স্বপ্ন জয়ের পথে একধাপ এগিয়ে|পর্ব-২|
হ্যালো বন্ধুরা,
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি সুস্থ আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশর গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আশাকরি পোস্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।গত পর্বে আমি স্বপ্ন জয়ের প্রথম পর্ব টি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম তা আপনারা অনেকেই দেখেছেন ও সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেছেন এবং মেয়ের জন্য অনেক শুভকামনা জানিয়েছেন।আজ আমি ২য় পর্ব টি শেয়ার করছি।আর কথা না বাড়িয়ে চলুন তাহলে শুরু করি।
ছোট মেয়ে তার বাবার সাথে ঢাকায় চলে গেলো এবং আমার পিসির মেয়ে আমার ছোট বোনের বাসায় গিয়ে উঠলো।প্রথমে @tithyrani এর বাসায় উঠার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মিপুর-১০ তন্বীর বাসায় উঠতে হয়েছে।তার কারণ হলো মোহাম্মদপুর থেকে বসুন্ধরা কনভেনশন সিটি একটু দূর হয়ে যায় আর সাথে যাওয়ার মতো একজন মানুষ দরকার। তিথীর হাসবেন্ড এর অফিস আছে সে চাইলেও যেতে পারবে না।আর আমার মেয়ের বাবা সবেমাত্র ছুটি কাটিয়ে যোগদান করেছে যে কোনোভাবেই আর ছুটি নিতে পারবে না।তন্বীর হাসবেন্ড এর ছুটির দিনে মেয়ের পরীক্ষা তাই পুলক অনায়াসে আমাদের সাথে যেতে পারবে তাই অনেক কিছু চিন্তা করেই তন্বীর বাসায় উঠতে হয়েছিলো।মেয়ের খুব ইচ্ছে ছিলো তিথী রানী তার মাসিমনির বাসায় যাবে মাসিমনির সাথে থাকবে ঘুরবে কিন্তু সেটা আর হলো না,এর জন্য মাসি ভাগ্নী দুজনেরই মন খারাপ হয়েছিলো,পরে অবশ্য খুশির খবর শুনে দুজনেই সেই কষ্ট ভুলে গেছে।
ওরা যাওয়ার একদিন পর বড় মেয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুরের বাসে রওনা হতে চেয়েছিলাম।যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে কিন্তু কিছু করার নেই তারপরও তো যেতে হবে।কিন্তু আমার বড় মেয়ে আমাকে বললো মা তুমি আমাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে চলে যেতে পারবা আমি পরীক্ষা শেষ করে বাসায় চলে আসবো ওর কথা শুনে আমি একটু চিন্তামুক্ত হলাম।ওর কথামতো আমি সকাল ১১ টার বাসের টিকিট কাটি।পরেরদিন সকালে রান্নাবান্না শেষ করে মেয়েকে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসি তারপর তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে কাউন্টারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।বাসা থেকে কাউন্টার খুব কাছে তাই খুব একটা সময় লাগে না তারপরও একটু আগে এসেছি।বাসায় শাশুড়ীমা আছেন বড় মেয়েসহ তারা বাসায় থাকবেন।
তাড়াহুড়ো করে সকালের খাবার খেতেও পারিনি শাশুড়ীমা বার বার খেতে বললেন কিন্তু সময়ের অভাবে খেতেই পারিনি শুধু এক কাপ চা আর একটা বিস্কুট খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছি।বাস আসলো উঠে পড়লাম আর আমার সিটে বসে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর দেখি একজন পুরুষ মানুষ আমার পাশের সিটে বসছেন!তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কি আপনার সিট?তখন উনি বললেন জ্বি এটা আমার সিট।আমি সাথে সাথে সুপারভাইজার সাহেব কে ডেকে বললাম আমি তো টিকিট কাটার সময় বলেই নিয়েছি যে মহিলা সিট দিবেন তখন তো বলা হয়েছিলো যে দুজনেই মহিলা!সুপারভাইজার সাহেব বললেন আপু যে মহিলা আসার কথা ছিলো তিনি কোনো এক কারণে আসতে পারেননি আর তাই বাস ছাড়ার মুহূর্তে টিকিট টি আমার এনার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হই।
আমি পড়ে গেলাম বিপদে চিনি না জানি না একজন পুরুষ মানুষের সাথে এতোটা পথ কি করে একসাথে বসে যাবো!তখন আমি ওনাকে বললাম আমি এভাবে যেতে পারবো না আমাকে অন্য ব্যবস্থা করে দিন।তখন উনি বললেন কি করি বলেন তো সবাই তো এক পরিবারের লোক কে কাকে ছেড়ে আপনাকে সিট দিবে?তখন আমি আমার পিছনের সিটে বসা একজন মহিলাকে বললাম আপা আপনার পাশের সিটে উনি কি হয় আপনার?তখন উনি বললেন কেউ না আমি তাকে চিনি না।তখন আমি ওনাকে বললাম তাহলে আমি ওখানে গেলে কি আপনার সমস্যা হবে?উনি বললেন মোটেও না বরং ভালো হবে।তারপর সেই ভাইয়াকে বলে আমার সিট ছেড়ে দিয়ে আমি ওনার সিটে বসলাম।আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন কেনো!