"উপকারী গাছের ছাল থাকেনা"। Beneficial plants do not have bark."

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago
"উপকারী গাছের ছাল থাকেনা"

ছবিটি কেনভা দিয়ে তৈরি

আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় মানুষের উপকার করলে বিপদে পরতে হয়। যেমন উপকারী গাছের ছাল থাকে না তেমনি অন্যের ভালো চাওয়া মানুষ গুলোকে বিপদে পরতে হয় বারংবার। উপকারী গাছ অর্জুনের যেমন ছাল তুলে ফেলা হয় কিংবা কেটে ফেলার পায়তারা করা হয়, ঠিক তেমনি ভালো মানুষ গুলোকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করা হয়।

একটা সময়ে একজন মানুষ বিপদে পরলে দশজন মানুষ এগিয়ে আসতো এবং বিপদ থেকে উদ্ধার করতো। আর এখনকার সময়ে বিপদে পরলে একজন মানুষ পাওয়া যায় না সহযোগিতা করার মতো, উল্টো বিপদে পরার দৃশ্য সুন্দর করে ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের ঘৃন্য প্রতিযোগিতা চলে। ব্যাপারটা শুধুমাত্র হাস্যকর নয়, ঘৃন্য এবং হৃদয়বিদারক। মানুষ বিপদে পরলে কি চায়? একটু সহযোগিতা কিন্তু এখনকার মানুষ সেটা করতে নারাজ, ফলস্বরূপ বিভিন্ন অস্বাভাবিক মৃত্যু কিংবা অপৃতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহ।

এখন ধরুন কোন একজন মানুষ ছুটে এসেছে সহযোগিতা করার জন্য, দেখা যায় তাকে সাহায্য করে আবার বিভিন্ন ভাবে হেনস্থার মধ্যে পরতে হয়। এমনকি পুলিশি ঝামেলা সহ বিভিন্ন অপৃতিকর অবস্থায় পরতে হয়। তাছাড়াও যার উপকার করার চেষ্টা করছেন দেখা যায় সেই ব্যাক্তিই প্রশ্ন তুলে বসে থাকতে পারে এখানে এতগুলো মানুষ কেউ এগিয়ে আসলো না, আপনি একাই এলেন, আপনার মতিগতি তো সুবিধার ঠেকছে না। মতলবটা কি আপনার? উল্টো দেখা যাবে আপনার সহযোগিতা নিতেও মানা করা হতে পারে।

আসল ব্যাপারটা হলো অসুস্থ প্রতিযোগিতা, যা মানুষ তার মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দিয়ে পয়সা উপার্জনের নিমিত্তে ব্যাবহার করছে। দিনশেষে মানুষ নিজেকে কতটা পয়সার মাপকাঠিতে বড় করতে পারছে, সেটাই বিবেচনা করতে থাকে। কিন্তু মনুষ্যত্বের মাপকাঠিতে কতটুকু নিচে নেমেছে তা মাথায় আনতে নারাজ। মানুষ এখন আত্মকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর, শুধুমাত্র পুরো পৃথিবীতে নিজে একাই বেঁচে থাকবে ভাবখানা ঠিক এমন। এভাবেই মানুষ এখন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যা সমাজ পরিপন্থী এবং অন্যায়। দেখা যাবে সামাজিক বন্ধনগুলো ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে বিপদ ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। অবাক লাগে যখন শুনি সন্তানের হাতে বাবা খুন, বাবার হাতে সন্তান খুন কিংবা মা সন্তানকে পলিথিনে বেঁধে রাস্তায় ফেলে আসছে কুকুরে খাওয়ার জন্য। এই সম্পর্কগুলো পৃথিবীতে সবথেকে গভীর সম্পর্ক, কিন্তু এগুলোতে এখন স্বার্থ আর নোংরামি ঢুকে গিয়ে বস্তা পঁচা গল্প তৈরি করছে প্রতিদিন। মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ এখন শুধুমাত্র অবৈধ, খারাপ কাজ আর পয়সা বাড়ানোর খেলায় মেতেছে। এখানে কে বাঁচলো, কে মরলো, কিংবা কার একটু সহযোগিতা প্রয়োজন এটা দেখার সময় নেই।
উপকার নামক মানবিক গুণাবলী হয়তো একদিন জাদুঘরে লিপিবদ্ধ করতে হতে পারে, নাহলে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।
যাইহোক কিছু মানুষ হয়তো এখনো রয়েছেন যারা মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে যান এবং বারবার সেই একই কাজগুলো করার চেষ্টা করেন। উনারা কখনো হয়তো বিনিময় আশা করেন না, কিন্তু বিপদে ঠিকই পরেন।

যাইহোক আমাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করতে হবে এবং মানসিকতা সেভাবেই তৈরি করতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে একটা ভালো কাজ কিংবা একজন মানুষকে সহযোগিতা করলে সৃষ্টিকর্তা তাকে সহযোগিতা করবেন তার গায়েবি খাজানা থেকে। আর উপকার কারির মন সদা প্রফুল্ল থাকে, যা তাকে সুন্দর জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। তবে অবশ্যই উপকার করার সময় পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে।



Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 6 days ago (edited)

