মাটির ব্যাংক। চলুন বাচ্চাদের সঞ্চয় শেখাই।|| Let's teach kids saving.
চলুন বাচ্চাদের সঞ্চয় শেখাই |
---|
ইদানিং পৃথিবীর মাটিতে প্রতিটি পা ফেললে এখন টাকার প্রয়োজন পরে। মানে হচ্ছে টাকা ছাড়া আপনি চলাফেরা করতে পারবেন না। এখন পরিস্থিতি দিনদিন এমন হয়ে যাচ্ছে, আমাদের আয়ের থেকে ব্যায়ের পরিমাণ বেশি। আর আমরাও দিনদিনই সেই ব্যায়ের সাগরে নিজেদের গা ভাসিয়ে দিয়ে ঋণের বোঝা বাড়িয়ে চলেছি। আসলে মূল ঘটনাটা হলো আমরা সঞ্চয়ের মানসিকতা হারিয়েছি এবং অপব্যায়ের দিকে ঝুঁকে পরেছি। আমাদের ভেতরে যদি সঞ্চয়ের মানসিকতা থাকে তাহলে আমরা আমাদের সীমিত আয়ের মাঝেও ভালো থাকতে পারবো এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু সম্বল জমিয়ে রাখতে পারব।
এখনকার সময়ে আমরা আমাদের সন্তানদের অভাব বোধ বুঝতে দেই না। তাছাড়াও তাদের চাহিদার তুলনায় অঢেল জিনিস দিয়ে তাদের অপব্যয়ের অভ্যাস তৈরি করে ফেলছি। যার ফলশ্রুতিতে একটা সময়ে সেই সন্তান অপব্যয়ের সাগরে গা ভাসিয়ে দেয়। আমাদের উচিত সন্তানদের তাদের প্রয়োজন অনুসারে সবকিছু দেয়া এবং সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি করা। সঞ্চয়ের মানসিকতা এমন একটি বিষয় যা আপনি আপনার সন্তানকে শেখাতে পারেন এবং এটি তার ভবিষ্যতের জন্য খুব ভালো কিছু বয়ে আনবে।
আমি আমার সন্তানদের সবসময়ই সঞ্চয়ের বিষয়ে শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের ইলমা প্রতিনিয়ত তার টিফিনের টাকা, ঈদ সালামি এবং আমার দেওয়া উপহারের টাকাগুলো জমিয়ে রাখে। বেশ কিছুদিন আগে কেনা একটি প্লাস্টিকের ব্যাংকে ইলমা এতদিন টাকা জমিয়ে আসছিল। হঠাৎ করে সে আমাকে জানায় তার প্লাস্টিকের ব্যাংকটি ভর্তি হয়ে গেছে এবং তাকে যেন আমি একটি বড় মাটির ব্যাংক কিনে এনে দেই। সত্যি বলতে কথাটি শুনে আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল এবং একটু সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম কখন আমি তাকে একটি মাটির ব্যাংক উপহার দেব।
গত শুক্রবার আমার অফিসের কাজের চাপ কম থাকায় ইয়ানকে নিয়ে মাটির ব্যাংক কিনতে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সত্যি বলতে এখনকার সময়ে মাটির জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া যেমন কষ্টের তেমনি বেশ দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে হয়। আমাদের ভালুকাতে মাত্র দুটি দোকান খুঁজে পেলাম যেখানে মাটি এবং বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হয়।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
সত্যি বলতে অনেকদিন পর মাটি এবং বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। আর আমাদের ইয়ানের কাছে এগুলো একদমই নতুন কিছু সে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
আমার কাছে এই মাটির ব্যাংকটি ভীষণ ভালো লেগেছিল বিশেষ করে ডিজাইন এবং আকৃতি একদমই অন্যরকম ছিল। কিন্তু এটার আকার ছোট হওয়াতে এটা কেনার সিদ্ধান্ত বাদ দিলাম।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
এরপর মাটির বড় এই ব্যাংকটি পছন্দ করলাম এবং কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। এটির দাম জানতে চাওয়াতে দোকানদার আমার কাছে আড়াইশো টাকা চেয়ে বসেন। আমি তো বেশ অবাক হয়ে গেলাম কারণ মাটির জিনিসের এত টাকা দাম হতেই পারে না। অবশেষে বেশ কিছুটা দর কষাকষির পর দুইশত টাকা দিয়ে এই চমৎকার নকশা করা মাটির ব্যাংকটি কিনে নিলাম। ইয়ানের হাতে মাটির ব্যাংকটি তুলে দেওয়ার সাথে সাথে তার আনন্দ দেখার মতো ছিল।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
