আমার "মা" পর্ব-১ shy-fox 10%

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো

আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার, আদাব। আশাকরি আপনারা সকলেই অনেক ভালো আছেন? ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।

দেখতে দেখতে পুজো চলেই এলো কিন্তু মনে কোন আনন্দ নেই, আগে পুজো মানেই ছিল আনন্দ পুজো মানেই উত্তেজনা কিন্তু এবছর পুজো মানেই কিছু খারাপ স্মৃতি নিয়ে দিন পার করা। গতবছর এই দিন গুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। তার কিছু মুহুর্ত শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
IMG_20220930_091425.jpg

আমার মায়ের নাম অর্চনা রানী বকসী, তার জন্মস্থান কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট নামক উপজেলায়। তিনি বেশ নামকরা বাড়ির মেয়ে ছিলেন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে আমার মা ছিলেন চতুর্থ সন্তান খুব অল্প বয়সে গাইবান্ধা জেলার কোন এক স্থানের বকসী বাড়ি নামক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বড় সন্তানের সাথে তার বিয়ে হয়, ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর মাসে।

আমার মা ছিলেন খুবই সহজসরল একটজন মানুষ সে কোনদিন নিজের কথা ভাবতো না সবসময় অন্যের ভালো চিন্তা করাই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান কাজ। আমি বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখেছি তার দিন শুরু হতো রান্না ঘর দিয়ে আর শেষও হতো সেই রান্না ঘর দিয়ে। ভালো ভালো রান্না করা এবং অন্য কে খাওয়ানো এটাই হলো তাঁর জীবনের লক্ষ্য।

খুব ছোটবেলায় তার বিয়ে হয়, আমার বাবার ঠাকুমার আবদারে আমার বাবাকে বিয়ে দেওয়া হয় তার মৃত্যুর আগের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য নাতীকে বিয়ে দেওয়া হয়।যখন আমার বাবা বিয়ে করে তখন সে একজন ছাত্র ছিল এবং আমার মায়ের বয়স তখন ১৩-১৪ বছর একেবারেই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল আমার মা। বিয়ের পর থেকেই ঐ ছোট্ট বয়সেই এসে আমার বাবার সংসারের হাল ধরেন, বাড়িতে মানুষ দিয়ে গিজগিজ করা অবস্থা,একান্নবর্তী পরিবার, লোকজন বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তখন মা কিভাবে কি করেছে তা আমার জানা নেই তার কারন সে কখনো নিজের জীবনের গল্প গুলো কারো কাছে শেয়ার করতো না, এখন বয়স বুদ্ধি বাড়ায় একটু হলেও বুঝতে পারি।

আমার বাবার বিয়ের পর তার পড়াশোনা শেষ করেন।
বেকার একজন ছাত্র স্বামীর কাছ থেকে একটি মেয়ে কতটুকুই বা সুখ, সাচ্ছন্দ্য পেতে পারে এতটুকু ধারনা কম বেশি সকলেরই জানা কথা। আমার বড়, দাদা, মেজো দাদার জন্মের পর আমার বাবা সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, বেশ ভালো পদে, তখন আমার মায়ের জীবনে একটু হলেও আশার আলো জ্বলে উঠলো,কিন্তু তা আর বাস্তবে রুপান্তর হলো না। আমার বাবার প্রথম পোস্টিং হয় সৈয়দপুর এ চাকরির সুবাদে সেখানে তাকে থাকতে হতো সপ্তাহে একবার করে বাড়িতে আসতো, দু'দিন থেকেই আবার চলে যেতো।

একদিন আমার বাবা তার বাবার কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেয় যে আমার মা কে সে সাথে করে সৈয়দপুর এ নিয়ে গিয়ে ভাড়া বাসায় থাকবে, কিন্তু আমার দাদু সাথে সাথেই সেই প্রস্তাব না করে দেন এবং বলেন যদি আমার মাকে সে সাথে করে নিয়ে যায় তাহলে আর কোনদিন বাড়িতে উঠতে পারবে না এখান সিদ্ধান্ত আমার বাবার উপরে যে সে কি করবে? আমার বাবা কোন কথা না বলে চুপচাপ তার কাজের জায়গায় ফিরে যান একা, আর আমার মা সেই বকসী বাড়ির রাধুনি হয়ে রইল। আমার মায়ের দিন শুরু হতো ভোর চারটে থেকে ঘুম থেকে উঠে স্নান পুজো করে সোজা চলে যেতো রান্না ঘরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাটতো তার আগুনের কড়া আঁচ, ঝাঝালো পরিবেশে সকালে চা পর্ব মিটে যাওয়ার পর কিষাণেে ভাত রান্না করা তাদেরকে খাইয়ে বিদায় দিতো সেই সকাল সকাল তারপর শুরু আমার কাকা পিসিদের স্কুলে যাওয়া তাড়া তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা৷, আমার মায়ের বিয়ের সময় আমার ছোট পিসির বয়স ছিল মাত্র এক থেকে দেড় বছর, তার দেখাশোনা করা এবং অন্য কাকা পিসির দেখভাল করা সবই যেন ছিল তার দায়িত্ব।

