প্রসঙ্গ: ভুল থেকে শিক্ষা // 10% beneficiary @shy-fox

হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি ।


আজ ২০ই ফেব্রুয়ারি , ২০২২


রোজ রবিবার ।




ethics-2991600_640.jpg

Source

আমরা প্রতিদিন নিত্যনতুন অনেক কাজ করে থাকি । এসব কাজের মধ্যে কোনো কোনো কাজ সফলতা অর্জন হয় , আবার কোনো কোনো কাজে সফলতা হয় না । যে কাজে সফলতা হয়নি , তাই বলে কি আমি সেই কাজ থেকে দূরে থাকব বা সেই কাজকে ভয় পাব বা সেই কাজটি নিয়ে হতাশায় ভুগব। এই কাজ ভুলেও করা যাবে না ।

আমাদের উচিত যে ভুলটি করেছি তার কারণ খুঁজে বের করা । কি কারণে আমার ভুল হলো । মনে করতে হবে যে, কারণ খুঁজে বের করা হলো সেই ভুলে প্রথম শিক্ষা । তাই আমাদের একটু মাথা খাটিয়ে সময় নিয়ে ভাবা উচিত ভুল কোথায় হলো । তা আমরা অধিকাংশ মানুষ ভাবতে চাই না । কারণ নিজের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পছন্দ করি ‌‌। নিজের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে সেই ভুল থেকে আমরা আর কিছু শিখতে পারব না । কেননা পরবর্তীতে আবার কোনো ভুল করলে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করব । তখন নিজেরই ক্ষতি । এভাবে নিজের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে কতদিন চলবে । নিজের ভুলগুলো নিজেকেই ধরতে হবে ।



একটা ঘটনা শেয়ার করি তাহলে আপনাদের সাথে ।

আমার স্কুল লাইফের কথা । আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে সবসময় ঘুরতাম । আমি , সোহেল , শাহিনুর , রাসেদ, রহমত ইত্যাদি। তার মধ্যে সবচেয়ে চালাক ছিল সোহেল । কথাও বলতে পারত সুন্দর ভাবে । মিথ্যা কথা এমনভাবে বলবে যেন সে সত্যি কথা বলছে । অভিনয় করতে ভালো পেতো । আমাদের টিমকে সবসময় হাসিখুশিতে রাখতো । তার একটি মাত্র দোষ ছিল ,সে নিজে ভুল করলে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতো । কখনো নিজে ভুল শিকার করতো না ।



confused-6741161_640.webp

Source

একদিন আমরা বেশ ক্লাসের কমবেশি সবাই বুদ্ধি করে টিফিনের সময় স্কুল থেকে পালিয়ে গেলাম । কেননা সেদিন ছিল ক্লাসে অনেক পড়া । না পড়ে গেলে স্যার খুবই পিঠাতো । তা বাদেও সেদিন আমাদের "এ"আর "বি" গুরুপ ফুটবল খেলা ছিল । বিকেল বেলা খেলা চালু করে দিলাম । খেলা ভালোই চলছিল । আমরা প্রথমে একটা গোল দিয়েছিলাম । তারপর খেলা শেষের দিকে পেনান্টি বক্সে উঁচু বল হেড দিতে না পেরে হাত দিয়ে ধরলেন । সে নিজের ইচ্ছায় করেছিলেন । আর আমাদের ট্রাইফিকার হয়ে গেল । এখন খেলা শেষে এক এক গোলে সমতা । সেদিন খেলতে খেলতে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল ‌‌তাই ট্রাইফিকার খেলি নি । টাকা জমা ছিল পরের দিন খেলার জন্য ।

খেলা শেষে তাকে বলা হলো , এটা তুই কি করলি? হাত দিয়ে না ধরলেও পারতি । হেড দিতে পারবি না ছেড়ে দে পিছনে গোলকিপার আছে । হুদাই হাত লাগালি । সে তার দোষ চাপানোর জন্য বলল, আমি যদি হাত দিয়ে না ধরতাম তাহলে গোল হয়ে যেতো , গোলরক্ষক বলটি ধরতে পেতো না । এ পাশে গোলের বাইরে ছিল বলটি । সে অনেক ম্যাচে এ রকম করেছিল । কিন্তু সে একই ভুল বার বার করতো । এই যে অভ্যাস হয়ে গেছে , নিজের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে । যাইহোক এটা সামান্য বেপার ।

খেলার পরের দিন স্কুলে আসলাম সবাই । প্রথম পিরিয়ডে রাগি স্যার টি আসলেন । এসে বলে কালকে ক্লাস ছিল কে কে ক্লাসে উপস্থিত ছিলি না । আমরা ক্লাসের কমবেশি সবাই দাড়ালাম । কিন্তু সোহেল দাঁড়ালো না । আমাদের সবাইকে স্যার কঠিন ধোলাই দিলেন । এমন পিঠানি খাইছি আমার মরার আগে পর্যন্ত খেয়াল থাকবে । কিন্তু সোহেল মাইর খেল না ‌।



mistake-1966448_640.webp

Source

আমাদেরকে মারার পর একজন পিছন থেকে বলে দিলে স্যার কালকে সোহেল ও ছিল না । সোহেল কে স্যার দাড় করালো । স্যার বলল, কিরে তুইও কালকে ছিলি না । সোহেল তুতলে তুতলে বলল জি স্যার । স্যার বলল , আমি তখন বললাম তুমি দাঁড়াও নি কেন । এই কথা বলে সোহেল স্যার অনেক পিঠা নি দিয়েছে। মানে আমাদের থেকে অনেক বেশি পিঠা নি খেয়েছে । সোহেল তো রেগে ফায়ার , আমাদের থেকে তাকে এস্ট্রার বেশি মারল কেন । এই বলে সে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন । সেদিন আর ক্লাসে আসলো না।

