যেমন ছিল আমার গ্রামীণ শৈশবের রমজানের আগমন!! শৈশবের স্মৃতি কথন ঃ-০১।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। ভালো না থাকলেও আমাদেরকে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে। কারন এমন এক সময় আমরা পার করছি যেটা আমাদের ভালো থাকা গুলো প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে। দেশ, সমাজ, ফ্যামিলি সব মিলিয়ে কেমন যেন একটা দুর্বিষহ সময় পার করছি। যেখানে যাবতীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের মূল্য দিন দিন কমছে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারে বাস করি তারা যেন বেঁচেও মরে আছি। এক একজন জিন্দা লাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি মাথায় বিশাল এক দায়িত্বের বোঝা নিয়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চড়া মূল্যের কষাঘাতে জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তারপরেও সব কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। মাহে রমজানের উছিলায় আল্লাহ যেন আমাদেরকে মাফ করে দেন। হেদায়েত দান করে দেন। আমিন।
আমাদের সবারই শৈশবের সোনালী স্মৃতি রয়েছে । বিশেষ করে আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে জন্মেছি তাদের দারুন সব শৈশবের স্মৃতি রয়েছে । আজকে আমি এসেছি আপনাদের মাঝে আমার ছেলেবেলার একটু স্মৃতিচারণ করতে ।যেহেতু রমজান মাস চলতেছে সেহেতু রমজান মাস কেমন ছিল আমাদের শৈশবে সেই স্মৃতি শেয়ার করলাম । আশা করি ভালো লাগবে । আপনারাও আপনাদের শৈশবে কাটানো রোজার মাসের স্মৃতি কথা শেয়ার করতে পারেন কমেন্টে।
মনে পড়ে যখন শৈশবের সেই সোনালী সময়ের রমজানের দিনগুলোর কথা। রোঁজার চাঁদ দেখার জন্য বাড়ির ছোট বড় সবাই চলে যেতাম বাড়ির পশ্চিমের নদীর পাড়ের উঁচু রাস্তাটায়। যেখান থেকে স্পষ্ট আকাশ দেখা যায়। মাগরিবের ওয়াক্তের সময় আশে পাশের বাড়ির সবাই মিলে একত্র হতাম ঐ রাস্তায় চাঁদ উঠছে কিনা দেখার জন্য। পলখীন ভাবে সবাই পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কে কার আগে চাঁদ দেখতে পারে। ধীরে ধীরে এক সময় চাঁদ উঠে আর হঠাৎ যখন কারো নজরে পরে যায় খুশিতে উৎফুল্ল মনে চিৎকার করে উঠে ঐ যে চাঁদ.... ঐ যে চাঁদ। তারপর একে একে সবাইকে চাঁদ দেখানোর ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারন একটা মুহুর্ত।
*
রমজানের চাঁদ উঠেছে দূর আকাশে ঐ
মাগো আমার খুশির জোয়ার এবার রাখি কই!
পাঞ্জাবিটা দে মা জলদি যাবো মসজিদে
তারাবির সালাত পড়ে আসি সব ভাই মিলে।
সেহরিতে মা ডাকতে যেন করিসনে আমায় ভুল
পাপ মোচন করে নেবো আমরা পাপী কুল।
(দিদারুল আলম)
এরপর শুরু হয় তারাবির নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। সুন্দর পাঞ্জাবি পায়জামা পরে জায়নামাজ হাতে নিয়ে ভাই বেরাদার সবাই মিলে মসজিদের দিকে যেতাম। নামাজের পর সবাই গল্পে মেতে উঠতাম। আর এই দিকে মা চাচিরা নামাজ শেষ করে সেহরিতে কি খাওয়া দাওয়া হবে তার রোজগার শুরু করে দিতেন। এই ঘর সেই ঘর সব ঘরে একটা উৎসব উৎসবের মত শুরু হয়ে যেত।
সেহরির সময় মসজিদের মাইকে হুইসেল বাজতো। মোবাইল ঐ সময় তেমন একটা কারো ঘরে ছিলোনা। আমাদের ঘরেও চিলোনা। বাবা সবাইকে ডেকে উঠাতেন। আশে পাশের ঘরের লোকজনকে ডেকে দিতেন। আস্তে আস্তে সবার ঘরে কুপি জ্বলে উঠতো। দুই একটি ঘরে বিদ্যুৎয়ের ব্যাবস্থা ছিল। বাকি প্রায় সবার ঘরেই তখন হারিক্যান বা কুপির আলোই একমাত্র ভরসা।
মধ্যরাতে প্রতিটা ঘরের পাতিলের টুং টাং আওয়াজ। একে অপরকে ডেকে দেওয়া। সেহরির শেষ সময়ে মাইকে কেউ একজনের গলার সুর "আর মাত্র দুই মিনিট আছে অথবা সেহরি খাওয়ার সময় শেষ আপনারা সেহরি খাওয়া বন্ধ করুন" এই জিনিস গুলা খুব মিস করি এখন।
ফজরের নামাজ পরে আবার সবাই ঘুম। সকালে উঠে যার যার কাজে যাওয়া।সারাদিনের পর আবার ইফতারের জন্য মা চাচীদের তরিঘরি। এই ঘর ঐঘর থেকে একে অপরকে ইফতার পাঠানো। এই সব মুহুর্তগুলো এখন আর পাইনা। এখন সব কিছু যান্ত্রিকতায় ড়ুবে গেছে। এখন মানুষে মানুষে আন্তরিকতা কমে গেছে। কেউ কাউকে সেহরির সময় ডেকে দিতে হয়না। প্রত্যকের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। সবাই এলার্ম দিয়ে রাখে। এখন আর কেউ চাঁদ দেখার জন্য পশ্চীমের ঐ রাস্তায় যায়না। ফেসবুক, টেলিভিশন, বিভিন্ন মিডিয়া এখন জানিয়ে দেয় কখন রোজা হবে না হবে।
খুব মিস করি আমাদের ফেলে আসা সেই সোনালী শৈশবটাকে। আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম....!!
ধন্যবাদ সবাইকে.............
@didar001
আমি দিদারুল আলম,একজন স্বাধীনচেতা ও ভ্রমন পিপাসু মানুষ। নিজেকে মুসলিম এবং বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমন করতে পছন্দ করি, নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি।সহজ এবং সুন্দর জীবনের সন্ধানি।ব্যক্তি হিসেবে খুবই লাজুক এবং অল্পতে সুখে থাকা মানুষ।