||শেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি||

আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে মোবাইল ছাড়া একদিন না বন্ধুবান্ধব ছাড়া একদিন কোনটা কঠিন । আমি কোনো সন্দেহ ছাড়া বলব মোবাইল ছাড়া একদিন। আসলে আমরা ফোনের সঙ্গে এতোটা জড়িয়ে গেছি যে জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে এটার ভূমিকা রয়েছে। মোবাইল যদিও কথা বলার জন্য আবিষ্কার করা হয় কিন্তু এই মোবাইল এখন একটা অন‍্যরকম প্রযুক্তি। যেটা দিয়ে কী করা সম্ভব নয়। প্রথমবার যখন এটা হাতে পেয়েছিলাম বেশ অন‍্যরকম একটা অনূভুতি হয়েছিল। আমার বাংলা ব্লগ এর চলমান প্রতিযোগিতার বিষয় এটা "শেয়ার করো তোমার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনূভুতি "। আমার জীবনে প্রথম মোবাইল পাওয়ার প্রতিটা মূহুর্ত আমার মনে আছে। আজ সেই মূহুর্ত গুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেব।

সাল ২০১৯ আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে খুব ভালো ফলাফল করি। এরপর ভর্তি হয়ে কলেজে। কিন্তু তখন আমার কাছে ছিল ছোট একটা বাটন ফোন Samsung ব্রান্ডের।যেটা শুধু আমি কথা বলার জন্য ব‍্যবহার করতাম।তাও সেটা নতুন ছিল না পুরাতন। আমার বাড়ির কেউ ঐসময়ে আমার হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়ার পক্ষে ছিল না। কিন্তু আমার সব বন্ধুরা ম‍্যাসেনজারে আড্ডা দিত কথা বলত সেলফি তুলতো। সেগুলো আমার শুধু দেখা লাগত। এভাবেই প্রথম সেমিষ্টার যায় এবং আমি ১৮ বছরে পদার্পন করি। আমি তখন একজন বাংলাদেশের নাগরিক আমার স্মার্টফোন ব‍্যবহারের অধিকার আছে। বাড়িতে এসব বলে ম‍্যানেজ করলাম। কিন্তু সত্যি বলতে আমার বাড়ি থেকে আমাকে স্মার্টফোন কিনে দেবে এইরকম পরিস্থিতি ছিল না। আমি অনেক আগে থেকেই টিউশনি করতাম। আমি তখন প্রতিমাসে প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা টিউশনি করে আয় করতাম। আমার লেখাপড়া হাতখরচ চালিয়ে যা বেঁচে থাকত আমি জমিয়ে রাখতাম। তার ও প্রায় ছয় মাস আগে থেকে আমি টাকা জমাচ্ছিলাম।

---

---

^{ফোন কেনার পর প্রথম সেলফি, ০৫ মার্চ,২০২০}

---

---

সময়টা ২০২০ সালের মার্চ মাস। আমি তখনও নিজস্ব স্মার্টফোন হাতে পাইনি। ঐ সেকেন্ড হ‍্যান্ড বাটন ফোন ব‍্যবহার করি শুধু কথা বলার জন্য।কিন্তু আমি একটা স্মার্টফোনের প্রয়োজনবোধ করলাম। টিউশনি থেকে আমার গোছানো টাকা ছিল ৬ হাজার মতো। আমি ফোন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমার দুই বন্ধু শিমুল এবং তোহা অনেক ভালো জানতো ফোন সম্পর্কে। ওদেরকে বললাম আমি একটা ফোন কিনব আমার বাজেট এই ৬ হাজার মতো। ওরা বলল এই বাজেটে ভালো স্মার্টফোন পাবি না। আরেকটু বাজেট বাড়িয়ে ১০ হাজার কর। কিন্তু আমি আরও চার হাজার টাকা কোথায় পাব। তখন আমার মনে একটা বুদ্ধি আসলো। আমি নিজেই নিজের থেকে ধার নেব ঐ চার হাজার টাকা। কী বুঝলেন না তো বলছি।।

