শেয়ার করো তোমার জীবনে ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
বন্ধু শব্দটা তিনটা বর্ণের। যার মধ্যে আবার একটা যুক্ত বর্ণ রয়েছে। সেজন্য একটু গোলমেলে লাগে না। বন্ধুত্ব জিনিসটাও বেশ গোলমেলে। তবে হ্যা যদি সঠিক মানুষটার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন তাহলে বন্ধুত্বের চেয়ে ভালো আর কোনো সম্পর্ক হতে পারে না এটা আপনি বুঝবেন। বন্ধু কী শুধু সমবয়সীরা স্কুল কলেজের সহপাঠীরা হয়ে থাকে? না, আপনার বাবা মা আপনার বন্ধু হতে পারে আপনার ভাই বোন আপনার বন্ধু হতে পারে। আবার বয়সে ছোট বা বড় যে কেউ আপনার বন্ধু হতে পারে। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। বন্ধুত্ব জাতি ধর্ম বর্ণ গোএ এগুলো দেখে না। দেখে শুধু মনের মিল। কথায় আছে না বন্ধু হারিয়ে যায় কিন্তু বন্ধুত্ব কখনো হারায় না। আমি হয়তো বয়সে ছোট। কিন্তু আমারও কিছু বন্ধু ছিল এবং আছে। এখন সেই থেকে কিছু ভালো খারাপ স্মৃতি অনূভুতি আপনাদের সঙ্গে তুলে ধরব। ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগ কে এইরকম ইউনিক একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।
আমি তখন অষ্ঠম শ্রেণিতে পড়ি। তো স্কুল শেষে আমি তখন আমাদের স্কুলের শাপলা ম্যাম এর কাছে ইংরেজি পড়তে যেতাম। সেখানে গিয়ে জয় নামের একটা ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। জয় আমাদের ক্লাসেরই ছিল কিন্তু জয় ছিল যমুনা শাখায় এবং আমি মেঘনা শাখায়। জয় ছেলেটা বেশ শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ছিল। জয় ছিল হিন্দু। জয় ছিল আমার প্রথম হিন্দু বন্ধু। জয় লেখাপড়া খেলাধুলাই দারুণ ছিল। এবং জয় যুক্তি ছাড়া কোনো কথা বলত না। আমাদের মতের বেশ মিল ছিল। সেজন্য খুব শীঘ্রই আমাদের গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একপর্যায়ে আমি এবং জয় অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। স্কুলে সবসময় একসঙ্গেই থাকতাম।
একপর্যায়ে গিয়ে জয়ের পরিবার একটা ঝামেলায় পড়ল জয়ের দিদিকে নিয়ে । এজন্য বেশ অনেকদিন জয় স্কুলে আসতো না। আমার একা একা মোটেও ভালো লাগত না। তো একদিন দেখি জয় স্কুলে এসেছে। জয়ের চোখে পানি ছলছল করছে। আমি বললাম কী হয়েছে। জবাবে জয় বলল বন্ধু আমার পরিবার আমাকে আর এখানে রাখছে না। আমি এবং আমার দিদি ভারত চলে যাচ্ছি আমার জ্যাঠার কাছে। আমি আর হয়তো বাংলাদেশে ফিরে আসব না। কয়েকবছর পর আমার বাবা এবং মাও চলে আসবে ভারতে । ভালো থাকিস তোদের সঙ্গে হয়তো আর দেখা হবে না। এমনটা বলতে বলতে জয় চোখ মুছলো। জয়ের সেই কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে। তারপর জয় ভারতে চলে যায়। জয়ের আর কোনো খোঁজ পাইনি। এখন বেশ খারাপ লাগে মাঝে মাঝে যখন জয়ের কথা মনে পড়ে। কী জানি কোথায় আছে কেমন আছে। জীবনে আর দেখা হবে কীনা সেটাও জানি না। তবে এখনো আমি ওকে অনেক মিস করি।।
জয় চলে যাবার পরে আমি মোটামুটি একাই থাকতাম। এরপর আমাদের ক্লাসে লিখন নামের একটা ছেলে ভর্তি হয়। ছেলেটা আগে সাতক্ষীরা থাকত। ওর পরিবার চলে এসেছে সেজন্য ও এখন থেকে এখানেই থাকবে এবং লেখাপড়া করবে। এবং ওর হোম টাউন কুমারখালী। প্রথম প্রথম লিখনের সঙ্গে আমার খুব একটা কথা হতো না। তবে একদিন আমাদের স্কুলে একটা ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। ম্যাচে এবং লিখন ব্যাটিংয়ে দারুণ একটা পার্টনারশিপ করে আমাদের ক্লাসকে ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। এরপর থেকে যখনই লিখন খেলা নিত আমাকে ডাকতো খেলার জন্য। এভাবে কয়েক ম্যাচ খেলতে খেলতে আমার এবং লিখনের ভালো পরিচয় হয়ে যায়। এরপর তখন আমি নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় আমার রোল ছিল ৮ এবং লিখনের রোল ছিল ৭। তখন থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের যাএা শুরু। নবম দশম শ্রেণি পুরো দুইবছর আমরা একসঙ্গে একবেঞ্চে বসতাম। লিখন অনেক ছোট থেকে প্রেম করত। ঐ বয়স থেকে মেয়েদের ফ্লাট করতো লিখন। রাতে মেয়েদের সঙ্গে চ্যাটিং করে স্কুলে এসে সেগুলো আমাকে দেখাত। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা যেন গভীর হয় এসএসসি পরীক্ষার পর।