সকাল থেকে রাত অবদি কাটে তার রান্না ঘরে কি খায় না খায় সেদিকে নেই কারো কোন নজর এভাবেই কাটে বছরের পর বছর। দিনের পর দিন এভাবে চলতে চলতে একটা সময় আমার বাবা মায়ের সম্পর্কের মধ্যে একটা সময় ভাট্ পড়ে যায় সে তার মতো চাকরি করে সপ্তাহে একবার করে আসে বাজারঘাট যা লাগে করে দিয়ে যায় আবার সে তার স্থানে ফিরে যায় আর আমার মায়ের দিন কাটে রান্না ঘরেই এভাবে চললে তো সম্পর্ক খারাপ হইবে কারন আমার বাবা যখন আসে তখনও কিন্তু আমার মা সারাদিন সে তার রুটিনমাফিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে স্বামী কে সময় দেওয়া মতো কোন সময় তার কাছে থাকে না। পরবর্তী সময়ে যে যে খারাপ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল আমার মা তার জন্য আবার বাবার কোন দোষ ছিল না সবই ছিল আমার মায়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব কাধে নেওয়ার দোষ।

কেউ আবার ভাববেন না যে আমার বাবা অনেক খারাপ কিছু করে বসেছিল, সে কোন খারাপ কাজ করেনি সে অন্য কোন নারীতে আসক্ত হয়নি বা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি এররকম কিছু না, শুধু আমার মায়ের সাথে তার সম্পর্কের দুরত্ব বেড়ে গিয়ে একটু ছন্নছাড়া জীবনযাপন করেছেন এতটুকুই।

দেখতে দেখতে আমার কাকা পিসিদের পড়াশোনা শেষ হয় তারা চাকরি পায় দুই পিসির বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। আমার বড় কাকা বিয়ে করেন।বড় কাকিমা আসার পর আমার মায়ের একটু স্বস্তি ফিরি আসে, সে হাতে হাতে মায়ের সাথে একটু কাজকর্ম করে দেয় এবং দুজন সুখ- দুঃখ ভাগাভাগি করে বেশ ভালোই দিন কাটছিল।কিন্তু সেটা খুব বেশিদিন স্থায়িত্ব হলো না। চলবে.........

আজ এখানেই শেষ করছি আবার পরবর্তী গল্পে বাকি কথা গুলো তুলে ধরবো, সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 2 years ago 

আপনার মা অনেকটা সংগ্রাম করে আপনাদের বড় করেছেন। আপনার মায়ের শ্বাশুরি এমনটা না করলেও পারতো। আপনার বাবা যেখানে পোস্টিং হয়েছিল সেখানে আপনার মাকে নিলে আপনার বাবাও ছন্নছাড়া জীবনযাপন করতো না। যায়হোক, আপনার কাকু নতুন বিয়ে করেছে। সামনে কি হতে চলেছে তা দেখার অপেক্ষায়।

 2 years ago 

আন্টি তো জীবনের সংগ্রাম করে চলছে। আপনার দাদু ইচ্ছা করলে আন্টি কে আপনার বাবা সাথে থাকার অনুমতি দিলে কি হত?মেয়েদের ধর্য্য বেশি। সংসার কে ঠিক রাখার জন্য অনেক সংগ্রাম বাঁচতে হয়।পরর্বতী পর্বে অপেক্ষা রইলাম দিদি।

 2 years ago 

ধন্যবাদ দিদি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য, আমার দাদু অনুমতি দিলে হয়তো-বা আমার জীবন অন্য রকম হতে পারতো কিন্তু তিনি কেন যে দেননি একমাত্র ঈশ্বর জানেন।

 2 years ago 

দিদি একটা কথায় খুব জানতে ইচ্ছে করছে আপনার দাদু কি এখন ও বেচে আছেন?

 2 years ago 

অনেক সংগ্রাম করেছেন আপনার মা।আসলে প্রতিটা মা এর জীবন এভাবে সংগ্রাম করতে করতেই কেটে যায়।আপনি অনেক সুন্দর ভাবে সেই পুরোনো দিনে মায়েদের সংগ্রাম তুলে ধরেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছো প্রতিটি মায়ের জীবন অনেক সংগ্রামের হয় কারো টা প্রকাশ পায় কারোটা পায়না। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

অনেক ভাল লাগলো আপু পড়ে। আর আপনার মাকে ও দেখার সুযোগ হলো। সত্যি কথা বলতে মায়েদের জীবন সংগ্রামেরই হয়। পরের পর্ব থেকে আবার কিছু জানতে পারব। অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। আমার মায়ের সাথে তোলা এটা শেষ ছবি।

 2 years ago 

আপু আগেকার মানুষের জীবনটাই ছিল এমন সংগ্রামী। তারা সবসময় নিজেদের বিলিয়ে দিতে পছন্দ করতো। আপনার দাদা আপনার মাকে আপনার বাবার সাথে যেতে দেয়নি, এটা শুনে খুব খারাপ লাগলো। আপনার বাবার সাথে আপনার মায়ের সম্পর্কের দূরত্ব ।এগুলো সবই কষ্টদায়ক। ধন্যবাদ আপু ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59311.47
ETH 2603.68
USDT 1.00
SBD 2.40