ভূতের সাথে কিছুসময়। ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য। সেপ্টেম্বর ১০,২০২১।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)


  • আমার বাংলা ব্লগে,
  • সবাইকে স্বাগতম।
  • আমি @emon42.
  • বাংলাদেশ থেকে।


আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগে আমার নতুন একটি পোস্টে আপনাদের স্বাগতম। কিছুদিন ধরেই আমাদের @rme দাদা উনার লেখা গল্প শেয়ার করছেন। এখন তিনি তার লেখা ভৌতিক গল্প শেয়ার করছেন আমাদের সাথে। এর থেকেই আমি অনুপ্রাণিত হয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এইরকম একটি ঘটনা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। সবাই সাথেই থাকবেন। এই পোস্টের ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য।


death-2577486_1280.jpg

ছবিটি pixavay থেকে নেওয়া হয়েছে।


মূল গল্প:

সাল ২০১৮ আমি তখন দশম শ্রেনীর ছাত্র।আমার বয়স 15 বছর।যথারীতি আমাদের প্রাইভেটে থেকে আমাদের মোস্তাফিজুর রহমান স্যার আমাদেরকে পিকনিকে নিয়ে যান সুন্দরবন। আমাদের ব্যাচের সবাই পিকনিকে যাই।আমাদের পিকনিকের বাস ছাড়ে ৮ মার্চ বৃহস্পতিবার 2018। এবং ৯ মার্চ শুক্রবার আমরা সুন্দরবন ঘোরাঘুরি করি। ওখান থেকে আমরা ঠিক সন্ধ্যে ছয়টার সময় রওনা দেই।এবং রাত দেড়টার সময় কুমারখালী পৌছায়।এরপর আমরা সবাই যে যার মত বাড়ির দিকে চলে যাই স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। কিন্তু আমার বাড়ির দিকে ছিলাম আমি এবং আমার বন্ধু তুহিন।যথারীতি আমরা কুমারখালী বাসস্ট্যান্ডে যাই। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার মতো কোনো যানবাহন পায় না।এখান থেকে আমাদের বাড়ি প্রায় 30 মিনিট দূরত্বে।

কী আর করার বাধ্য হয়ে আমরা পাশের রেললাইনে যায় এবং রেললাইন দিয়ে হাঁটা শুরু করি। কেননা রেললাইন দিয়ে রাস্তাটা কম হয়।18 সাল আমার এবং তুহিন এর কাছে স্মার্ট ফোন নেই।আমরা দুজনেই তখন ছাত্র। রেলের পাশ ধরে আমরা হাঁটছি কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎ দাড়িয়ে যায় আমি এবং তুহিন। আমরা দুজন ভালোই কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম।কিন্তু হঠাৎ পেছন থেকে একজন ডাক দিল এই তোমরা দাঁড়াও আমি আসছি, আমিও ওদিকেই যাব। আমি এবং তুহিন রীতীমতো হকচকিয়ে যায়।এত রাত্রে কে আমাদের ডাকে।রাত তখন প্রায় দুইটা। রেলের পাশে জায়গাটা খুব একটা ভালো না। আমরা দাঁড়িয়ে যায় এবং পেছন থেকে একজন লোক আসে।

লোকটার গায়ে রয়েছে একটি ফুল হাতা শার্ট হাতে একটি বড় লাঠি অন্য হাতে একটি লন্ঠন এবং পিঠে একটি চিঠির বোঝা।আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কে, জবাবে উনি বললেন আমি ডাক হরকরার লোক।গ্রামে গ্রামে চিঠি পৌছে দেয়াই আমার কাজ। আমি তখন বুঝি নাই কিন্তু পরে আমি জানতে পারি এরকম চিঠি প্রদান করার কাজ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।এখন ডিজিটাল যুগ এখনই এগুলো প্রয়োজন কেন পড়বে।তখন আমরা তাকে সাধারণ লোক ভেবে তার সাথে হেঁটে যেতে থাকে।

