"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪ || আম চুরি করতে গিয়ে ধরা পরা আর বন্ধুর হাত ভাঙ্গা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪"
"শেয়ার করো তোমার জীবনের মজার কোন -
গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প"

" ঘটনার শুত্রপাত "

IMG20220327173404_01.jpg

ছবির অবস্থান
ছবি তোলার যন্ত্র- রিয়েলমি সি-২৫

সকলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক শুরু করছি। প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই @amarbanglablog সম্প্রদায়কে এতো চমৎকার একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আসলে প্রতিযোগিতার বিষয় এতটাই চমৎকার কি বলবো। এখন রাত তিনটা বাজে কিন্তু তার পরেও নিজে নিজে একা একা হাসছি আর ছোট্ট বেলার সেই স্মৃতি মনে পড়ছে। কি আর বলবো ছোট্ট বেলায় ভীষণ দুষ্টু ছিলাম, বাসায় কোন জিনিস কখনো আস্ত রাখতাম না। কিরকম দুষ্ট ছিলাম কিছুটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। ধরুন বাবা একটা খেলনা গাড়ি কিনে দিলেন। প্রথমত এর মটর খুলে পেন্সিল ব্যাটারির সংযোগ করে পাখা বানিয়ে ফেললাম, এরপর মিউজিক স্পিকার খুলে চৌম্বকের কাজ করলাম, লাইট খুলে তার পেঁচিয়ে ঘর আলো করার চেষ্টা করলাম, চাকা খুলে লাটিমের মতো ঘুরাতে চেষ্টা করতাম আর গাড়ির বডিটা অপ্রয়োজনীয় তাই ফেলে দিলাম। এই কাজগুলো বাসার সব জিনিসের সাথে হতো। ঠিক এরকম দুষ্টু ছিলাম। যাক এখন আসি মূল ঘটনায়, তবে আগেই বলি এটা যেরকম আনন্দের ঘটনা তেমনি দুঃখের বটে।

26uUsAjKTsXCDw7zixZR182JbFKvgzJ9YwsFpTVcRaGCmsqhA1unTgprBuaFXCr82CTsKbNB2mnNaEN5pcM3XgJqwJcVLgAYCJ5w4Ato9GkiZvkMEdbqpeT7vKb2czdSZrxpKp9pGvaq3xDR4V7YvjBZ1Qhx7RZ2BRJj98.png

" মূল ঘটনা "
"আম চুরি করতে গিয়ে ধরা পরা
আর বন্ধুর হাত ভাঙ্গা"

বাবার চাকরির সুবাদে শহরেই থেকেছি সবসময়ই। তবে যখন গ্রামে বেড়াতে যেতাম তখন হতো আসল মজা, আমাদের দুই ভাইয়ের পায়ের সাথে চাকা ফিট হয়ে যেতো। কারন হলো আমাদের দাদু ভীষণ আদর করতেন মানে আমরা আমাদের ইচ্ছে মতন যা খুশি তাই করতে পারতাম। তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম আর ভরপুর গরমকাল গাছে ফল আর ফল। লোভ সামলানো বেশ মুশকিল। আমার আমের প্রতি দূর্বলতা সবসময়ই ছিল আর এখনো আছে। আমাদের বাড়ির গাছের আম তেমন বেশি মিষ্টি নয়। মানে নিজের জিনিস ভালো লাগেনা আর কি ☺️ তাই পাশের বাড়ির এক বন্ধুর সাথে চলে গেলাম আম চুরির উদ্দেশ্যে‌ 👀 লক্ষ্য কিন্তু মিষ্টি আম চুরি।

IMG20220327173811.jpg

ছবির অবস্থান
ছবি তোলার যন্ত্র- রিয়েলমি সি-২৫

যাক খুঁজতে খুঁজতে একটি চমৎকার আম গাছ পেয়ে গেলাম যেখানে রসালো আর টসটসে আম ঝুলে রয়েছে 😋 লোভ সামলানো একেবারেই মুশকিল। আমি একটি গাছকে টার্গেট করলাম তবে আমার বন্ধুটা একটু ভিতুর ডিম। সে আমাকে বললো, আরে ঐ গাছের আশেপাশে যাওয়া যাবেনা। আমি বললাম কেনো রে, ও বললো ওটা খাইশটা রমিজ এর গাছ ও ধরতে পারলে খবর আছে। বুঝলাম বন্ধু বেচারা ভয়ে আছে। আমি সাহস দিলাম চল আম আমরা খাবোই, ও দেখবেও না, আর আসলে দৌড়ে পালিয়ে যাবো চিনতেই পারবেনা।