মাটির ব্যাংক কেনার পর সোজা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে এলাম। এবার পুরনো ব্যাংক এবং নতুন ব্যাংক পাশাপাশি রেখে ছবি তুললাম কারণ পুরনো ব্যাংক কেটে সমস্ত টাকা বের করে নতুনটায় আবার জমাতে হবে।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
এবার হলো সব থেকে আনন্দের সময় আমরা আমাদের পুরনো ব্যাংক কেটে সব টাকা বের করতে থাকলাম। এক একটি টাকার নোট বের হচ্ছে আর আমাদের ইলমা ইয়ানের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। সর্বসাকুল্যে আমরা পুরনো ব্যাংক থেকে তিন হাজার টাকার মত পেয়েছি যা সত্যিই আশ্চর্যজনক ঘটনা। কারণ এর পুরোটাই ইলমা নিজের হাতে জমিয়েছে। আমরা বেশ অবাক হয়ে গেলাম। ইলমার জমানো সেই অল্প অল্প টাকাগুলো আজকে বেশ বড় একটি অ্যামাউন্টে পরিণত হয়েছে।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
এবার চলে এলো সেই আনন্দের মুহূর্ত ইলমা এবং ইয়ান দুজনে মিলে নতুন ব্যাংকে টাকা ঢুকানো শুরু করেছে। দুজনের আনন্দ সত্যি দেখার মত ছিল। ইলমা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে সে প্রতিনিয়ত টাকা জমাতে থাকবে। তার টাকা সঞ্চয়ের এই প্রত্যয় দেখে আমার কাছে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো। সত্যিই দিনশেষে তাদের এই কর্মকান্ড দেখে আমি আনন্দিত। আপনারা দোয়া করবেন যেন ইলমা এই মাটির ব্যাংকে বেশ বড় অ্যামাউন্টের টাকা সঞ্চয় করতে পারে।
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
এখনি সময় বাচ্চাদের সঞ্চয় শেখানোর। কেননা তারা এ বয়সে যা দেখবে তাই শিখবে। এখনি সময় টাকার মূল্য বোঝানো। ইয়ান পুরাতন ব্যাংক থেকে তিন হাজার টাকার মত পেয়েছে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। আপনি দুইশত টাকা দিয়ে চমৎকার নকশা করা মাটির ব্যাংক কিনেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। এখন থেকে ইলমা ও ইয়ান এই মাটির ব্যাংকে বেশ বড় অ্যামাউন্টের টাকা সঞ্চয় করতে পারবে আশাকরি। দারুন একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ তোমাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আসলে চেষ্টা করে যাচ্ছি বাচ্চাদের কিছু কিছু জিনিস শেখানোর জন্য। আশাকরি তারা সঞ্চয়ের মতো বিষয়গুলো শিখতে পারবে।
মাটির ব্যাংক দেখে ছোট বেলায় স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। যখন এধরনের ব্যাংক গুলো কম পাওয়া যেতো আমি এসময়ে ঘরের মধ্যে যে বাঁশের খুঁটি ছিলো সেটা কেটে ব্যাংক তৈরি করেছিলাম। বেশ ভালো টাকা জমিয়ে ছিলাম। আজকে দেখছি ইয়ান কে নিয়ে অনেক সুন্দর একটি মাটির ব্যাংক কিনেছেন। আসলে এধরনের মাটির তৈরি জিনিস গুলো এখন খুব কম দেখা যায়। ইমলা দেখছি পুরোনো ব্যাংকে বেশ ভালো টাকাই জমিয়েছে। ইয়ান এবং ইলমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা ভীষণ খুশি। আসলে বাচ্চাদের ছোট বেলায় থেকে এসব শেখানো উচিত। খুব ভালো কাজ করেছেন নতুন আর একটি মাটির ব্যাংক কিনে দিয়ে। বর্তমান যে অবস্থা টাকা ছাড়া চলা মুশকিল। আপনার পোস্ট পড়ে এবং ইয়ান এবং ইলমার হাসি মাখা মুখ দেখে খুশি হলাম। আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকবেন।
বাচ্চাদের এগুলো শেখানো উচিত। তাই এই পদক্ষেপ নিলাম। আশাকরি ওরা এই ব্যাংকে অনেকগুলো টাকা জমাতে সক্ষম হবে।
ধন্যবাদ তোমাকে মন্তব্যের জন্য।
