⚽⚽পেলে দ্যা বার্থ অফ এ লিজেন্ড ⚽⚽। সম্পূর্ণ মুভি রিভিউ। ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। আজ আমি আমার পছন্দের একটি মুভি রিভিউ দেব। এই মুভিটা ফুটবলের রাজা পেলে এর জীবনকাহিনীর উপর নির্মিত। পেলে কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই মুভিতে পেলের জীবনের এমন কিছু ঘটনা দেখানো হয়েছে যেগুলো আমরা সবাই জানি না। মুভিটা আমার খুবই পছন্দের একটি মুভি। তো চলুন শুরু করা যাক। এই পোস্টের ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য।
মুভির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
------ | ------ |
---|---|
মুভির নাম | পেলে দ্যা বার্থ অফ এ লিজেন্ড। |
পরিচালক | জেফ জিম্বালিস্ট |
লেখক | জেফ জিম্বালিস্ট |
প্রযোজক | ব্রাইন গ্রাজির |
মিউজিক | এ আর রহমান(ভারত) |
অভিনয় | কেভিন দে পাওলা,ভিনসেন্ট দি অনোফরিয়ো,রদ্রিগো স্যানটোরো,দিয়াগো বোনেতা, |
দৈর্ঘ্য | ১০৭ মিনিট |
মুক্তি | ৬ মে ২০০৬ |
দেশ | আমেরিকা |
ভাষা | ইংরেজি এবং পর্তুগিজ |
মুভির কাহিনি সংক্ষেপ
সাল ১৯৫০। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে। সেই খেলা ব্রাজিলের এক প্রত্যন্ত গ্রামের লোকেরা রেডিওতে শুনছে। আড়াল থেকে সেটা শুনছে ডিকো(পেলে)। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের হার। চ্যাম্পিয়ন হলো উরুগুয়ে । স্বপ্ন ভঙ্গ হলো ব্রাজিলের। পেলের বাবা ব্রাজিলের হারে কেঁদে ফেলেছিলেন।আড়াল থেকে সেটা পেলে দেখে। এবং সে ঠিক করে ফুটবল খেলে যেভাবেই হোক তার বাবার মুখে হাসি ফোটাবে। ব্রাজিলের ওই বস্তির একদল ছেলে একটি ফুটবল টিম গঠন করে এবং খেলে। তারা তাদের ছেঁড়া জামা কাপড় দিয়ে বল তৈরি করে। পেলের বয়স তখন ৮ বছর।
ওই এলাকায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। যেখানে সবাই খেলে বুট পরে। শুধু ঐ বস্তির ছেলেদের দল খেলেছিল খালি পায়ে।এবং তারা অন্যদের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। তারা যথারীতি শখ করে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। এবং সবগুলো দলকে পেলের নৈপুণ্যে হারিয়ে গোল দিয়ে ফাইনালেও ওঠে। কিন্তু তাদের কোনো বুট না থাকায় তাদের নাম দেয়া হয় সু লেস বয়েজ।এতে এতে করে তাদেরকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা করে।এবং ফাইনালে তারা প্রথম হাফে কয়েক গোলের ব্যাবধানে পিছিয়ে থেকেও পরে ঠিকই ম্যাচ জিতে যাই।পেলের অসাধারণ গোল গুলোর জন্য ওই দলটা জিতে। তখন পেলের খেলা দেখে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব সান্তোস এফসির একজন কর্মকর্তা। তিনি সরাসরি পেলেকে সান্তোসে খেলার অফার দেন।
পেলে বাড়িতে গিয়ে এই কথা জানালে সর্বপ্রথম পেলের মা না বলেন। কারণ পেলের বাবাও একজন ফুটবলার ছিলেন। ব্রাজিলের একটি লিগে খেলতেন। কিন্তু একটা ভালো ইঞ্জুরীর পর তিনি আর খেলতে পারেন না। এবং পেলের বাবা সে রকম লেখাপড়া না জানা থাকায় তিনি এখন একটা ছোটখাটো চাকরি করেন। পেলের মা চাই না বাবার মতো পেলের ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যায়। সেজন্য তিনি তার ছেলেকে ফুটবলার হতে দিতে চান না।পেলের বাবা অবশ্য পেলেকে ফুটবলার বানাতে চাই। অনেক রিকুয়েস্টের পর তার মা রাজি হয়। এবং ওই কর্মকর্তার সাথে পেলে রওনা দেয় সান্তোসে ক্লাবের উদ্দেশ্যে। প্রথমদিন মাঠের ট্রায়ালে পেলে ভালো করে। এবং সান্তোস ক্লাবের মূল দলে জায়গা করে নেয় মাত্র ১৬ বছর বয়সে। অসাধারণ একটি সিজেন কাটায় পেলে।
এদিকে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের সময় চলে এসেছে। ব্রাজিল ইতিমধ্যে কোয়ালিফাই করেছে। এটা ছিল মেক্সিকো বিশ্বকাপ। যথারীতি ব্রাজিলের দল ঘোষণা করার সময় এসেছে। ব্রাজিল দলে জায়গা করে নিয়েছে পেলে। এবং তার জার্সি নাম্বার দশ'। এবং তার বয়স তখন মাত্র 17 বছর 353 দিন। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে পেলের সাথে ঘটে যায় একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা। একটি প্রস্তুতি ম্যাচে তিনি খুব ভালো রকম একটি ইনজুরির শিকার হন। তার একটি পা বেশ ভালোভাবে ভেঙে যায়। এদিকে বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস।তখন ব্রাজিল দলের ডাক্তার বলেন পেলে বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না। এটা শুনে পেলে প্রথমে হতাশায় ভেঙে পড়ে। কিন্তু খুবই আশ্চর্য জনকভাবে একটি প্রাচীন থেরাপিতে চিকিৎসা নিয়ে পেলে সুস্থ হয়ে যায়। এবং ট্রেনে মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের শুরু থেকে খেলেন কালো ছোট পেলে। যখন মাঠে নামে তাকে দেখে সবাই হাসি তামাশা করে। যে এ কীনা ব্রাজিলের 10 নাম্বার জার্সিধারী। পেলে রীতিমতো বর্ণবাদের শিকার হয়।এতে করে তার প্রথম থেকেই মন ভেঙে যায়। প্রথম হাফে হতাশায় পেলে সেরকম খেলতে পারেনা।ম্যাচটা ছিল শক্তিশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। ব্রাজিল একটি গোল গোল হজম করে। এবং দ্বিতীয় হাতে পেলে যেন নিজেকে খুঁজে পাই।অসাধারণ দুইটি গুগল করে পেলে। এবং পেলে তার স্কিল গতি এবং ফিনিশিং দিয়ে পুরো স্টেডিয়ামের দর্শকদের অবাক করে দেয়। সেই যারা পেলেকে নিয়ে যারা প্রথমে হাসি তামাসা করেছিল তারাই ম্যাচ শেষে দাঁড়িয়ে পেলেকে সংবর্ধনা জানায়।
এভাবেই যথারীতি বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলো খুব সহজেই জিতে যাই ব্রাজিল। ব্রাজিল দলে সেইসময় অন্যতম একজন সেরা খেলা ছিল গারিঞ্চা। গারিঞ্চা এবং পেলের পজিশন একই হওয়ায় তাদের ভিতরে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরে অবশ্য সেটা দুজনের আপসে ঠিক হয়ে যায়।এবং দুজন সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়। এবার বিশ্বকাপের ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে খেলবে ব্রাজিল।তাদের বিপক্ষে 1950 সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে ব্রাজিল এবং সুইডেন দলের সব খেলোয়ার এবং টিম ম্যানেজমেন্ট একত্রিত হয়। সেখানে সুইডেন দলের খেলোয়াড়রা ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়দের খুবই অপমানজনক এবং নানা খারাপ কথা বলে। এতে করে ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়দের মন ভেঙে যায়। কিন্তু পেলে সবাইকে উদ্ধুদ্ব করে ভালো খেলার জন্য। যথারীতি ফাইনালের সেইদিন চলে আসে। খেলা শুরু হয় মাঠে। প্রথমেই সুইডেন এক গোলে এগিয়ে যায়। এরপরে ঘুরে দাঁড়ায় ব্রাজিলে। ব্রাজিলের হয়ে অসাধারণ দুই গোল এবং এক অ্যাসিস্ট করে পেলে। এবং তারা সুইডেনের বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় পায়। এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। ওদিকে পেলের ঐ বস্তিতে ছোট্ট একটি সাদাকালো টিভিতে খেলা দেখছি পেলের পরিবার।প্রথমত ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয় এবং সেখানে নিজের ছেলের দুই গোল এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় এটা দেখে তার বাবা অঝোরে কেঁদে দেন।এবং শেষে গিয়ে পেলের বাবা পেলের মাকে বলেন দেখ এটা আমাদের পেলে। ব্রাজিলে উৎসব শুরু হয়ে যায়। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার, ফুটবলের জনক পেলের ফুটবল ক্যারিয়ার এখান থেকেই শুরু হয়।
ব্যক্তিগত মতামত
