বলাই(শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ বৃহস্পতিবার, ৯ ই, ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে



sunset-g3a7afa634_1920.jpg

source



দিন পনের মিনতী এবং জামাইবাবুর খবর নেই। বলাই খোঁজ নেই। কিন্তু কোনো কিছু জানতে পারে না। অন্য দিকে মাসি মেসো টেনশনে আছে। কোনো উপায় না দেখে বলাই বলে মাসি মিনতী ভালো আছে আসলে ওরা একটু বাইরে ঘুরতে গেছে সেজন্য ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছে না। অবশেষে ফোন করে মিনতী। কোনো সমস‍্যার কথা বলেনি। তবে বলে এখন থেকে আমি যোগাযোগ কম করব চিন্তা করিস না তোরা। এখন সংসারের সব দায়িত্ব বলাইয়ের উপর। বলাইয়ের ছোট চাকরির ছোট বেতনে একটু কষ্ট হচ্ছে সেটা চালাতে। কিন্তু বাবা মা মারা যাবার পর মাসি মেসো যেভাবে বলাইকে মানুষ করেছে। বলাই কখনোই তাদের ঋণ শোধ করতে পারবে না। চাকরি পাওয়ার পর বলাই বেশ ব‍্যস্ত। যে বলাই আগে তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে দিন পার করত। সে এখন তার পছন্দের মানুষ অদিতির সঙ্গে দেখা করারও সময় পাই না। সারা সপ্তাহ অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ঐ রবিবার দিনটা একটু বিশ্রাম পাই বলাই। প্রতি সপ্তাহের মতো এই সপ্তাহেও রবিবার বিকেলে বলাই যাবে অদিতির সঙ্গে দেখা করতে। বলাই সময় মতো চলে যায় পার্কে। কিন্তু অদিতির দেখা নেই। বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ‍্যা কিন্তু অদিতি এলো না।

বলাই ভাবতে শুরু করল অদিতি ঠিক আছে তো। কোনো সমস্যা হয়নি তো। বলাই কোনো কিছু না ভেবে চলে গেল অদিতির বাড়িতে। অদিতির বাড়িতে প্রথম এসেছে বলাই। কাউকেই চেনে না। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে বলাই ভাবছে ভেতরে যাবে কী যাবে না। হঠাৎ উপর থেকে অদিতি বলছে বলাই তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে। কাল এগারো টার সময় আমার কলেজের সামনে থাকবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। পরের দিন অফিসে একটা বাহানা দিয়ে চলে আসে বলাই। এবং চলে যায় অদিতির কলেজের সামনে। অদিতি সময় মতো চলে আসে। এরপর দুজন চলে যায় ঐ পার্কে

বলাই গতকাল আমাকে দেখতে এসেছিল পাএপক্ষ। সেজন্য তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারেনি।

তোমাকে দেখতে এসেছিল। আগে বলোনি কেন??

আমি নিজেও জানতাম না। মনে হয় ছেলে পক্ষের আমাকে পছন্দ হয়েছে।

এখন কী করবে।

আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তুমি আজকেই তোমার মেসোকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে বলবা আমার বাড়িতে।

দেখ অদিতি। আমি সবেমাএ চাকরি পেয়েছি। বেতন খুব কম। মেসোর সংসার আমাকেই দেখতে হয়। তোমার জন্য কিছু থাকবে না এসবের পরে।

