আনন্দের মুহূর্ত গুলো হুট করে আসে ।10% beneficiary @shy-fox

আসসালামুয়ালাইকুম

আজ ০৭ মার্চ, ২০২২, রোজ সোমবার।


আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি ।


IMG_20211127_072733.jpg


দিনটা খুব ভালো কাটল। ভোরবেলায় উঠতে হবে তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কেননা নদীতে আমি আর আমার বড় ভাই জাল বসিয়ে এসেছি। নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। এইসময় নদীতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। তাই বড় ভাই বলল চল মাছ ধরব। আমি আর বড় ভাইয়ের কথা ফেলতে পারলাম না তাই রাজি হয়ে বড় ভাইয়ের সাথে মাছ ধরতে চলে গেলাম। তাই বাসা থেকে ফাঁসি জাল নিলাম । বড় ভাই রাতের বেলায় জালগুলো নদীতে বসালেন আমি উপর থেকে লাইট দিয়ে আলো দিচ্ছিলাম। জাল বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বড় ভাই আবার পানিতে নেমে জাল গুলোতে দেখল মাছ ধরা পড়েছে কিনা। জাল গুলো উঠে দেখে অনেকগুলো মাছ ধরা পড়েছে। সে গুলোকে আবার জাল থেকে খুলিয়ে নিলাম। প্রায় 2 কেজি টাকার মাছ পেয়েছি। বড় ভাই আর আমি মাছগুলো ভাগ করে নিলাম। তারপর জাল গুলোকে নদীতে বসিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।



IMG_20211127_072428.jpg


পরের দিন ভোর বেলায় বড় ভাই আর আমি জালগুলো দেখতে গেলাম । বেশ কয়েকটি জাল বসে ছিলাম। আমি যে জালটি চেক করতেছিলাম প্রথমেই দেখি একটি সাপ আটকে গিয়েছে জালে। আমি আবার সাপকে একটু ভয় করি। কেননা সাপ আর কুকুরের দৌড়ানি অনেক খেয়েছি। তাই এদের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। তারপর বড় ভাইকে ডাকলাম, ভাই জালে সাপ আটকে গিয়েছে। তারপর বড় ভাই আসলো, বড় ভাই আবার সাপকে ভয় পায় না। খুব তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে সাপটির মাথা ধরল। মাথা ধরে টান মেরে জাল থেকে সরিয়ে নিল ‌। আমি তো দেখে পুরাই অবাক! ভাই এর অনেক সাহস। তারপর একের পরে এক সব জালগুলো চেক করলাম। অনেক রকমের মাছ পেয়েছি। সবগুলোই ছিল বড় বড় সাইজের ‌। জাল গুলো চেক করতে করতে সকাল হয়ে আসলো।



IMG_20211127_072407.jpg


মাছগুলো বাসায় দিয়ে একটু জমি খেতে গেলাম। জমি খেতে একটু কাজ করলাম। তারপর এক বড় ভাই ফোন দিয়ে ডাকলো আজকে নাকি ক্রিকেট খেলা আছে। আমি আবার খেলাধুলা খুবই পছন্দ করি। তবে আমার পছন্দের খেলা হলো ফুটবল। ছোটবেলায় এই ফুটবল খেলার জন্য অনেক মাইর খেয়েছি। এত যে মাইর খেয়েছি সেটা কল্পনার বাইরে। অবশেষে জমিকে থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে ক্রিকেট খেলতে গেলাম। ক্রিকেট খেলে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে এক বড় ভাই আর আমি গাছের নিচে বসে আজকের খেলা নিয়ে কথা বলতেছিলাম। হঠাৎ করে পিকনিকের কথা মনে পড়ে গেল। বড় ভাই বলতেছে পিকনিক খাওয়া দরকার কেননা অনেক দিন থেকে পিকনিক খাওয়া হয়নি। আমিও বললাম ঠিক বলেছেন ভাই। ভাই বলল কি দিয়ে খাওয়া যায় সেটা বল। আমি অনেক চিন্তা করে বললাম ভাই হাঁস দিয়ে খাওয়া বেটার হবে। ভাই রাজি হয়ে গেলেন।



