পর্ব -২ | আমার ড্রাইফ্রুটস সফর ( 10% @shy-fox এবং 5% @abb-school এর জন্য বরাদ্দ )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

তো আগের পর্বে যেখানে ছিলাম। ড্রাই ফ্রুটসের দাম মিটিয়ে‚ ঘড়িতে দেখলাম যে ট্রেনের মাত্র ১৫ মিনিট বাকি। এখন আমাকে টিকিট কাটতে হবে‚ তারপর আমাকে ট্রেন ধরতে হবে। টিকিটে আবার লম্বা লাইন। অতএব আর সময় নষ্ট না করে ব্যাগ টাকে জাপটে ধরে দিলাম লম্বা দৌড়। পথে দুবার জলের মধ্যে পা পড়ল‚ একবার কার যেন একটা পায়ে পাড়া লাগলো আর একবার আমার পায়ে একজন পাড়া দিয়ে দিল। এইভাবেই কয়েক মিনিটের মধ্যে গিয়ে পৌঁছালাম শিয়ালদা স্টেশনে। ওই যেখানে বড় করে শিয়ালদহ সাউথ লেখা আছে‚ সেখানে।

98d06e20-b615-45be-bd0a-2f658f5d6f86.jpg
শিয়ালদহ সাউথে ঢোকার পথ

ঢুকে দাঁড়ালাম টিকিট কাটার লাইনে। যথাক্রমে লম্বা লাইন। হওয়ারই কথা। সেই লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটলাম। সেখানে কিছুটা সময় গেল। হাতে দেখলাম আছে আর মিনিট ৪ মত। যাওয়ার সময় দেখলাম যে কয়েকটা চেকার বসে বসে আড্ডা মারছে। ওদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটু ধীরগতি হয়ে গেলাম‚ ভাবলাম যে টিকিট দেখতে চাইবে হয়তো। কিন্তু চাইলো না। ওদের বোধহয় কমিশন টমিশন লাগে না। এই যে এত বড় প্ল্যাটফর্ম‚ এত লোক যাতায়াত করছে, নিশ্চয়ই অনেকে টিকিট কাটেনি। ওরা চাইলে এমন প্রচুর ধরতেই পারে। কিন্তু ওদের বোধহয় তেমন টাকা পয়সা লাগে না।

0fe6a9dc-4ad8-4b79-ace7-0c1b10c12e05.jpg
ব্যস্ত শিয়ালদহ স্টেশন

যাইহোক‚ এইসব ছোটোখাটো ঝামেলা এড়িয়ে আমি চলে গেলাম শিয়ালদা দক্ষিণে। সেখানে গিয়ে দেখলাম লক্ষীকান্তপুর লোকাল দাঁড়িয়ে আছে, ছাড়বে হয়তো আর ১ মিনিটের মধ্যেই। সব লোক উঠে পড়েছে। আমিও তাড়াতাড়ি করে গিয়ে ভেন্ডারের পরের বগিটায় উঠে পড়লাম। প্রথম দিকের গুলোতে খুব ভীড় ছিলো কিনা। তা সেখানে যাওয়ার সময় আরেক সমস্যা। যেখানে শিয়ালদহ দক্ষিন শুরু হচ্ছে তার ঠিক আগে একগাদা লোকজন রীতিমতো বিছানাপত্র বানিয়ে বসে আছে। ওদের জমিদারি ওটা যেন। কাউকে ওরা এখান থেকে যেতে দেবে না। সবাই ওর ভেতর দিয়েই সাবধানে সামনে যাচ্ছে। আমাকেও তাই করতে হল। খুব সাবধানে পা ফেলে‚ কারো গায়ে পা লাগলে তো আবার ঝামেলা শুরু করে দেবে‚ উঠে পড়লাম লক্ষীকান্তপুর লোকালে। স্বাভাবিকভাবেই সিট পেলাম না। আমি ঢুকেছি ট্রেন ছাড়ার ঠিক মিনিট এক আগে। তখন গিয়ে আর যাই হোক বসার সিট পাওয়া যায় না। তাই দাঁড়িয়েই থাকলাম। ঠিক দুটো স্টেশন পরেই বালিগঞ্জ! যেখানে গিয়ে আমি আমার ব্যাগে থাকার ড্রাইফ্রুটস গুলো দিয়ে আসব।

