"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা- বিনা অপরাধে মার খেলাম।
"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩
(সিনেমা হলে ছবি না দেখেও মার খেয়েছি) |
---|
ছোট্ট বেলায় বড্ড কড়া শাসনে মানুষ হয়েছি। মা বাবা কখনো কোন অন্যায় আর খারাপ কাজকে প্রশ্রয় দিতেন না। তবুও দুষ্টুমি যে করতাম না তা নয়, যা করতাম ঘরের ভেতর। বিশেষ করে সব জিনিস খুলে খুলে দেখতাম ভেতরে কি আছে। এভাবে অনেক জিনিস নষ্ট করেছি, তবুও মা কিছু বলতেন না। পুরো এলাকার মানুষের কাছে আমরা দুই ভাই বেশ ভদ্র ছেলে। আমি সাইকেলে চালিয়ে স্কুলে যেতাম কারন স্কুলটা ছিল একটু দূরে। বাসা থেকে কড়া নির্দেশ ছিল স্কুলে আসা যাওয়ার সময় একমাত্র রাস্তা ছাড়া কোনদিকে তাকানো যাবেনা। এর কারণ হিসেবে ভিডিও গেমসের দোকান আর সিনেমা হল ছিল ঠিক স্কুলের রাস্তায়। বিশ্বাস করুন মায়ের বকুনির ভয়ে কোনদিন ওদিকে নজর দেয়ার ইচ্ছে আসেনি মনে।
আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র, বলা যায় ছাত্র হিসেবে ভালোই ছিলাম। ক্লাশে মোটামুটি সবার থেকে শান্ত আর ভদ্র বলতে পারেন। তবে আমাদের ভেতর বেশ কিছু ছাত্র ছিল যারা ভিডিও গেমস এবং হলে ছবি দেখার বেশ অভ্যস্ত হয়ে পরে। মাঝে মাঝেই ওরা স্কুলের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে কিংবা দেয়াল টপকে বাইরে গিয়ে ভিডিও গেম খেলতো। আসলে ঐ সময়টাতে ভিডিও গেমের মেশিনে পাঁচ টাকা দিয়ে অনেক সময় নিয়ে গেম খেলা যেতো। আর সিনেমা হলে বিভিন্ন রকম ছবি দেখতে তো তাদের কাছে বেশ ভালোই লাগতো।
আমাদের দুষ্টু ছেলের দলের মধ্যে একদিন সকাল থেকেই আমি কেমন যেন ফুসুর ফুসুর গল্প করতে শুনছিলাম। ভাবলাম হয়তো কোন নতুন ছবি বা ভিডিও গেমস নিয়ে আলোচনা করছে। আমি তাদের এই গল্পের মধ্যে না গিয়ে আমার ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছিলাম। এদিকে টিফিনের আগে তাদের অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো। আসলে মূল ঘটনা ছিল আমাদের টিফিনের পর ওদের একটা নতুন সিনেমা দেখতে যাবার কথা আছে, যা ঐদিন প্রথম সেখানে দেখাবে। ওদের পরিকল্পনা ছিল পুরো গ্যাং একসাথে দেখবে। ব্যাপারটা হলো যদি দুই তিন জন যায় তাহলে সমস্যা নেই কিন্তু দশ বারোজন গেলো সবাই আটকে যাবে।
ঐ দলের লোকজন পরিকল্পনা করলো টিফিনের পর যে ক্লাশটা আছে তা কাউকে করতে দেবেনা। আমাদের ক্লাশ ক্যাপ্টেন তাদের দলের লোক ছিল। হঠাৎ টিফিনের আগ মুহূর্তে ক্লাশ ক্যাপ্টেন বললো বিকেলের ক্লাশটা আজ আর হবেনা কারন স্যার অসুস্থ বাসায় চলে যাবেন। এদিকে সবাই হুররে বলে চিৎকার করে উঠলো কারন ক্লাশ ক্যাপ্টেন বলেছে। সবাই ব্যাগ গুছিয়ে রেডি। গেটের দিকে যেতেই সিকিউরিটি চাচা বললেন তোমাদের ক্লাশ নেই ? কোথায় যাচ্ছো সব একসাথে ? সবাই বললাম স্যার অসুস্থ আমাদের আজ চলে যেতে বলেছেন। চাচা দেখলেন সবাই যেহেতু বলছে তাহলে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য। আমাদের যেতে দিলেন। আমিও মনের সুখে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এদিকে মা এতো আগে স্কুল থেকে এসেছি শুনে অবাক হলেন। আমি বুঝিয়ে বললাম স্যার অসুস্থ তাই ক্লাশ হবেনা চলে এসেছি।
এদিকে টিফিনের পর যে স্যারের ক্লাশ ছিল তিনি ছিলেন ভীষণ রাগী মানুষ। যখন দেখলেন ক্লাশে কেউ নেই ভীষণ রেগে গিয়ে সিকিউরিটি চাচাকে ধরলেন। তিনি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন সবাই বললো আপনি অসুস্থ আর সবাইকে চলে যেতে বলেছেন। স্যার আচ্ছা মতো চাচাকে বকা দিলেন। স্যার বিষয়টি অনুমান করেছিলেন এরা হয়তো সিনেমা হলে ছবি দেখতে এই কান্ড ঘটিয়েছে।
পরদিন সকালে যখন গেট দিয়ে ঢুকলাম সিকিউরিটি চাচা দিকে তাকাতেই তিনি কেমন মুখ কালো করেছিলেন কিন্তু কিছু বললেন না। ক্লাসে সবাই স্বাভাবিক ভাবেই বসেছিলাম প্রতিদিনের মতো। হঠাৎ দেখি আমাদের ক্লাশ টিচার না এসে বিকেলের ক্লাসের স্যার হাতে দুটি বড় বড় বাঁশের বেত হাতে নিয়ে ঢুকছে। আমার কেমন একটা ভয় লাগলো মনের ভেতর। দুষ্ট ছেলের দল ততক্ষণে বুঝতে পেরেছে কি ঘটতে চলেছে কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না। তবে বিপদের গন্ধ পাচ্ছিলাম। ছেলেগুলো বললো স্যার আর এমন ভুল করবো না, আমাদের মাপ করে দেন। স্যার রক্তচক্ষু হয়ে সিরিয়ালে বেত দিয়ে মারতে শুরু করলেন। এখানে কে ছবি দেখতে গেছে আর কে কি করেছে তা বিষয় নয়, সবাই স্কুল পালিয়েছে এটাই স্যারের রাগের বিষয়। স্যার বিদ্যুৎ গতিতে মারছে আমাদের, একটা বেত ভাঙ্গার পর আরেকটা নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মেরে ঠান্ডা হলেন। এতোক্ষণে আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। মার খেয়েছি সমস্যা নেই কিন্তু আমি অপরাধ না করেও মার খেলাম। আমার ভীষণ কষ্ট লাগলো 😕 আমি ছোট থেকে খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ হলেও রেগে গেলে আর কারোর কথা শুনিনা।
আমার এতোটাই কষ্ট লাগলো বলে বোঝাতে পারলাম না। আমি ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলাম তবে সিকিউরিটি চাচা কিছুতেই ছাড়বে না। আমি ভীষণ রেগে গিয়ে ওনাকে এমন কিছু কথা বলে ফেললাম উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। বাসায় এসে ব্যাগ রাগে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিছানায় উপুড় শুয়ে পরলাম। মাকে রেগে বললাম মা আমি আর এই স্কুলে পড়বো না। তবে মাকে পরে সব বুঝিয়ে বলেছিলাম, পরদিন তিনি স্কুলে আমাকে অনেকটা জোর করে ধরে নিয়ে যান আর ঐ শিক্ষকের নামে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার দিলেন। পরে স্যার আফসোস করলেও আমার এই রাগটা কোনদিন মন থেকে যায়নি।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1575366990323404800?t=1Re2D4q8WP2dSMwBg3FMMA&s=19
বিনা দোষে মার খেলে এরকম হয় ভাই।ঐ মানুষকে আর কখনো ক্ষমা করা যায়না।তবে এখানে দোষ বেশি সেই দুষ্ট ছেলেদের।অনেক খারাপ লাগল আপনার তিক্ত অনুভূতি জেনে।শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য।
আসলে বিষয়টি এখনো মনে পরলো খুব খারাপ লাগে 😕
ভাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অনুভূতি জানতে পারলাম। আসলে দোষ করে মার খেলে সেটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আপনি বিনা দোষে মার খেয়েছেন। তারা সিনেমা দেখতে গিয়েছে কিন্তু আপনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না, কিন্তু আপনি ঠিকই মার খেলেন। একের পর এক বৃষ্টির মতন বারি সত্যিই এরকম ঘটনা আমাদের সাথেও ঘটেছিল।
হ্যা ভাই এই বিনা অপরাধে মার খাওয়ার ঘটনাটা কখনো আমি ভুলতে পারবোনা।
ঐ স্কুলে পড়তেই চাইছিলাম না কিন্তু তবুও এসএসসি শেষ করেছিলাম ওখান থেকে।
ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য।
আপনার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপনার গল্পে আপনার সাথে আমি একমত যে দোষ না করে যদি দোষি হওয়া যায় এটি আমার কাছে অনেক খারাপ লাগে যে ঘটনাটি আপনার সঙ্গে ঘটেছে।
অনেক ধন্যবাদ আপু।
আসলে দোষ করে মার খেলে সেদিন আমার কোন কষ্ট লাগতো না। প্রত্যেকের জীবনে এরকম বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে।
আপনার ঘটনাটি পড়ার পরে স্মরণ হলো আমার আরো একটি ঘটনার কথা, যে ঘটনায় অপরাধী না হয়ে মার খেয়েছিলাম স্যারের হাতে। এভাবেই এমন একটি বিনা কারণে মার খাওয়ার স্মৃতি আমার জীবনে রয়েছে। তবে সেগুলো স্মরণ হলে মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আসলে এধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের সবার জীবনে কিছু না কিছু রয়েছে। তবে কিছু ঘটনা সত্যিই ভোলার নয়।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা- বিনা অপরাধে মার খাওয়া। স্কুল জীবনে ক্লাসে অনেক দুষ্টু ছেলে মেয়ে থাকেই। এদের কারনে অনেক সময় ভালো ভাবে ক্লাস করা যায় না। অপরাধ না করেও স্যারের মার খেয়েছেন জেনে খুব খারাপ লাগলো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন।
হ্যা এটা এক ধরনের ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। তবে সারাজীবন মনে থাকবে এটা।
ধন্যবাদ লিমন মন্তব্যের জন্য।