IMG_20220305_133830.jpg


সেই সময় আমাদের পাশ দিয়ে এক নানা যাচ্ছিলেন। আমাদের পিকনিক খাওয়ার আলোচনা শুনলেন। নানা বললেন পিকনিক খাবি হাস দিয়ে। আমরা বললাম হ্যাঁ। নানা বলল আমি হাঁস বিক্রি করব। বাহ তাহলে তো হয়েই গেল। আমরা বললাম কি হাঁস। নানা বললেন রাজহাঁস। আমরা বললাম কত বড় , বেশি বড় হলে চলবে না। কেননা বয়স্ক রাজহাঁস খেতে খুবই কষ্টকর। তাই মধ্যবয়সী রাজহাঁস খাওয়াই ভালো। আর নানার হাঁসগুলো ছিল উপযুক্ত। তাই দেরি না করে বড় ভাই আর আমি নানার কাছ থেকে হাত দুটো কিনে নিলাম। তারপর আমি সাগর কে বললাম। যে হাস নিয়েছি পিকনিক খেতে হবে। তারপর সাগর মামা বলল গুড, আমিও এটাই চাচ্ছি। অবশেষে আরো তিনজন এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন।



IMG_20220305_135146.jpg


তারপর হাস প্রসেসিং করা শুরু করে দিলাম। কেননা হাস প্রসেসিং করতে অনেক সময় লাগে। তারপর সবাই মিলে হাঁস দুটি গরম পানি করে চুবিয়ে নিলাম। কেননা গরম পানিতে হাস চুবিয়ে নিলে পাখাগুলো তাড়াতাড়ি উঠে যায়। গরম পানিতে চুবিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁসের পাকা গুলো পুরস্কার করে ফেললাম। হাঁসের পাখাগুলো পরিষ্কার করার পর হাঁস দুটিকে আগুনে পুড়িয়ে নিলাম। কেননা আগুনে পুড়লে এর স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই আগুনে পোড়ার পর মাংসগুলো পিস পিস করলাম। মাংসগুলো পিস করে রেখে দিলাম।



IMG_20220305_221006.jpg

IMG_20220305_230840-1.jpg


তারপর রাত হলো সবাই মিলে বাজার করতে গেলাম। বাজার করে এসে মসলাগুলো বাসা থেকেই প্রসেসিং করে নিলাম। তারপর সবগুলো নিয়ে খোলা মাঠে চলে গেলাম। রাতের বেলায় বাইরে পিকনিক খেতে অনেক ভালো লাগে। তারপর খোলা মাঠে গিয়ে চুলা তৈরি করলাম। এইসময় জমি খেতে মটর দিয়ে সেচ দিচ্ছে। তাই আলো ও পানির আর কোন প্রবলেম নেই। চুলা তৈরি হয়ে গেলে রান্না করার কাজে লেগে গেলাম। রান্না করতে করতে সবাইরে হই উল্লাহ শুরু হয়ে গিয়েছে। এসব নাচানাচি দেখে নিজেকে ভালো লাগতেছে। কেননা এই পৃথিবীতে সবাই কোনো না কোনো বিষয়ে চিন্তিত থাকে। মনে হচ্ছে এই কিছুক্ষণের বা ক্ষণিকের জন্য সব চিন্তা মাথা থেকে দূর হয়ে গিয়েছে। বেশ মজা করেছিলাম। এপাশে রান্নাবান্না কাজ শেষ। আরো কিছুক্ষন নাচ-গান করে খেতে বসলাম সবাই। এই যে সবাই মিলে বাইরে গোল হয়ে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা। সবাই মিলে মজা করে খেলাম। খাওয়ার পর সবাই মিলে বিভিন্ন গল্প ও মজা মাস্তিতে দিশাহারা হয়ে গেলাম।

আসলে বন্ধুরা কোন কিছু প্লান করে করতে গেলে অনেক সময় লাগে। জানি প্লান করে কোন কাজ করলে কাজটি পরিপূর্ণ গোছানো হয়। তবে হুট করে কোন কাজ করার মজাই আলাদা। কোন কোন কাজ বা এইসব আনন্দের মুহূর্ত হুট করেই করা ভালো বা চলে আসে । তো বন্ধুরা আজকের মত এখানেই শেষ। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন।



20210618_231449.jpg

আমি মোঃ ইব্রাহিম ইসলাম নাহিদ। আমাকে সবাই নাহিদ বলেই ডাকে। আমি বাংলাদেশী । আমি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বই পড়তে , লিখতে ও নতুন কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসি।নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি।

