পর্ব -১| ব্যতিক্রমী পুজো by @bull1 (10% @shy-fox এবং 5% @abb-school এর জন্য বরাদ্দ )
কেমন আছেন সবাই? সবার পুজো ঠিকমতো কাটছে তো? ঘোরাফেরা - খাওয়াদাওয়া - আনন্দকরা? যদিও হ্যাঁ‚ এদিকে মানে পশ্চিমবঙ্গের দিকে একটু বৃষ্টিবাদলা হচ্ছে ঠিকই‚ কিন্তু পুজোর আনন্দ কি তাতে মাটি হতে পারে? কোনোদিনও না।
কিন্তু আজ আমি পুজোর আনন্দ নয়‚ বরং কথা বলতে এসেছি যাদের এই পুজোতে কোনোরকমের কোনো আনন্দ নেই তাদের বিষয়ে। হ্যাঁ আমার এই কনটেন্ট তেমন ব্যতিক্রমী পুজো নিয়েই।
আমাদের পাড়াতেই আছে এক পরিবার। পুজোর ঠিক আগে পঞ্চমীর দিন মৃত্যু যাদের স্পর্শ করেছে। সেই পরিবারের গৃহকর্তা মারা গেলেন ওইদিন। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু। বয়স হয়েছিল ৬২-৬৩ বছরের মতো। বেশ কয়েকদিন ভুগছিলেনও বিভিন্ন রোগে। কিন্তু এইভাবে হার্ট অ্যাটাকে যে হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ করে চলে যেতে হবে‚ সেটা কেউই ভাবেইনি। আমার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ওই পরিবারের। শ্মশানেও গেলাম মৃতদেহের সাথে। এই একটু আগেও ঘুরে আসলাম ওই বাড়ি থেকে। এক অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা ঘিরে আছে বাড়িটাতে।
ওই পরিবারের এই বছর কোনো পুজো নেই। পুজোর সব দিনগুলোই কেটে যাবে অশৌচ করে আর হবিষ্যি খেয়ে। অন্য বাচ্চারা যখন সবাই মিলে খেলবে - ঘুরবে ওদের বাড়ির বাচ্চারা চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে দেখবে। অন্য বাড়ির বউরা প্যান্ডেলে ঢুকে পুজোতে সাহায্য করবে‚ দশমীর রাতে সিঁদুর খেলবে কিন্তু ওদের বাড়ির বৌরা সিঁদুর খেলবে না। পুরো পুজোটাই ওদের নিরানন্দে কাটবে।
একটু আগে একজন বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। আমাদের সাথে কলেজে একসাথে পড়ত মেয়েটা। ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে আগের বছর। বিয়ের আগেও অনেক বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো ওদের‚ সেই কলেজের সময় থেকেই ওদের আমরা একসাথে দেখছি। মানে বিগত বহু বছরের মধ্যে এটাই হল ওর প্রথমবারের জন্যে একা একা পুজো কাটানো। ওকে মেসেজে জিজ্ঞেস করলাম যে‚
কি করছিস?
উত্তর দিল‚
কাউকে মিস।
শুনলাম কাল রাতে একবার বাইরে বেরিয়েছিল। আধঘণ্টা মতো বাইরে ঘুরে ফিরে এসেছে প্রচন্ড একা লাগছে বলে। চারিদিকে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো কাপলদের দেখে ওর বারবার পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। খারাপ লাগছিল। তাই বাড়ি ফিরে এসেছে। আজ থেকে নাকি আর বেরোবেই না। বাড়িতে বসে বসে মন খারাপ করছে আর ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।
এও তো একরকমের ব্যতিক্রমী পুজো। নাকি?
আমি একটা ছেলেকে চিনি। পড়াশোনাতে ব্রিলিয়ান্ট ছিলো ছেলেটা। স্কুলে কোনো পরীক্ষাতেই হোকে ১ থেকে ৫ এর বাইরে র্যাঙ্ক করতে দেখিনি। গ্র্যাজুয়েশন করে‚ মাস্টার্স কমপ্লিট করে সরকারি চাকরির জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ভেবেছিল চাকরি পেয়ে জীবনে সুস্থিত হবে। বেশ কয়েকটা পরীক্ষা দিয়েছিল। একটা সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশও করেছিল। কিন্তু দুর্ণীতির জন্য সেই চাকরি আর ওর পাওয়া হয়নি। শুধু ওর না‚ এমন বহু মানুষেরই আর সেই চাকরি পাওয়া হয়নি। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই ওরা আন্দোলন করছে। আশেপাশের সবাই যখন পুজোয় আনন্দ করবে‚ ঘুরতে যাবে‚ পরিবারের সাথে সময় কাটাবে‚ তখন ওর পুজো কাটবে রাস্তার মাঝে শূন্য পকেটে‚ আন্দোলন করে। পুজোতে যে ওরা বাড়িতে ফিরবে‚ সেই ভরসাও পাচ্ছে না। একবার বিরতি দিলেই যদি আন্দোলন ভেঙ্গে যায়। তখন কি হবে?
কি অদ্ভুত পুজো কাটাচ্ছে ওই ছেলেটা আর ওর সঙ্গীসাথীরা। খুশি নেই - আনন্দ নেই - টাকাপয়সা নেই - পরিবার নেই - প্রেমিক প্রেমিক নেই - ভবিষ্যৎ নেই‚ কিছুই নেই। খাঁ খাঁ শূন্যতা ভরা এক পুজো ওরা কাটাচ্ছে।
আমার দেখা সবথেকে বড় ব্যতিক্রমী পুজো এটা।
( চলবে)
আসলেই দাদা। আমার জামাইবাবু কিছুদিন আগে মারা গেছেন।ভাগিনা আমার সমবয়সী।আমার সাথে পুজোর কত প্ল্যান করল।আর এখন তাকে বাবা হারানোর শোক সইতে হচ্ছে।খুবই খারাপ লাগে এগুলো ভাবলে।যে আমরা আনন্দ করব আর ওরা সেটা দেখে আরো বেশি কষ্ট পাবে।ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি সবাই যেন সুখী হয়।কারো পুজা যাতে এমন ভাবে না কাটে।
হ্যাঁ সত্যিই। এই দিনের জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকে সবাই। খুব খারাপ লাগছে।