প্রসঙ্গ: গ্রামের নদীতে মাছ ধরার অনুভূতি। 10% beneficiary @shy-fox
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির বন্ধুগণ,আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। |
---|
আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট এক নদী। নদীটির নাম করতোয়া। গ্রামের বয়স্ক লোকদের কাছ থেকে শোনা যায় এই নদী আগে নাকি অনেক বড় ছিল। এখন আর তা নেই। খুব ছোট হয়ে গিয়েছে। গ্রামের বয়স্ক লোক গুলো বলতো আগে নদীর পানি শুকিয়ে যেত না। নদীর গভীরতা না থাকায় এখন পানি শুকিয়ে যায়। আগে নদীতে অনেক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত, এখন তা আর নেই। এখন ছোট ছোট মাছ দিয়ে নদী ভরপুর।
![]() |
---|
বর্ষাকাল আসলে আমাদের এই নদী ভরপুর হয়ে যায়। চারদিকে শুধু পানি আর পানি দেখা মেলে। এই সময়ে আমরা বিভিন্ন রকমের জাল নিয়ে মাছ ধরতে যাই নদীতে। নদীতে যখন পানি ভরপুর থাকে তখন অনেক ধরনের বড় মাছ পাওয়া যায়। কেননা বরষায় কুকুর জলাশয় ও অন্যান্য নদীগুলো ভরপুর হয়ে চতুর্দিকে মাছ চলে যায়। তাই নদীতে সব রকম মাছ পাওয়া যায়। তবে আমাদের এখানের নদীটা বেশ ছোট বলে জায়গায় জায়গায় বাঁধ বাসায় গ্রামের লোকেরা। বর্ষাকালে এসেই বাঁধে বিভিন্ন রকম মাছ ধরা পড়ে। গ্রামের ছোট থেকে বড় ছেলে পেলেরা এই সময় পড়শী বা পাক জাল নিয়ে গিয়ে নদীতে মাছ মারে। এতে করে সবাই অনেক সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করে।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ । একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে এ দেশ। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। শীতকালে প্রকৃতির সৌন্দর্য মনমুগ্ধকর। এই ঋতুর শেষ শেষ শিমুল ফুলের কলি ফোটে। ফাল্গুন মাসে শিমুল ফুল দিয়ে প্রকৃতিকে আরো সৌন্দর্য করে তোলে।
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmPPVFBUb3P7vUuTaT99jiH4woQu6di62Vyiu4Ui3JT6GJ/IMG_20220129_132650.jpg)
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7Ynzt7muAx8MsvZkc7pLnwMfJBcktWABPnBs4kKJ4cb/IMG_20220129_131642.jpg)
এই শীতকালে আমাদের এই ছোট্ট করতোয়া শুকিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু গভীর স্থান গুলোতে পানি থেকে যায়। কেননা আমাদের এইদিকে পলিমাটি বলে জোয়ার-ভাটা অনেক উপরে। গভীর স্থানগুলোতে মাছ ধরতে গেলে পানি জোয়ার ভেসে ওঠে। তাই ভালোভাবে মাছ ধরা যায় না। তাই বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকার ছেলেপেলের আর চিন্তা করলাম উঁচু উঁচু জায়গা গুলো তে মাছ ধরা যায়। সবাই বললো ঠিক আছে। তবে কবে মাছ ধরা যায় একটা ডেট নির্ধারিত করো। তাই সবাই শুক্রবার কেই সিলেক্টেড করল। কেননা শুক্রবার আমাদের সপ্তাহিক ছুটি দিন। এই দিনে সবাই বাসায় থাকে।
সবাই বলে ঠিক আছে শুক্রবার তাহলে কনফার্ম। শুক্রবার নামাজ পড়ে এসে সবাই খাওয়া-দাওয়া করে বের হলাম। সবাইকে ডাক দেওয়ার পর মেশিন নদীর পাড়ে নিয়ে গেলাম। প্রথমত দুইটি মেশিন নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর পাইপগুলো সবাই মিলে ধরে ঠিক করলাম। তারপর দুটো মেশিন চালু করে দিলাম। তবে একটা জিনিস ভালো ছিল এক ঢিলে দুই পাখি হচ্ছিল। এপাশে জমিতে সেচ দেওয়ার হচ্ছে আরেক পাশে নদীতে মাছ ধরা হচ্ছে। কয়েকঘণ্টা দুটা মেশিন চালানোর পর দেখা গেল যে এই দুইটা মেশিন দিয়ে কমপ্লিট হবে না পানি উঠা। তাই বাসা থেকে আরো দুটো মেশিন এনে লাগিয়ে দেওয়া হল। এখন মোট চারটা মেশিন নদীতে চলতেছে। কেননা আমরা অনেক বড় একটি এরিয়া নিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছি।
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZZXXEjPSYhuGJBPKbgfvx6rU8TKaX9YA4yJNeYgjrge8/IMG_20220129_132227.jpg)
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW3otno7FwsofYSPFW7TmPPHp67BeKVnm9NaquHGNG5vB/IMG_20220129_132154.jpg)
দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। পানি এখনো অনেক গুলো রয়েছে। তাই সবাই মিলে থাকার জন্য একটা ঘর তৈরি করল। বেশ কয়েকজন ছেলে সময় কাটতেছে না এখন কি করে। তাই সবাই মিলে টাকা দিয়ে অনেকগুলো মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে আসলাম। কি সুন্দর করে মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে মেখে সবাই মিলে শুরু করলাম খেতে। আহ কি সুন্দর লাগছিল সবাই মিলে একসঙ্গে যখন খাচ্ছিলাম। কেননা অনেকদিন পর এসব মুহূর্ত আবার স্মৃতির পাতায় লেখা হচ্ছে। কেননা ছোটবেলায় এই সময়ে মাছ প্রায় প্রতিদিনই ধরতাম। আর এখন বাইরে থাকতে হয় লেখাপড়ার জন্য। তাই গ্রামের মুহূর্ত গুলো খুব মিস করতে হয়।
মুড়ি খাওয়া শেষ হতে না হতেই একটা মেশিনের প্রবলেম দেখা দিল। আমি আর আমার এক বড় ভাই গিয়ে দেখলাম। গিয়ে দেখি মেশিনে তেল নেই। তেল দিতে বলা হয়েছে কিন্তু মনে ছিল না কারো। তাই আবার পুনরায় তেল দিয়ে মেশিনটি চালু করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর মুড়ি গুলো শেষ হয়ে গেল। সবাই মিলে ভাবলাম এখনো রাত অনেক বাকি। এখন কি করা যায়। তাই সবাই মিলে ভাবলাম মুরগি এনে গ্রিল তৈরি করি । যেই কথা সেই কাজ । আমাদের ওখানকার এক ছোট ভাইদের মুরগির ফার্ম রয়েছে। ওদের মুরগি গুলো বেশ বড় বড় হয়েছে। তাই তাকে বলা হল চারটা মুরগি নিয়ে আসতে। সে খুব তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে মুরগি নিয়ে আসলো। তারপর মুরগি চারটা কে পুরে গ্রিল তৈরি করে ফেললাম। বেশ একটা ভালো হয়নি তবুও কাড়াকাড়ি অবস্থা।
গ্রিল খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে বোর হয়ে আসলো। এপাশে আমাদের নদীতেও আর অল্প একটু পানি রয়েছে। দিনের আলো দেখা দিতে দিতেই আমাদের নদীর পানি শেষ হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পর সকাল হয়ে গেলো। সবাই বালতি নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পরলাম। এতগুলো মাছ হলো যে আমাদের কল্পনার বাইরে। আমরা নিজেরাই কল্পনা করতে পারিনি যে এতগুলো মাছ হবে। আমি সবগুলো মাছের ছবি তুলতে পারিনি। কেননা আমার কাছে মোবাইল ছিলোনা। তাই শেষের কিছু ছবি তুলে আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি।
অনেক সুন্দর একটি মূহুর্ত কাটিয়েছি । নদীর মাছ যে কি মজা যে একবার খেয়েছে সে আর এ স্বাদ ভুলতে পারেনি । পরবর্তীতে এগুলো মাছের রেসিপি নিয়ে হাজির হব (ইনশাআল্লাহ)।
আমি মোঃ ইব্রাহিম ইসলাম নাহিদ। আমাকে সবাই নাহিদ বলেই ডাকে। আমি বাংলাদেশী । আমি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বই পড়তে , লিখতে ও নতুন কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসি।নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি।
ওয়াও! আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর ভাবে নদীতে মাছ ধরার অনুভুতি শেয়ার করেছেন। আমি টাকি মাছ অনেক পছন্দ করি। আপনার টাকি মাছের ছবিগুলোগুলো দেখে ভর্তা খেতে ইচ্ছে করছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য । আমিও টাকি মাছের ভর্তা খুবই পছন্দ করি ।
আপনার মাছ ধরার অনুভূতি জেনে সত্যি খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। ছোট বেলায় যখন গ্রামে যেতাম তখন প্রায়ই আমাদের পুকুর সেচে বা খাল থেকে এভাবে মাছ ধরা হতো। খুব মজা লাগতো। আম্মু নামতে দিতোনা। খাল বা পুকুর এর পাশে দাঁড়িয়ে দেখতাম। সত্যি মনে পরে গেলো সেই দিন গুলো।
জি ভাই গ্রামে না থাকলে এসব অনুভূতি বোঝা যায় না । ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ।
You have been upvoted by @rex-sumon, a Country Representative of Bangladesh. We are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the quality contents on steemit.
Follow @steemitblog for all the latest update and
Keep creating qualityful contents on Steemit!
আপনার এই অনুভূতি গুলো দেখে ভালোই লাগলো।দেখে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো। বেশ সুন্দরভাবে আপনি লিখেছেন। সবাই মিলে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন ।
দিন শেষে আমি আপনাকে বলব ভাই আপনি অনেক সুন্দর একটি কাজ করেছেন ।আপনি আমার পুরনো দিনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন । আমিও ছোট থাকতে এমন ভাবে বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতাম বিলি । আমাদের এখানে নদী নাই।
বুঝতে পেরেছি । আপনাকে ধন্যবাদ ভাই ।
গ্রামের নদীতে মাছ ধরার অনুভূতিটা সত্যি অনেক মজার। হাত দিয়ে মাছ ধরতে সব থেকে বেশি মজা লাগে। হাতের নাগালে মাছ এসে ধরা দিলে খুব আনন্দ লাগে বটে। আপনি খুব সুন্দর একটি সময় অতিবাহিত করেছেন দেখছি। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
জি ভাই ঠিক বলেছেন , হাতের নাগালে মাছ এসে ধরা দিলে অনেক সুন্দর লাগে । আপনার প্রতি শুভকামনা রইল ।
ভাই খুব দারুণ ভাবে আপনার মাছ ধরার অনুভূতি আমাদের সাথে তুলে ধরছেণ।পড়ে অনেক ভালো লাগলো।আমিও ছোটে বেলায় এমন করে মাছ ধরতাম।অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ।