"হীরালাল" সম্পূর্ণ মুভি রিভিউ।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
ইউটিউব থেকে স্কিনশর্ট নেওয়া হয়েছে
মুভির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
------ | ------ |
---|---|
পরিচালক | অরুন রায় |
মুভির দৈর্ঘ্য | 2 ঘন্টা ১৬ মিনিট |
মুক্তি | ২০২১ |
দেশ | কলকাতা,ভারত |
ভাষা | বাংলা |
অভিনয়ে | খরাজ মুখার্জী, শংকর চক্রবর্তী, কিনজাল নন্দ, অনুসকা চক্রবর্তী, অর্না মুখোপাধ্যায়, সততা চ্যাটার্জী আরও অনেকে। |
মুভির কাহিনী সংক্ষেপ
ইউটিউব থেকে স্কিনশর্ট নেওয়া হয়েছে
উকিল বাপের ছেলে হীরালাল। কিশোর হীরালাল পরীক্ষায় বেশ ভালো ফলাফল করলে তার বাবা তাকে উকিল তৈরি করতে চাই। কিন্তু ছেলে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলবে। ঐ সময়ে ক্যামেরা কী উচ্চশ্রেণির লোক ছাড়া কেউ চিনত না। তো হীরালাল এর বাবা বলল ছেলে যদি বিয়ের জন্য রাজি হয় তাহলে ওকে ক্যামেরা কিনে দেব। কিশোর হীরালাল এককথায় রাজি হয়ে যায়। তার বিয়ে হয় হীমাঙ্গির সঙ্গে। বিয়ে করে বাড়ি এসেই দেখে ক্যামেরা চলে এসেছে সে ক্যামেরা নিয়ে পড়ে থাকে। প্রথমে হীরালাল তার নিজের বউ হিমাঙ্গী এর ছবি তোলা দিয়ে শুরু করে। এরপর আস্তে আস্তে নাম হয়ে যায় হীরালালের। ছবি তোলার জন্য ডাক আসতে থাকে হীরালালের। এরইমধ্যে হীরালাল বড় হয়ে যায়। তো হীরালাল সূর্যাস্তের একটা ছবি তুলেছিল সেটা দেখে বেশ অবাক হয় ইংরেজ রা। কিন্তু তারা বিশেষ করতে চাই না সেটা হীরালাল তুলেছে। তখন হীরালাল বলে বাজারে ছবি অনেকেই তোলে কিন্তু হীরালাল সেন একজনই আছে।
ইউটিউব থেকে স্কিনশর্ট নেওয়া হয়েছে
হিমাঙ্গী খেয়াল করছে ইদানিং হীরালাল এর ছবি তোলায় মনে নেই। হীরালাল বলে অনেক তো তুললাম আর কতো। এরপর হীরালাল একদিন ছবি তোলার জন্য যাচ্ছিল দেখে ব্রিটিশরা তাবু খাটিয়ে বায়োস্কোপ দেখাচ্ছে। আমরা বর্তমানে যেটাকে সিনেমা বলি। হীরালাল দেখল ছবি চলে ফিরে বেড়াচ্ছে এ জিনিস একেবারে নতুন। তো হীরালাল ঐ ইংরেজ এর কাছ থেকে সবকিছু জেনে নেয়। এরপর হীরালাল সিদ্ধান্ত নেয় সে ছবি তোলার ক্যামেরা টা বিক্রি করে দেয় তার সহকারীর কাছে। এবং সে একটা বায়োস্কোপ এর ক্যামেরা কিনে নেয়। হীরালাল এর সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন এর মাথায় আসে এই বায়োস্কোপ দেখানোর চিন্তা আসে তিনি হলো মারাঠি ম্যাডার্ন সাহেব। যাইহোক হীরালাল ছবি তোলা শুরু করে কলকাতার ট্রাম, রাস্তাঘাট, মন্দির নদী এইসবের। কিন্তু হীরালাল শুধু তোলে এই ছবি দেখাবে কে। এজন্য হীরালাল তা ছোট ভাই বথীলাল এবং ভাগ্নেকে ডাকে।
ইউটিউব থেকে স্কিনশর্ট নেওয়া হয়েছে
এরপর শুরু হয় হীরালাল এর দেশী বায়োস্কোপ দেখানো। নাম দেওয়া হয় রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি। বেশ চলছিল হীরালাল এর বায়োস্কোপ। অন্যদিকে তখন বাংলাই থিয়েটার ছিল জনপ্রিয়। তখন থিয়েটার দেখানোই সবার থেকে এগিয়ে ছিল ক্লাসিক যার মালিক ছিল অমর দও। অমর দওের অহংকার ছিল অনেক। সেই অহংকার এর জন্য সে তার থিয়েটার এর জন্য নাটক লেখক গিরিশচন্দ্র কে অপমান করে। গিরিশচন্দ্র অমর দওের দম্ভ দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। এবং অভিশাপ দেয় একদিন এই ক্লাসিক ধ্বংস হয়ে যাবে। অমর দও চিন্তা করে এভাবে থিয়েটার দেখিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। তখন চিন্তা করে থিয়েটার এর নাচ গানের অংশটুকু বায়োস্কোপ করে দেখাবে। সেজন্য অমর দও হীরালাল এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। শুরু হয় অমর দও এবং হীরালাল এর যাএা। দুজনে বেশ ভালোভাবে একসঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ওদিকে ম্যাডার্ন সাহেব ইংরেজদের থেকে ছবি পাচ্ছে না। সে তখন জানতে পারে হীরালাল সেন ভালো ছবি তোলে। সে হীরালাল কে বলে আমার বায়োস্কোপ এর জন্য ছবি তুলে দিতে। আমি অনেক টাকা দেব। হীরালাল এককথায় না বলে দেয়। কারণ ম্যাডার্ন সাহেবের অনেক অহংকার ছিল। এবং হীরালাল টাকার জন্য ছবি তোলে না।
