!!! ছোট গল্প: হঠাৎ সন্ধ‍্যা!!!

emon42 (72)memberVerified Member 🇧🇩in আমার বাংলা ব্লগ • 2 years ago

💞"সফলতার জন্য প্রতিযোগিতার দরকার নেই বারবার নিজেকে ছাড়িয়ে যান"💞

আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

^{আজ মঙ্গলবার, ১২ ই জুলাই,২০২২।}

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে

Source

প্রতিদিনের মতো অরিএ আজকেও বসে আছে। ৭ টার সময় বাসটা এলেই উঠে পড়বে এরপর বাড়ি। বাড়ি থেকে অফিস, অফিস থেকে বাড়ি এরমধ্যেই ওর জীবন টা এখন বদ্ধ। সেদিন সন্ধ‍্যায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে অরিএ অন‍্য দিনের মতোই বসে আছে বাসের অপেক্ষায়। তবে আজ বৃষ্টি হচ্ছে বাসটা আসতে দেরি করছে সেজন্য অপেক্ষার প্রহরটা আরও বাড়ছে। অরিএ বসে আছে। হঠাৎ একজন ভদ্র মহিলা আসলো। অরিএ তখনও জানে না পাশে যিনি এসে বসেছেন উনি মহিলা,না কম বয়সী,না মধ‍্য বয়সী নারী। অরিএ তার দিকে তাকাইও নাই। যাইহোক এরপর ঝুম বৃষ্টি আরও বাড়ল। বাসটাও চলে আসল। যথারীতি প্রথমে ঐ মহিলা উঠলো বাসে পরে অরিএ। মহিলাটা অরিএের পাশের সিটে বসেছে। হঠাৎ অরিএের নজর পড়ল মেয়েটার দিকে। বয়সটা অরিএের মতোই হবে। মেয়েটাকে অনেক পরিচিত লাগল অরিএের। ইস কত চেনা হ‍্যা এটা অদিতি না তাই তো। কত পরিবর্তন হয়েছে অদিতির।সময়ের পরিক্রমায় চেনা মানুষ টা আজ বড্ড অচেনা। অরিএ উৎসাহের সঙ্গে ডাকলো অদিতি। কিন্তু তার থেকে উওর আসলো আমার নাম অদিতি না।

এরপর আগে বাস নেমে পড়লো অদিতি। অরিএ শুধু ভাবছে এতবড় ভুল তো তার হবে না। সেই চেহারা সেই চোখ সেই কন্ঠস্বর তার ভুল হবার কথা নয়। পরেরদিন আবার ঐ সময়ে মেয়েটা ওখানে বাসের জন্য এসে হাজির। অরিএ আজ প্রথম থেকেই কথা বলতে প্রস্তুত। অরিএ মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা আমি আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি। আপনাকে আমার অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে। জবাবে তার উওর আমি আপনাকে কখনো দেখিনি আমি আপনাকে চিনি না। আর এভাবে বিরক্ত করবেন না। অরিএ এবার ধরেই নিলো না এটা অদিতি না। যদিএ চেহারা টা অবিকল ঐ রকম শুধু বয়সটা বেড়েছে। কিন্তু অদিতি কখনোই এইভাবে কথা বলতো না। অদিতি ছিল খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। সবার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতো। এবং অরিএের সঙ্গে তার একসময় একটা সম্পর্ক ছিল। অরিএ নিজের ভুল মনে করে চুপ হয়ে গেল আর কোনো কথা বলল না। অরিএ বাড়ি গিয়ে খুজে বের করল বহু পুরাতন এক ফেসবুক আইডি। না এখনো ডিজেবল হয়নি। তবে এখন আর একাউন্ট টা আগের মতো একটিভ হয় না। একাউন্ট টা ছিল অদিতির, অরিএের একসময়ের প্রিয় মানুষ । তার সঙ্গে মোটামুটি ৮-১০ বছর যোগাযোগ নেই অরিএের। অদিতি যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছিল সেই থেকে তাদের বিচ্ছেদের শুরু । অরিএ সারা রাত পুরাতন টেক্সট গুলো পড়লো এবং পুরানো স্মৃতিটা স্মরণ করার চেষ্টা করল। এভাবে সারা রাত চলে গেল।

