বিশ্ব শিশু শ্রম নিরসন দিবস || বাস্তবতা শিশুদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বিশ্ব শিশু শ্রম নিরসন দিবস
"বাস্তবতা শিশুদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলে"


pexels-pixabay-47080.jpg

সংগ্রহশালা

"বিষাদময় সুত্রপাত"


সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক শুরু করছি। গতকাল ছিল বিশ্ব শিশু শ্রম নিরসন দিবস। আমি গতকাল চেয়েছিলাম বিষয়টি নিয়ে লিখতে কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য লিখতে পারিনি আজ লিখছি। সত্যি বলতে এই বিষয়টি নিয়ে লিখার একটা তাগিদ ভেতর থেকে পাচ্ছিলাম। বিষটিকে যদিও আমাদের সমাজের মানুষেরা ভীষণ সহজ এবং স্বাভাবিক ভাবে নেয় কিন্তু প্রতিটি শিশু শ্রমের মধ্যেই রয়েছে কিছু বেদনাদায়ক এমনকি ভয়ংকর কাহিনী। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অনেকটাই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

শিশু শ্রম কি ?

child-labor-934893_640.jpg

সংগ্রহশালা

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী কোন শিশুকে দিয়ে কাজ করানো হলে তাকে শিশু শ্রম হিসেবে গন্য করা হয়। বাস্তব প্রেক্ষাপটে দশ-বারো বছরের বাচ্চাদের কাজ করতে দেখা যায় প্রায়ই। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ইচ্ছে করে কম বেতনে বেশ কিছু শিশু শ্রমিক রাখা হয়। যেখানে তাদের নূন্যতম মানবিকতা দেখানো হয়না। বরংচ কাজ করিয়ে নেয়া হয় বুকের উপর পা উঠিয়ে দিয়ে। বাস্তবতা এর থেকেও অনেক নির্মম।

শিশুরা কেন কাজে যোগদান করে ?

শিশুদের কাজে আসার প্রধানতম কারণ হচ্ছে পিতা-মাতার আর্থিক অসচ্ছলতা। একটি পরিবারের পিতা-মাতা যখন তার সন্তানদের খাদ্য বস্ত্রের মতো মৌলিক অধিকারগুলো যখন পূরন করতে ব্যার্থ হয় তখন শিশুটিকে কাজে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে পরিবার শিশুটির ক্ষেত্রে অসহায় ভূমিকা পালন করে। অবশেষে সেই শিশুটি তার শারীরিক শক্তি ছাপিয়ে পেটের খিদে মেটানোর বড় বোঝা মাথায় নিয়ে কাজে নেমে পরে যা তার সক্ষমতার বাইরে।

শিশুশ্রমে চরম বৈষম্য

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন শিশু শ্রমিকে তার কাজের অবমূল্যায়ন করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে তার পারিশ্রমিক সাধারণ কর্মচারীর অর্ধেক কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগও দিতে দেখা যায়। অথচ কাজের কর্ম ঘন্টা সমান দিতে হয়। হয়তো তার ছোট্ট দুটি হাতের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করেও বড়দের সমান কাজ দিতে না পারলেও তার শারীরিক সক্ষমতার বাইরে তাকে পরিক্ষা চালিয়ে যেতে হয় জীবনের সাথে। তবুও সীমাহীন বৈষম্যের শিকার এই ছোট্ট শিশু শ্রমিকগুলো।

শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ

pexels-kat-smith-551590.jpg

সংগ্রহশালা

মাঝে মাঝেই সরব হয়ে ওঠে মিডিয়াগুলো, কিভাবে অমানবিক নির্যাতনের ফলে একজন শিশু শ্রমিক মারা গেছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয় অমানবিকতা কারনে। সবথেকে বেদনাদায়ক লাগে যখন শুনি বিভিন্ন অদ্ভুত কায়দায় শিশুটিকে মেরে ফেলা হলো কখনো তার পায়ুপথে বাতাস দিয়ে, কখনোবা শেকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনে। আসলে ঘটনাটা ঘটে যখন একজন শিশু বড়দের মতো করে নিজের সক্ষমতা দেখাতে পারেনা ঠিক তার পরপরই শুরু হয়ে যায় নির্মমতা। কিন্তু বিবেকহীন অমানুষ কখনো কি চিন্তা করে আদৌ কি তা সম্ভব। নিজেদের ক্রোধ আর বর্বরতার চরম রুপ দেখাতে বুক এতোটুকু কেঁপে ওঠে না এই ছোট্ট শিশুগুলোর উপর।

