(বর্তমান অথবা বিলুপ্ত প্রায় স্থানীয় লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য। ১০% বেনিফেসিয়ার @shy-fox এর জন্য।
- আজ ৪ঠা সেপ্টেম্বর।
- আমার বাংলা ব্লগে,
- সবাইকে স্বাগতম।
- আমি @emon42.
- বাংলাদেশ থেকে।
আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগে,আমার নতুন একটি পোস্টে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে @moh.arif একটি সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। এটা হলো আমার এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। যা এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আমার বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায়। কুষ্টিয়া জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়ে থাকে। আমার জেলাতেই বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার বা আখরা। লালন সংগীত দেশে বিদেশে অনেক জনপ্রিয়। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জেলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি লালন সংগীত এবং লালন মাজার সম্পর্কে আলোচনা করব। সবাই সাথেই থাকুন। এই পোস্টের ১০% @shy-fox এর জন্য।
ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি : মূলত ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি কোন দেশ বা জাতির অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের রীতিনীতি আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে বোঝায়। এগুলো এই দেশের মানুষ তাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে মনে করে। এগুলো ওই জাতি খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালন করে থাকে। বাঙালির সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য সবদিক থেকে পরিপূর্ণ।এই ঐতিহ্য সংস্কৃতি একটি জাতির আনন্দের উৎস।
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ ১৭৭২ মতভেদে ১৭৭৪ সালে বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের একটি সময়ে তিনি সাধারণ জীবনযাপন করলেও, পরে তিনি এই বাউল সম্রাটে পরিণত হন। এবং তিনি কোনো জাতে বিশ্বাস করতেন না। তার কাছেই জাত একটাই সেটা হলো মানবজাত। তিনি একাধারে একজন গায়ক সুরকার এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রায় ২৮৮ টি গান রচনা করেছেন। এবং তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় এই ছেউরিয়ায় বসবাস করেন। এই এর পাশেই একটি নদী আছে নাম কালী নদী। এখানে তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছেন। লালন মূলত তার গানগুলোর জন্য মানুষের কাছে প্রিয়। লালনের গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে থাকে। তিনি ১৮৯০ সালে কুষ্টিয়ার ছেউরিয়ায় মৃত্যু বরণ করেন।
আমার বাড়ি থেকে লালন শাহের আখরা বা মাজারের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। আমার বাড়ি থেকে সাধারণ যানবাহনে যেতে ৩০-৩৫ মিনিট সময় লাগে। আমি প্রথমে বাড়ি থেকে বের হয় বিকেল ৪:৩০ টার সময়। এরপর আমি ভ্যানে কুমারখালী বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে গিয়ে আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। এরপর আমার বন্ধু লিখন আসে। এরপর আমরা দুইজন একটি অটোতে উঠি। অটো হলো তিন চাকার ছোট একটি যানবাহন। কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে ১৫ মিনিট সময় লাগে দবির মোল্লা গেটে যেতে। আমাদের দুজনের ৪০ টাকা ভারা লাগে এখানে যেতে।
দবির মোল্লা গেট থেকে লালন শাহের মাজার রিকশায় ৫ মিনিট লাগে। এরপর আমি এবং লিখন একটি রিকশা নেয়। এবং আমরা রিকশাতে যাএা শুরু করি। এটা আমার জেলাতে অবস্থিত হলেও আমি এই প্রথমবার এখানে যাচ্ছি। অসাধারণ একটি উওেজনা কাজ করছিল আমাদের মধ্যে। এরপর আমরা লালশন শাহের মাজারে পৌঁছে যায়। রিকশার ভাড়া হয় ২০ টাকা। সেটা দিয়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করি।