২০১৯ সালের এসএসসি ফলাফল ভালো হওয়াই আমি ডাচ বাংলা ব‍্যাংক এর স্কলারশীপ পাই। ওরা মোটামুটি দু বছরে ৫০ হাজার টাকা দেয়। তখন ওদের দেওয়া ২০ হাজার টাকা আমার একাউন্টে জমানো ছিল। ওটা আমি পরবর্তীতে লেখাপড়ার সময় খরচ করব বলে জমাচ্ছিলাম। আমি তখন ভাবলাম ওখান থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে ফোন কিনি পরে টিউশনির টাকা থেকে মাসে মাসে দিয়ে দেব এটাই ছিল নিজের থেকে নিজে ধার নেওয়া। ঐ রকমই সব কাজ করলাম। দিনটা ছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসের ০৫ তারিখ বৃহস্পতিবার। আমি ফোন কিনতে যায় সাথে যায় আমার বন্ধু তোহা এবং শিমুল বাজেট সবমিলিয়ে ১০ হাজার।।

---

---

---

---

প্রথমে আমার টার্গেট ছিল Redmi 9A ফোনটা নিব এটা ঐ বাজেটের মধ্যে সেরা ফোন ছিল তখন। কিন্তু দোকানে গিয়ে শুনি ফোনটা মার্কেট আউট। খুবই খারাপ লেগেছিল। তখন উনারা বললেন আপনারা VIVO Y91C ফোনটা দেখতে পারেন। দুইটা ফোনের কনফিগারেশন একই। এটার র‍্যাম ২ জিবি, রম ৩২ জিবি, ক‍্যামেরা টাও বেশ ভালো।। কিন্তু আমার পছন্দ ছিল Redmi 9A. আমি দায়িত্ব টা আমার দুই বন্ধুর উপর ছেড়ে দিলাম। ওরা বলল ঠিক আছে এটাও ভালো ফোন এটাই নিয়ে নে। আমি আর কোনো কিছু বললাম না। আমার জীবনের প্রথম ফোন আমি হাতে পেলাম তখন আলাদা একটা অনূভুতি হচ্ছিল সেটা প্রকাশ করার মতো না হি হি। এবং সবচাইতে মজার কথা আমি এখনও সেই ফোন অর্থাৎ আমার জীবনের প্রথম ফোনটা ব‍্যবহার করছি। প্রথমদিন যেদিন ফোন আমি হাতে পেয়েছিলাম সেদিন সারারাত আমি ফেসবুক এবং ইউটিউব ব‍্যবহার করেছিলাম।VIVO ব্রান্ডের ফোন কেনার জন্য গ্রামীনফোন সীম আমাকে ৬ জিবি ডাটা ফ্রী দেয়। বেশ খুশি হয়েছিলাম। ওটা ছিল আমার প্রথম ফেসবুক ব‍্যবহার করা। ফেসবুক কী এক আশ্চর্য জিনিস আমি সেটাই চিন্তা করছিলাম। ফোনটা এখনও দারুণ সার্ভিস দিচ্ছে। কিন্তু ডিসকোর্ড, টেলিগ্রাম নিজের ব‍্যবহৃত এতোগুলো অ‍্যাপসের প্রেসার আর এই ফোন নিতে পারছে না। আমি হয়তো খুব দ্রুতই নতুন একটা ফোন কিনব। কিন্তু এই ফোনটা আমার প্রথম ফোন আমি কখনোই বিক্রি করব না। সারাজীবন রেখে দেব। কারণ এটা আমার সব। এটা দিয়ে আমি সর্বপ্রথম সেলফি উঠি এটা দিয়ে আমি স্টিমিট জার্নি শুরু করি, এটা দিয়ে কত রমনীর সঙ্গে ম‍্যাসেনজারে কথা বলেছি। আরও অনেক স্মৃতি যা বলে শেষ করা যাবে না।।

---

---

------	-----
ফটোগ্রাফার	@emon42
ফটোগ্রাফি ডিভাইস	VIVO Y91C
সময়	মার্চ,২০২০

---

---

সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।

---

---

Facebook
Twitter
You Tube

---

---

অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

---

---

---

---

---

---

---

---