পরিশেষে মানবিক হবার অনুরোধ 🙏

দেখুন যে যাই বলুক বাংলাদেশে উন্নয়নের চরম শিখড়ে পৌঁছে গেছে, আমি তা মানতে নারাজ। কারন এখনো আপনি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে আর শহরের গলিতে খাবারের কষ্টের হাহাকার শুনতে পাবেন। কোন পরিবার কখনো চায়না তার ছোট্ট শিশু খিদের তাড়নায় কাজে যাক। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা তাদের কাজে যেতে বাধ্য করে। তাই শিশু শ্রম আমাদের দেশে বন্ধ করতে হলে দরকার টেকসই উন্নয়ন যেখানে খাদ্য, বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত হবে। আর যারা শিশুদের উপর এধরনের অমানবিক নির্যাতন করবে তাদের আইনের আওতায় এনে চরম শাস্তির ব্যাবস্থা করতে হবে, না হলে এই পাষন্ড আচরন কখনো দমানো যাবেনা। আমি শিশু শ্রমের বিরোধী তবে যারা শিশু শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন তাদের অনুরোধ জানাতে চাই। মানবিক হোন আর মানুষের চিহ্নটুকু নিজের আচরণের মধ্যে রাখুন। 🙏

Sort:  
 2 years ago 

হুম আমি দেখেছি,বেশির ভাগ লেগুনা এর কন্টেকটর বাচ্চা নেয়,তাদের কম টাকা দিয়ে রাখা যায়।যাই হোক আসলেই আমাদের অনেকের মানবিক হওয়া উচিত,অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াতে হবে।শিশুদের হাতে কাজ তোলে না দিয়ে হাতে বই দেওয়া উচিত।ধন্যবাদ

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু চমৎকার মতামতের জন্য।
আসলে যে শিশুগুলো রাস্তায় নামে তারা অধিকাংশই খিদের তাড়নায় নামে কারন তার পরিবারের সক্ষমতা থাকেনা।

 2 years ago 

হুম আমি দেখেছি,বেশির ভাগ লেগুনা এর কন্টেকটর বাচ্চা নেয়,তাদের কম টাকা দিয়ে রাখা যায়।যাই হোক আসলেই আমাদের অনেকের মানবিক হওয়া উচিত,অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াতে হবে।শিশুদের হাতে কাজ তোলে না দিয়ে হাতে বই দেওয়া উচিত।ধন্যবাদ

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া আপনার মনে তাগিদ দিয়েছে শিশুশ্রম সম্পর্কে কিছু লিখবেন এ বিষয়টি ছিল দারুণ এবং দুর্দান্ত। শিশুশ্রম নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। আমি মনে করি বাংলাদেশ শিশুশ্রমের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। আমাদের সমাজ এবং দারিদ্রতা যেখানে শিশু দের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় কাজের বোঝা। আবার অনেক সময় দেখা গেছে নির্যাতিত হয়ে মেডিকেলের বেডে পড়ে আছে আবার অনেকের মেডিকেলের স্থান হয় না। মাঝে মাঝে পত্রিকার কণ্ঠগুলো জেগে উঠল আবার নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের সব ধরনের আইন আছে কিন্তু আইন প্রণয়নের কোন ব্যবস্থা নেই এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। কেন আমার মনে হয় ৫/৬ বছরের শিশু আশ্রম করে। যেখানে আমরা শুধু মুখ ঢেকে যাচ্ছি, এতে করে যে কাজ করাচ্ছে তার দোষ নয় যে কাজ করছে তার দোষারোপ করা হচ্ছে। আপনার আমার আমাদের সমাজে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা যদি ঠিক হয় তাহলে শিশুশ্রম অটোমেটিকেলি বন্ধ হয়ে যাবে। শুভেচ্ছা রইল শিশু শ্রম দিবস উপলক্ষে শিশুশ্রমের বিষয়বস্তুগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই মূল্যবান মতামতের জন্য।
সত্যি বলতে আমাদের সমাজ ব্যাবস্থার তীব্র অনিয়ম এবং দূর্নীতির কারনে খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ছে যার কারনে অনেক শিশু রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে। তবে যারা কাজ করছে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা উচিত সবার।