এটা ফুটবলের রাজা পেলের জীবন কাহিনি নিয়ে নির্মিত মুভি। পেলে কিন্তু ব্রাজিলের এক গ্রাম থেকে উঠে এসে পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছে তার পরিশ্রমের জন্য। তার ত্যাগের জন্য। পেলে ফুটবল ভালোবাসত এবং সে তার জীবনের সম্পূর্ণ ফোকাস দেয় ফুটবলের উপর। অর্থাৎ আমাদের লেখাপড়া কেন্দ্রীক জীবন গঠন করতে হবে এটা ঠিক নয়। আমরা যেটা ভালোবাসি যেটা আমরা ভালো পারি সেটার উপরই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়া উচিত। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত।
এই মুভিটা আমি একদিন খালার বাসায় গিয়েছিলাম খালার ছেলের ল্যাপটপে ছিল এবং মুভিটি আমার বেশ ভালো লেগেছিল। বাপ ও ছেলের কাহিনী আমার যথাসম্ভব মনে আছে আপনি খুব সুন্দর করে বর্ণনা দিয়েছেন আর মুভিটি আসলেই অনেক সুন্দর। সবথেকে দুঃখের বিষয় হয় তিনি বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন এখনো কিন্তু বর্তমানে অনেকে প্লেয়ার বর্ণবাদের শিকার হয়। এটি খুবই দুঃখ জনক। আমাদের মন-মানসিকতা চেঞ্জ করতে হবে। পৃথিবীতে সবাই যে সুন্দর হবে তার কোন মানে নাই।
ঠিক বলেছেন ভাই। পৃথিবী আধুনিক হলেও মানুষদের মধ্যে এখনও শিক্ষার অনেক অভাব আছে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।।।
মুভিটি দেখা হয়ে ওঠেনি, তবে আপনার পোস্ট পরার পর মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে মুভিটি দেখার জন্য। মনে হচ্ছে সত্যিই অসাধারন একটি মুভি, এটি না দেখলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে। পেলে সম্পর্কে এত সুন্দর একটি মুভি আছে তো আমি জানতাম না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি মুভিটি দেখবো। এত সুন্দর একটি তথ্য উপস্থাপন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই। এবং আপনার জন্য শুভকামনা।।
এই মুভিটি সত্যিই অসাধারণ একটি মুভি হবে যদিও মুভিটি আমি দেখিনি । রিভিউ পড়ে যা বুঝলাম একজন বস্তির ছেলে থেকে পেলেনহয়ে ওঠার গল্প। একজন স্বপ্ন ভাঙ্গা বাবার তার সন্তানের ভেতরে স্বপ্নের বীজ বোনার গল্প। পেলের জীবনে ধৈর্য, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ফুটবল জগতে রাজ করেছেন। আমি অবশ্যই মুভি দেখব ।
ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর এবং কাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের জন্য।।
ভাই আপনি বেশ সুন্দর একটা মুভি রিভিউ করেছেন। মুভিটা আসলে অত্যন্ত চমৎকার। মুভিটা আমি দেখেছি। মুভিটা হল ফুটবল প্লেয়ার পেলে জীবন কাহিনী নিয়ে তৈরি করা। আসলে খুবই সুন্দর মুভি এটি, আর তার সাথে আজকের আপনার রিভিউটা বেশ সুন্দর হয়েছে।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।।
আমি এই মুভিটা 2 বার দেখেছি। পেলে এর চরিত্রে যে ছেলেটি অভিনয় করে সে খুবই ভালো একজন অভিনেতা।এছাড়া এই মুভিতে স্বয়ং পেলে নিজেও খন্ড চরিত্রে রয়েছেন।তাছাড়া আমার খারাপ লাগে যখন ছোটবেলায় মাটি চাপা পড়ে পেলের এক কমজুড়ি বন্ধু মারা যায় এবং পরে পেলে পা ভেঙে যাওয়া অবস্থা।সবমিলিয়ে মুভিটা সত্যিকারের জীবন কাহিনী বলে অসাধারণ।সুন্দর রিভিউ করেছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যা দিদি পেলের ওই বন্ধু মারা যাওয়ার পর পেলে বেশ কয়েক বছর ফুটবল খেলা বাদ দেয়। পরে তার বাবার অনুপ্রেরণায় আবার শুরু করে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।।
পেলে দ্যা বার্থ অফ এ লিজেন্ড মুভিটি আমি কয়েকবার দেখেছি। মুভিটি আমার খুবই ভালো লাগে। বাপ ছেলের সুন্দর চরিত্র টা আমার অনেক ভালো লেগেছে। আপনি খুব সুন্দরভাবে মুভিটি রিভিউ করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।।।