লক্ষ্য যদি দৃঢ় হয় অবশ্যই সেটা বাস্তবায়ন হবে। 10% beneficiary @shy-fox
আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি । |
---|
কলেজের পরিক্ষা শেষ হয়েছে । কয়েক দিন অনেক ব্যস্ততার মাঝে ছিলাম । যাইহোক পরিক্ষা শেষ বাসায় চলে আসলাম । একটু সবার সাথে দেখা করে যাই । নয়তো আর দেখা হবে না । দেখা হলে হতে পারে ঈদে । কেননা সামনে সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা । তাই বাসায় চলে আসলাম । বাসায় আসার সময় অনেক কাহিনী হয়ে গেছে । কিছুটা হলেও শেয়ার করি আপনাদের মাঝে ।
মেস থেকে বাসার আসার সময় অনেক ট্রেন রয়েছে । কিন্তু রাতের বেলায় । রাতে যাবো না বলে ট্রেনের যাওয়ার কথা ছেড়ে দিলাম । এখন ভাবলাম কোন যানবাহন এ যাবো । সাগর আবার বাসে যাইতে পারে না । তার নাকি মাথা ঘুরে । আমার আবার এই রকম কোনো প্রবলেম হয় না । সারা জীবন যদি গাড়ির মধ্যে কাটিয়ে দিতে বলেন তাও মনে হয় পারব । কিন্তু সময় মতো খেতে দিতে হবে । ট্রাভেলিং করতে আমাকে খুব পছন্দ লাগে।
যাইহোক এসব কথা আর বাসে যাওয়া হলো না। এখন বিকল্প পদ্ধতি অটোয় করে যেতে হবে। তাই অটো ঠিক করলাম । অটো চালক মামাটা অনেক ভালো ছিল । পিছনে সাগর , এক ছোট ভাই আর একটি ছোট পরিবার ছিল । মানে স্বামী-স্ত্রী আর তাদের এক ফুটফুটে সন্তান । আমি আবার সামনে বসলাম । কেননা সামনে বসে যেতে আমায় খুবই ভালো লাগে ।
অটোচালক মামাকে বললাম সাবধানে চালাইয়েন । অটোচালক মমা বলল ইনশাআল্লাহ। তারপর কিছু দূর আসলাম অটো চালক মামার ড্রাভিং করা অনেক ভালো । তাই মামাকে বললাম, আপনি তো অনেক সুন্দর ড্রাইভিং করতে পারেন। কত বছর ধরে আপনি অটো চালান। অটোচালক মা মাটি বলল আমি প্রায় বিশ বছর ধরে অটো চালাই। আমি বললাম বাহ অনেক বছর ধরে অটো চালান তো । তো আপনার বাসা কোথায়। তিনি আমাদের পাশের ইউনিয়নের কথা বললেন। সেখানে নাকি তার বাসা । আমি বললাম , ঐ এলাকায় আমি কত দিয়ে বল খেলেছি আমার খুব পরিচিত এলাকা। মামাকে বললাম , ফুটবল খেলার মাঠের কোন দিকে বাসা। মামা তার বাসার ঠিকানা ভালোভাবে দিলেন। আমি চিনে ফেলেছি ।
আমাকে ও চিনে নাকি । আমার অনেক আগে বল খেলা দেখেছিল । তাই আমকে বলল, এখন বল খেলেন না আমি বললাম না । তারপর অটোচালক মামা বলল কি করেন এখন ? আমি বললাম পড়াশোনা করি । মামা বলল, কোথায় পড়েন ? আমি বললাম , পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ । মামা বললেন, কোন ডিপার্টমেন্ট এ পড়েন । আমি বললাম, ইলেকট্রিক্যাল । অটোচালক মামা বলল আমারও পলিটেকনিক এ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করার খুবই ইচ্ছা ছিল । কিন্তু এক পরিস্থিতির কারণে আর হয়নি।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি বললাম কি হয়েছিল একটু বলা যাবে। তারপর অটোচালক মামা আসতে আসতে তার জীবনের কাহিনী আমার সাথে কিছুটা শেয়ার করলেন।
তিনি ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছোট থেকে সব ক্লাসেই ভালো রেজাল্ট ছিলো। এত সুন্দর রেজাল্ট দেখে তার বাবা - মা অনেক খুশি ছিলেন । বাবা ছেলেকে বলেছিলে ? বাবা তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? তখন ছেলেটি বলেছিলেন, বাবা আমি বড় হয়ে ইন্জিনিয়ার হতে চাই । বাবাও স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ইন্জিনিয়ার বানাবে । কিন্তু ছেলে যখন ক্লাস ৮ পড়ে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটে । হঠাৎ করে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে তার বাবা এখনো উঠেনি ঘুম গেছে । এই যে ঘুম গেছে এখন পর্যন্ত উঠেনি । তার ছিল দুইটি বোন ও মা । পরিবার চালানোর মতো পরিবারে আর কেউ ছিল না । তাকেই নিতে হয়েছিল তার পরিবারের দায়িত্ব । তখন থেকে তিনি মাঠে-ঘাটে কাজ করেছিলেন।
