স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনূভুতি।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ সোমবার,২৬ ই , সেপ্টেম্বর,২০২২।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে



IMG_20210126_105149.jpg



আজ আমাদের দাদার একমাএ সন্তান টিনটিন এর জন্মদিন। টিনটিন চার বছরে পদার্পন করল। টিনটিনকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।। আশাকরি ভবিষ্যতে টিনটিন তার বাবার যোগ‍্য সন্তান হিসেবে গড়ে উঠবে। টিনটিনের জন্য
অনেক অনেক শুভকামনা। কিছু কিছু ঘটনা আছে যেগুলো হৃদয়ের এক কোণে থেকে যায় সারাজীবন। কখনোই ভোলা যায় না। নিজের স্মৃতিময় অতীত গুলো কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব না। আমার বাংলা ব্লগ সবসময়ই ইউনিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এবারের প্রতিযোগীতার বিষয়টিও বেশ ইউনিক এবং দারুণ। এর ফলে আরও একবার নিজের স্কুল লাইফের স্মৃতিচারণ করা হয়ে যাবে। আমার জীবনে স্কুল লাইফের তিক্ত অভিজ্ঞতার ঘটনা টা এখন আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেব। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।

আমি ছোট থেকেই বাড়িতে মোটামুটি চুপচাপ থাকি। তবে স্কুল বা কলেজে গেলে বন্ধুদের সঙ্গে মিশলে দুষ্টামি টা একটু বেশিই করি। যদি আমার চরিএটা একবাক‍্যে প্রকাশ করতে চান তাহলে বলতে পারেন আমি শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট। মোটামুটি প্রাইমারি লেভেলটা অতিবাহিত করি কোনোরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা ছাড়া। মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়ে যখন ভর্তি হলাম প্রথম প্রথম খুবই ভয় করতো। কারণ অসংখ্য ছেলেমেয়ে ছিল ঐ স্কুলে। আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় আমাদের উপজেলা এবং জেলার শ্রেষ্ট একটা বিদ‍্যাপীঠ কুমারখালী এম.এন. পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়। এটা বিদ‍্যালয়টা ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। অত‍্যন্ত ঐতিহ্যবাহী একটা বিদ‍্যালয় এটা। আমি যখন ঐ স্কুলে ভর্তি হয় তখন আমাদের ঐ বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শহিদুল ইসলাম স‍্যার। উনি ছিলেন অত‍্যন্ত রাগী এবং কঠোর। শিক্ষক ছাএ কর্মচারী স্কুলের সবাই উনাকে সমীহ করে চলতেন। তো আমার প্রথম তিনবছর মোটামুটি ভালোই কাটে স্কুলে খুব একটা দুষ্টামি করতাম না। আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। আমার জেএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট যথেষ্ট ভালো ছিল অনায়াসে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারতাম। কিন্তু আমার এক স‍্যারের কথায় আমি ভোকেশনাল বা কারিগরিতে ভর্তি হয়।


IMG_20210126_104340.jpg


আমার সঙ্গে আমার সব বন্ধুরাও ভর্তি হয়। এবং আমাদের ঐ স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকদের ভোকেশনাল এর ছাএদের প্রতি আলাদা একটা বিরুপ দৃষ্টি ছিলো। অনেক স‍্যার আমাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করতো। যাইহোক সেসব বাদ দেয়। ক্লাস নাইনে আমি, লিখন, সাঈদ এক বেঞ্চে বসতাম এবং অনেক দুষ্টামি করতাম। আমাদের ক্লাসে ছিল মাএ দুজন মেয়ে আর বাকি সব ছেলে। তখন এপ্রিল মাস। আমাদের ক্লাসের ক‍্যাপ্টেন করা হলো ঐ দুই মেয়ে মিম এবং জেরিনকে। একদিন দুপুরের পর ক্লাস হচ্ছে না। কারণ প্রধান শিক্ষক সব সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করছে কোনো একটা বিষয়ে। তো ক্লাস ক‍্যাপ্টেনদের বলা হয়েছে ক্লাসটা শান্ত রাখতে। এবং কেউ হইচই করলে তাদের নাম লিখে রাখতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ক্লাসের সব ছেলে শুরু করলো হুড়োহুড়ি এবং মারামারি। একপর্যায়ে অধিকাংশ পোলাপান বাইরে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করল এর মধ্যে আমি এবং লিখনও ছিলাম। আমাদের প্রধান শিক্ষক চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে বাইরে এসে দেখে বেশ কিছু পোলাপান মাঠে দৌড়াদৌড়ি এবং হুড়োহুড়ি করছে। তারমধ‍্যে আমিও একজন ছিলাম। আমাদের দুই মেয়ে ক্লাস ক‍্যাপ্টেন নাম লিখে রেখেছে।

তো শহিদুল স‍্যার তো ঐ অবস্থা দেখে প্রচণ্ড রেগে গেল। ঠিক ঐ মূহুর্তে মীম এবং জেরিন দুই ক‍্যাপ্টেন যাদের যাদের নাম লিখেছে সেগুলো নিয়ে প্রধান শিক্ষক শহিদুল স‍্যার এর কাছে গেল। স‍্যার নামগুলো দেখে নামের লিস্টটা সহকারি শিক্ষক তৌহিদ স‍্যারের কাছে দিল এবং বলল সব গুলোরে নিয়ে আসেন। শহিদুল স‍্যার তার মাইরের জন্য বেশ নামকরা ছিল আমাদের ঐ স্কুলে। স‍্যার যখন কাউকে তার রুমে ডাকতো স্কুলের সবাই বুঝে যেত আজ ওর খবর আছে।। তৌহিদ স‍্যার ক্লাসে বলল আমি যাদের যাদের নাম বলবো উঠে দাঁড়াবেন। দেখি নামের লিস্টে আমার নাম সহ আরও পনের ষোল জনের নাম। স‍্যার বলল এবার আমার সামনে সামনে আপনারা চলেন। আমরা স‍্যার এর আগে যাচ্ছি স্কুলের সব ছাএরা আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।। প্রথমবার এইরকম অবস্থায় পড়েছি বেশ ভয় করছে। তো সবাই গেলাম স‍্যার এর রুমে। স‍্যার বলল সবাই পাশের রুমে যা।


IMG_20210126_105105.jpg


স‍্যারের রুমের সাথে আরেকটা রুম ছিল। তো আমরা ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। স‍্যার দেখি তার জোড়া বেতটা বের করছে। দেখে আমাদের সবার প্রাণটা কেঁপে উঠলো। স‍্যার বললেন এবার এক এক করে বের হয়ে আয়। কিন্তু কেউ বের হয় না। স‍্যার বেশ কয়েকবার বললেন কী রে বের হ। কিন্তু কেউ বের হয় না। আমি সামনের দিকে ছিলাম একপর্যায়ে পেছন থেকে কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দেয় আমি সামনে চলে আসি। তখন আর ফিরে যেতে পারিনি। আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে স‍্যার এর সামনে গেলাম। স‍্যার এর হাতে জোড়া বেত। স‍্যার আমাকে বললেন চিল্লাচিল্লি করছিলি কেন বল। আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। সঙ্গে সঙ্গে স‍্যার শুরু করলেন বেএাঘাত। বেশ কয়েকটা পাঁচ থেকে ছয়টা বেতের বারি মারলেন আমাকে। এরপর বললেন আর কখনো এমনটা করবি না। চলে যা। আমি যখন স‍্যার এর রুম থেকে বের হচ্ছি সব স‍্যার ছাএরা আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি লজ্জায় মাথা তুলতে পারছিলাম না। এইরকম অবস্থার মধ্যে আমি কখনো পড়িনি। ক্লাসে এসে কোনো কথা বললাম না। চুপ করে বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছে আমি চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারছিলাম না।। ঐ মূহুর্ত ঐ মূহুর্ত্তের অনূভুতি আমি কখনোই ভুলতে পারব না। আজ অনূভুতি টা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার মাধ্যমে আরেকবার মনে পড়ে গেল স্মৃতিটা।।





সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG_-akkhy.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Sort:  
 2 years ago 

এরকম।একটা স্যার ছিল আমাদের গণিত স্যার যার মাইর এর কথা এখনো মনে পরে।আহহ তবুও মিস করি সেই সময় টাকে দারুন উপস্থাপনা করেছো ইমন সাহেব
।শুভ কামনা

 2 years ago 

ধন্যবাদ তোমাকে রাসেল সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

 2 years ago 

স্যারের হাতের মায়ের খুবই মিষ্টি যদি তাও আবার বেতের আঘাত হয়। ১৬ জনকে বেতের আঘাত করছিল না ভাই। ঐদিন শহিদুল ছার মারটা তো অনেক মজা লাগছিল। অবশ্যই এ ধরনের মার খেতে অনেক সময় হাসি লাগে। অভিজ্ঞতা আছে আমার।

 2 years ago 

কী যে বলেন ভাই। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।।

 2 years ago 

এরকম কিছু শিক্ষক রয়েছে সবার স্কুল জীবনে। আপনার মত আমাদেরও এরকম একটি শিক্ষক ছিলো যিনি কাউকে ডাকলেই সবার জানা হয়ে যেত যে আজকে তার খবর আছে। যাই হোক অনেক ভালো লাগলো আপনার তিক্ত অভিজ্ঞতাটি।

 2 years ago 

জী ভাই একেবারে ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।।

 2 years ago 

আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ভালো থাকবেন।

 2 years ago (edited)

আমাদের স্কুলে ও ভোকেশনাল শাখা আছে। আমি যখন অধ্যায়নরত ছিলাম সেখানে তখন ও দেখেছি ভোকেশনাল এর ছাত্রদেরকে একটু অবমুল্যায়ন করা হত। এর কারণ একটা এই হতে পারে অনেক গুলা আদু ভাইয়ে ভর্তি থাকতো প্রতিটি ক্লাস। নতুন ছাত্র ছিল সংখ্যায় কম। এখন অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। তবে কি চোখে দেখা হয় তাদের এটা জানা নেই।
আপনার লেখনি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বেশ অনেক।।

 2 years ago (edited)

ভোকেশনাল মানেই অবহেলার শিকার। আর এরকম শহিদুল স্যারের মতো স্যার প্রত্যেক স্কুলেই রয়েছে। মার দেওয়ার জন্য বিখ্যাত স্যার।

 2 years ago 

হুম ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার স্কুল লাইফের তিক্ত অভিজ্ঞতার গল্পটা পড়লাম। আমার মত আপনিও মার খেয়েছেন। তবে মার খাওয়ার কারনটা আলাদা। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

হুম ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68220.71
ETH 3321.59
USDT 1.00
SBD 2.74