গল্প: নিরব বাস্তবতা। (পর্ব - ০১)|| Story: silent reality.
রহিম সাহেব মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং কর্মঠ লোক বটে। বাবা-মা মারা গেছেন এক সড়ক দুর্ঘটনায়, আর ভাই-বোন না থাকায় তিনি অনেকটাই একা বড় হয়েছেন। বাবার রেখে যাওয়া একমাত্র বাড়িটাই তার সম্পদ। দোতলা বাড়িতে চারটা ফ্লাট, একটাতে তিনি বসবাস করছেন আর তিনটি ভাড়া দিয়ে তার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। লিখাপড়া শেষ করে এবার চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানি, কিন্তু তেমন ভালো চাকরি জোগাড় করতে পারছেন না। এদিকে বয়স বেড়ে চলেছে সংসার জীবন শুরু করতে হবে, তবে ভালো চাকরি ছাড়া কে মেয়ে দেবে তাকে। এভাবেই আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে সে একটি বড় কোম্পানিতে যায় এবং চাকরির জন্য তার জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে আসে।
রাতগুলো আজকাল বড্ড বড় একাকী জীবন আর ভালো লাগছেনা, ঘুম যেন চোখের পাতায় আসতেই চায় না। কি হবে তার জীবনে? পৃথিবীতে এমন কেউ কি নেই যে তাকে ভালোবাসবে আর মায়ায় আঁকড়ে ধরবে। রহমান কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে বলতেই পারবেনা। হঠাৎ সকাল দশটায় তার মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। অপরিচিত তবে কর্পোরেট নাম্বার মনে হয়েছে তার কাছে। ফোন রিসিভ করা মাত্রই হ্যালো আপনি কি রহিম সাহেব বলেছেন? ঘুম জড়ানো কন্ঠে জি বলছি। অপর পাশ থেকে - আপনি আমাদের কোম্পানিতে জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে গেছেন এবং আমরা আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য মনোনীত করেছি।
আগামীকাল সকাল দশটায় আমাদের অফিসে আসুন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে। রহিম বললো ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ আগামীকাল অফিসে আসবো
রহিম আসলে এতোটা খুশি হতে পারছেনা কারন এরকম ইন্টারভিউ সে আগেও দিয়েছে তবে লাভ হয়নি। যাক কি আর করা সে আগামীকাল আবারো সাক্ষাৎকার দেবে। কি রেখেছেন উপর ওয়ালা তার ভাগ্যে তিনি তাই বুঝতে পারছেন না।
সকাল নয়টার মধ্যে রহিম নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে, বেশ ছিমছাম সুন্দর বলা যেতে পারে তাকে। যথারীতি বাবা মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া নিয়েছে। দশটার ঠিক পনেরো মিনিট আগে সেই কোম্পানিতে উপস্থিত হয়েছে। অবাক ব্যাপার সে ছাড়া ওখানে আর কোন চাকরি প্রার্থী দেখা যাচ্ছে না, তাহলে কি শুধু মাত্র তাকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে?
হঠাৎ তার ডাক পরলো সাক্ষাৎকারের জন্য সরাসরি কোম্পানির মালিক তার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন, রহিম অবাক হলো কারন কোন বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক এভাবে কারও সাথে সরাসরি কথা বলে না। রহিম ভেতরে প্রবেশ করেই সালাম দিয়ে বসার অনুমতি চায়। সোহেল সাহেব রহিমের দিকে হাসি মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে এবং রহিমকে বসার অনুমতি দিয়েছে। প্রথমেই তাকে জিঙ্গেস করা হলো তোমার বাবা রমজান কেমন আছেন? রহমান বেশ অবাক হয়ে গেছে, সে বললো আপনি আমার বাবাকে চেনেন? হ্যা আমরা ছোটবেলার বন্ধু এবং একটা সময় তোমার বাবা আমার অনেক উপকার করেছেন। বলা যায় তার সহযোগীতা ছাড়া আমার এই অবস্থানে আসা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।
রহিমের চোখ বেঁয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, সে বললো বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। তারা এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, আমি এখন এতিম। সোহেল সাহেব নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। কারন যে মানুষটি তার অনেক বড় উপকার করেছে সে আজ বেঁচে নেই আর তার সন্তান চোখের সামনে কাঁদছে। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে রহিমকে বুকে জড়িয়ে নেয় এবং সান্তনা দেন। তিনি বলেন বাবা তুমি আজ থেকে এতিম নও আমি তোমার পিতার মতো। গতকাল হঠাৎ ফাইল ঘাটতে গিয়ে তোমার জীবন বৃত্তান্ত দেখতে পাই এবং দ্রুত তোমাকে আসতে বলি, যাইহোক তুমি আজ থেকে আমার কোম্পানীর একজন। তোমাকে আমি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিলাম এবং দায়িত্ব কাল থেকে বুঝে নেবে।
হঠাৎ দুজনের কথার মাঝখানে মিষ্টি দেখতে মেয়ের প্রবেশ ঘটলো। বাবা বলে সোহেল সাহেবের দিকে এগিয়ে আসছেন। এটা হচ্ছে উর্মি সোহেল সাহেবের একমাত্র মেয়ে। হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1717128537508098282?t=smST_EE4lvrzJPgdn_6JQQ&s=19
রহিম সাহেব যাক অবশেষে চাকরি পেলো। শেষের দিকে গিয়ে তো সোহেল সাহেবের একমাত্র মেয়ের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। আমার তো মনে হচ্ছে পরের পর্বের মধ্যে রোমান্টিক কিছু গল্প আস্তে চলেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।