এসএসসির পর লিখন ফরিদপুর মেরিন ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয় এবং আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সিটিউটে। ফলে আমরা দুজন দুই শহরে। কিন্তু আমাদের প্রতিদিন যোগাযোগ হতো যতটা আমার বতর্মান বন্ধুদের সঙ্গে হতো তার থেকেও বেশি। আমি আমার অনেক খারাপ সময়ে লিখনকে পাশে পেয়েছি। আমাদের বন্ধুত্বের ছয় বছর চলছে। আশাকরি আজীবন থেকে যাবে। লিখন ছেলেটার কথার দাম কম। কোথাও যেতে গেলে সবসময় ওর জন্য আমাকে অপেক্ষা করা লাগে। বিরক্তি ধরে কিন্তু পরে মনে হয় না ঠিক আছে। এই যে পুরো করোনার মধ্যে আমার কোনো বন্ধুর সঙ্গেই সেরকম দেখা হতো না। কিন্তু আমি এবং লিখন প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হতাম। লিখনের জন্য আমি বেশ কিছু বিপদে পড়েছি। আবার ও আমার অনেক উপকারেও এসেছে। বন্ধু বলতে যা বোঝায় সেক্ষেত্রে লিখনের নামই আমার মনে সবার আগে আসে। বললে তো আরও কিছু লেখা যাবে। কিন্তু আর দীর্ঘ করব না। ভালো থাকুক টিকে থাকুক পৃথিবীর সকল বন্ধুত্ব।।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
ঠিকই বলেছেন বন্ধুত্বের কোন বয়স নেই বন্ধু যে কোন বয়সের হতে পারে আবার যে কোন ধর্ম বর্ণ, মা-বাবা ভাই-বোন সবার সাথে বন্ধুত্বের একটা সম্পর্ক হতে পারে। আপনার জয়ের সাথে সম্পর্কটা বেশ ভালোই লাগলো তবে জয় হঠাৎ করে ইন্ডিয়াতে চলে যাওয়ার আপনার অনেক কষ্ট হয়েছিল, এমন হলে কষ্ট হওয়ারই কথা। আবার লিখন নামের ভালো একজন বন্ধু আপনি পেয়ে গেছেন এখন পর্যন্ত দুজন সুখে দুখে বিভিন্ন সময় পার করছেন অনেক ভালো লাগলো। আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা চিরজীবন অটুট থাকুক এই দোয়াই করি।
আপনার ব্লগটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। ফেলে আসা বন্ধুদের স্মৃতি নিয়ে আপনি খুব সুন্দর একটি ব্লগ তৈরি করেছেন। ব্লগে আপনার ছোটবেলার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে লিখেছেন। আসলে ছোট বেলার বন্ধু হারিয়ে গেলে তাকে কখনো ভোলা যায়না।জয় নামের বন্ধু টি আপনার জীবনে চবার ফিরে আসুক। আপনার লিখন বন্ধুর জন্য অনেক শুভকামনা রইলো। আপনাদের বন্ধুত্ব আজীবন অটুট থাকুক এই কামনাই করি।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আপনার জীবনের বন্ধুত্বের গল্পটি পড়তে পেরে ভালো লাগলো। আসলে লিখন নামের বন্ধুটি আপনার জীবনে এসেছে এবং আপনার এই বন্ধুত্বের বন্ধন সারা জীবন থাকে এই দোয়া করি।
আপনি ঠিকই বলেছেন বন্ধুত্বের কোন বয়স নেই । মনের মিল হলেই বন্ধুন্ত্ব তৈরি হয়। পরিস্থিতির কারনে অনেক বন্ধু দূরে চলে যায় জয়কেও তেমনি আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে যা আপনাকে এখনও কস্ট দেয় ভেবে খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আপনার বন্ধু লিখনের সাথে আপনার বন্ধুন্ত্ব স্থায়ি হোক আজীবন এ কামনা কারি। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
হ্যা আমিও বন্ধুত্বের মাঝে কোন জাত পাত দেখি না। তাইতো আমার সবথেকে কাছের বন্ধু ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী একজন। জয়ের ভারতে চলে যাবার বিষয়টি খুব খারাপ লেগেছে। তবে লিখনকে পেয়ে মোটামুটি সেই শোক ভুলেছো দেখছি। তবে ছেলেটাকে আমার বেশ চঞ্চল মনে হলো না হলে এতো ছোট থেকেই মেয়েদের সাথে যায় 😄
যাক ওকে নিয়ে ভালোই আছো, দোয়া করি তোমাদের বন্ধুত্ব টিকে থাকুক আজীবন।