এক সময় যখন ছোট ছিলাম এরকম মাটির ব্যাংক কিনে টাকা জমাতাম। তবে এখন মাটির জিনিসের এত দাম, সবশেষে ২০০ টাকা দিয়ে এই মাটির ব্যাংক কিনেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে ইলমা আর ইয়ান ব্যাংকের মধ্যে ৩ হাজার টাকা জমিয়েছিল।
জি ভাই, আমি অবাক হয়েছি। কারন এই ছোট্ট ব্যাংকে তিন হাজার টাকা জমিয়ে ফেলেছে ওরা।
বাচ্চাদের সঞ্চয়ী করে তোলা আমাদের ই কাজ।আমিও সেদিন নিউ মার্কেট থেকে মাটির ব্যাংক কিনেছিলাম নিজের জন্য। আপনার ব্যাংকের চেয়ে ছোট তাই ৮০ টাকা নিলো।আজকাল সবকিছুর দাম বাড়তি।ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টাকা জমে আজ এতোগুলো টাকা।দুজনেই বেশ আনন্দিত।ভনেক ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে। ধন্যবাদ ভাইয়া চমৎকার অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
আপনিও একটা মাটির ব্যাংক কিনেছেন জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে বাচ্চাদের সবকিছু শেখাতে হয়, তাই এই উদ্যোগ নিলাম।
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1790460419636871656?t=TU3SmKJs5OABdtHwoEpPYA&s=19
ঠিক বলেছেন ভাইয়া বাচ্চাদের সঞ্চয়ী করা শেখানো উচিত। আমার মেয়েও তার সব উপহারের টাকা প্লাস্টিকের ব্যাংকে ভরে রাখে।আপনার মেয়ে টিফিনের টাকাও জমিয়ে রাখে জেনে খুব ভালো লাগলো।ছোট হাত দিয়ে দেখছি একটু একটু করে অনেক গুলো টাকা জমিয়ে ফেলেছে মামনিটা।শুভকামনা মামনিও বাবুর জন্য। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
জি আপু, আমরা বাচ্চাদের যেভাবে গড়ে তুলবো তারা ঠিক সেভাবেই বড় হবে। চেষ্টা করছি ওদের সঞ্চয় করার মানসিকতা তৈরি করার। দোয়া করবেন আপু।
আমাদের প্রতিনিয়তই টাকা সঞ্চয় করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টাকা ছাড়া এখন আমরা একেবারেই অচল হয়ে যাবো। টাকা কিন্তু সত্যি আমাদের জীবনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আমি তো আগে সব সময় ঢাকা সঞ্চয় করতাম। বিয়ের প্রথম প্রথম অনেক টাকা সঞ্চয় করেছি অনেক বছর পর্যন্ত। শেষের জমানো টাকাগুলো ব্যাংক কেটে নেওয়ার পরে, এখনো ব্যাংক কেনা হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই একটা ব্যাংক কিনবো। আপনার মেয়ের টাকা সঞ্জয়ের বিষয়টা দেখে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। বাচ্চাদেরকে এটা ভালোভাবেই শিখাচ্ছেন দেখে ভালো লাগলো। টাকা সঞ্চয় করার অভ্যাসটা কিন্তু অনেক ভালো।
অনেক ধন্যবাদ আপু।
আপনিও টাকা সঞ্চয় করেন জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন আপু।
টাকা সঞ্চয় করার কাজটা আমার কাছে সব সময় অনেক বেশি ভালো লাগে। টাকা সঞ্চয় করার অভ্যাসটা সবারই ছোট থেকে থাকা উচিত। আপনার বাচ্চাদের এই অভ্যাসটা আস্তে আস্তে হচ্ছে এটা দেখে তো খুব ভালো লেগেছে। আপনার মেয়ে তো দেখছি অনেক বেশি আগ্রহী টাকা সঞ্চয় করার জন্য। আপনি আপনার মেয়েকে নতুন করে একটা মাটির ব্যাংক কিনে দিয়েছেন দেখে অনেক ভালো লেগেছে। আপনার দুই ছেলে মেয়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। তাদের কারো বেশি বেশি উৎসাহিত করবেন এই কাজটা করার জন্য।
ছোট বাচ্চাদের সঞ্চয় শেখানোটা সত্যি গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে তারা ছোট থেকে সঞ্চয় করা শিখবে। অপ্রয়োজনে টাকা অপচয় করবে না। মাটির জিনিসগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমন দামটাও একটু বেশি হয়। আপনার মাটির ব্যাংক টা দেখে বেশ ভালো লাগলো। তারা দুজনেই আগের ব্যাংকে বেশ ভালোই টাকা জমিয়েছে। শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য।