Source

অরিএের সেদিন সন্ধ‍্যায় আসতে কিছুটা দেরি। এসে দেখে মেয়েটা আজ আগেই এসেছে। সেদিন সন্ধ্যায় প্রচণ্ড বৃষ্টি। যথারীতি দুজন বাসের মধ্যে গিয়ে বসলো। হঠাৎ মেয়েটা বলে উঠল অরিএ কেমন আছো। অরিএের মুখে কোনো কথা নেই। অরিএ বলে উঠল তাহলে এই কদিন নাটক করলে কেন। আমি জানতাম তুমি অদিতি। অদিতি বলল দেখলাম তুমি আগের মতোই আছো কী না। প্রথমত বলে রাখি দুজন একসঙ্গে পড়তো অনেক ভালো বন্ধু ছিল। তবে অরিএ অদিতি কে ভালোবাসলেও যদিও অদিতি ভালোবাসতো না। যাইহোক দুজনের কথা হলো। দুজন দুজনকে জিজ্ঞেস করল এখন কী করছ কেমন আছো কীভাবে চলছে এসব। সময়ের পরিক্রমায় দুজনেরই পরিবর্তন হয়েছে তবে কীনা আগের ভাবটা রয়েই গেছে। অদিতি বলল অরিএ থাকো। আমার বাস স্টপ চলে এসেছে। অরিএ বলল ঠিক আছে যাও। পরের দিন দুজনই এসেছে আগে। বাস আসতে বেশ খানিকটা সময় বাকি। অরিএ বলল অদিতি চলো কোথাও গিয়ে বসি। দুজন একটা কফি শপে গিয়ে বসল। অদিতি বলে উঠল অরিএ এখনো কী আমাকে পছন্দ করো। অরিএ বলল পছন্দ করি কী না জানিনা তবে তোমার মতো এখনো কাউকেই পাইনি। অদিতি বলল দেখি তোমার বউয়ের ছবি দেখাও। অরিএ বলল সরি আমি বিয়ে করিনি। অদিতি বলে সত্যি। অরিএ বলে হ‍্যা। অদিতি কিছুসময় তাকিয়ে রইলো অরিএের দিকে।অরিএের প্রশ্ন তোমার কী অবস্থা। তোমার স্বামী সন্তান এর কী খবর। অদিতির একেবারে পরিষ্কার জবাব ওসব বাদ দাও। অরিএ বলল বাদ দেব কেন বলো।

অদিতি বলল তার স্বামী বেশ উচ্চ পর্যায়ের একজন সরকারি চাকরিজীবি। এবং সে এখন একটা কলেজের শিক্ষক। কিছুদিন তার স্বামীর বদলি হয়েছে সেজন্য তাকেও এখানের একটা কলেজে বদলি নিতে হয়েছে। অদিতি বলল অরিএ তুমি যে বিয়ে করোনি এটা শুনে আমার এতো খারাপ লাগছে কেন। অদিতি বলে উঠল অরিএ এসবের জন্য যে দায়ী আমি সেটা আমি জানি। অরিএ বলল এখানে তোমার কোনো দোষ নেই। অনেক বছর পর অদিতি পেল তার সেই পুরানো বন্ধুকে। যার সবকিছু আগের মতোই আছে কোনো কিছু পরিবর্তন হয়নি। অরিএ পেল তার পুরাতন ভালোবাসা কে যদিও সে এখন অন‍্য কারো সঙ্গী। দুজন চলে গেল। এভাবে প্রতিদিন একই বাসে বাড়ি ফিরে যায় দুজন। এখনো অদিতি কে দেখার একটা সুযোগও মিস করেনা অরিএ। এভাবে বেশ কয়েকমাস গেল। এক সন্ধ‍্যায় দুজন আবার মুখোমুখি। অদিতি বলল অরিএ কাল আমরা এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমার স্বামীর আবার বদলি হয়েছে। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে অরিএের চোখটা যেন ছলছল করছে। অদিতি বলছে ভালো থেক তোমার সঙ্গে হয়তো আর কখনো দেখা হবে না। এভাবে থেক না। নিজের জন্য কাউকে খুজে নাও। হয়তো আমি তোমার যোগ‍্য ছিলাম না। আসলে এখানে না আছে তোমার কোনো দোষ না আছে সৃষ্টিকর্তার কোনো দোষ। এখানে সবকিছু ঠিক করে রেখেছেন ঐ সৃষ্টিকর্তা। যাইহোক আজ আমি যায়। অদিতির চোখেও যেন জলের ছাপ কিন্তু সেটা লোকানোর বৃথা চেষ্টা করছে অদিতি। আজ আর বাসে নয়। অদিতির স্বামী গাড়ি নিয়ে এসেছে সেটাতেই চলে গেল অদিতি। যতক্ষণ গাড়িটা দেখা গেল অরিএ তাকিয়ে রইলো। সে আবার তার অদিতি কে হারালো। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অরিএের। যেরকম টা হয়েছিল ১০ বছর আগে যেদিন এভাবেই বিদায় বলেছিল অদিতি। তবে সেদিন অদিতির চলে যাওয়ায় অরিএ একা কান্না করলেও আজ তার সঙ্গে আকাশটাও যেন অঝোর ধারায় কান্না করছে। সমাপ্তি হলো আরও একটা ভালোবাসা........।

সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।

Facebook
Twitter
You Tube

আমি ইমন হোসেন। আমি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায় বসবাস করি। আমি একজন ছাএ। আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করি। আমি খেলাধুলা ভালোবাসি। বিশেষ করে আমি ফুটবল পছন্দ করি।