IMG20220327173352_01.jpg

ছবির অবস্থান
ছবি তোলার যন্ত্র- রিয়েলমি সি-২৫

যদিও শহরের ছেলে কিন্তু মিষ্টি আমের লোভে গাছে তো আজ উঠতেই হবে। আমাদের পরিকল্পনা হলো আমরা দুজন গাছে উঠবো আর নিচে আর দুজন আম কুড়াবে আর পাহাড়া দেবে। যাক ঠেলে মেলে কোন রকম বন্ধুর সহযোগিতায় গাছে উঠলাম। ব্যাস আর কে পায়। নিচের ঐ দুইটার কথা ভুলে গিয়ে আগে আম খাওয়া শুরু করলাম। আম খাচ্ছি আর আটি ছুঁড়ছি নিচের দুটোর দিকে তাক করে। আহ্ কি মজা 😋

mango-7026659_640.png

সংগ্রহশালা

বেশ কিছুক্ষণ তৃপ্তি মিটিয়ে আম খেলাম কিন্তু হঠাৎ বিপদ দেখা দিলো। নিচের দুটো সাঙ্গ-পাঙ্গো ভাগে কম পরায় চেঁচামেচি শুরু করলো। এতেই দেখা দিলো বিপদ, খাইশটা রমিজ হাঁক ছাড়তে শুরু করলো কে রে আমার আমের বাগানে 😡 এখানে অনেক গুলো গাছ বাগানে চট করে আমাদের দেখা যাবেনা কিন্তু দ্রুত এখান থেকে পালাতে হবে না হয় বিপদ। আমি তেমন ভয় না পেলেও আমার বন্ধুর অবস্থা বেশ খারাপ বুঝতে পারলাম, ওর চোখ মুখ দেখে মনে হলো ও মনে হয় প্যান্টে হি- করে দিয়েছে। যাক দুজনেই নামার চেষ্টা করছি কিন্তু তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে হঠাৎ বন্ধু পরে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। আমি কোন রকম ওর হাতটা ধরতে পারলাম কিন্তু আমি বেশিক্ষন ওকে ধরে রাখতে পারলাম না 😥 ও গাছের কয়েকটি ডালের সাথে জোরে বাড়ি খেয়ে নিচে গড়িয়ে পরলো। ও যখন পরছিল নিচে তখন গাছের ডালে ওর হাতে সজোরে আঘাত লাগে এবং গতি কমে যায়। সে প্রানে বেঁচে যায় কিন্তু তার হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পায়। আমরা তখনও বুঝতে পারিনি যে হাত কাঁধের জোড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে 🥺

IMG20220327173407.jpg

ছবির অবস্থান
ছবি তোলার যন্ত্র- রিয়েলমি সি-২৫

নিচের দুটি ছেলে তাড়াতাড়ি পালাতে পারলেও আমি পালাতে পারলাম না 😥 কারন আমার বন্ধু তখন তীব্র যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। রমিজ কাকা ওর অবস্থা দেখে নিজেই তাড়াতাড়ি ওকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করলো। ওর হাতের জোড়া কাঁধের দিকে খুলে গেছে, ডাক্তার ওর পুরো হাতে ব্যান্ডেজ আর ইনজেকশন দিয়ে দিলেন, আরো কয়েকদিন পর ওর হাতের অপারেশন করে হাতটা ঠিক অবস্থানে আনতে হবে। বেশ খরচ হবে বটে। ততক্ষণে আমার বাড়িতে খবর চলে গেছে কারন খাইশটা রমিজ বিচার দিয়েছে আমার নামে, আমার বুদ্ধিতে সব হয়েছে।

discipline-4145087_640.png

সংগ্রহশালা

যাক বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম। ততক্ষণে বাড়ির উঠানে খাতির যত্ন করার জন্য বেশ বড়সড় আয়োজন করেছেন বাবা। বুঝলাম আজ মার পরবে পিঠে, রক্ষা নেই 🤪 যদিও এরকম নাস্তা পানি মাঝে মাঝেই খাওয়া হয় কিন্তু আজকে পরিমাণ বেশি হবে মনে হলো। দাদু দৌড়ে এগিয়ে এসে ঝাপটে ধরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু লাভ হলোনা বাবা এতটাই খেপে ছিলেন, যে বেশ জোড়েই পিঠে বেশ কয়েকটি বাড়ি পরলো। হয়তোবা আরো খেতাম বাড়ি কিন্তু আমার বন্ধু এগিয়ে এলো এবং বললো এটা আমাদের সবার চিন্তা ছিলো আম খাওয়ার। আর আমি ওকে কিভাবে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি , সে সবটা খুলে বললো। কিন্তু ততক্ষণে আমার বাড়ির উঠানে মান সম্মান পাংচার 🥺 পুরো একদিন রাগ করে খাইনি।

" সমাপ্ত "
গল্পটা লিখে ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুমাতে গেলাম
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না ☺️
Sort:  
 2 years ago (edited)

স্যার আপনার ছোট বেলায় মিষ্টি আম চুরি করে খাওয়ার গল্পটি পড়ে ভিশন ভালো লাগলো। আসলে ছোট বেলায় সেই দুষ্টামি গুলো মনে পড়লে হঠাৎ হাসি চলে আসে।‌‌ গল্পটি পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি ছোট থেকেই ভিশন ট্যালেন্ট।

ধরুন বাবা একটা খেলনা গাড়ি কিনে দিলেন। প্রথমত এর মটর খুলে পেন্সিল ব্যাটারির সংযোগ করে পাখা বানিয়ে ফেললাম, এরপর মিউজিক স্পিকার খুলে চৌম্বকের কাজ করলাম, লাইট খুলে তার পেঁচিয়ে ঘর আলো করার চেষ্টা করলাম, চাকা খুলে লাটিমের মতো ঘুরাতে চেষ্টা করতাম আর গাড়ির বডিটা অপ্রয়োজনীয় তাই ফেলে দিলাম

আপনার উপরের কথা গুলো ভিশন ভালো লেগেছে। আর সাথে চমৎকার কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে স্যার আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন।

 2 years ago 

ধন্যবাদ লিমন চমৎকার একটি মন্তব্যের জন্য 🥀

আসলে চমৎকার একটা আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া
গল্প শেয়ার করেছেন। সত্যি গল্পটি চমৎকার লাগল। তবে আমারও এমন কিছু কাহিনি আছে। আপনার উপস্থাপন ভলো ছিল। সত্যি আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে আপনার এই পোস্ট টি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে। 💞💞

 2 years ago 

ধন্যবাদ তোমায় চমৎকার একটি মন্তব্যের জন্য 🥀

আম চুরির কাহিনী শুনে হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ। আর পরে অনেক মজা পেয়েছি। আমিও ছোট বেলায় এরকম দুষ্টুমি করতে গিয়ে অনেক ধরা খেয়েছি। আর মায়ের হাতে মার খেয়েছি। এখনও স্মৃতি গুলো মনে পড়লে আনন্দে ভেতরটা নেচে ওঠে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ শৈশবের স্মৃতি গুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🥀

 2 years ago 

আপনার গল্পটি আমার দারুন লেগেছে। খুবি চমৎকার ভাবে আপনার ছোটবেলার গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। ছোট বেলার এই স্মৃতি গুলো মনে পরতেই ঠোটের কোনে হাসি চলে আসে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

বন্ধু তোমার গল্পটা পড়ছিলাম আর মনে মনে টেনশন করছিলাম তারপর কি হবে। তোমার ছোটবেলার গল্পের অনেক কিছুই আমি জানি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বন্ধু সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🥀

 2 years ago 

হাহা ,আপনার ব্লগের প্রথম ছবিটি দেখে সেই ছোট বেলার দিনের কথা মনে পরে গেলো। আমিও ঠিক এরকম টা করেছিলাম আমার বন্ধুদের নিয়ে, অনেক মজার।আর আম চুরি করতে গিয়ে কত যে ধরা খেলাম এলাকার দাদি- দাদা, চাচা-চাচীর এবং পাড়াপর্শীর হাতে, তা বলার বাইরে।অনেক সুন্দর করে আপনার ছোট বেলার আম চুরির গল্প লিখেছেন। শুভকামনা

 2 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🥀
আমার ছোটবেলা আসলেই অনেক আনন্দের ছিল ♥️

গল্পে গল্পে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। আসলেই আমি মুগ্ধ। আপনার সব ছবিতেই গল্প লেখা সম্ভব। যা আমি আগেও একবার ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। আপনি পারবেন।

 2 years ago 

ইনশাআল্লাহ ভাই ♥️
দোয়া করবেন।
আর আপনার জন্য আমার দোয়া সবসময়ই রয়েছে ❣️

 2 years ago 

প্রত্যকের জীবনেই এমন অনেক না বলা ঘটনা আছে। ভালো লাগলো আপনার স্টোরি পড়ে। সবার ঘটনা পড়ে খুবই ভালো লাগতেছে। আশা করি আমিও আমার ঘটনা শেয়ার করবো। ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🥀

 2 years ago 

ভাইয়া এটা কেই বলে সোনালী অতীত। অসাধারণ ছিল আপনারা আম চুরির গল্পটা। আমাদের সাথে এত সুন্দর করে শেয়ার করেছেন যার প্রশংসা না করে পারলাম না। তবে দাদু দাদি হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় বর্ষা, যত রকমের ঝড় যাপ্টা সব সামাল দিতে দাদু আর দাদা। যাই হোক আমাদের সাথে এত সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🥀

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57527.13
ETH 2375.07
USDT 1.00
SBD 2.42