আপনি ঠিক বলছেন ভাই উপকারী গাছের ছাল থাকেনা। আমাদের বাসায় পাশেই একটি অর্জুন গাছ আছে। কিন্তু সে গাছের ছাল নেই, সবাই ওষুধের জন্য ছাল তুলে নিয়ে যায়। আজকে আপনি মানুষের এবং গাছের সঙ্গে মিল রেখে চমৎকার একটি পোস্ট লিখেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে সবাই চায় একটু সহযোগিতা, কিন্তু এখনকার মানুষ তা করতে একেবারেই নারাজ। বিপদে পড়লে পাশে কাউকে পাওয়া যায় না। যাইহোক আমাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করতে হবে। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে বাস্তবতা সম্পর্কে সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।

 6 days ago 

অনেক চমৎকার একটি জেনারেল রাইটিং লিখেছেন ভাই পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনি এটা সত্যি বলেছেন উপকারী গাছের ছাল থাকে না। আমাদের সমাজে বর্তমানে যেসব মানুষ উপকার করে তাদেরকেই মানুষ অপকার করে সত্যি এটা ভীষণ খারাপ লাগে। এমনটা চলতে থাকলে উপকারী মানুষ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে। আপনার কথার মতোই উপকারী মানুষ দেখা যাবে জাদুঘরে রয়ে গেছে। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট বিস্তারিতভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 6 days ago 

আমার পাশের গ্রামে রাস্তার দুই ধারে প্রচুর পরিমাণে এই অর্জুন গাছ রয়েছে। প্রথম হঠাৎ একদিন আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি প্রত্যেকটা গাছের ছাল নেই। দেখে একটু অবাক হয়ে গেলাম যে গাছ মানুষের উপকার করে তার ছাল থাকে না এটা সত্যি এবং সেটা মেনে চোখে দেখেছি। আপনি খুব চমৎকার লিখেছেন ভাই লেখাটা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 6 days ago 

আমার তো মনে হয় অন্যের উপকার যারা বেশি করে, তাদের শত্রু বেশি হয়। আর তাদেরকেই সমাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ বিভিন্ন ফন্দি করে থাকে। অন্যের উপকার করা মানুষগুলোকেই দিন শেষে খারাপ কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। একটা মানুষ অন্যের উপকার করলেও সেই মানুষটার উপকার অন্যরা করতে চায় না। এখন আর আগের মত কেউ একে অপরকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসে না দলবেঁধে। আপনি আজকে বাস্তবিক সব কথাগুলোকে এটার মধ্যে উপস্থাপন করেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো। অনেক বেশি সুন্দর করে আপনি লিখেছেন আপনি এই পোস্টটা।

 6 days ago 

মানুষের সাথে যেভাবে গাছের ছালের তুলনা টেনে বোঝালেন তা দারুণ লাগলো৷ সত্যিই উপকারের দাম নেই আজকাল৷ উপকার করলে দাম থাকে না। মা সন্তানেরই সম্পর্ক যেখানে স্বার্থের হয় সেখানে আর কী বলার থাকে। একটা কথা মনে পড়ছে। বিদ্যাসাগর মশাই একবার রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন। কেউ একজন তাকে মাথায় ঢিল ছুড়ল। বিদ্যাসাগরকে তার বন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন, পন্ডিতমশাই আপনি কিছু বললেন না? তিনি উত্তরে বললেন, দেখো কোন কালে তার কোন উপকার করেছিলাম।

 6 days ago 

সময়ের সাথে সাথে মানুষের মানসিকতা বদলে যাচ্ছে। তাই এখন আর কেউ কারো উপকার করতে এগিয়ে আসে না। আমাদের সবারই মানসিকতা বদলাতে হবে। একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। অসাধারণ একটি বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেছেন ভাইয়া। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 6 days ago 

বর্তমান সময়ে উপকার করতে গেলে বরং আরো বদনাম হয়। এমন অনেক কিছু স্বচক্ষে দেখেছি যার জন্য অন্যের সাথে লড়াই যুদ্ধ করে পরবর্তী সে নিজেই বলে তার জন্য কি করেছে, কিছুই তো করেনি। আসলে বর্তমান সমাজ নিজ স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। তবে প্রত্যেক মানুষ কিন্তু তার কর্মফল ভোগ করবে। একদিন না একদিন সেই ফল পাবে, হোক দুনিয়ায় বা আখিরাতে। মানবিকতা, মনুষত্ব হারিয়ে গেলেও কিছু মানুষের মাঝে এখনো বিদ্যমান আছে। সেজন্যই হয়তো পৃথিবী এখনো টিকে আছে। ভালো লাগলো আপনার পোস্টটা পড়ে।

 6 days ago 

সত্যি ই ভাইয়া আজকাল মানুষকে সাহায্য করতে গেলে ঝামেলায় পরতে হয়।এজন্য ই মানুষ এখন বিপদ দেখলে সাহায্য না করে ছবি তোলে, ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাহবা নিয়ে থাকে।এটা জঘন্য ও ঘৃণিত অপরাধ। এর থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে।উপকারের মনোভাব মনে জাগিয়ে তুলতে হবে।এতে আল্লাহ খুশী হবেন।আর আমাদের কেও বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।খুব সুন্দর লিখেছেন।ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 64647.65
ETH 3473.91
USDT 1.00
SBD 2.50