স্মৃতির মনিকোঠায় রয়েছো তুমি "মা" shy-fox 10%

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

হ্যালো

আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?গতরাত থেকে আমি একটু অসুস্থ বোধ করছি।

যখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ বোধ করি তখন মায়ের কথা খুব মনে পড়ে।মায়ের কান অবধি যদি একবার পৌঁছায় যে আমি অসুস্থ তখন আর রক্ষা নেই,দিনে হাজার বার ফোন আসবে তার তরফ থেকে।ডাক্তার দেখিয়েছি কি-না ঔষধ কিনেছি কি না সেগুলো ঠিকমতো খাচ্ছি কি-না কতরকম যে প্রশ্ন করতো আর এই ভয়েই কখনো মাকে বলতাম না আমার শরীর খারাপ। যখন একেবারে অসুস্থ হয়ে যেতাম চলাফেরা করার কোনো শক্তি থাকতো না তখন বাধ্য হয়ে মাকে ফোন করতাম আসার জন্য। আমার অসুস্থতার ফোন পেয়ে সারাদিন সারারাত তার চোখে আর ঘুম থাকতো না কখন আসবে এই চিন্তায়।
photoCollageMaker_20230224_214351351.jpg

পরেরদিন সকাল সকাল সকাল হাজির হয়ে যেতো আর ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু করে দিতো কাজকর্ম। একটা মুহুর্তের জন্য বসে থাকতে পারতো না সারাদিন কাজ আর কাজ।সেই রাতের ভোরে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমানোর আগ পর্যন্ত চলতো তার কাজ।কাজ না থাকলে খুঁজে খুঁজে কাজ বের করতো,মাঝে মাঝে আমি খুব রাগ করতাম তুমি কি মানুষ না অন্য কিছু..তখন বলতো কাজ না করলে আমার ভালো লাগে না তাই কাজ করি।

তখন মা একেবারে সুস্থ।মাঝে মা দুই পাশে দুই মাওয়াইমারা।
IMG_20230224_213433.jpg

মা,বড় তাওয়াই মশাই, বড় মাওয়াইমা সহ অসুস্থ হওয়ার পর ঢাকায় যাওয়ার আগের দিন তোলা ছবি।
IMG_20230224_213702.jpg

শুনলাম মা অসুস্থ, ভেবেছিলাম সাধারণ একটা টিউমার হয়েছে অপারেশন করলেই আবারও সুস্থ হয়ে যাবে। সেই আশায় মায়ের সাথে ঢাকায় যাই মনে মনে ভেবেছিলাম সবমিলিয়ে হয়তো পনেরো দিনের মতো সময় লাগবে,সেই প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় যাই। তারপর শুরু হয় পরীক্ষা নিরিক্ষার পালা আগে থেকে সবাই জানতো মায়ের ক্যান্সার হয়েছে আমিই শুধু জানতাম না।যেদিন মাকে ক্যান্সার সেন্টারে পাঠালেন তখন গিয়ে বুঝতে পারলাম মায়ের ক্যান্সার হয়েছে। আমি প্রথম যখন শুনেছিলাম যে, আমার মায়ের অবস্থা গুরুতর, তখন আমি তা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলাম, এটা মেনে নিতে পারছিলাম না যে, আমার প্রিয় মায়ের বাঁচার কোনো আশাই নেই।তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে হাসি রেখে মায়ের সাথে সময় কাটিয়েছি।

অসুস্থ হওয়ার পর একদিন বিকেলবেলায় ছোট মেয়ে মায়ের মাথায় তেল দিয়ে অনেক গুলো বিনুনি করে মজা করে ছবি তুলেছিলো।
IMG_20230224_212831.jpg

মা ক্যান্সার সেন্টারের চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো আর পরে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমাকে এখানে কেনো পাঠিয়েছে আমার কি ক্যান্সার হয়েছে?তখন আমার ভিতর টা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো মাকে কি জবাব দিবো।পরে মাকে বললাম আরে না তোমার একটু ইনফেকশন ধরা পরেছে তাই এখানে ভালো ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছে যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও এই কথা বলার পর আমি ওখান থেকে দূরে গিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করে চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার ভার করে মায়ের কাছে আসি।
মায়ের করুণ অবস্থা, যন্ত্রণাদায়ক থেরাপি নেওয়ার এবং এই ধরনের চিকিৎসাগুলোর পরবর্তী প্রভাবগুলোর কারণে আরও খারাপ হয় ও তা আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি এবং মায়র কষ্ট গুলো একটু হলেও অনুভব করতে পেরেছিলাম কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলো না।