প্রথম দেখাই আমি অসাধারণ একটি অনূভুতি অনুভব করি। এখানে আমাদের মতো আরও অনেক লোক ঘুরতে এসেছে। এখানে ঢুকেই আমরা লালনের মাজার দেখতে পাই। এখন তার ভক্তরা খুবই যত্ম সহকারে এটার দেখাশোনা করে। এবং এর পাশে আরও অনেক গুলো কবর রয়েছে যেগুলো লালনের কিছু নিকট শীর্ষের। এরপর আমরা ভেতরে যায়। গিয়ে দেখি অনেক লালন ভক্ত বাউল সাধক বসে আছে। আমরা তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি। এরপর আমরা তাকে একটি লালন সংগীত গাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি আমার অনুরোধ রাখেন।
------ | ----- |
---|---|
সংগীতের নাম | মিলন হবে কত দিনে |
সংগীতের ধরণ | লালন সংগীত |
গায়ক | ফকির আসাদ প্রমাণিক |
বয়স | ৬৪ |
বাড়ি | ছেউরিয়া,কুমারখালী |
স্থান | লালন শাহের মাজার |
ভিডিও ধারণ | @emon42. |
ডিভাইস | VIVO Y91C |
তিনি গান শুরু করেন।তার গানের গলাটা ভালো। এবং আমি ভিডিও করতে থাকি। এই ভিডিও টা আমি আমার ফোন দিয়ে ধারণকরেছি। এরপর আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দিয়। ইতিমধ্যে লোকটার গান শেষ হয়। এরপর আমি তার সাথে কিছু কথা বলি। উনি অনেকদিন ধরেই লালন ভক্ত। উনি দিনের অধিকাংশ দিন এখানে অতিবাহিত করেন। তার পরিবার থাকলেও তিনি এখানে বেশি সময় অতিবাহিত করেন।আশাকরি গানটা আপনাদের ভালো লাগবে।
লালন সংগীত শুধু আমাদের কুষ্টিয়া বাসির না পুরো বাংলাদেশ এবং সম্পূর্ণ বিশ্বের সংস্কৃতি। কারণ লালন সংগীত দেশে বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। লালন সংগীত পছন্দ করেন না এইরকম লোক পাওয়া যাবে খুব কম। তবে আমাদের কুষ্টিয়া জেলায় প্রতিবছর দুইবার তিনদিন ব্যাপী লালন জয়ন্তী পালন করা হয়। সেসময় এখানে একটা অনেক বড় মেলা লাগে এবং দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য লোকের আগমন ঘটে। মূলত এই উৎসবটা আমরা কুষ্টিয়া বাসি প্রতিবছরে দুইবার খুব উৎসাহের পালন করে থাকি। এটা আমাদের ঐতিহ্য বলতে পারেন। এবং এটা আমাদের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে।এবং লালন সংগীত তো সমস্ত বাঙালীদর সংস্কৃতি।
আধুনিক হচ্ছে আমাদের সমাজ। আধুনিকতার সাথে সাথে আমরা কিন্তু ভূলতে বসেছি আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে। এর মধ্যে লালন সংগীত অন্যতম। বর্তমানে আমাদের সমাজের যুবকরা ভিন্ন সংগীতে এতোটাই আসক্ত যে তারা নিজের দেশের এইরকম একজন বাউল সম্রাট কে চেনে না বললেই চলে। এরা যেমন এখন এটা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছে ধীরে ধীরে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এটাই করবে। একসময়ে হয়তো এই লালন সংগীত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এখন শুনে না বলে অনেকেই লালন সংগীত চর্চা করতে লজ্জা পান। আমাদের দ্রুত এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। টিকিয়ে রাখতে হবে আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি লালন সংগীতকে।
আশা করি আমার জেলার ঐতিহ্য লালন সঙ্গীত এবং লালন শাহের মাজার আপনাদের ভালো লাগবে আপনাদের জন্যই আমার এই উদ্যোগটি নেওয়া এবং এরকম একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আমার বাংলা ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতে করে আমরা বিভিন্ন এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে এরকম জানতে পারবো সেইরকম আমাদের অনেক ধারণা তৈরি হবে আমরা সবাই নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে অপরকে জানাতে পারবো এতে করে আমরা একজন আরেকজনের প্রতি আরো বেশি দায়িত্ববান হতে পারব সবাই ভাল থাকবেন আজ এ পর্যন্ত।
Cc:
@hafizullah
@moh.arif