আমার কিছু লাগবে না। তুমি হলেই চলবে। তোমার মেসোকে পাঠাবে কীনা বলো।

ঠিক আছে পাঠাব। কিন্তু তোমার বাবা রাজি হবে।

সেটা আমি দেখব।


senior-gecf5ba4c8_1920.jpg

Source


বলাই বাড়িতে গিয়ে মাসি এবং মেসো কে সব বলে। মেসো রাজি হয়ে যায়। বলাইয়ের মেসো প্রাক্তন শিক্ষক। আশপাশে এমন কোনো এলাকা নেই যারা বলাইয়ের মেসো কে চিনে না। সন্ধ‍্যা বেলা বলাইয়ের মেসো যায় বলাই এবং অদিতির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। অদিতির পরিবারের অবস্থা বেশ ভালো। বলাইয়ের ছোট চাকরি তারপর বাবা মা নেই। সেজন্য প্রথম অবস্থায় না করে দেয় অদিতির পরিবার। কিন্তু অদিতির জোড়াজুড়িতে শেষমেশ রাজি হয় অদিতির পরিবার। বলাই এবং অদিতির বিয়েও হয়ে যায়। অদিতি এবং বলাইয়ের সংসারে অভাব ছিল ঠিকই। কিন্তু দুজন দুজনকে ভালোবাসত। অদিতি সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়। কিন্তু বলাইকে এটা ভাবতে বাধ‍্য করে যে অদিতি তার বাবার বাড়িতে অনেক আদরে যত্নে ছিল। কিন্তু বিয়ের পর।

নিজের আয় বাড়াতে হবে। এজন্য বলাই অন্য চাকরি খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে বলাইয়ের এইরকম পরিশ্রম দেখে অদিতির অনেক খারাপ লাগত। অদিতি ভাবে যে আমার বলাইকে সাহায্য করা উচিত। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসেছি। আমাদের দুজনেরই দায়িত্ব আছে। শুধু বলাই কেন সব দায়িত্ব নিজের উপর নেবে। বলাই প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে অদিতির জোড়াজুড়িতে রাজি হয়। অদিতি টিউশনি শুরু করে। অদিতি ভালো ছাএী ছিল সেজন্য বেশি কষ্ট হয়নি টিউশনি পেতে। পাশাপাশি নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যায় অদিতি। এভাবেই দুজন স্ট্রাগেল করতে থাকে। বছর চার কেটে যায়। বলাইয়ের প্রমোশন হয়েছে। সে এখন তার ডিপার্টমেন্টের প্রধান। বেশ ভালো বেতন পাই বলাই। অদিতি তার গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। তাদের সংসারে কোনো অভাব নেই। অন্য দিকে মিনতীও পাঁচ বছর পর দেশে এসেছে। তার একটা ছেলে হয়েছে। সেই ত‍্যাদর বলাই এখন অনেক দায়িত্ববান।

সবকিছুই সম্ভব হয়েছে অদিতির জন্য। অদিতি পারতো বলাইকে ছেড়ে ভালো পরিবারে বউ হয়ে যেতে। কিন্তু সে তা করেনি। সে পাশে থেকেছে বলাইয়ের। সাহস জুগিয়েছে অদিতি। দুজন এগিয়ে গেছে। নিজেদের স্বপ্ন স্বার্থক করেছে। আসলে ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে অনেক কঠিন সময় পার করা যায়। ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে সবকিছুই সম্ভব। আপানারা কী বলেন।।





সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



DSC_0363.JPG

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Sort:  
 2 years ago 

আসলে ভাইয়া আপনার কথার সাথে আমি একেবারেই একমত। ঠিকই বলেছেন আপনি শেষের এই কথাগুলো। আসলে ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে অনেক কঠিন সময়েও পার করা যায়। অদিতি পারত অন্য কারো ঘরে বউ হয়ে যেতে কিন্তু সে বলাই কে ভীষণ ভালোবাসতো তাই তার এরকম অবস্থা দেখেও বিয়ে করতে চেয়েছে। এবং অদিতি পাশে থাকার কারণে বলাই এখন এতদূর পৌঁছেছে। এবং অদিতি ও তার পড়ালেখা শেষ করতে পেরেছে।

 2 years ago 

অদিতি এবং বলাই এর বিয়ে হয়েছে এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। অদিতি বলাইয়ের এরকম অবস্থা দেখেও চুপ করে থাকেনি। সে তার সমস্ত চেষ্টা দিয়ে বলাই কে সাহায্য করেছে। অদিতি টিউশনি করেছে সে সাথে তার পড়ালেখা ও চালিয়ে গিয়েছে। দুজনে এভাবে একসাথে কাজ করার ফলে এখন তাদের আর কোন অভাব নেই। এই গল্পটির শেষ পর্ব পড়ে ভালো লাগলো ভীষণ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 63047.55
ETH 2690.45
USDT 1.00
SBD 2.54