২য় পর্ব| ব্যবসার অভিজ্ঞতা by @bull1(10% shy-fox এর জন্যে)
১০ই নভেম্বর‚২০২২‚ বৃহস্পতিবার
পোস্টের নাম | ব্যবসার অভিজ্ঞতা |
ডিভাইস | Realme 5 |
স্থান | কলকাতা |
পোস্টদাতা | @bull1 |
আগের আগের পোস্টে আমি বলেছিলাম আমার মসলার ব্যবসার দুটো অভিজ্ঞতার কথা। তার মধ্যে একটা ছিল ব্যবসা শুরু করার আইডিয়া নিয়ে আরেকটা ছিল বন্ধুকে বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া নিয়ে। ঘটনা গুলো আমি তুলে ধরছি এই কারণে যে কেউ হয়তো এখান থেকে স্বাধীন ব্যবসার উৎসাহ পাবে, ব্যবসা করার আগ্রহ জন্মাবে বা আমার করা ভুল ত্রুটিগুলো সে শুধরে নিতে পারবে।
এবার আমি যে অভিজ্ঞতাটা সবার সাথে ভাগ করে নেব তা হল মানুষের মিষ্টি কথায় ঢুকে যাওয়া। আগের দিন বলেছিলাম যে আমি শুরুতে কেনাকাটা করতাম না। কিন্তু পরবর্তীতে আমার পার্টনার আমাকে ঠকাচ্ছে বুঝতে পেরে কেনাকাটার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নি। তা আমি যখন প্রথম প্রথম পাইকারি মার্কেটে যেতাম সেখানে মার্কেটের একদম শুরুতে একটা দোকানদার বসত। স্বাভাবিকভাবেই আমি প্রথমে গিয়ে তার কাছেই দাম জিজ্ঞেস করতাম। ভদ্রলোক ব্যবহারে ছিল অমায়িক। আমি মিথ্যে বলব না, এ কথা স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে এত ভালো ব্যবহার কোন অপরিচিত লোকের থেকে আশা করা যায়না।
ওনার আত্মার ব্যবহারে আমি সম্পূর্ণ বিমোহিত হয়ে যাই এবং তার থেকে কেনাকাটা শুরু করি। যদিও আমি খেয়াল করেছিলাম যে সেই মার্কেটে বেশি ভিড় হয় অন্য একটা দোকানে এবং আমি যেখান থেকে কেনাকাটা করছি সেখানে তেমন ভিড় হয় না বললেই চলে। এমন কেন এমন হয় তা আমি শুরুতে বুঝিনি। এখন প্রথম কয়েকদিন কেনাকাটা করার পর হঠাৎ করেই খারাপ জিনিসপত্র আসা শুরু করলো। খারাপ জিনিষপত্র মনে লো কোয়ালিটির জিনিস আরকি। যেহেতু একেবারে খুব ভালো থেকে একেবারে খুব খারাপে আসেনি, ধীরে ধীরে কোয়ালিটি নেমেছিল তাই শুরুতে আমিও অতটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু কিছুদিন পর স্পষ্ট বুঝে গেলাম যে মসলাগুলো এখন আর আগের মত কোয়ালিটির আসছে না। দোকানদারকে সে কথা জানাতেই দোকানদার একেবারে না করে দিল যে মসলার কোয়ালিটি একই আছে। আমি নাকি বুঝতে ভুল করেছি। আমি যখন তার কাছে কিছু মসলা ফেরত দেয়ার কথা বললাম সে একেবারেই গুরুত্ব দিলো না। এদিকে খারাপ মসলা আমার গোডাউনে জমে থাকায় আমার বিশাল আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এখন যেহেতু সে মানতে রাজি ছিল না যে মসলার কোয়ালিটি খারাপ তাই আমি ঠিক করি এবার থেকে অন্য কোন দোকান থেকে মসলা কিনতে হবে।
এই একটা লো কোয়ালিটির জিনিস।