----- | ----- |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @emon42 & Likhon |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | VIVO Y91C |
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
আমি ইমন হোসেন। আমি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায় বসবাস করি। আমি একজন ছাএ। আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করি। আমি খেলাধুলা ভালোবাসি। বিশেষ আমি ফুটবল পছন্দ করি।
খুবই সুন্দর উপস্থাপনা হয়েছে। আপনার বাসা লালন আখড়া হতে কাছে জেনে ভালো লগলো।নেক্সট তিরোধান উৎসবে হয়ত যেতে পারি। দেখা হবে
অবশ্যই দাদা। আসলে জানাবেন আপনাকে স্বাগতম আমাদের কুষ্টিয়ায়।
হ্যাঁ ভাই আসলেই এই বিষয় গুলো আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আমরা চাইলেই এই বিষয়গুলোকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারি অনেক সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাই। আমার পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য।।
প্রথমেই তোমাকে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর ভাবে বিষয়টাকে সাজিয়ে তুলে ধরার জন্য।
এটাকে আমি মনে করি ১০০% সত্য বলা চলে। মানুষ যত দিন যায় ততই নিজেদেরকে ডিজিটাল ভাবে প্রকাশ করছেন। যার কারণে, আজ আমাদের সমাজ অতীতের সকল স্মৃতিগুলো হাড়াতে বসেছে।অনেক সুন্দর হয়েছে তোমার আজকের পোষ্টটা। পোষ্টের মার্কডাউন গুলো অসাধারণ হয়েছে। শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ তোমাকে। আমার পোস্ট পড়ার জন্য।
চমকপ্রদ উপস্থাপনা❤️আর ফটোগ্রাফির তো কোনো কথাই নাই।
শুভ কামনা রইলো. 🥀
ধন্যবাদ ভাই পোস্ট টা পড়ার জন্য।।
অত্যন্ত মানানসই ফটোগ্রাফি ও উপস্থাপনা।
অনেক সুন্দর করে উপাস্থাপন করেছেন ভাই।শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।।
দারুন লিখেছেন। পুরো বিষয়টা সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করেছেন। শুভকামনা রইলো। ❤️❤️
ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্ট পড়ার জন্য।
অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন পোস্টটি। ছবি এবং বর্ণনার মাঝে আমি হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি খোঁজার চেষ্টা করছি। অনেক ভালো হয়েছে।
এটা একদম সত্য কথা ভাই।কিছুদিন পর লালন কে সেটাই ভুলে যাব আমরা।
আপনি আমার উপস্থাপনার ভাবমূর্তি বুঝতে পেরেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।
অনেক ছোটবেলায় একবার গিয়েছিলাম লালনের আখড়া । অসাধারণ কিছু স্মৃতি হয়েছে যেগুলো এখনও ভুলতে পারিনি। লালন বাঙালির অনুভূতি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে কালের বিবর্তনে আমরা কেউ শুদ্ধ লালনচর্চা করিনা। এখনও যদি আমরা লালনকে অন্তরে ধারণ করতে না পারি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো লালনের সান্নিধ্য থেকে একেবারেই দূরে চলে যাবে। খুব ভালো লাগলো এরকম একটি লেখা পড়ে।
ধন্যবাদ দাদা। সত্যি আপনি যথার্থই বলেছেন। আপনার মতো সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলে এগুলো টিকে থাকবে।
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়...
কালের নিয়ম ভাই। কে খণ্ডাবে? লালন শাহকে ভুলতে বসা আমাদেরই অপদার্থতা বুঝিয়ে দেয়। লালনের জীবনমুখী গান, দর্শন বাদ দিয়ে বিকৃত মনস্ক গানের দিকে ঝোঁক বুঝিয়ে দেয় আমাদের যুগের অধঃপতন। জানিনা এর পরিবর্তন হবে কিনা। তবে, কিছু মানুষের উপরে আস্থা আছে যারা এই সংস্কৃতি ধরে দেবে।
ঠিক বলেছেন দাদা। আমি আপনার সাথে একমত। ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।।
এখনকার ছেলেমেয়েরা ডিজে গান নিয়েই তারা সারাদিন থাকে এরকম বাউল গান আছে তারা হয়তো জানেও না। পোস্ট টি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। ভালোবাসা অবিরাম
ধন্যবাদ ভাই। আপনার ভালো লেগেছে এটা শুনে আমি খুব আনন্দিত।