এমনকি হাসপাতালে একটি লাশকে জিম্মি করা হয় শুধুমাত্র টাকা দিতে না পারলে। তাহলে আমরা জিম্মি এই ডাক্তার নামক কসাইয়ের কাছে।
আসলে আজকের কথা গুলো আমার নিজের কাছেও বলতে ভীষণ লজ্জা এবং কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস নিয়ে সবাই যেভাবে মাতামাতি করে সেটা আমার কাছে মোটেও সুখকর অনুভব হয় না। কারণ আমি আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা কোথাও দেখতে পাই না এবং সাধারণ মানুষদের যেভাবে কষ্টের মুখে পতিত হতে হয়, সেটা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সত্যি সহ্য করার মতো নয়।
যাইহোক একদিন হয়তো নতুন কোন সূর্যোদয় হবে সেদিন আইনের শাসন থাকবে এদেশে এবং মানুষ সত্যি স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করবে।
সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।
আমার কথাগুলো যদি কারো কাছে খারাপ লাগে তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। 🙏
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
, আপনার পোস্ট গুলো থেকে সব সময়ই শিক্ষা অর্জন করছি। উপরের কথা গুলো একদমই যথার্থ বলেছেন। বাংলাদেশ যে মগের মুল্লুকের দেশ এটা আসলে এখন কম বেশি সবাই জেনে গেছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চমৎকার একটি পোস্ট উপহার দিয়েছেন। আমরা শুধু নামের স্বাধীনতা পেয়েছি। তা ছাড়া কিছুই না। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকবেন।
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1772674082770715040?t=y9IV9BloLPW8Qiv8c2cKcA&s=19
আপনি আমাদের স্বাধীনতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উল্লেখ করে এটা নিয়ে আলোচনা করেছেন এটি পড়ে সত্যি আমার অনেক ভালো লেগেছে। আপনার চিন্তাভাবনাকে রেসপেক্ট করি ভাই ধন্যবাদ।
ভাই আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন তার উত্তর খুঁজতে গেলে কিন্তু আপনাকে জেল যেতে হবে। নামে স্বাধীন হলেও বর্তমানে যেন পরাধীন হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় আমরা কেউই পুরোপুরি আর স্বাধীনতা পাচ্ছিনা সেটা যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন।
জি ভাই আজকে এই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আপনার লেখা বাস্তবিক একটা ব্লগ পরলাম ৷ কথা গুলো ছিল ইউনিক এবং যথার্থ ৷ আসলে এ দেশ শুধু রক্ত দিয়ে স্বাধীন হয়েছে ৷ এর বেশি কিছু হয় নি ৷ দেশের যা অবস্থা বিশেষ সাধারন পরিবারের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে ৷ তবে আপনি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলো তুলে ধরেছেন ৷ বিশেষ শিক্ষা আর চিকিৎসা বিষয়ে সবচেয়ে দূর্বল বলে আমি মনে করি ৷ যা হোক অনেক সুন্দর সাজানো গোছানো ব্লগ উপস্থাপন করেছেন ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা
স্বাধীনতা ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও সত্যি আমরা এখনো পরাধীন হয়ে রয়েছি। কি বলবো ভাই বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। যেগুলো বলার দরকার ছিল ঠিক সেই কথাগুলো আপনি খুবই চমৎকার ভাবে লিখেছেন। আপনি যেগুলো লিখেছেন তা বাস্তবিক ভাবে লিখেছেন। প্রতিটা সেক্টরে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন, বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থাটাকে। যে স্বাধীনতা নিয়ে এত মাতামাতি করি আমরা কোথায় সেই স্বাধীন? এখনো আমরা পরাধীন হয়ে রয়েছি। এখন আমরা স্বাধীন নামের এই মিথ্যে কথাটির কাছে জিম্মি রয়েছি।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বেশ দারুন একটি পোষ্ট লিখেছেন। পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। তবে আপনি সবসময় বাস্তবকে কেন্দ্র করে কথা লিখেন। আর আপনার পোস্টগুলো শিক্ষামূলক হয়ে থাকে।আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আজকে আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছেন। আমাদের সকলের এই বিষয় গুলো নিয়ে চিন্তা করা দরকার, আজকে স্বাধীনতার বছরে এসে আমরা ঠিক কতটুকু স্বাধীন এবং কতটুকু স্বাধীন ভাবে এই সোনার বাংলাদেশে বসবাস করতে পারছি? কথায় আছে স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু তার যথাযথ ভাবে রক্ষা করতে পারছি না। আমরা আমাদের মৌলিক চাহিদার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি রীতিমতো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের শিক্ষামূলক পোস্ট তুলে ধরার জন্য।
আপনি আজকে কিছু বাস্তব কথা নিয়ে পোস্ট লিখেছেন। পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।ঠিক বলেছেন আপনি বাংলাদেশ মগের মুল্লুক বলেই আজ জিনিস পত্রের দাম যে যার মতো করে বিক্রি করে। স্বাধিন দেশে থেকেও আমরা স্বাধিনতার অধিকার আমরা পাচ্ছি না। যাইহোক বাস্তব কথা গুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।