পর্ব -১ | অন্ধকারের গল্প ( 10% @shy-fox এবং 5% @abb-school এর জন্য বরাদ্দ )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

প্রতিটা মানুষের একটা করে গল্প থাকে। প্রত্যেকটা মানুষই কোনো কোনো বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে নিজের ঘাড়ে করে। সবারই একটা করে অন্ধকার জগৎ থাকে‚ যা সে কাউকেই দেখাতে চায় না। প্রত্যেকটা ভালো মানুষই কারও না কারও গল্পের খলনায়ক। প্রতিটি দুর্ভাগা মানুষই কোনো না কোনো পাপের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে!

girl-2786277__340.jpg
Image Source

আমরা সেগুলো দেখতে পাইনা। কোনো সময় দেখতে পেলেও মানতে চাই না যে এই মানুষটাও কোনো একদিন অন্যরকম ছিলো। আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্টের হয় যে এই মানুষটাও কারও জীবনে দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছিল।

istockphoto-862656980-170667a.jpg
Image Source

আমার মামাবাড়ির পাড়ায় এক বৃদ্ধা ছিলেন। থুত্থুড়ে বুড়ি যাকে বলে। কুজো হয়ে হাঁটতেন। দাঁত ছিলো না একটাও। চামড়া কুঁচকে এতগুলো ভাজ পড়েছিল যে মানুষের চামড়া বলে সন্দেহ করাও মুশকিল। সেই ঠাকুমা থাকত একটা ভাঙ্গা কুড়ে ঘরে। প্রতিদিন সকালে পাত্র নিয়ে ধর্না দিত নিজের বিধবা পুত্রবধূর দরজায়। প্রতিদিনই প্রায় আধঘন্টা - একঘন্টা ধরে ডাকাডাকির পর অবশেষে দয়া হত সেই পুত্রবধুর। দরজা খুলে একদিন চলার মত সামান্য চাল - তেল - নুন - কাঁচা সবজি দিয়ে বিদায় করত শাশুড়িকে। সেই সামান্য রসদ নিয়েই কাঠের উনুনে রান্না করে সারাদিনের পেট ভরানোর যোগার করত সেই বৃদ্ধা।

পাড়ার সবাই সবকিছুই দেখত। মানুষ আড়ালে শাপশাপান্ত করত সেই পুত্রবধুকে। পাড়ার মহিলামহলে আড্ডার অন্যতম হটটপিক ছিলো সেই পুত্রবধুর নিন্দা করা। যদিও সামনাসামনি কেউই কিছু বলার সাহস পেতনা তাকে। কারণ ভদ্রমহিলার ছেলে ছিলো বড় পুলিশ অফিসার। এখন‚ পুলিশ অফিসারের মাকে রাগানোর দুঃসাহস কারই বা আছে? শুধু এক অসীমসাহসী অকৃতদার ব্রাহ্মন বৃদ্ধাকে প্রতিদিন কিছুটা করে দুধ দিয়ে যেত পাড়ার মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার সময়।

istockphoto-1416950165-170667a.jpg
Image Source

তবে আসল ঘটনা জানত এলাকার পুরোনো লোকেরা। যারা কম করেও ৩০ বছর ধরে এলাকায় বাস করেছে‚ তারা। যদি সদ্য নির্মিত গ্রাম হওয়াতে তেমন মানুষের সংখ্যা আসলেই কম ছিলো। কিন্তু যে কজন ছিলো তারা জানত যে এই বৃদ্ধাও এক সময় ঠিক একইরকম আচরণ করেছিল নিজের পুত্রবধুর সাথে। (আমি এটা জেনেছি আমার মার থেকে।) এখনকার পৌঢ়া পুত্রবধূটি তখন সদ্য যুবতী। কিছুদিন প্রেমের পর তাকে বিয়ে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল তার স্বপ্নের রাজকুমার‚ তার প্রেমিক পুরুষটি। ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখেমুখে একরাশ স্বপ্ন তখন সদ্য যুবতীটির। যুবতীও কি বলা যায়? না বোধহয়‚ কিশোরী বলাই উচিত। তখনকার দিনে থোড়াই কেউ অত বয়স দেখে বিয়ে করত। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে এসে স্বপ্নভঙ্গ হতে সময় লাগল না তার। প্রথম দেখাতেই শাশুড়ি জানিয়ে দিল কোনো কালো মেয়ে তার বংশের পুত্রবধূ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। অন্য কোনো বিষয়ে কোনোরকম আপত্তি ছিলো না তার‚ মেয়ের বয়স‚ মেয়ের জাত‚ মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা মেয়ের বাড়ির অবস্থা - কিছুই না‚ সম্ভবত সেসব কিছুই জানতে চায়নি সে। শুধু দেখেছিল মেয়ের গায়ের রং‚ আর তাতেই জেগেছিল তার ভয়ানক আপত্তি। চুলের রং ছাড়া কালো রংকে আর কোথায়ই বা মানুষ ভালোচোখে দেখেছে কোনোদিন?