আমি তখন যাই মার্কেটের সেই সব থেকে বেশি ভিড় হওয়া দোকানটাতে। লোকটা আমায় শুরুতেই জিজ্ঞেস করল এতদিন আমি যে দোকানে যেতাম সেই দোকান ছেড়ে অন্য দোকানে কেন এলাম। আমি তাকে সব জানালাম। এবং বললে আপনার বিশ্বাস করবেন না এই নতুন দোকানদার আমার গোডাউনে পড়ে থাকা খারাপ কোয়ালিটির মসলা ভালো কোয়ালিটির মসলা দিয়ে বিনিময় করে নিলেন অর্থাৎ তিনি আমার খারাপ কোয়ালিটির মসলা নিয়ে বদলে আমায় ভালো কোয়ালিটি মসলা দিয়ে দিলেন। আমাকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে দেখে আমি সত্যি অবাক হয়ে গেছিলাম এবং আমি তারপর থেকে শুধু তার দোকান থেকেই সব জিনিসপত্র কিনি। বর্তমানে প্রায় নয় মাস হয়ে গেল আমি তার দোকান থেকেই সব কিনছি। আজ পর্যন্ত উনি আমাকে কোনদিনও ঠকানোর কথা মনে আনেননি।
উল্টে যখনি কোন দ্রব্য আমার দোকানে পড়ে থেকে ড্যাম্প পড়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে তিনি তখনই সেটা ফেরত নিয়েছেন। ওহ! এক্ষেত্রে একটা কথা কিন্তু বলাই হয়নি যে এই দ্বিতীয় দোকানটা অর্থাৎ যে দোকানে বেশি ভিড় হয় সেই দোকানের ব্যবসায়ীর কথাবার্তা মোটেই প্রথম দোকানের মত অমায়িক নয়। এবং বরং রুক্ষই বটে। যেমন ওই যে বললাম, প্রথম দিনেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল এতদিন তো ওখানে যেতে আজ আমার দোকানে কেন এলে! এটা অবশ্যই কোনো অমায়িক ভাষা নয়। তবে এখান থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি যে কারো মুখের কথা সুন্দর হলেই তাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা কিংবা তার মন কেও তার কথার মত সুন্দর ভাবা উচিত নয়। মানুষের মুখের ভাষা আর মানুষের আচরণ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। একটিকে অন্যের সাথে কখনোই মেশানো উচিত নয়। মেশালেই ঠকতে হবে।
সাথে ড্রাইফ্রুটসও আছে অবশ্য
আপনারাও এটা অবশ্যই মনে রাখবেন।
(চলবে)
আমার কথা -
আমি @bull1 পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় থাকি। বয়স ২৮ বছর। ছাত্রজীবনে ইতিহাসে আর অঙ্কে গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করেছি। এখন শিক্ষকতা করি। আর টুকটাক লেখালেখি করার অভ্যাস আছে। |
---|
বাহ্ এই ঘটনা থেকে একটা শিক্ষা পাওয়া গেলো যে আমাদের মিষ্টি কথার জ্বালে মোটেই পড়া উচিত নয়। মিষ্টি কথা বলে বলে প্রথম দোকানদার তোর অনেক বড় ক্ষতি করে দিচ্ছিলো। যাই ই হোক ঈশ্বর সহায়। আর কিছু লোক কথায় রুক্ষ হলেও মনের দিক থেকে নরম হয়।
হ্যাঁ মুখে মধু আর মনে ছুড়ি। এমন অনেক লোক আছে।
আসলে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের কথা এত মিষ্টি মধুর আসলেই তাদেরকে চেনা মুশকিল। তেমনি লোকের কথার জালে আপনিও ফেঁসে গেলেন। এমনকি লোকটি খারাপ জিনিসপত্রগুলো পরিবর্তন করতেও চাইলো না। কিন্তু দেখুন অন্য দোকানদার তার জিনিসপত্র নয়, কিন্তু সে আপনাকে জিনিসপত্রগুলো পরিবর্তন করে দিয়েছে। আসলে বর্তমানে মানুষ চেনা খুবই কঠিন। মানুষের মুখের কথা কিংবা দেখে এখন কিছুই বোঝা যায় না। যখন মানুষের সাথে একটু একটু করে সময় কাটালেই বোঝা যায় সে মানুষটা কি রকম। আপনার ক্ষেত্রেও বোঝা গেছে । তবে পরবর্তীতে আপনার জিনিসপত্রগুলো ভালো কোয়ালিটির এমনকি আপনার ব্যবসা ভালো হয়েছে, এটা খুবই ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ। সেটাই। মানুষের মুখের কথা শুনে তার মনের খবর পাওয়া অসম্ভব।