ছোট পিসির সাথে মা আর মায়ের সাথে আমরা সবাই।

IMG_20230224_213406.jpg

IMG_20230224_213424.jpg

অসুস্থ হওয়ার পর মনার জন্মদিনে মা,বড় কাকিমা,আর মনা(ছোট বোন)

IMG_20230224_213820.jpg

আস্তে আস্তে মায়ের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া নিজের চোখে দেখার মতো কষ্ট হয়তো আর কোনো কিছুতেই হতে পারে না।তারপর একদিন সত্যি সত্যি মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন মা আমাদের এমন একটা স্বর্গের ছায়া যেখানে আমরা হাজার দুঃখ কষ্টের মধ্যেও শান্তি খুঁজে পাই, যেদিকেই চোখ যায় না কেনো যতদূর দৃষ্টি যায় না কেনো,সকল কিছুর ঊর্ধ্বে আমার মায়ের মমতা ভালবাসা একটি সন্তানের জন্য এর থেকে বড় পাওয়ার আর কিছু হতে পারে না।

IMG_20230224_213330.jpg

দ্বিতীয় কেমোথেরাপি দেওয়ার দিন মা খুবই অসুস্থ বোধ করে তাই থেরাপি শেষে মাকে ঘুম পাড়িয়ে পাশে থেকে ছবি টি তুলেছিলাম,এটাই মায়ের শেষ তোলা ছবি তখন মায়ের মুখশ্রী কালো বিভৎস রকমের হয়েছিলো যা দেখলেই অনেক ভয় লাগতো মা আমাদের তুলনায় অনেক ফর্সা ছিলো কিন্তু পরে তার এই পরিণতি।
IMG_20230224_213451.jpg

মা তুমি চলে গেছো আর তো আসবেই না তাই তোমার স্মৃতি গুলো এখানে রেখে যেতে চাই যাতে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ তোমার স্মৃতি গুলো স্টিমিটে থেকে যায় আমি থাকি বা না থাকি কিন্তু তোমার স্মৃতি গুলো থেকে যাবে আজীবন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt2ZiuB4UwXiaLrysjtrVMUbAZMrqbsT8opre1BTbbmPnF1NuhTfmhXvmcf2NQCbDFv833qFTc4KQk2SYu8z.png

Sort:  
 last year 

কি কমেন্ট করব বুঝতে পারছি না। চোখের কোনে অজান্তে পানি চলে এসেছে। আসলে আমরা কেউ সারাজীবন বেঁচে থাকব না। আমাদের স্মৃতিগুলো সারা জীবন থাকবে।আপনার মা স্বর্গ বাসি হইক।

 last year 

অনেক অনেক দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য। ধন্যবাদ ভাবি।

 last year 

আসলেই আমি সব শব্দ হারিয়ে ফেলেছি ।
আপনাকে সান্তনা দেওয়ার মত ভাষা আজ আমার নাই। আপনি সবসময় ভালো থাকেন ভগবানের কাছে এটাই চাই।

 last year 

অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।🙏

 last year 

আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে মন্তব্য করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভেতরটা মনে হয় যেন কষ্টে ভরে উঠলো। চোখের সামনে একজন মানুষকে শেষ হয়ে যেতে দেখলে সত্যিই অনেক কষ্ট লাগে। হয়তো সেই মানুষটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার সেই স্মৃতিগুলো এখনো আছে। হয়তো সেই স্মৃতিগুলো যাকে বাঁচিয়ে রাখবে চিরদিন।
😭😭😭

 last year 

জ্বি আপু হাজার চাইলেই আর মা ফিরে পাবো না কিন্তু তারপর স্মৃতি গুলো নিয়ে আজীবন চলতে চাই।মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

 last year 

দিদি-ভাই আসলে আপনার লেখা পড়ে কি লিখবো তা নিজেও জানি না ৷
মা ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু এর ভিতরে কতটা সুখ স্বর্গ আছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় ৷ সারাক্ষণ শুধু সন্তানের জন্য চিন্তা ৷ এটা করিস না ওটা করিস না ৷ কতশত উপদেশ ৷
দিদিভাই খুব কষ্ট লাগলো যখন শুনলাম ক্যান্সার আক্রান্ত ৷ এখন বর্তমান সময়ে ক্যান্সার একটা ভয়াবহ রোগ ৷

