ক্ষমতার দম্ভে ধ্বংস হওয়া (শেষ পর্ব)
তারপর পতনের জন্য আর পরবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন হয় না। বড় একটি দুর্নীতি মামলায় ফেসে গিয়ে শোভনের সমস্ত কিছু হারিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কয়েক বছর জেলও খাটতে হয়। আর এই জেলে যাওয়ার পরে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়। শোভন জেল থেকে বের হয়ে পুরো একা হয়ে পড়ে। তার স্ত্রীও সন্তানদের নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়। তার পুরনো বন্ধু-বান্ধব যারা ছিলো তাদেরকে সে অনেক আগেই দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো। শেষের দিকে তার যে সমস্ত চাটুকার বন্ধু বান্ধব জুটে ছিল তারাও সরে যায়।শোভন একা একা সময় কাটাতে থাকে। আর তার পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকে।
সে চিন্তা করতে থাকে আবার তাকে নতুন করে শুরু করতে হবে। তবে ইতিমধ্যে বেশ বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে আগেকার সেই উদ্দাম উদ্দীপনা খুঁজে পায় না নিজের ভেতরে। একসময় যে এলাকার লোকজন তার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে থাকতো। তাকে দেখলে আদর আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। এখন সেই সমস্ত এলাকা দিয়েই শোভন চুপিচুপি হেটে বেড়ায়। কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না। কেউ কেউ তো আবার তার পিছে কথা শুনিয়ে দেয়। তাকে দেখে অনেকে বলে ওই দেখ সেই ভন্ড নেতা। যাকে আমরা ভোট দিয়ে এমপি বানিয়ে ছিলাম। নির্বাচিত হওয়ার পরে সে তার আসল চেহারা আমাদেরকে দেখিয়েছিলো। তারপরে তার পতন হয়েছে।
শোভনকে এই দুঃসময়ে তাকে সঙ্গ দেয় শুধু তার কয়েকজন বাল্যবন্ধু। তাদের সাথেই সে সারাটা দিন কাটায়। যেহেতু স্ত্রী সন্তান কেউই তার কাছে থাকে না তাই তাকে একা একাই জীবন কাটাতে হয়। কর্মবিহীন একাকী জীবনে শোভন শুধু তার চাওয়া পাওয়ার হিসাব করতে থাকে। আর সে নিজেকে শুধু দোষারোপ করতে থাকে যে কেন সে হঠাৎ করে এতোটা পাল্টে গিয়েছিলো। কেনো সে এমন বাজে সব কাজ করেছিলো। এই অনুতাপ তাকে সব সময় পোড়াতে থাকে। আর এভাবেই একদিন চুপিচুপি সে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। তবে মারা যাওয়ার আগে সে তার সমস্ত সম্পদ এলাকার গরীব দুঃস্থদের নামে দান করে দিয়ে যায়। (সমাপ্ত)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ক্ষমতার লোভে মানুষ অনেক কিছু করে আবার ক্ষমতায় এলেও তার দম্ভে মানুষ ভুলভাল অনেক কিছুই করে ফেলে। যেটা আসলে তাদের নিতি নৈতিকতা কে নষ্ট করে ফেলে। শোভনও ক্ষমতায় এসে বাজে কাজে লিপ্ত হয়ে সব কিছুই হারাতে হয়েছে। স্ত্রীর সন্তান থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব সবাই তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। যাই হোক সর্বশেষ অনুতপ্ত হয়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং সে সে মারা যাওয়ার আগে ধন-সম্পত্তি গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে এটাই তো বড় কিছু।
ক্ষমতা অনেক মানুষকেই অহংকারী করে ফেলে। তাই ক্ষমতা পেলে সেটা নিয়ে কখনোই অহংকার করা যাবে না। শোভন তো তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটা দারুণভাবে সাজিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে শোভন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলো। শোভন যদি ক্ষমতা পাওয়ার পর এভাবে পাল্টে না যেতো,তাহলে তার শেষ পরিণতি এমনটা হতো না। যাইহোক এমন শিক্ষণীয় একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ক্ষমতার দাপট কিংবা দাম্ভিকতা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। সময় জীবন থেকে হারিয়ে যায়। আর ক্ষমতাও হারিয়ে যায়। তবে জীবনের সব এলোমেলো দিকগুলো আর ঠিক করা সম্ভব হয় না। লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো।