"টিয়া" মনির সাথে অনেক দিন পর দেখা। shy-fox 10%

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

হ্যালো

আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার, আদাব। আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন? ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি,সুস্থ আছি।

আজ অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে গিয়ে বেশ ভালোই লাগলো। আমি নিজের এলাকায় থাকি তবে শহরে ভাড়া বাসায় থাকি,আর গ্রামের বাড়িতে দেবর,ছোট জা থাকে ওরা দুজনেই প্রাইমারি স্কুলের টিচার। ওদের একমাত্র মেয়ের নাম টিয়া মনি। ওর বয়স ১২ বছর চলে। কিছুুদিন আগে ও হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, পায়ে প্রচন্ড ব্যথা হাঁটতেই পারছিল না। প্রথমে রংপুর এ ডাক্তার দেখানো হয় বিভিন্ন রকমের পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে ওর পায়ের জয়েন্টের কাছে একটা টিউমার এর মতো দেখা যাচ্ছে।

তারপর ঢাকায় ওর মামা বঙ্গভবনে বেশ ভালো পোস্টেই চাকরি করে তাই উনি ঢাকাতেই থাকেন, সে সাথে টিয়া মনিকে ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করেন, ঢাকায় ডাক্তার এইকই কথা বলেন আর অপারেশন খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। তারপর সবাই খুব চিন্তায় পড়ে যায় এত অল্প বয়সে এরকম একটা সমস্যার মধ্যে পড়বে।

ওর বাবা-মা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে, সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে বাংলাদেশে কোন অপারেশন করাবে না যদি অপারেশন করাতেই হয় তাহলে ইন্ডিয়া তে নিয়ে গিয়ে করাবে তাই আর দেড়ি না করে টিয়া মনির ও ওর মায়ের পাসপোর্ট করতে দেয়। ওর বাবার আগেই পাসপোর্ট করানো ছিল। পাসপোর্ট ভিসা কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু হয়ে গেলো।

তারপর সমস্যা তৈরি হলো দুজনের ছুটি নিয়ে ইন্ডিয়া তে গেলে অবশ্যই অনেক সময়ের ব্যাপার স্যাপার আছে সরকারি চাকরি করে দু-জনে অনেক কষ্ট করে ছুটি করাতে সক্ষম হয়। তারপর ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়ে। প্রথমে কোলকাতায় গিয়ে এক আত্মীয়র বাসায় উঠে,তারপর দু'দিন থাকার পর চেন্নাই এর উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। চেন্নাই পৌঁছে এ্যাপোলো হসপিটালে ডাক্তার দেখানো হয় এবং কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষার পর ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেয় যে অপারেশন করাতেই হবে, ওরা অপারেশনের প্রস্তুতি নিয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছিল।তারপর ভগবান আশীর্বাদে অপারেশন সাকসেসফুলি হয়।

একটু সুস্থ হলে আবার কোলকাতায় ফিরে আসে সেখানে কয়েকদিন থেকে গত চার তারিখে বাংলাদেশ চলে আসে।
IMG_20220916_221727.jpg

কয়কদিন থেকেই ভাবছি টিয়া মনিকে দেখতে যাওয়া দরকার, আমি একটা বিশেষ কারনে বাসার বাইরে ছিলাম পাঁচদিন তাই আর যাওয়া হয়নি। আজকে কিছুতেই আর মন মানছিল না তাই ছুটে চলে গেলাম ওকে দেখার জন্য। ওর প্রতি আলাদা একটা টান আছে। টিয়া মনি যখন খুব ছোট ছিল ওর মা ওকে বাড়িতে রেখে স্কুলে চলে যেতো ও আমার কাছে দীর্ঘ সময় থাকতো ওকে স্নান করানো খাওয়ানো ঘুম পারানো এসব আমি করতাম। ও আমাকে একদম ছাড়তো না সবসময় আমাকে সাথে সাথে থাকতো। বড় হওয়ার পরও ও আমাকে অনেক ভালোবাসে তাই ওর প্রতি আলাদা রকমের একটা ভালোবাসা কাজ করে। শুধুমাত্র দেবরের মেয়ের মতো ওকে আমি দেখিনা একদম নিজের মেয়ের মতো মনে করি।

বাসা থেকে দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিনটার দিকে বেড়িয়ে পড়লাম। তারপর ফলের দোকানে এসে কিছু ফল ও ও চকলেট খেতে পছন্দ করে সেগুলো কিনলাম।
photoCollageMaker_20220916_230314252.jpg

শহর থেকে আমাদের বাড়িতে যেতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে তাই একটা অটোরিকশা ভাড়া করে রওয়ানা হলাম হলাম। শহর থেকে বের হয়ে গ্রামের রাস্তায় আসলাম, আমাদের এলাকা টা অনেক সুন্দর পাকা রাস্তার দুপাশে একেবারে সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, তাই ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না। অটোরিকশা থেকে যতটুকু দৃশ্য ধারণ করা যায় ততটুকুই চেষ্টা করেছি।

অবশেষে আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত ফুটানি বাজারে পৌঁছালাম।আমাদের বাড়ির কাছেই একটা বাজার আছে তার নাম ফুটানি বাজার প্রথম যেদিন নাম টা শুনেছিলাম খুব হাসি পেয়েছিলো এখন অবশ্য ভালোই লাগে।
বাজারটা ছোট হলেও অনেক উপকারে আসে মোটামুটি সব ধরনের জিনিসপত্র সচারাচর পাওয়া যায় তাই হঠাৎ কোন মেহমান আসলে তাৎক্ষণিক ভাবে সন্মান করার মতো জিনিস পাওয়া যায়।

photoCollageMaker_20220916_230357898.jpg

আমি বাড়িতে গিয়ে দেখি টিয়া মনি হেঁটে বেড়াচ্ছে, তবে খুব সাবধানে পা ফেলছে পায়ে একটা ব্যান্ডেস লাগানো আছে। কিন্তু আমি এটা দেখেই তো অনেক অবাক হয়ে গেছি যে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে এটা সম্ভব। আসলেই ইন্ডিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা এতটাই উন্নত তার প্রমাণ ওকে দেখেই পেলাম। অপারেশন এর পর মাত্র তিনটা ঔষধ খেতে দিয়েছিল তারপর আর কোন ঔষধ নেই,আর আমাদের দেশের ডাক্তার তো ঔষধ লেখার সময় মনে হয় তাদের মনই ভরে না এক পাতা লিখে আবার দ্বিতীয় পাতাতেও লেখার প্রয়োজন পড়ে। এক রোগ হলে এত পরিমাণে ঔষধ দেয় যে ঔষধ খেতে আরও অনেক রোগের সৃষ্টি হয় এই হলো আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
IMG_20220916_163631.jpg

বেশকিছু সময় বাড়িতে থাকলাম টিয়া মনির সাথে অনেক গল্প করলাম আমার ছোট জা এর মধ্যে আমাদের জন্য খাওয়ার আয়োজন করে ফেলেছে চা নাশতা খাওয়ার পর ভাত খাওয়ার জন্য খুব জোরাজোরি করলো কিন্তু আমরা খেতে পারিনি কারন বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়েই বেড়িয়েছি। আমি ইচ্ছে করেই আগে থেকে ওদের কে বলিনি যে আমি বাড়িতে যাচ্ছি, তারন কারন এখন ওরা সবাই টিয়া মনির দেখাশোনা করতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে তাই আমি আর বাড়তি ঝামেলা করতে চাই নি।তবুও অল্ সময়ের মধ্যে বেশ ভালোই আপ্যায়ন করেছে আমার ছোট জা, আমি এতেই অনেক খুশি।
IMG_20220916_230229.jpg

আমার ছোট মেয়ে আর টিয়া মনি মিলে একটা সেলফি তুললো দুবোন মিলে।
IMG_20220916_221727.jpg

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি। এবং আপনারা সবাই টিয়া মনির জন্য আশীর্বাদ,দোয়া করবেন ও যাতে করে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ধন্যবাদ সবাইকে।

Sort:  
 2 years ago 

টিয়া মনি জলদি সুস্থ হয়ে উঠুক এই প্রার্থনা করি।বাজারের নাম টা আসলেই মজার।ওই এলাকার লোকের মনে হয় ফুটানি বেশি ছিল হাহাহা।আসলেই ইন্ডিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা বেশ উন্নত।

 2 years ago 

হ্যাঁ ঠিকই বলেছো, ঐ এলাকার লোকের অনেক ফুটানি তাই বাজারের নাম দিয়েছে ফুটানি বাজার। টিয়া মনির জন্য প্রার্থনা করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

জী আপু আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের থেকে ভারতের চিকিৎসা ব‍্যবস্থা অনেক উন্নত। যাইহোক মেয়েটার অপারেশন শেষ পযর্ন্ত ঠিক ঠাক হয়েছে এটা দেখে ভালো লাগল। আপনার মেয়ে এবং টিয়া মনির সেলফিটা বেশ সুন্দর হয়েছে আপু।।

 2 years ago 

জ্বি ভাইয়া আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে ইন্ডিয়ার চিকিৎসা অনেক বেশি উন্নত, তাই আমার মনে হয় দেশে চিকিৎসা করার চেয়ে ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করানোটাই বেশ বুদ্ধিমানের কাজ।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

মার্কডাউনগুলো একটু ঠিক করে নিতে হবে আপু, দুইটি প্যারাগ্রাফ এর মাঝে <br> কোডটি ব্যবহার করলে মাঝ খানের ফাঁকাটুকু ঠিক থাকবে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।

 2 years ago (edited)

সরি ভাইয়া আপনার কমেন্ট দেখতে একটু দেরি হয়ে গেলো। ভাইয়া আমি br দিয়ে প্যারা করার চেষ্টা করেছি কিন্তু টেক্সট জাস্টিফাই কোড দিলেই আর উপরের অংশটুকু কেন জানি প্যারা হচ্ছিলো না। কোথায় ভুল হচ্ছে আমি বুঝতেই পারছি না। আমি অবশ্য আমার ভুলটা ঠিক করে নিবো ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আমাদের এখান থেকে অনেকেই ভারতের চিকিৎসা হওয়ার জন্য যেয়ে থাকে। তবে জেনে ভালো লাগলো বাচ্চাটি সুস্থ হয়েছে। খুবই ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্ট পড়ে। মানুষের প্রতি মানুষের মহব্বত এভাবে সৃষ্টি হয় আর তার বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার আজকের পোস্টে।

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 67033.58
ETH 3521.90
USDT 1.00
SBD 3.20