ইউটিউব থেকে স্কিনশর্ট নেওয়া হয়েছে
এরইমধ্যে হীরালাল এর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। এবং সেটা ভালোভাবে হয়েও যায়। এরপর হীরালাল ভাবতে থাকে এভাবে এইসব দৃশ্য দেখিয়ে আর চলবে না। এবার একটা পুরো ছবি তুলব ছবি দিয়ে একটা গল্প বলব। আমরা বর্তমানে যেটাকে সিনেমা বলি। এটা নিয়ে অমরের সঙ্গে যোগাযোগ করে হীরালাল। অমরও এককথায় রাজি হয়ে যায়। ঐ সময়ে বাংলা থিয়েটারে নামকরা অভিনেত্রী ছিল কুসুম কুমারী। তো হীরালাল এর প্রথম সিনেমা আলীবাবা এর নায়িকা ছিল সে। তো কুসুমকুমারী বলে আমি অভিনেতা হিসেবে বেশি কিছু চাই না। শুধু যা লাভ হবে টাকায় দশ পয়সা করে দেবেন। হীরালাল রাজি হয়ে যায়। অন্যদিকে একটা পুলিশের ঝামেলার কারণে হীরালাল এর বায়োস্কোপ বন্ধ হয়ে যায়। তখন হীরালাল এর ভাই বথীলাল এর কাছে ঐ ম্যাডার্ন এর উকিল আসে। এবং চুক্তি করে এরপর থেকে সব ছবি তাদের দেবে বিনিময়ে তারা অর্থ দেবে। এবং একটা চুক্ত করে যে ছবি তোলার যে সরঞ্জাম আছে সেটা হীরালালের এবং যে ছবি তুলবে সেটা বথীলালের। কিন্তু তখন এই ষড়যন্ত্র বথীলাল বুঝে নি।
ইউটিউব থেকে স্কিনশর্ট নেওয়া হয়েছে
এরপর একটা ঘটনাচক্রে হীরালাল এর সঙ্গে ঝামেলা হয় অমর দওের। ফলে অমর দওের থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসে হীরালাল। তখন অমর দও অসহায় হয়ে পড়ে। এবং সত্যি সত্যি অমর দওের ক্লাসিক ধ্বংস হয়ে যায়। সবকিছু বিক্রি করে দিতে হয়। এরপর হীরালাল এবং তার স্ত্রী কাশী চলে যায় ঘুরতে। ওখানে বেশ কয়েকমাস থাকে ওরা। কিন্তু ওখান থেকেই অসুস্থ হয়ে যায় হীরালাল। এদিকে আবার কুসুম কুমারী উকিলের নোটিশ পাঠিয়েছে যে সে চুক্তি অনুসারে আলীবাবা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য ৬০০০ টাকা পাবে। কিন্তু সেই মূহুর্তে বথীলাল অতো টাকা কোথায় পাবে। সে অসহায় হয়ে পড়ে। হীরালাল কাশী থেকে ফিরে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। একপর্যায়ে চিকিৎসক এসে বলে হীরালাল এর ক্যান্সার হয়েছে। সেই মূহুর্তে হীরালাল এর ভাই বথীলাল ও ব্যবসা আলাদা করে নেয় হীরালালের থেকে। হীরালাল এভাবেই দিন পার করতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় রয়্যাল বায়োস্কোপ। অমর দও কুসুম কুমারী সবাই হারিয়ে যায় কালের অতল গহব্বরে। তবে বাংলা সিনেমার জনক হিসেবে হীরালাল এর নাম এখনো আছে ইতিহাসের পাতায়।।
ব্যক্তিগত মতামত
হীরালাল মুভিটা একজন মানুষের জীবনী নিয়ে নির্মাণ করা। হীরালাল ছিল প্রথম দিকের বাংলা সিনেমা নির্মেতা এবং তাকে বাংলা সিনেমার জনকও বলা হয়। হীরালাল সেন কীভাবে ছোট থেকে বড় হয়ে উঠে এসবের প্রতি কতটা পাগল ছিল সেটা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মুভিটাতে হীরালাল চরিত্র টাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এবং মুভিটাতে হীরালাল এর সঙ্গে সঙ্গে অমর দও গিরিশ চন্দ্র কুসুম কুমারী এদের মতো বিখ্যাত কিছু ব্যক্তিত্ব উঠে এসেছে। এবং সিনেমার সাউন্ড কোয়ালিটি সিনেমাটোগ্রাফি সবকিছু ছিল দারুণ। এবং মনে হয়েছে এটা ঐ উনিশ শতকে নির্মাণ করা। সবদিক থেকে আমার কাছে হীরালাল অসাধারণ একটি নির্মাণ। একটি ভালো মুভির জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই ছিল এই মুভিটাতে।
ব্যক্তিগত রেটিং: ৮.৫/১০
মুভির ট্রেলার
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
হীরালাল মুভিটি দেখেছি কিনা মনে পড়ছে না।তবে আপনার লেখা মুভির রিভিউ পড়ে বুঝতে পারলাম এটা বাস্তব ঘটনা নিয়ে তৈরি।পুরোনো কোনো ইতিহাস রচিত হয়েছে তবে শেষটা খুবই করুণ লাগলো।সুন্দর রিভিউ করেছেন,ধন্যবাদ ভাইয়া।