প্রসঙ্গ: জেদ //10% beneficiary @shy-fox
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির বন্ধুগণ,আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। |
---|
জেদ এমন একটা জিনিস সেটা সবাইরি মাঝে আছে । কেউ খারাপ কাজে ব্যবহার করে, আবার কেউ ভালো কাজে ব্যবহার করে। পৃথিবীতে প্রায় 80 পার্সেন্ট মানুষেই জেদকে খারাপ কাজে ব্যবহার করে। জেদ এমন একটা জিনিস যা মূহুর্তেই একটা ব্যাক্তি জীবনকে পাল্টে দিতে পারে ।
কিন্তু আমরা সঠিক সময়ে আমাদের জেদকে ব্যবহার করি না । মানুষের জীবনে ভালো মন্দ দুটি সময় আসে । তবে খারাপ সময় নিজেকে একটা ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলে। সেই সময় কি করব ভেবে পাইনা। তাই শয়তান সেখানে সুযোগ নিয়ে খারাপের দিকে ধাবিত করে। তাই আমাদের সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়ে যায়।
ছোটবেলায় আমার এক বন্ধু ছিল। সে লেখাপড়া অনেক ভাল ছিল । তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল। সে পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিল। যখন যেটা চাই তো তখন সেটা পেত। তার বাবা মা তাকে খুব ভালোবাসতো । সে ছিল আমাদের বন্ধু সার্কেলের মধ্যে খুবই জেদি । তবুও আমরা মেনে নিতাম। তবে আমরা যে কয়েকজন বন্ধু ছিলাম কেউ নেশা করতাম না। সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে জীবনে যতই ঝড় আসুক না কেন কেউ নেশা করব না।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই একই স্কুলে পড়েছিলাম । নবম শ্রেণীতে এসে স্কুল ভাগ হয়ে গেল আমাদের। স্কুল আলাদা হওয়াতে কেউ মন খারাপ করিনি। তবে দিনশেষে একই কোচিং এ পড়তাম । দিনকাল সবাইরে ভালই যাচ্ছিল। কেউ কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতো না। কেননা প্রেম করলে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই অন্য মেয়ে যদি এরকম কোন প্রস্তাব নিয়ে আসতো তাহলে তাকে না করে দিতাম সবাই।
একদিন সে বন্ধুটা আমাদেরকে ফোন করে বলল, আজকে কেউ কোচিং যাবো না। সবাই স্টেশনে চলে আসবি। আমরা বললাম , কেনো রে কি এমন কাজ আছে যে কোচিং করবি না। সে বলল সারপ্রাইজ দিবো। বন্ধুর কথা ফেলতে পারলাম না তাই সব বন্ধু মিলে গেলাম। স্টেশনে গিয়ে দেখি আমাদের সেই বন্ধুটা একটা মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর মেয়েটা সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটা নাকি তাকে খুব ভালবাসে এবং সেও মেয়েটাকে ভালোবাসে। আমরা বন্ধুরা মিলে সবাই তাকে বুঝালাম, তুই এখনো ভেবে দেখতে পারিস। সে পরে আর আমাদের কোন কথা শোনেনি, সেই মেয়েটিকে নাকি তার খুবই পছন্দ হয়েছে।
তারপর ওদের দুজন কার মধ্যে গভীর প্রেম দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যাই হোক তারা যেন সুখে থাকে। কিন্তু সেই বন্ধু অনেক পাল্টে গেল। আমাদের সাথে আর বেশি সময় দেয় না। আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি তাই আমরাও আর কিছু বলি না। কিন্তু তার লেখাপড়ার গতি আরও বৃদ্ধি পেল। আমরা আবার সবাই বললাম যে প্রেম করলে লেখাপড়া ভালো হয় নাকি? দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে গেল।