পথের মধ্যে উনি আমাদের বলেন লোকজনের মালামাল বহন করা এবং এর দায়িত্ব নেয়ার কোনো সহজ কাজ নয়। আমি আজ 32 বছর ধরে কাজটা করছি আমার বয়স যখন 20 বছর তখন থেকে আমি কাজটা করে আসছি।তাকে দেখে কোনভাবেই আমাদের 52 বছর বয়সে মনে হয়নি। মনে হয়েছে তিনি একজন যুবক।আমরা তাকে প্রশ্ন করি আপনি এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন। তিনি উত্তরে বলেন চিঠি পৌঁছে দিতে। আমি বললাম এত রাতে? উনি বললেন হ্যাঁ। আমি বললাম আপনার বাড়ি কোথায়।উত্তরে তিনি বললেন আমাদের মত লোকের বাড়ি থাকতে নেই। লোকজনের খবর পৌছাতে পৌছাতে পথে আমাদের দিন কেটে যায়। আমি বললাম আপনি কোথা থেকে আসছেন। উনি বললেন রাত দেড়টার ট্রেন থেকে আমি নেমেছি।........

আমি ঈশ্বরদী থেকে আসছি। চিঠিগুলো এখন আমি সঠিক ঠিকানাই পৌঁছে দেব। আমি বললাম এত রাতে তো কোনো ট্রেন নেই। উনি বললেন আমার পা সবচেয়ে বড় ট্রেন।আমি অনেক জোরে দৌড়াতে পারি এবং এভাবে আমি চিঠি সরবরাহ করে থাকি। আমি এবং তুহিন কিছুটা ভয়ে ভয়ে লোকটার সাথে হাঁটছি।পথে যাওয়ার সময় লোকটা তার কিছু কথা আমাদের সাথে শেয়ার করে। বলে আমি এতদিনে এত বছরে এই কাজ করতে গিয়ে অনেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু কখনো নিজের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায় নি।অন্যের খবর আমার পিঠে থাকে। কারো সুখ আবার কারো দুঃখের খবর আবার কারো ভবিষ্যৎ আবার কারো কারো জীবন বলতে পারো।আমি একজন ভাগ্য বহনকারী বলতে পার। এভাবে কিছুক্ষণ হাঁটতে থাকি।