Sort:  
 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া খুব সুন্দর একটি দিন অতিবাহিত করেছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আনন্দের কোনো ঘাটতি ছিল না।
ধরলেন মাছ খেলেন হাস মজার একটা বিষয়।
তবে মাছ ধরতে আমারও কিন্তু খুবই ভালো লাগে মাঝেমধ্যেই তাইতো ছুটে যাই পদ্মার পাড়ে।

জি ভাই অবাক করার বিষয়। ধরলাম মাছ কিন্তু খেলাম হাঁস । বাহ ভাই আপনি পদ্মায় তো অনেক বড় বড় মাছ ধরে দেখতেছি। তবে ইলিশ মাছ আমাদেরও কিছু দিয়েন।

এরকমভাবে নদীতে মাছ ধরতে অনেক ভালো লাগে। আমিও কয়েকবার নদীতে জাল বসেছিলাম আর প্রচুর মাছ সেখান থেকে পেয়েছিলাম। তখন যে কি আনন্দ হয়েছিল বলে বোঝাতে পারবো না। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে অনুভূতিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

নদীতে মাছ ধরার অন্যরকম একটা আনন্দ। নদীতে যে ধরেছে সে বোঝে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

জালে মাছ আটকানোর দৃশ্যটি দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। খুব ছোট থাকা অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে যখন বেশি পানি হতো আমরা এই জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। তবে জাল থেকে কিছু মাছ বের করা খুবই কষ্টসাধ্য। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট সাপ এই জালে আটকে যেত। সব মিলিয়ে অসাধারণ কিছু বিষয় আপনি উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ, এমন কিছু বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া আপনার আজকের মূহুর্ত গুলো খুব আনন্দের ছিল।এই আনন্দ গুলো আমরা সব সময় উপভোগ করতে পারি না।নদীতে জাল দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর মাছ ধরেছেন। দেখে সত্যি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া। এরপর নানার কাছে থেকে হাঁস কিনে অসম্ভব মজাদার করে পিকনিক করেছেন। ভাইয়া হাঁসের মাংসের মাংস টা দেখে জিভে পানি চলে এসেছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের সাথে আনন্দের মূহুর্ত ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ভাইয়া।

ধন্যবাদ আপনাকে আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহিত করার জন্য। ঠিক বলেছেন আপু এই আনন্দগুলো আমরা সব সময় উপভোগ করতে পারিনা। কিন্তু নিজের অজান্তেই আনন্দগুলো চলে আসে। ধন্যবাদ আপু আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।

 2 years ago 
জালে মাছ আটকে থাকার দৃশ্যটা গ্রামে খুব দেখা যায়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে মানুষ ক্ষেত্রর মধ্যে জাল পেতে রাখে তখন দেখা যায় এর রকম মাছের দৃশ্য।আপনার পোস্ট দেখে অনেক ভালো লাগলো। ভালোনাসার রইলো আপনার জন্য ভাই।

জি ভাই ঠিক বলেছেন বর্ষাকালে গ্রামের এইরকম মাছ আটকানো দৃশ্য দেখা যায়। আমার পোস্ট আপনাকে ভালো লেগেছে শুনে আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

মনের মত সব কাজ করে ফেললেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে মাছ ধরতে গেলেন সেই সঙ্গে পিকনিক করা হলো। এইতো জীবন। আনন্দ না থাকলে বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়। তবে একটা জিনিস খারাপ লাগলো কারেন্ট জাল ব্যবহার করা নিষেধ জেনেও আপনার মতো শিক্ষিত মানুষেরা কেন এই কাজে সমর্থন দেন বুঝিনা।

ভাই আমাদের ছোটখাটো নদী, এই সময় নদীতে পানি থাকে না । তাই এই জ্বাল দিয়ে পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অল্প অল্প করে মাছ ধরে খায় আমাদের গ্রামের লোকেরা। তবে ছোট মাছধরা জাল ব্যবহার হয় না। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার মত করে আমরা লাগে নদীতে গিয়ে মাছ ধরতাম । কিন্তু এখন আর সেটা হয়না । মাছ ধরার পাশাপাশি আপনি অনেক সুন্দর একটি সময় কাটিয়েছেন । আপনার মত এরকম সময় আমরা কিছুদিন আগে কাটিয়েছিলাম তবে আপনার থেকে সেটা আলাদা ছিল ।
এত সুন্দর একটি সময়ে কাঠি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56477.82
ETH 2390.38
USDT 1.00
SBD 2.33