মৃওিকা মায়া। সম্পূর্ণ মুভি রিভিউ। ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। আমি প্রায়ই মুভি দেখে থাকি। তবে বর্তমান সময়ের ওই প্রেমকাহিনী ঘিরে নির্মিত বাংলা ছবিগুলি আমি দেখিনা। আমি একটু ভিন্ন ধর্মী মুভি দেখতে পছন্দ করি। এইরকমই একটি ছবি আমি গতকাল দেখেছি। মুভিটার নাম মৃওিকা মায়া। একজন কুমোর অর্থাৎ মৃৎশিল্পের কাহিনি। কী করে সে তার পাল বংশ টিকিয়ে রাখবে এর উপরই ছবিটি নির্মিত। তো চলুন শুরু করা যাক। এই পোস্টের ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য।
মুভির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
------ | ------ |
---|---|
পরিচালক | গাজী রাকায়েত হোসেন। |
প্রযোজক | গাজী রাকায়েত হোসেন। |
রচয়িতা | গাজী রাকায়েত হোসেন। |
সুরকার | এ কে আজাদ |
প্রযোজনা | ইমপ্রেস টেলিফিল্ম |
মুক্তি | ৬ সেপ্টেম্বর,২০১৩ |
দৈর্ঘ্য | ১৫০ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
নাম | চরিএ |
---|---|
রাইসুল ইসলাম আসাদ | ক্ষীরমোহন পাল |
মামুনুর রশিদ | মহোজন |
শর্মী মালা | পদ্ম |
তিতাস জিয়া | বৈশাখ |
অন্যান্য চরিএ | আরো অনেকে। |
মুভির কাহিনি সংক্ষেপ।
ক্ষীরমোহন পাল ভালো নাম নারায়ন চন্দ্র পাল।একজন কুমোর অর্থাৎ মৃৎশিল্পী। মাটি দিয়ে হাড়ি পাতিল কলস ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন। কিন্তু এখন তার বয়স অনেক। এসব করতে পারে না। ক্ষীর মোহন পালের দুই ছেলে কিন্তু কোনো ছেলেই তার কাছে থাকে না। দুই ছেলে ঢাকায় ছোটখাট চাকরি করে। দুই ছেলের কোন ছেলেই ক্ষীরমোহন পালের এই কুমোরের পেশা গ্রহণ করেনি।এজন্য তার খুব দুঃখ।কিন্তু তার দুঃখ কিছুটা কমিয়েছে বৈশাখ।বৈশাখ ক্ষীরমোহন পালের রক্তের কেউ না। এক বৈশাখী ঝড়ের মধ্যে বটগাছের নিচে বৈশাখকে কুড়িয়ে পেয়েছিল ক্ষীরমোহন পাল। তখন থেকে নিজের নাতির মত মানুষ করে বৈশাখকে।আরো একজন আছে নাম পদ্ম। পদ্ম ক্ষীরমোহন পালের মেয়ের মেয়ে অর্থাৎ নাতনি। পদ্মের বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে ও এখন ওর নানার কাছে থাকে। পদ্মর যথেষ্ট বয়স হয়েছে তার নানা তার বিয়ের জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু পদ্মর গায়ের রং কালো হওয়াই বিয়ে হতে চাই না।
বৈশাখ আরেকটি গুন আছে বৈশাখ খুব ভালো মাটির ভাস্কর্য তৈরি করতে পারে।এটা ক্ষীরমোহন পাল বৈশাখকে শেখায়নি। বৈশাখের নিজের ভেতর থেকে এই গুণটি বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু এই গুণ বাইরের খুব কম লোকই জানে। বাড়ির বাইরের কেউ জানে না। একের পর এক পদ্মর বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে যেতে থাকে। এতে অবশ্য পদ্ম খুব খুশি হয় কারণ পদ্ম যে বৈশাখকে ভালোবাসে। কিন্তু এতদিন সে বৈশাখকে বলে নি এই ভয়ে যদি বৈশাখ তাকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু সাহস করে বলে দেখে বৈশাখ রাজি হয়ে যায়।বৈশাখ খুবই শান্ত সরল ছেলে সে শুধু তার ভাস্কার্য নিয়ে ভাবে। একসময় একজন লোক একজন নামকরা ভাস্কর্যবীদ শহর থেকে আসে এখানে। সে বৈশাখের সাথে কথা বলে, ক্ষীরমোহন পালের সাথে এই পেশা নিয়ে কথা বলে।যাবার সময় সে বৈশাখের ভাস্কর্য দেখে খুবই আশ্চর্য হয়। এবং একটি ভাস্কর্য নিয়ে যায় তার সাথে। এর জন্য সে টাকা দিতে চাইলেও বৈশাখ টাকা নেই নি।
এরপর হঠাৎ আশ্চর্যজনকভাবে পদ্মের বিয়ে ঠিক হয়ে যাই।বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক কিন্তু ক্ষীরমোহন পাল পদ্ম এবং বৈশাখের সম্পর্কের সম্পর্কে কিছু জানতেন না। সেজন্য সে কিছু না জেনে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। বিয়ের আগের দিন সে সবকিছু জানতে পারলে বৈশাখের কাছে অনুরোধ করেন। বলেন তুই পদ্ম কে না বলে দিবি। এভাবে পদ্মের বিয়ে হয়ে যায়।বৈশাখ খুবই কষ্ট পায়। এরপর ক্ষীরমোহন পালের দুই ছেলে শহর থেকে গ্রামে আসে এবং তার বাবাকে বলে সম্পত্তির ভাগ করে দাও। ক্ষীরমোহন পাল এতে খুবই ক্ষিপ্ত হয়। যে নিজের বাপের ভীটার প্রতি এদের কোনো সম্মান নেই। এরা সেটা বিক্রি করে দিতে চাই।
রাগ করে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ক্ষীর মোহন পাল তার সমস্ত সম্পত্তি বৈশাখের নামে লিখে দেয়। কিন্তু বৈশাখ তা কখনো নিতে চায়নি। কারণ এতে ক্ষীরমোহন পালের দুই ছেলে অনেক ঝামেলা করবে।কিন্তু সম্পত্তি রক্ষা করতে নিজের বাপের ভিটা মাটি রক্ষা করতে এছাড়া আর কোন উপায় নেই ক্ষীর মোহন পালের কাছে।এবং সে বৈশাখকে যথেষ্ঠ ভালোবাসে এবং সে জানে বৈশাখ এ পারবে তার মৃৎশিল্প বংশের গৌরব ধরে রাখতে। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছুদিন পর ক্ষীর মোহন পাল মারা যায়। তার দুই ছেলে এসে তার সৎকার করে। এরপর যখন জানে বিষয়টা সহ সব সম্পত্তি বৈশাখের নামে লিখে দিয়েছে ক্ষীরমোহন পাল। তখন তারা অনেক ঝামেলা করে কিন্তু কিছুতেই কিছু করে উঠতে পারে না।এবং বৈশাখ বেঁকে বসে। তাদের নিজেদের বাবার প্রতি কোন সম্মান ছিল না।বৈশাখ তাদের কখনো সম্পওি ফিরিয়ে দেবে না। তাছাড়া বৈশাখের সম্পত্তির প্রতি কোন লোভ নেই।
এরপর ওই দুই ভাই গ্রামের এক মহাজনের গোসের লোকের সাথে দেখা করে। লোকটা অনেক দিন ধরেই ক্ষীর মোহন পালের জায়গাটা কিনতে চাইছিল। তারা বলে আপনি আমাদের অর্ধেক টাকা দিন এবং বৈশাখকে মেরে ফেলুন তাহলে জমি আপনি পেয়ে যাবেন।যথারীতি মহাজন সেই কাজ করতে যায় এ জন্য যথেষ্ট ফন্দি ফিকির করে।অনেক ঝামেলা করে।একদিন হঠাৎ করে বৈশাখের মাথায় মারে এবং দুই হাত ভেঙে দেয়। এরই মধ্যে বিধবা হয়ে ফিরে আসে পদ্ম। অর্থাৎ তার স্বামী মারা গেছে। এদিকে ওই মহজন প্রায় প্রায় এসে ঝামেলা করে। বৈশাখে একা কী করবে। এমন সময় শহর থেকে ওই ভাস্কর্যবিদ এর আগমন হয়। সে বলে বৈশাখের ভাস্কর্য সেরা ভাস্কর্যের পুরস্কার পেয়েছে। সে সেই পএ বৈশাখকে দিতে এসেছে।এসে যখন সমস্ত ঘটনা শুনে সে বলে আমি তোমাদের সাহায্য করবো। এদিকে অবস্থা খারাপ দেখে ওই মহজন কেটে পড়ে। এবং ক্ষীরমোহন পালের দুই ছেলেও অবস্থা খারাপ দেখে আর এদিকে আসে না। অবশেষে ক্ষীর মোহন পালের ভিটা এবং তার পাল বংশের বংশধর সে পেয়ে যায়। এখানে এসে শেষ হয় ছবিটি।
ব্যক্তিগত মতামত।
এই মুভিটাতে বাংলার একটি প্রাচীন পেশা এবং ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের বিলুপ্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। সত্যি দিনে দিনে মৃৎশিল্পের মতো পেশা হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কেউ আসতে চাচ্ছে না। কারণ এখনকার শিক্ষিত সমাজের লোকেরা এটাকে ছোট লোকের কাজ হিসেবেই দেখে। তাদেরকে প্রাপ্য সম্মান দেয় না। এজন্যই তারাও আর এগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে না। তার দরুন একটি পেশা বিলুপ্তির পথে প্রায়। এক্ষেত্রে মুভির ক্ষীরমোহন পাল তার বংশের ধারা রাখতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদেরও উচিত এই পেশাগুলো যেন সমাজ থেকে বিলুপ্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।
মুভি রিভিউর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামত দেওয়াটা প্রযোজ্য। কিন্তু এটি আপনি দেননি।
ও দুঃখিত ভাই। আমি আমার পোস্টে এটা সংযোজন করছি এখনই। আপনাকে ধন্যবাদ।।
ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনি খুবই সুন্দর একটি মুভি রিভিউ করেছেন। মুভি রিভিউ টি পূর্ণাঙ্গভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় মুভি রিভিউ টি পড়ে মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য বিষয়টি বুঝতে পারলাম। দিনদিন মৃৎশিল্পের বিলুপ্তি ঘটছে। দারুন হয়েছে মুভি রিভিউ টি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
জী ভাই আপনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।
আসোলেই ভাই মৃৎশিল্প যে বিলুপ্তির পথে তা আজকাল বুজতে পারতেছ ।কারন মাটির জিনিসপত্র এখন পাওয়াই যায়না ।কারন অবহেলিত হচ্ছে তারা ।আমাদের উচিৎ এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহোকারে প্রচার করা যাতে আবার আগের দিনের মতো এর স্থানফিরে পায় ।আপনার রিভিওটি চমৎকার ছিলো ভাই ধন্যবাদ ।
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই। ধন্যবাদ।।
মৃত্তিকা মায়া নাটকের রিপোর্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। নাটকের মধ্যে অনেক আবেগ অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে পোস্টটি পড়ে বুঝলাম। যদি এ নাটকটি আমি কখনো দেখিনি তবে এবার খুবই দেখতে ইচ্ছে করছে নাটকটি। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য। তবে কীনা ভাই এটা নাটক না মুভি ছিল।।