ওদিকে ট্রেনে উঠে আরেক কীর্তি হয়েছে! একজন লোক সদ্য বিদেশ থেকে ঘুরতে এসেছে। সে জানে না যে ভারতের ট্রেনের তিনজনের সিটে চারজন বসে। আসলে এটাই এখনকার নিয়ম। সিটগুলো একটু চওড়া করে বানানো হয় যাতে চারজন চেপেচুপে সেটে যেতে পারে। তা সেই লোক তো এসব কিছুই জানে না। সে কিছুতেই সিট ছাড়বে না। এটা তার সিট। সে টিকিট কেটেই উঠেছে। কেন সে সিট শেয়ার করবে? এদিকে লোকেরাও তার কথা মানতে নারাজ। তারা যত বলে এটা চারজনেরই সিট‚ সবসময়ই চারজন বসে‚ সে লোক কিছুতেই মানবে না। সে এক হৈহৈরৈরৈ কান্ড যাকে বলে আরকি। অবশেষে কিছুতেই তাকে বোঝাতে না পেরে লোকজন একজনকে চার নাম্বারে বসিয়ে দিয়ে বলে বসেন আপনি। দেখি আপনাকে কিভাবে ওঠায়। শেষে বিদেশের ভদ্রলোক আর কোনো উপায় না দেখে চুপচাপ গুটিসুটি মেরে বসে থাকল। ভদ্রলোকের জন্য খারাপই লাগছিল। যুক্তি ওনার ভুল না। ঠিকই তো‚ তিনজনের সিটে চারজন কেন বসবে? বিশেষত তারা যখন টিকিট কেটেই উঠেছে। আবার একইসাথে এটাই সত্যি যে সব সময় কাগজে-কলমে নিয়ম দেখে সবকিছু চলে না‚ প্রচলিত নিয়ম কানুন আর মানুষের সুবিধা অসুবিধাও মেনে চলতে হয়। যাই হোক‚ এসব করতে করতে চলে আসলো বালিগঞ্জ স্টেশন।

5c09dd81-1a52-483f-8b68-5b9fa27fd474.jpg
অবশেষে বালিগঞ্জে পৌঁছালাম

আমাকে সেখানেই নামতে হবে। আমার আত্মীয়ের বাড়ি হলো একডালিয়া ক্লাবের পাশেই। ওটাই ল্যান্ডমার্ক। আমি এর আগে কখনো সেদিকে যাইনি। রাস্তা চিনিনা। তাই লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেই যেতে হবে। সেটাই একমাত্র ভরসা। তা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম যে একডালিয়া ক্লাবটা কোন দিকে? ভদ্রলোক আকাশের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতেই থাকল। উকুন আছে বোধহয়। আর একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ঠিকানাটা কোথায়‚ সে বেশ কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে উত্তর দিল যে আমি এখানে থাকি না‚ ঘুরতে এসেছি। ওর বোধহয় এতক্ষণ মনে পড়েনি যে ও এখানে থাকে না। তো এইভাবে কিছুক্ষণ সময় বেকার নষ্ট করে শেষে একজনকে পেলাম যে ঠিকানাটা আসলেই বলতে পারল। ওখান থেকে বেশি দূর না। এই এক কিলোমিটার মত। লোকটা তো বলেছিল অটো বা টোটো নিয়ে নিতে। কিন্তু যেহেতু প্রথম দিন কোনো নতুন জায়গায় গেছি‚ আমি তাই আশেপাশের সবকিছু দেখতে দেখতে এগোতে লাগলাম। আশেপাশে বাজার ছিল‚ রাস্তায় বড় বড় গাড়ি ছিল তো‚ রাস্তায় ঘোরা ষাঁড় ছিলো‚ ফুটপাতের দোকান ছিলো আর এইসব পার করে আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসলাম আমাদের নির্ধারিত ঠিকানায়।

b6b693ec-fc3b-4ef0-9d30-17d7fac4d620.jpg
বালিগঞ্জের আবর্জনা সাময়িকভাবে জমা করার ঘর।

রাস্তা একেবারে সহজ ছিলো। একবার মাত্র রাস্তা পার হতে হবে। আর বাকিটুকু একেবারে সিধা নাক বরাবর। আর এই রাস্তা পার হওয়ার সময়ই আবার একজন এসে ধাক্কা লাগাল। আরেকটু হলেই গিয়ে পড়ছিলাম চলন্ত গাড়ির সামনে। কোন রকমেই বলতে গেলে বেঁচে গেলাম এই যাত্রায়। ভাবলাম ধাক্কা দেওয়া লোকটা সরি অন্তত বলবে। দেখলাম ও সেসবের ধান না ধরে হনন করে নিজের রাস্তা দিয়ে চলে গেল। বুঝলাম যে আমাকে ধাক্কা মেরে ও একদমই সরি হয়নি।

d6063421-b7a0-4d16-9c70-79089373813f.jpg
ব্রিজের উপর থেকে বালিগঞ্জের রাস্তা। এখানেই আরেকটু হলে উপরে চলে যাচ্ছিলাম।

তো মোটামুটি এই ছিলো আমার ড্রাইফ্রুটস সফর। খারাপ ভালো মিলিয়ে ভালোই কাটল দিনটা। খুব শিগগিরই ফিরে আসছি পরের আর্টিকেল নিয়ে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59605.49
ETH 2607.69
USDT 1.00
SBD 2.42