উনি বললেন যদি না দেয় তাই বলিনি।আমার মনে হয় যেকোনো সমস্যা হলে সাথে খোলাখুলি কথা বলা উচিত তাতে করে হয়তোবা পুরোপুরি না হোক কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সকালে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি শুধু চা খেয়েছি তাই শরীর টার মধ্যে কেমন জানি করছিলো, খুব অস্থির লাগছিলো মনে হচ্ছে বমি হয়ে যেতে পারে।আমি ছোট্ট থেকে আজ পর্যন্ত যতো জার্নি করেছি কখনোই বাসে গাড়িতে বমি হয়নি।কিন্তু সেদিন কেনো জানি মনে হচ্ছে বমি হয়ে যাবে।খুব অস্বস্তি বোধ নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলাম।দেখতে দেখতে ফুড ভিলেজ চলে আসলো।যাত্রা বিরতি ২০ মিনিট। বাস থেকে নেমে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম চোখেমুখে জল দিলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে একটা টেবিলে বসে পড়লাম।বাহিরের খাবার খুব একটা খাই না কিন্তু আজ খেতেই হবে ভেবে সবজি রুটি অর্ডার করলাম সাথে এক কাপ চা।ফুড ভিলেজের দুধ চা আমার খুবই পছন্দের চা তাই এটা কোনোভাবেই মিস করা যাবে না।
যাত্রা বিরতি শেষ আবার বাসে উঠে পড়লাম।সবাই যার যার সিটে বসে পড়লো তারপর বাস চলতে শুরু করলো। এতক্ষণে শরীরের মধ্যে একটু শান্তি লাগতে শুরু করলো।অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকা টেকনিক্যাল আমার গন্তব্যে এসে বাস দাঁড়িয়ে পড়লো।আমি বাস থেকে নেমে ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়ালাম সিএনজি নেওয়ার জন্য। অনেক গুলো সিএনজি আসলো গেলো কিন্তু কেউ মিরপুর যেতে চাইছিলো না। অপেক্ষা করতে লাগলাম তারপর একটা কমবয়সী ছেলে এসে দাঁড়ালো এবং জিজ্ঞেস করলো আপা কোথায় যাবেন?তখন আমি বললাম মিরপুর-১০ এ ও যেতে রাজি হলো এবং ভাড়া নিয়েও খুব একটা বাড়াবাড়ি করলো না।আমার মনে কেমন জানি একটা খটকা লাগলো আসলে কি ছেলেটা ভালো! নাকি আমাকে একা দেখে কোনো খারাপ মতলব আছে ওর? এসব ভাবতে ভাবতে উঠে পড়লাম তার কারণ উপায় নেই যেতেই হবে।
উঠার পর আমার পিসি কল দিলো আমি নেমেছি কি-না বা এখন কতদূর!তারপর পিসি আমর হাসবেন্ড এর কথা জিজ্ঞেস করলো নিতে আসছে কি-না!আমি সেই সুযোগে জোরে জোরে বললাম যে না আসেনি থানায় আছে আজ ডিউটি আছে তো তাই আমাকে নিতে আসেনি।ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আমি পুলিশের বউ 😁যাইহোক খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।দেখলাম ছেলেটা খারাপ না বেশ ভালোভাবেই আমাকে নিয়ে এসেছে এবং বাসা খুঁজে পেতে একটু সমস্যা হচ্ছিলো সেটা সে নিজে থেকেই বের করার চেষ্টা করেছিলো।ভাড়া মিটিয়ে দিলাম ও উঠার সময় ২০ টাকা আবদার করেছিলো আমি ওকে ৩০ টাকা বেশি দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।আসলে আমরা সবসময় যা ভাবি তা ঠিক হবে এমনটা নয় তবে পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে করে কোনো বিপদে পড়তে না হয়।
আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে পরবর্তী পর্বে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।
যেহেতু অনেক দিন আগে থেকেই জানি যে ও আমার বাসায় আসবে পরীক্ষা দিতে, তাই ভীষণ খুশি ছিলাম আমি। অনেক দিন ওদের সাথে সামনা-সামনি দেখা হয় না। ওরা দুই বোন ই আমার খুব আদরের জানোই তো। তবে যখন শুনলাম যে আমার বাসায় ওঠার চেয়ে তন্নীর বাসায় উঠলে বেশ কিছু সুবিধা হবে, তখন বাস্তবসম্মত চিন্তা করেই ভাবছিলাম, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আসছে, সেটায় যেটা ভালো হবে, সেটা করাই ভালো। এখন অপেক্ষায় আছি ঐশীর পরীক্ষা শেষ হওয়ার দিদিভাই।
আপনার আগের পোস্টটি আমার পড়ার হয়নি। আসলে আপু বাচ্চারা মাসিমনির বাড়িতে যাওয়ার আগ্রহই বেশি থাকে। এটা সত্যি আপু কারো সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করা মোটেও উচিত নয়। যাইহোক বেশ ভালো ভাবেই পৌঁছাতে পেরেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
একদম পুরোপুরি সময়টাই ব্যস্ততার মাঝে পার করেছেন মেয়েকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় এসে আবার বাস ধরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া থেকে শুরু করে সারাদিনের যাত্রাটা বেশ কষ্টের মাধ্যমে পার করেছেন। যাই হোক দ্বিতীয় পর্বতো পড়ে ফেললাম এখন তৃতীয় পর্ব পড়ার অপেক্ষা।