তবে দিদি মা হারানোর যন্ত্রণা যে কতটা তা বুঝি ৷ সর্বোপরি আপনার তিনি যেন স্বর্গবাসি হয় ৷ এমনটাই প্রার্থনা কামনা ঈশ্বরের নিকট ৷

 last year 

হ্যাঁ ভাই প্রার্থনা করবেন যাতে মায়ের আত্মা শান্তি পায় এবং স্বর্গের শ্রেষ্ঠতম স্থান পায়।ধন্যবাদ ভাই।

 last year 

আসলে আপু লেখার মতন ভাষা আমার জানা নেই। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা। তবে এটুকু বলবো নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা ওনাকে খুব ভালো রেখেছে। যদি উনি নেয় তবুও আপনার হৃদয়ের মাঝে সারাক্ষণ বিরাজমান উনি। হৃদয়ের প্রতিটি স্মৃতির পাতায় পাতায় ওনার ছবি ভেসে উঠবে। ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।

 last year 

যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন মায়ের স্মৃতি গুলো ভুলতে পারবো না। তাই যেনো হয় ভাইয়া দোয়া করবেন। ধন্যবাদ।

 last year 

যতক্ষণ পোষ্ট টি পড়ছি জাস্ট মনের অজান্তে চলে এসেছে ।ভীষণ খারাপ লাগলো আপনার মায়ের চলে যাওয়ার কথা শুনে ।সত্যি মা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ আপন হয় না ।মা চলে গেলে মনে হয় যেন মাথার উপর থেকে খুব বড় একটা ছায়া হারিয়ে যায়।😔😔😔

 last year 

দুনিয়াটা এমন, যার যখন চলে যাওয়ার সময় আসে সে তখনই চলে যায়। তবে মনকে বুঝ দিতে হবে, প্রকৃতির এই নিয়মকে মেনে নিতে হবে। আর যে সমস্ত আপনজনরা রয়েছে তাদের সাথে সুন্দর সাহায্যপূর্ণ আচরণের মধ্য দিয়ে নিজের বাঁকি জীবনটা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ মানুষে তার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তার পরিচয় ফুটে তুলতে পারে। আপনার আম্মা যেন পরকালে সুখে থাকেন সেই কামনা রইল। সর্বোপরি আশা করি ধৈর্য সহকারে আমাদের সাথে কাজ করবেন আসি আনন্দ মনে।

 last year 

জ্বি ভাইয়া কাজের মাধ্যমে নিজের কষ্ট গুলো কে ভুলে থাকার চেষ্টা করি। আমার বাংলা ব্লগ এ এসেছি জন্যই এখনো ভালো আছি তা না হলে কি যে হতো একমাত্র উপরওয়ালা জানতে জানেন।দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টে আমি কি কমেন্ট করবো দিদি। সত্যি কথা এরকম পোস্ট আগে কখনো পড়া হয়নি। পোস্ট পড়ার পর মোটামুটি বেশ খানিকটা প্রস্তুত হয়ে গেছি আমি। এই পোস্ট যে পড়বে তারই মন খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে মাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে যেতে দেখার থেকে বড় কষ্ট আসলে কিছুই হতে পারে না। তবে আশীর্বাদ করি আপনার মা যেন স্বর্গবাসী হন।

 last year 

হ্যাঁ দাদা চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখা কতটা যে যন্ত্রণার তা বলে বোঝাতে পারবো না। আশীর্বাদ করবেন আমার মায়ের জন্য। ধন্যবাদ দাদা।

অবশ্যই আশীর্বাদ করি দিদি,আপন মা যেনো স্বর্গবাসী হল। 🙂

 last year 

আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার চোখ ছলছল হয়ে গেলো।আমার মাকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা খুব অনুভব করলাম।সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা কি হবে আমি জানি না। তবে বলব মা যেখানে আছে ভাল থাকুক।😥

 last year 

আপু পৃথিবীর সকল মা বেঁচে থাকুক এই প্রার্থনা করি ঈশ্বরের কাছে।দোয়া করবেন।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57483.55
ETH 3066.62
USDT 1.00
SBD 2.29