abstract-5083623__340.jpg
Image Source

প্রথমেই নিদান আসল মেয়েটাকে বাবার বাড়িতে ফেরত দিয়ে আসতে হবে। কারণ মেয়ের রং কালো। কালো মেয়ে তাদের ফর্সা বংশে অচল। অনেক কাকুতিমিনতির পর ছেলে অবশেষে রাজি করাল স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখতে পারার‚ কিন্তু নিঃশর্তভাবে নয়। শর্ত ছিলো। ছেলের বউ কোনোদিন বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। তাকে থাকতে হবে বাড়ির উঠোনে তৈরী আতুড়ঘরে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য‚ যারা জানেন না তাদের জন্য বলি‚ আগেকার দিনে‚ এমনকি এখনো বহু জায়গায় বাচ্চা জন্মানোর পর মা আর বাচ্চাকে আলাদা ঘরে রাখা হয়। সেটাই আঁতুড়ঘর।

তা সেই আঁতুড়ঘরেই থাকার জায়গা হল মেয়েটার। সেখানেই মেয়েটার জন্য খাবার আসত ঘর থেকে। সেই ধুধু ধানক্ষেতের মাঝে বাড়ির মধ্যে‚ রাতে তাকে একাই থাকতে হত। এইভাবে বেশ কিছুদিন তাকে বাইরের ঘরে ফেলে রাখার পর অবশেষে মূল বাড়িতে ঢোকার সৌভাগ্যটুকু হয় তার। যদিও তাতে পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি তেমন। বাড়িতে তাকে থাকতে হত দাসীবাদীর মতোই। আর সে তেমন ভাবেই ছিলো বছরের পর বছর‚ যতদিন না তার স্বামী মারা গিয়ে তার ছেলে সংসারের হাল ধরেছে‚ ততদিন। তার বীরপুঙ্গব স্বামীর বিয়ে করার শখ থাকলেও মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের বউকে রক্ষা করার ক্ষমতা হয়নি কোনোদিনও। কালো মেয়ে কিনা! সেও হয়তো আফসোস করেছে "ভুল" করে এমন বিয়ে করে ফেলায়।

istockphoto-1298941827-170667a.jpg
Image Source

আর তারপর যখন সেই পুত্রবধূটাই সংসারের ক্ষমতা হাতে পেল‚ প্রথমেই সে শাশুড়িকে বের করে দিল সেই আঁতুড় ঘরে। সেখানেই তাকে ফেলে রাখল যতদিন না সে মারা যায়। আর কিভাবে রাখল তাতো আগেই আপনাদের বলেছি!

না আমি বউটাকে সমর্থন করে কিছু লিখতে বসিনি। আমার তেমন কোনো দায় বা ইচ্ছা কিছুই নেই। আমি শুধুমাত্র আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখা এইসমস্ত অমানবিক ঘটনার মূলে থাকা অমানবিক ঘটনাগুলো নিয়ে একটা সিরিজ বানাতে চাচ্ছি! ঐযে বলেনা যে প্রতিটি খলনায়কেরই খলনায়ক হওয়ার পেছনে কোনো গল্প থাকে। সেই গল্পগুলোই তুলে আনতে চাই আমি। আজ একটা দিলাম। অন্য ঘটনাগুলো একে একে বলছি অন্য পর্বে।
চলবে…

Sort:  
 2 years ago 

সে তার কর্মের ফল পাচ্ছে এটা ঠিক।কিন্তু ককুর মানুষ কে কামড়ালেও মানুষের উচিত নয় কুকুর কে কামড় দেওয়া।গল্পটি অনেক সুন্দর হচ্ছে।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

 2 years ago 

পরের পর্ব দিয়েছি একটু আগে। তবে এগুলো কিন্তু গল্প নয়। এই সিরিজে সব সত্যি ঘটনাই থাকবে।

 2 years ago 

আমাদের সমাজকে অনেক বদলাতে হবে। অনেকে এগোনো প্রয়োজন। খুব সুন্দর লিখছেন। পরবর্তী পোস্ট এর অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

এক্ষুনি দিলাম পরের পর্ব। হ্যাঁ‚ এখনো বহু কালিমা রয়ে গেছে আমাদের মধ্যে।

 2 years ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আশা করি দুর্দান্ত হয়েছে। মানুষের কর্মের উপর তার ফলাফল নির্ভর করে। এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

সেটাই। সবাইকেই তার কর্মফল ভোগ করতে হয়। কাউকে তাড়াতাড়ি আর কাউকে দেরী করে।

 2 years ago 

রক্ত গরম থাকলে মানুষ কর্মফলের কথা ভাবে না, কিন্তু ঠাকুর তো আছেন। তিনি সবই দেখছেন, কর্মফল পেতে হবেই। আর এজীবনেই পেতে হবে।

 2 years ago 

ঈশ্বরের ঘর। দেরী হতে পারে কিন্তু অন্ধকার না।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59446.26
ETH 2613.63
USDT 1.00
SBD 2.41