কাজ করে তিনি দুই বোনকে বড় করে বিয়ে দিয়েছেন। এখন পরিবারে তিনি ও তার মা । কিন্তু তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন কখনোই ভুলতে পারেনি। কেননা তার বাবার তাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাই তার বাবার স্বপ্ন কে তিনি বাস্তবায়ন করতে চাই। তাই তিনি গত বছর এসএসসি পাস করেছেন। এখন পরিচিত এক প্রাইভেট পলিটেকনিকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করতেছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি অটো চালান । তার এই প্রচেষ্টা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । আসলেই লেখাপড়া করতে কোন বয়স লাগে না। সেটা যেকোনো বয়সে আপনি করতে পারেন।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা স্বপ্ন পূরণ হয়। আসলেই লক্ষ্য যদি দৃঢ় হয় অবশ্যই সেটা বাস্তবায়ন হবেই। হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না । তার আরো অনেক বিষয় নিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তিনি সাধারণ জ্ঞান মোটামুটি ভালই পারেন। তিনি প্রায় সব দেশের নাম ও তাদের রাজধানী বলতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
আমি মোঃ ইব্রাহিম ইসলাম নাহিদ। আমাকে সবাই নাহিদ বলেই ডাকে। আমি বাংলাদেশী । আমি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বই পড়তে , লিখতে ও নতুন কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসি।নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি।
কথায় আছে না একটি সঠিক এবং সুন্দর লক্ষ আপনার সম্পূর্ণ কাজের এক-তৃতীয়াংশ।আর ঠিকঠাক মত লক্ষে যদি অটুট থাকা যায় তাহলে সে কর্ম বাস্তবায়ন হবেই। অনেক ধন্যবাদ একটি বাস্তবসম্মত পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাই ।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার কথার সাথে একমত লক্ষ্য যদি দৃঢ় হয় অবশ্যই সেটা বাস্তবায়ন হবে। আসলে স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন সেটাই যেটা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। আসলে পরিস্থিতির কারণে কোনোকিছুই হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে অর্থের জন্য অনেক মানুষই পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে থাকে। আসলেই তার প্রচেষ্টা দেখে আমিও মুগ্ধ হলাম। আসলে তার স্বপ্ন যেন পূরণ হোক দোয়া করি।
কালাম স্যার একদম বাস্তব কথা বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার গল্পটি পড়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম ভাই। আপনার গল্পটির মাধ্যমে বুঝতে পারলাম যদি দৃঢ় লক্ষ্য থাকে তাহলে স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব । আমাদের কখনো হাল ছাড়া উচিত নয় অনেক মোটিভেশনাল একটা পোস্ট ছিল । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জি ভাই কোন কিছু করতে হলে লক্ষ্য নিয়ে করতে হবে। হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহিত করার জন্য।
সত্যি ভাইয়া অটোওয়ালা মামার কথাটা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে ভাইয়া। মধ্যবৃও পরিবারের ছেলে মেয়েদের হাজারো সপ্ন থাকে কখনো পূরণ হয় কখনো পূরণ হয় না। বেশির ভাগ সময় দেখেছি পূরণ হয় না। কারণ সংসারের হাল ধরার জন্য যেই বট গাছ সেইটা যখন হারিয়ে যায় চিরতরে 😭😭।যেমন আমার আব্বুও। আমারও অনেক সপ্ন ছিল কিন্তু পূরণ করতে পারিনি। ছেলে হলে হয়তো চাকরি করতে হতো।মেয়ে বলে বিয়ে হয়ে গেলো।
দুআ করি আল্লাহ তায়ালা সবার বাবা কে বাঁচিয়ে রাখুক হাজার বছর।😭
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার জন্য অনেক দুআ ও শুভকামনা রইল।
আপনার মন্তব্য পড়ে কী যে বলবো খুঁজে পাচ্ছিনা আপু। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনার স্বপ্নগুলো যদি পূর্ণ হয়। আমি জানি আপু মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের কি রকম চাপ নিতে হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।
অটো আলা মামার কথা শুনে ভিতরটা অনেকটা মুছড়ে উঠলো। আসলে সত্যি আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে তারা বাস্তবতার কাছে হেরে যায়। বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তারা তাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ বিলিয়ে দিতেও পিছপা হবে না। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে অটোআলা মামা। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনি ঠিক বলেছেন ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।