তারপর হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে সেই বন্ধুটা কাদতেছে। আমরা আবার তাকে বলল কি হয়েছে রে কাদিস কেন। সে বলল বন্ধু আমি যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলাম তার বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা অবাক হয়ে গেলাম। আমরা বললাম কই আমাদেরকে তো বলিস নাই বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। বিয়ে হয়ে গিয়ে তারপর বলতেছিস। সে বলল আমি নিজেই জানিনা এবং মেয়ে ও জানতো না। হুট করে মেয়ের পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দিয়েছে।
বন্ধুর অবস্থা ভাল ছিল না। তাই সবাই মিলে তাকে বিভিন্নভাবে সান্তনা দিলাম। বিভিন্নভাবে বোঝালাম। কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারতেছে না । তার ওই মেয়েকেই চাই। আমাদেরও আর করার কিছু ছিল না, কেননা সেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ে না হলে তার একটা কথা ছিল। তারপর সে বাসায় পাগলামি শুরু করলো। সে আর স্কুলে আসে না , খাওয়া-দাওয়া ভালোমতো করে না নেশার মধ্যে পড়ে গেল। আমরা তাকে বললাম বন্ধু ইস্কুলে আসিস। কিন্তু সে বলল, আরে না কিসে লেখাপড়া করবে না। তাকে অনেক বুঝিয়েও লাভ হয়নি। সে বলল আমার এক কথাই।
তারপর সে প্রায় সব ধরনের নেশা করত। নেশা করলে নাকি সে তার কষ্টগুলো কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকে। কিছুদিন পর সে রেললাইন এগিয়ে আত্মহত্যা করে। যেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।
কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও জেদের কারণে তার এই পরিস্থিতি। সে যদি চাইত তাহলে ভালো পথে আসতে পারতো।
আমরা কমবেশি সবাই অরুনিমা সিনহা(Arunima sinha) কে চিনি । তা জীবন কাহিনী সম্বন্ধে হয়তো অনেকে জানা আছে। ১২ এপ্রিল ২০১১ সালে রাতে চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ফেলে দেয়। জ্ঞান ফিরে দেখেন তার এক পা কেটে গেছে। তারপর দিন হলে সেখানকার মানুষেরা তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। তারপর অরুনিমা সিনহা বুঝতে পারে তাকে সবাই আলাদা নজরে দেখতেছে । তাকে পঙ্গু ভেবে আলাদা নজরে দেখছে। কিন্তু এই বিষয়টি অরুনিমা সিনহা কে ভালো লাগেনি। তারপর সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে করে মানুষ তাকে আর এই চোখে না দেখে।
তারপর সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠবে। যেটা মানুষ দু পা থাকতে সাহস পায়না । তাই সে কয়েকমাস পর ট্রেনিং নিতে শুরু করে। তখনো তার পায়ের ঘা পুরোপুরি শুখাইনি। তার এই পরিস্থিতি দেখে অনেকেই তাকে বাধা করছিল। কিন্তু সে বাধা মানে নেই। তার জেদ ছিল যে এখন মানুষেরা তাকে যে চোখে দেখছে আর যেন সেই চোখে না দেখে। তার পাশে একটি দলের সাথে এভারেস্টের চূড়ায় করতে আরম্ভ করলো। যখন অরুনিমা সিনহা এভারেস্টের চূড়া কাছাকাছি পৌঁছে তখন তার অক্সিজেন শেষ হতে লাগে। তারপর সে চিন্তা ভাবনা করে এভারেস্ট জয় করবই' কি করবো এতে আমার মৃত্যু হলেই হবে । তারপর সে এভারেস্ট জয় করে ফেলে। যেটা অরুনিমা সিনহা হসপিটালের বেডে ভাব ছিল সেটাকে সে সফল করতে পেরেছে। তার যে দোয়া আত্মবিশ্বাস এর জন্য। যেটা আমাদের দুপা থাকা সত্ত্বেও ভয়ে পিছিয়ে থাকি।
তাই বন্ধুরা এমন জেদ করতে হবে যেটা জীবনের ক্ষতি না হয়। আজকের মনে এখানেই শেষ করলাম। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
আমি মোঃ ইব্রাহিম ইসলাম নাহিদ। আমাকে সবাই নাহিদ বলেই ডাকে। আমি বাংলাদেশী । আমি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বই পড়তে , লিখতে ও নতুন কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসি।নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি।