যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। (স্মৃতির পাতা থেকে দ্বিতীয় পর্ব)
ছেলেবেলার দিনগুলো সত্যিই মধুর আর স্মৃতিময় ছিল। আমাদের দুই ভাইয়ের দুষ্টুমির মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যখন আমরা গ্রামের বাড়িতে যেতাম। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে আমরা শহরে থাকতাম আর বছরে দুই থেকে তিন বার সপ্তাহ কিংবা দিন দশেকের জন্য গ্রামের বাড়িতে যেতাম। তবে গ্রামের বাড়ি যাবার বেশ কিছুদিন আগে থেকে আমার পরিকল্পনা চলতো কি কি করা যায়, আর কিভাবে সময়টার সবথেকে বেশি সদ্য ব্যাবহার করা যায়। মানেটা হলো বাঁদরামি আর দুষ্টুমি চরম পর্যায়ে পৌছানো 😄
আমি কিন্তু দেখতে ভীষণ ভোলাভালা আর শান্ত স্বভাবের হলেও একমাত্র আমার মা জানে আমি কতটা দুরন্তপনা করতে পারি। আর সেজন্যই মা চেষ্টা করতেন সবসময়ই চোখে চোখে রাখার। যাইহোক বাড়িতে যাবার আগে থেকেই চলছে বিস্তর পরিকল্পনা, আর ব্যাগ গোছানো হচ্ছে বিভিন্ন অস্ত্রপাতি দিয়ে, মানে ভাংগা ভাংগি আর জোড়া লাগানোর জিনিসপত্র দিয়ে। সেইসাথে কমন কিছু খেলনা নিতাম, আর দামী গুলো বাসায় রেখে দিতাম। কারন বাড়িতে একবার গেলে কোন খেলনা আর আস্তো ফিরে আসতো না 😂
অবশেষে বাড়িতে যাওয়ার দিন আসে মা আমাদের ব্যাগ দেখে রিতীমত গরম কিন্তু আমাদের জেদাজেদির ফলে ওগুলো নিতে বাধ্য হয়। বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই ভীষণ সুবোধ বালকের মতো সবাইকে কদমবুছি মানে পা ছুঁয়ে সালাম করতাম, সবাই মন ভরে দোয়া করে দিতো। আর বেশ প্রশংসা তো করতোই, শহরে থেকেও আদব কায়দা ভুলিনি তার জন্য। তবে এটা ঠিক সবাইকে সম্মান দেয়ার বিষয়টা বেশ ভালো লাগতো ভেতর থেকে যা এখনো আমার মধ্যে রয়েছে। আমরা বাড়িতে যাবো খবর পেলেই আমার দাদা দাদু চেষ্টা করতেন গাছের ফল ফলাদি আর পিঠার ব্যাবস্থা করার। আর বাড়ির দেশি হাঁস মুরগি তো আছেই, সবমিলিয়ে ভরপুর খানাপিনা আর দুষ্টুমি। দাদা বলতেন খালি পায়ে হাঁটতে, মাটির স্পর্শ পায়ে লাগাতে। মা দূর থেকে চোখ রাঙাতেন কিন্তু আমরা দিব্যি খালি পায়ে ছুটাছুটি শুরু করে দিতাম। যাইহোক প্রথম দিন বাড়িতে বেশ শান্ত সুবোধ বালকের মতো থাকরেও দ্বিতীয় দিন থেকে মিশন শুরু।
মিশনগুলো এরকম, নতুন কিছু শেখা আর নতুন নতুন খেলার আবিষ্কার করা। কত রকম খেলা যে গ্রামের ছেলে মেয়েরা জানে তার কোন শেষ নেই। তবে ওদের সাথে এগুলো খেলতে পারতাম না, প্রথমে চেয়ে চেয়ে দেখতাম এরপর ধীরে ধীরে খেলার চেষ্টা করতাম। এক ছেলের হাতে গুলতি দেখলাম পাখি মারার, জিনিসটা ভালোই লাগলো, অবশেষে তার সহযোগীতায় গাছের ডাল দিয়ে আমরাও একটা তৈরি করলাম। তবে আমাদের গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করা হয় না, নিশানা ছিল ভীষণ বাজে 😄
আবার ছোট কাকার কাছে শিখলাম বক ধরার ফাঁদ। কাকা বেশ কয়েকটা বক শিকার করে খাইয়েছিল। তাছাড়াও কাঁদায় মাছ ধরার ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করতাম। এভাবেই চলতে থাকে গ্রামে বেড়ানোর ছোট্ট ছোট্ট অভিযান।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
Hi, @emranhasan,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
- Explore Steem using our Steem Blockchain Explorer
- Easily create accounts on Steem using JoinSteem
- Delegate to @ecosynthesizer and wtiness vote @symbionts to support us.
স্মৃতির পাতা থেকে অতীতের স্মৃতি গুলো পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। সত্যি কথা বলতে এই ফেলে আসা দিনগুলোর গল্প যেনো আমাদের সবার একই রকম।আপনার স্মৃতি গুলো পড়ছিলাম আর আমি আমার স্মৃতিগুলো হাতরে বেড়াচ্ছিলাম।ছেলেগুলি আসলে এমনই হয়।আপনার স্মৃতিব পাতার গল্প পড়ে আমি আপনার জায়গায় আমার ভাই দুটোকে যেনো আবিষ্কার করছিলাম।ওরা ও ঠিক এমনই করতো।তবে ভাইয়া আপনার ভোলা ভালা মুখটি নিয়ে ভিতরে ভিতরে দুষ্টমির খেলা খেলতেন ঠিকই কিন্তু মায়ের চোখ কিন্তু এড়াতে পারেন নি।😂
আমিও গ্রামের ছেলে বেশিরভাগ সময় গ্রামে কেটেছে আমার। ছোট বেলায় গ্রামে ভীষণ মজা করেছি। একদম ঠিক বলেছেন গ্রামের ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন ধরণের খেলা জানেন। তবে এখন আর গ্রামের ছেলে মেয়েরা সেভাবে এসব খেলাধুলা করেন না। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু যেনো চলে যাচ্ছে। ছোট বেলায় সোনালী অতীত গুলো ভীষণ মিস্ করি। আজকে আবার আপনার পোস্ট পরে বেশ কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। গুলতি দিয়ে বন্ধুরা মিলে পাখি শিকার করতাম। এর পরে বিলে গিয়ে বালি হাঁস শিখার করে সবাই মিলে পিকনিক করতাম ভীষণ ভালো লাগতো। খালি পায়ে হাটার মজাই ছিলো আলাদা। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ একদমই সত্যি কথা। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি ঠিক বলছেন ভাই যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। আপনার স্মৃতির পাতা থেকে দ্বিতীয় পর্ব পড়ে ছোট বেলার সোনালী দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। আপনি দেখতে শান্ত হলেও প্রচুর বাঁদরামি আর দুষ্টুমি করতেন জেনে খুশি হলাম🫣। আমিও অনেক দুষ্টুমি করতাম। তবে আপনার মতো ভাংগা ভাংগি আর জোড়া লাগানোর জিনিসপত্র আমার কাছে সব সময়ই থাকতো। আপনি শৈশবকালে বক ধরার ফাঁদ তৈরি করেছেন এবং কাঁদায় মাছ ধরার ব্যাপারটা আমি এখনো মিস করি ভাই। বড় হওয়ার সাথে সাথে এই সব কিছু যেন হারিয়ে গেল। আপনার পোস্ট পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।