 2 years ago 

বড়দের তুলনায় ছোট ছোট শিশুদেরই এখন কর্মস্থলে বেশি দেখা যায়।বিশেষ করে,বিভিন্ন দোকানে,বাসে ট্রাকে,বিভিন্ন কারখানায়।
দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোর সন্তানদেরই দেখা যায় শিশুশ্রমে।
মালিকদের পাশবিক অত্যাচার,পারিশ্রমিক বৈষম্য এগুলো হরহামেশাই ঘটছে তাদের সাথে।একটা দেশে বড় বড় সেতু,টাওয়ার,মেশিন গড়ে উঠলেই দেশ উন্নত হয়ে যায়না,সব আগে দরকার মানুষের উন্নত মানসিকতা এবং বিবেক।
ভালো দিক তুলে ধরেছেন,দিনশেষে আমাদের মানবিক আচরণই পারে এর প্রতিকার হিসেবে কাজ করতে।
ভালোবাসা নিয়েন 🥰

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই মূল্যবান মতামতের জন্য।
আপনার প্রতিটি কথা যুক্তিযুক্ত ছিল।
আমিও মনে করি যখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবে একমাত্র তখন আমরা উন্নয়ন হয়েছে বুঝতে পারবো। চাই টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাবস্থা।
ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

আমিও আপনার সাথে একমত, শিশুদের শ্রমের বিরোধী হওয়া উচিত। সত্যি এক জায়গায় এমনও দেখা যায় শিশুদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার করা হয়। তাছাড়া এত খারাপ ভাষায় আচরণ করা হয় তা বলার বাহিরে। আসলেই আমাদের এই সব আচরণ পরিহার করা উচিত। কেন যে মানুষ এরকম তা বুঝতে পারেনা। এখনতো মানবিক মানুষ খুঁজে পাওয়াও কঠিন। সবাই যদি আপনার এই কথাগুলো মেনে নিত তাহলে নাজানি কত সুন্দর হতো।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু মূল্যবান মতামতের জন্য।
আপু সমাজে মানুষের সাথে সাথে কিছু অমানুষ বসবাস করে। যারা আপনার আমার মতো দেখতে কিন্তু তাদের আচরণ ভীষণ অমানবিক।
যাক আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুন।
ভালো থাকুন দোয়া রইল 🥀

 2 years ago 

শিশুর শ্রম দিবস দীর্ঘ দিন ধরে পালন করা হয়ে আসছে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের শিশুশ্রম বন্ধ হয়নি। এটাই বড় দুঃখ জনক।

 2 years ago 

আমি মনে করি শিশু শ্রমের অন্যতম প্রধান কারণ দারিদ্রতা। দারিদ্রতার কারণে শিশুরা কর্মস্থলে যায় আর মালিকেরা শিশুদের দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেই। ফলশ্রুতিতে প্রাপ্য টাকাটাও পায় না । তবে বাংলাদেশে শিশুশ্রম আগের থেকে কম। অদূর ভবিষ্যৎ এ আশা করি হ্রাস পাবে। ধন্যবাদ আপনাকে বর্তমান সময়ের আলোকে কিছু কথা শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

সত্যিই তাই দারিদ্রতা মূল কারণ শিশু শ্রমের।
আর কর্মক্ষত্রে ওদের বেশ ‌‌নির্যাতন করা হয়।
আসলে নিজের তাগিদেই পোস্টটি লিখা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60202.34
ETH 2423.33
USDT 1.00
SBD 2.43