মানুষের গুরুত্ব।
সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি,সুস্থ আছি।আমি @bristychaki আমার বাংলা ব্লগ এর আমি নিয়মিত একজন ইউজার।প্রতিদিনের মতো আজও আমি একটি নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
মানুষ ছোট থেকে বড় হয় ধীরে ধীরে জ্ঞান বৃদ্ধি হয়, কোনটি গুরুত্বপূর্ণ কোনটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, একজন ব্যক্তি ছোট থেকে বড় হতে হতে শেখে। আর এই শিক্ষা পরিবার, সমাজ, বিদ্যালয়, বড়দের কাছ থেকে ও কর্মক্ষেত্রের মানুষের কাছ থেকে … ইত্যাদি অর্জন করা হয়। তাই গুরুত্ব বিষয়টা অনেক প্রয়োজনীয় জীবনে চলার পথে কোনটি গুরুত্ব দিতে হবে সেটি নিজেকেই জেনে নিতে হবে। জীবনে সব মানুষ যেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়না আবার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন হয় এমন অনেক মানুষ আছে যারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় সেই মানুষ গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
২০২০ সালে আমি ঢাকা ছেড়ে নিজ এলাকায় চলে আসি।এখানে আসার পর বড় মেয়েকে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে ভর্তি করি।আর ছোট মেয়েকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লস থ্রিতে ভর্তি করি।প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিশোরকিশোরী ক্লাব চালু করেন সরকার।কিশোরকিশোরী ক্লাবে প্রতি সপ্তাহে দু'দিন কবিতা আবৃত্তি ও গান শেখানো হয়।যে কয়জন বাচ্চার নাম তালিকাভুক্ত হবে তারা প্রত্যেকেই বিকেলের নাশতার জন্য টাকা দেওয়া হবে।তাতে করে গরিব বাচ্চারা খাবারের আশায় এই ক্লাসে উপস্থিত থাকবে এবং কবিতা গান শিখতে পারবে।এটা বাংলাদেশ সরকারের একটি মহত উদ্যোগ বলে আমি মনে করি।তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা জানাই।🙏
আমি মেয়েকে স্কুলে দিতে গিয়ে এই কিশোরকিশোরী ক্লাবের কথা জানতে পারি।স্কুলের ম্যাম এর সাথে কথা বলে বিস্তারিত ভাবে শুনে নিয়ে দুই মেয়েকে গানের জন্য ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেই।বড় মেয়েকে নেওয়ার কথা ছিলো না তার কারন ও হাইস্কুলে পড়ে কিন্তু আমার অনুরোধে বড় মেয়েকেও ভর্তি করানো হয়।মাস দুয়েক এর মতো প্রতি সপ্তাহে গানের ক্লাস এ যাওয়া হয়।তখন ওরা গানের কিছুই জানে না আর বাসায় হারমনিয়াম না থাকার কারনে গান শিখতে পারছিলো না।তারপরও এভাবেই কাটছিলো দিন।
দুই মাস ক্লাস হওয়ার পর পরেই গোটা বিশ্বে করোনা মহামারী শুরু হয়ে যায়,আর তখন সকল স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়।সেই সাথে কিশোরকিশোরী ক্লাবের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়।
একদিন হঠাৎ মনে পড়লো যে গানের স্যারের সাথে একটু কথা বলে দেখি উনি বাসায় এসে গান শেখাবেন নাকি!স্যারকে ফোন দেওয়ার পর আমার মনের ইচ্ছের কথা জানালাম যে মেয়েদের বাসায় গান শেখাবো আপনি কি সময় দিতে পারবেন স্যার?এই কথা শোনার সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন।স্যার বললেন সপ্তাহে দু'দিন গান শেখানোর জন্য বাসায় আসবেন কিন্তু সমস্যা হলো আমার বাসায় হারমনিয়াম নেই তাহলে কিভাবে শেখাবেন।আমি স্যার কে অনুরোধ করে বললাম যেনো তার হারমনিয়াম টা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন,আমি কিছুদিন পরেই হারমনিয়াম বানিয়ে নিবো।আমার কথা স্যার বিবেচনা করে দেখবেন বলে জানালেন।
এক বৃহস্পতিবার স্যার নিজের হারমনিয়াম নিয়ে আমার বাসায় হাজির হয়ে গেলেন।এভাবেই কিছুদিন স্যারের হারমনিয়াম দিয়েই গান শেখা চলছিলো।পরের মাসে আমি হারমনিয়াম বানিয়ে আনি।স্যার মোটামুটি ভালোভাবেই গান শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো,কিন্তু আমার মেয়ে কোনোভাবেই গান শিখতে চায়না।স্যার ওকে যেভাবে বলে ও তার কিছুই করে না শুধু স্যার যেটুকু সময় থাকে ততটুকু সময় গান শেখে আর বাকি সময় একটুও প্রাকটিস করে না।তাই ও কোনোভাবেই গান তুলতে পারছিলো না ঠিকঠাক মতো।এভাবে চলতে থাকা দেখে আমি ও গানের স্যার দুজনেই বিরক্ত হয়ে যাই।একটা সময় গিয়ে বাধ্য হয়ে স্যার কে বাদ দিতে হলো।সেদিন আমি খুবই কান্না করেছিলাম তার কারন হলো আমি গান খুবই ভালোবাসি তাই চেয়েছি মেয়েরা যেনো গান শিখে ভালো কিছু না হোক আমাকে শোনাতে পারে। অনেক দিন গান বন্ধ রাখলাম একবার ভেবেছিলাম হারমনিয়াম টা বিক্রি করে দিবো।
২০২০ সালের ছবি।
অনেক দিন পর ভাবলাম রাগ করে বসে থেকে লাভ নেই তাই ২০০ টাকা দিয়ে তুলি আর্ট নামক একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেই।ওখানে গিয়েও প্রথমে গান শিখতে চায় না কিন্তু কয়েক সপ্তাহ যাওয়ার পর দেখলাম একটু পরিবর্তন আসছে তখন নিজে থেকেই গান তোলার চেষ্টা করে।আস্তে আস্তে গানের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে।আর এখন মোটামুটি ভালোই গান করে নিজের চেষ্টায়।সেদিন হঠাৎ করেই মেয়ে বলে যে মা তিতাস স্যার কে আবার বাসায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো স্যার অনেক ভালো গান শেখায় তাঁর কাছে আবার গান শিখতে চাই।
মেয়ের অনুরোধে তিতাস স্যারকে ফোন দেই।স্যার আমার ফোন সাথে সাথেই রিসিভ করে এবং কথা বলি।স্যারকে মেয়ের গান শেখার ইচ্ছের কথা জানাই।স্যার অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললো ঠিক আছে আমি সময় করে আপনাকে ফোন দিয়ে জানাবো।আমি ভেবেছিলাম স্যার মনে হয় গান শেখাবেন না তাই পরে জানানোর কথা বললেন।কি আর করা স্যারকে তো তখন আমি বাদ দিয়েছি তাই হয়তো স্যার মন খারাপ করতেছেন।কিন্তু না আমার ধারনা সম্পূর্ন ভুল প্রমাণিত হলো পরেরদিন বিকেলে স্যারের কল আসে এবং বলেন যে আমি সন্ধ্যায় আসবো।শুনে আমরা তো খুবই খুশি হলাম।
এতদিনে মেয়ে স্যারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে যে উনি আসলেই একজন গুণী মানুষ। তার কন্ঠে যাদু আছে তার গান শেখানোর ধরণ অনেক ভালো কিন্তু তখন বয়স কম ছিলো তাই ওনার গুরুত্ব টা বুঝতে পারেনি।এখন বয়স বুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে স্যারের গুরুত্ব টা খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারছে এতেই আমি অনেক খুশি।এখন নিয়মিত তিতাস স্যার রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখাবেন। তিতাস স্যার রেডিওতে তালিকাভুক্ত এ গ্রেডের একজন নিয়মিত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী।
আজ এখানেই শেষ করছি।সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।
আপনার ব্লগটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনার এই গল্প কিছুটা হ্যাং আউটে শুনে ছিলাম।আসলে ইচ্ছা আর বয়স অনেকটাই জরুরী কিছু করার জন্য। আপনার বড় মেয়ে শেষ পর্যন্ত গান শেখায় আগ্রহী হয়ে স্যারকে আবার আসতে বলল এটা ভালোই হয়েছে।নিজে থেকে কিছু করলে তা ভালো হয়।আজ তিতাস স্যারের গুরুত্ব নিজে বুঝে করছে তাই সামনের সবকিছুই ভালো হবে আপু।দোয়া রইলো আপনার মেয়েদের জন্য। ধন্যবাদ অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আজকে খুবই সুন্দর একটা টপিক নিয়ে পোস্ট লিখেছেন যা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনার বড় মেয়ে প্রথম প্রথম গান শিখতে চাইনি। গানের প্রতি তার কোন আকর্ষণ ছিল না প্রথমদিকে। কিন্তু পরে আস্তে আস্তে তার গানের প্রতি আকর্ষণ আসে এবং সেই স্যারকে আবারও আসতে বলেছিল। আপনার মেয়ে বুঝতে পেরেছিল তিতাস স্যার আসলেই অনেক গুণী মানুষ। আপনার মেয়ের জন্য তো সব সময় দোয়া এবং ভালোবাসা রয়েছে। তার জীবনের সেই অনেক বড় কিছুই হতে পারবে আশা করছি। হাসিখুশি ভাবে যেন আপনার মন জয় করতে পারে সেই কামনা করি।
অনেক সুন্দর একটি অনুভূতি পড়লাম পুরো লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম আসলেই বাচ্চাদের কোন স্যার কিভাবে শিখাইছে তাও অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান বদলালেন কিন্তু অবশেষে মেয়ে গান শিখতে পারছে গান তুলতে পারল অনেক আনন্দের বেশ ভালই লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ আপনার মেয়ের জন্য অনেক শুভকামনা রইল সেই যেন ভবিষ্যতে অনেক বড় একজন শিল্পী হয়।