লোকটা আমাদের অনেক বিষয়ে বলে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছিল অনেক দিন তিনি কোনো জোরালো আলোর সামনে আসেননি।তার লন্ঠনে আলো সামান্য।এরকম লন্ঠন আমি এর আগে কখনোই দেখিনি। জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি?বলল আমার নাম সিরাজ।নামটা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় লোকটার পরনে ছিল একটি প্যান্ট। এখনকার মতো নয় প্যান্টটা। সুতি কাপড় দিয়ে তৈরি করা। এবং পায়ে কোনো জুতা ছিল না। এভাবে আমরা এগোতে থাকি। আমাদের এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য আমার বড় ভাই এগিয়ে আসেন। আমার বড় ভাইয়ের বয়স প্রায় সাতাশ বছর। আমি বললাম চলুন সামনে চলুন আমি আপনাকে কখনো দেখি নি আমার বড় ভাই আপনাকে দেখে থাকতে পারে।যেহেতু আপনি অনেকদিন ধরে এই রাস্তায় চিঠি বিলি করছেন। উনি বললেন চল। এবার যাবার পরে হঠাৎ করেই পিছনে আমরা তাকিয়ে দেখতে পাই কেউ নেই। আমি এবং তুহিন রীতিমতো হকচকিয়ে যায়।লোকটা গেল কোথায়।আমি ডাকি সিরাজ ভাই...সিরাজ ভাই... আপনি কোথায়।আমরা কোন উত্তর পাইনি। বাকি রাস্তাটুকু আমরা খুবই দ্রুত চলে আসি। এরপর আমরা কিছুদূর যায় এবং গিয়ে দেখি আমার ভাই দাঁড়িয়ে আছে।আমরা এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে ভাইয়ের বুঝতে কিছু বাকি ছিল না। সেই সময়ে আমার ভাই আমাকে কোনো প্রশ্ন করেনি। পরবর্তীতে বাসায় যায় পরের দিন ভাইকে সব খুলে বলি। যদিও তখন কিছু বুঝতে পারেননি পরে জানতে পারি সিরাজ নামে আমাদের এলাকার একজন লোক ছিল। উনি ডাকহর করার কাজ করতেন। উনি সম্পর্কে আমাদের দাদা হন। উনি প্রায় 1980 সালের দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন। উনি যুবক বয়সে নাকি মৃত্যুবরণ করেন। একবার চিঠি পৌঁছে দিতে গিয়ে উনি নাকি ডাকাতের হাতে মৃত্যু বরণ মৃত্যুবরণ করেন।ডাকাতরা ওনাকে হত্যা করে চিঠির মধ্যে থাকা টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।উনি তখনো বিয়ে করেননি এরপর থেকে নাকি মাঝে মাঝে ওনাকে ওই রাস্তায় দেখা যায়।এরকম ডাকহর করার কাজে রাস্তায় দেখা যায়। মোটামুটি আমাদের এলাকার বয়স্ক সবাই সিরাজ ভাইয়ের ঘটনা জানে। কিন্তু আমি জানতাম না। ঘটনার পর আমি এবং তুহিন খুবই আতঙ্কিত ছিলাম।যদি শুনতে পারি উনি খুব ভালো লোক ছিলেন।এভাবেই শেষ হয়ে আমার গল্পটা। আর হ‍্যা এটা আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। যেহুতু ঘটনাটা আমার সাথে ঘটেছে আমাকে বিশ্বাস করতেই হবে। হয়তো অন‍্যকারুর সাথে হলে আমিও বিশ্বাস করতে পারতাম না। আপনারা আপনাদের মতামত জানাবেন।

FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



আমি ইমন হোসেন। আমি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায় বসবাস করি। আমি একজন ছাএ। আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করি। আমি খেলাধুলা ভালোবাসি। বিশেষ আমি ফুটবল পছন্দ করি।



7b4bio5hobgt1ToxyJNZ2CBe2hrJJxxFumrTYgdiB16dsHGkxy5u76CUy1NXorPzXaMcRyXict6abfZKwupPgossU5rvzNFrfZu3mixHrTzqWdZpkJ9YsuTNWgaCHKTM7Z8rmrTgLzaeAtSZQApiPzpBJDDQ.png



FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png

Sort:  

আপনি অনেক সাহসী ভাই। আপনার জায়গায় আমি হলে হয়তবা মাথা ঘুরে পড়ে যেতাম খুবই ভয়ানক একটি পার করেছিলেন আপনি। দোয়া রইল আপনার সাথে যে তারে মন খারাপ কিছু কখনোই না হয়।

 3 years ago 

ভাই আমি নিজেও খুব ভীতু। সেদিন ওই ঘটনা টা কেমন করে যে ঘটে গেল। ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।।

 3 years ago (edited)

সেদিন যখন শুনলাম তোমার অভিজ্ঞতা নিয়ে এতো গভীরে ভাবিনি। শুনেছি অনেক সময় ভালো আত্মা আমাদের রক্ষা করেন। হয়তো সিরাজ আশু বিপদ থেকে তোমাদের রক্ষা করে এনেছিলো। তবে তোমার অভিজ্ঞতা সত্যিই ভয়াবহ ছিলো। অসুস্থ হয়ে যাওনি এটাই অনেক।

 3 years ago 

দাদা অসুস্থ যে হয়নি এটা ঠিক না খুব আতঙ্কিত ছিলাম। পড়ে যখন উনার বিষয়ে সম্পূর্ণ টা শুনি তখন ভয়টা অনেক অংশে কমে যায়। ধন্যবাদ দাদা আপনার মতামতের জন্য।।

 3 years ago 

বেশিরভাগ সময়ই এইরকম অভিজ্ঞতা হলে জ্বর হয়ে যায়। তুমি সুস্থ ছিলে এটাই পাওনা।

 3 years ago 

না আমার আর জ্বর আসছিল না।

তোমার লেখা গল্পটা পড়তে গিয়ে যদিও আমার বেশ ভয় লাগছিল। তবুও আমি মনে করি হয়ত উনি তোমাদেরকে বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্যই তোমাদের সাথে কথা বলতে বলতে এসেছিলেন। তবে এমন পরিস্থিতির সামনে আমি কোনো দিন পরি নাই, । তবে তোার জায়গায় আমি থাকলে হয়ত ওখানেই অসুস্থ হয়ে যেতাম। তোমার জীবনের বাস্তব অভিঙ্গতাটা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছো।

 3 years ago 

ধন্যবাদ তোমার মন্তব‍্যের জন্য।।

 3 years ago 

ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। ভাগ্য ভালো কোনো ভয়ংকর রূপ সামনে পরে নাই।

 3 years ago 

যথার্থ বলেছেন ভাই।।

 3 years ago 

খুবই ভয়ংকর ছিলো গল্পটা।আমি রিতিমতো ভয়ে ছিলাম।এরকম ভোতিক জিনিস আমি আমার চোখে কখুনো দেখি নাই।হয়তো তোমাদের কপাল ভালো ছিল সেফ ভাবে বাসায় আসছিলে।

 3 years ago 

ঠিক বলছ। ধন্যবাদ তোমার মন্তব‍্যের জন্য।।

গল্পঃ হোক বা বাস্তব উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়েছে।সারাক্ষণ খুব একটা ভয় লাগেনি তবে যখন লোকটি আপনাদের থেকে হারিয়ে গেলো তখন বেশ ভয় লাগছিল আমার ও।লোকটি আপনার সম্পর্কে দাদা হন, পারিবারিক লোক পেয়েই হয়তো লোকটির আত্তা আপনার সাথে তার ঘটান শেয়ার করতে এসেছিল।আমি শুনেছি হত্যা করা বা আত্মহত্যা এগুলোর আত্তা নাকি পৃথিবীতে চলাচল করে।তবে আমি আদৌ বিশ্বাস করি না ভুত বলতে কিছু আছে।হতে পারে সেটা হালুশালিউশন,বা সেই আত্তা ভয়ের কোন কারণ নেই মানুষের আত্তা কখনো আপনার ক্ষতি করবে বলে মণে হয় না।

শুভ কামনা রইলো খুব ভালো লেগেছে আমার।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। পোস্ট টা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।।

 3 years ago 

সেইদিন অনেকটা শুনেছিলাম তবে তেমন মাথা দেইনি তবে আজ পুরোটাই পড়লাম।আসলে আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছুই আসে বা থাকে যারা আমাদের রক্ষা করতেই আসে।আপনার ব্যাপারটাও বোধহয় এমনটাই ছিলো ভাইয়া। তবে অভিজ্ঞতা যে কতটা ভয়াবহ ছিলো তা বুঝতে সমস্যা হচ্ছেনা।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু। তবে সব অভিজ্ঞতা ভালো না।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর সুচিন্তিত মন্তব‍্যের জন্য।।।

 3 years ago 

আমার মনে হয়, লোকটি খুবই ভালো মানুষ।কারণ আপনাদের একা পেয়ে আপনাদেরকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছে আপন জনের কাছ অব্দি।তাই সে খারাপ ভূত হতেই পারে না।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন দিদি।

 3 years ago 

আপনি ভুতের সাথে সময় কাটিয়েছেন দেখে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম। যাইহোক গল্পটি বেশ ভয়ংকর ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60569.12
ETH 2442.20
USDT 1.00
SBD 2.52