বাসায় গিয়ে সে কয়েক জনকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল । স্কুল ছুটির পড় স্যার বাসায় যাচ্ছিল । আর সেই পথে স্যারকে ধরে এক পা ভেঙে দিল । খুব দুঃখজনক ব্যাপার , স্যার খোরা হয়ে গয়ে গিয়েছিল । পরে কখনো আর ভালোভাবে হাঁটতে পারে নি ।

এখানে সোহেলের অনেক ভুল ছিল । সে বুঝতে পারে নি বা কখনো বুঝতে চায় নি । তাকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম যে, স্যারের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নে । কিন্তু সে স্যারের দোষ বার বার দেয় ,তাকে পিঠানি দিল কেন । তখন থেকে সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে দিয়েছে ।

তার কঠিন ভুল আর জেদের কারণে এখন তার খারাপ তার পরিস্থিতি। এখন সে আফসোস করে কি জন্য স্যারকে মারলো আর কি জন্য লেখাপড়া ছেড়ে দিল ।


তাই বন্ধুরা কেউ যদি ভুল করতে যায় তাকে থামিয়ে দিন বা কেউ যদি ভুল করে ফেলে তাকে সেই ভুল ধরিয়ে দিন । তার করা ভুল অন্য কারো সাথে সমালোচনা করার দরকার নেই । তার ভুল তাকেই ধরিয়ে দিন । কেননা একমাত্র সে পারবে সেই ভুল সমাধান করতে ।



20210618_231449.jpg

আমি মোঃ ইব্রাহিম ইসলাম নাহিদ। আমাকে সবাই নাহিদ বলেই ডাকে। আমি বাংলাদেশী । আমি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বই পড়তে , লিখতে ও নতুন কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসি।নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি।

Sort:  
 2 years ago 

এটি সত্যিই অনেক বড়ো লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনা।স্যারেরা পিতা-মাতার পরের অবস্থানে থাকেন।ফলে গুরুজনদেরকে এভাবে পা ভেঙে দেওয়ার অর্থ সে কোনো ভালো পরিবেশ বা ভালো পরিবারের ছেলে হতে পারে না।তবে হ্যাঁ অনেকসময় সঙ্গদোষে এইরকম হয়।যাইহোক খুবই খারাপ লাগলো স্যারের বিষয়ে শুনে।ঈশ্বর ওর সুবুদ্ধি দিক এটাই কাম্য।ধন্যবাদ ভাইয়া।

জি আপু স্যারেরা পিতা মাতার পরেই অবস্থান । তারা আমাদের জীবনের আলোর পথ দেখায় আর সে কিনা স্যারকেই আঘাত করে । তাকে অনেক বলছি স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু সে চায়নি। অবশেষে লেখা পড়ায় বাদ দিল ।

তবে হ্যাঁ অনেকসময় সঙ্গদোষে এইরকম হয়।

জি আপু খারাপ ছেলেদের সাথে ঘুরতে । বাসার কোনো কথা শুনো না ।

 2 years ago 

আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই আমি আপনার সাথে একমত । ভুল করা তো সামান্য বিষয় তবে কেউ যদি ভুল করে তাহলে তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে তার ভুলটি ধরিয়ে দেয়াই আমাদের সবার কাম্য । আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে সঠিক এবং বেঠিক এর প্রসঙ্গ গুলো খুবই সুন্দরভাবে বুঝতে পারলাম ধন্যবাদ আপনাকে এমন চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনি বুঝতে পারছেন বলে । শুভকামনা রইলো আপনার প্রতি।

 2 years ago 

আপনি চমতকার করে জ্ঞানগর্ভমুলক একটি গল্প শেয়ার করেছেন। ভুল থেকে নতুন ভুলের জন্ম না হোক।তাই,নতুন করে ক্ষতির মুখ না দেখাতে ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়া উচিত। পোস্টটিতে ভাল,মন্দের দুটো দিকই সুচারুভাবে ফুটিয়েছেন।এমন শিক্ষনীয় পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।

  • ভালবাসা ও শুভকামনা রইলো।

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই । কেউ যদি ভুল করে সেই ভুল তাকেই ধরিয়ে দেওয়া উচিত । অন্যের কাছে সমালোচনা করার দরকার নেই । কেননা সেই ভুল সেই সংশোধন করতে পারবে অন্য জন না ।

 2 years ago 

আপনি চমতকার লিখেছেন।নিজের ভূলগুলো নিজেদের ধরিয়ে দেওয়াই উত্তম।কেননা,নিজেকে সংশোধন করার চেয়ে বড় কিছুই নেই।জ্ঞানগর্ভমুলক এমন লিখনী নতুন করে ভাবিয়ে তুলতে সহায়ক হবে। আমন্ত্রণ ও ভালবাসা রইলো শ্রদ্ধেয়।

 2 years ago 

আসলে ভুল না করলে তো আর শেখা যায় না। ভুল করে সেটাকে শুধরে নিয়ে পথ চলতে হয়। আর এইসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কেউ যদি পরিবর্তন নিয়ে না সে তার নিজের মধ্যে তাহলে আপনার বন্ধু সোহেল এর মতই করুণ দশা হবে সবার। যাইহোক সুন্দর একটি পোষ্ট করার জন্য সাধুবাদ জানাই আপনাকে।

ঠিক বলেছেন , ভুল করলে শুধরে নেওয়া উচিত । নাহলে সেই ভুল জীবনের পথ পাল্টিয়ে দিতে পারে । আর সোহেলের এই কাজটি করা ঠিক হয় নি । ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 65647.77
ETH 3166.18
USDT 1.00
SBD 2.60