!! শিক্ষাগুরুর মর্যাদা !!

আচ্ছা আপনারা আপনাদের শিক্ষকদের সাথে কেমন আচরণ করতেন? এই কথা বলার কারণ?? হ‍্যা অনেক কারণ আছে। আপনারা যারা নিয়মিত স‍্যোসাল মিডিয়ায় একটিভ থাকেন বা নিউজ দেখেন তাদের নজরে অবশ্যই বিষয়টি এসেছে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রায় নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাই ছাএদের কাছে মার খাচ্ছে শিক্ষক রা। ভাবতেই একটু কেমন লাগছে না। কিন্তু এটাই ঠিক। গত কয়েকদিন আগে তো দশম শ্রেণির এক ছাএ শিক্ষককে ক্রিকেট খেলার স্ট‍্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেলেছে। বিষয়টি শুধু দুঃখের নি অনেক হতাশার। দিনে দিনে বাংলাদেশের শিক্ষাব‍্যবস্থাও ক্রমেই নিচের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের সেরা ১০০ তো দূরের কথা সেরা ৫০০ এর মধ‍্যেও বুয়েট(বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। থাকবে কী করে বলেন যে দেশে শিক্ষকদের উপর ছাএরা নিজের ক্ষমতা দেখাই যে দেশে শিক্ষকদের দুস্থ শিক্ষক বলা হয়। হিসেবে একটি দেশের সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি হওয়া দরকার ছিল শিক্ষকতা কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রেক্ষাপট কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টা। বাংলাদেশে শিক্ষকের বেতন সবচেয়ে কম। চলুন শিক্ষাগুরুর মর্যাদা নিয়ে একটু ইতিহাস দেখে আসি।

---

---

আচ্ছা আপনারা কাজী কাদের নেওয়াজ এর লেখা শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা টা পড়েছেন। এখানে শিক্ষককের উস্তাদের কত মর্যাদা সেটা দেখানো হয়েছে। যখন বাদশা আলমগীর এর ছেলেকে পড়াতে শিক্ষক আসেন। তখন বাদশা আলমগীর তার ছেলেকে নির্দেশ দেন পানি দিয়ে শিক্ষক এর পা ধৌত করে দেওয়ার জন্য। এবং তার ছেলে সে আদেশ পালন করে। এতে করে শিক্ষক বড়ই খুশি হয়। বাদশা আলমগীর বলে শিক্ষকের উপর আর কেউ নেই। তার মর্যাদা অনেক।

এবার চলুন দেখে আসি মহাভারতের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। গুরু দ্রনাচার্য তখন তৃতীয় পান্ডব অর্জুনের ধর্নুবিদ‍্যায় মুগ্ধ। তিনি ভেবে রেখেছিলেন অর্জুনকে তিনি বিশ্বের সেরা ধর্নুবিদ তৈরি করবেন। এরজন‍্য তৈরি করছিলেন অর্জুন কে। কিন্তু চুপি সারে গুরু দ্রন এর আড়ালে তার বিদ‍্যায় দিক্ষিত হচ্ছিলেন আরেক মহাপুরুষ ঐকলব‍্য। বলা হয় সে নাকী অর্জুনের থেকেও প্রতিভাধর ছিল। একসময় গুরু দ্রন সেটা জানে এবং ঐকলব‍্যের কাছে যায়। এবং তার বিদ‍্যা দেখে মুগ্ধ হয়। তিনি ঐকলব‍্য কে সগৌরবে শিষ্য হিসেবে জড়িয়ে ধরতে যাবেন তখনই তার মনে পড়ে তিনি অর্জুনকে কথা দিয়েছেন অর্জুনকে বিশ্বের সেরা ধনুর্বিদ তৈরি করবেন। কিন্তু ঐকলব‍্য থাকলে সেটা সম্ভব হবে না। তখন গুরু দ্রন ঐকলব‍্যের কাছে বলেন তুমি আমার শিক্ষায় দিক্ষিত হয়েছ, আমাকে গুরু হিসেবে নিয়েছ। তাহলে আমাকে গুরুদক্ষিণা দাও। ঐকলব‍্য গুরুর এমন কথায় অনেক খুশি হয়। এবং গুরু দ্রন গুরুদক্ষিণা চাই ঐকলব‍্যের বৃদ্ধাঙ্গুলি। বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়া ধর্নুবিদ‍্যা মূল‍্যহীন। ঐকলব‍্য হাসতে হাসতে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দিয়ে দেয়। এটাই ছিল ঐকলব‍্যের দেওয়া গুরু দক্ষিণা। দেখুন গুরু বা শিক্ষকের গুরুত্ব মর্যাদা কত ছিল এসব মহাপুরুষের কাছে।।

---

---

কিন্তু আমরা তো এখন শিক্ষক কে তার প্রাপ‍্য সম্মানটুকু দেয় না। আমার মনে আছে শুধু আমার ক্ষেএে না আমাদের অধিকাংশ মানুষের বাবা মায়েদের কথা ছিল এইরকম তারা শিক্ষক কে বলতেন মাংস আপনার হাড় আমার। এটা একেবারে বাস্তব কিন্তু এখন দেখা যায় একজন ছেলে বা মেয়েকে শিক্ষক কোনোরুপ শাসন করলে তার বাবা মায়ের প্রতিক্রিয়া হয় অন‍্যরকম। তারা ছেলে মেয়েদের দোষ দেখার পরিবর্তে শিক্ষক কে জেরা করে। এটা একেবারে বাস্তব। আমার নিজের সামনে বেশ কিছু ঘটনা দেখেছি আমি। এখানে এসব বাবা মায়ের জন‍্যই এইরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আমি আমাদের শিক্ষাব‍্যবস্থার সমালোচনা করব না আপনারা সেটা সবাই জানেন। আমি বলছি শিক্ষকের নাজুক অবস্থান নিয়ে যা মোটেই কাম‍্য না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যেন শিক্ষকদের তাদের প্রাপ‍্য সম্মান দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখব।

---

---

---