ঈদের খুশি।শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

"হ্যালো বন্ধুরা"

সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি,সুস্থ আছি।

ঈদের খুশি

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। বছর ঘুরে যখন ঈদের দিন আসে তখন সকলের মনে বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। ঈদ সবার দরজায় কড়া নাড়লে সবাই একে অপরকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা জানায় এবং সবাই মিলে ঈদের খুশি আনন্দ উপভোগ করার দিন।আমার প্রতিবছর যেখানেই থাকি না কেনো ঈদের আনন্দ সবসময়ই উপভোগ করে থাকি।গত পর্বে আমি ঈদের খুশির কিছু মুহুর্ত শেয়ার করেছিলা আজ ঈদের খুশির আরও কিছুু মুহুর্ত শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
PhotoCollageMaker_20230702_191643260.jpg

নাজমা আপা ঈদের আগেরদিন বড় একটি খাসি এনে
সন্ধ্যায় গ্যারেজে কাটে তখন আমরা সবাই মিলে চা নাশতা খেয়ে বিষয় টি বেশ এনজয় করি।নাজমা আপার বাসায় আমি একমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী আর বাকি সবাই মুসলিম।নাজমা আপা খুব ভালো করেই জানে যে আমি ঈদের দিন কারো বাসায় খাই না। তাই আপা আগের দিন খাসি এনে কেটেছেন যাতে করে আমরা খেতে পারি।খাশি কাটার পর আপা বললেন আমার বাসায় রান্না করি তোমরা সবাই রাতে আমার বাসায় খাবে।তারপর আপা হঠাৎ করেই তার ছোট ছেলেকে বললেন নিরব তুমি কি আমার হাতের রান্না খাবে নাকি তোমার আন্টির হাতের রান্না খাবা!তখন নিরব সাথে সাথেই শুরু করে দিলো যে আজ আন্টির হাতের রান্না খাবো।আমি তো পড়ে গেলাম বিপদে,নিজের বাসায় রান্না করা এক কথা আর বাড়িওয়ালী আপার বাসায় রান্না করাটা কেমন জানি অস্বস্তি বোধ হচ্ছিলো।কি আর করা নিরবের কথা ফেলতে পারলাম না তাই রাজি হয়ে গেলাম।
IMG_20230702_211221.jpg

চা নাশতা খেয়ে আমি মেয়েরা আর তিনতলার পুলিশ ভাবি আমরা আপার বাসায় গেলাম রান্না করার জন্য।আপা আগে থেকেই পেঁয়াজ কেটে,মশলা বেঁটে রেডি করে রেখেছে।আমরা গিয়ে পুলিশ ভাবি আর আমি মিলে মাংস বেঁছে ধুয়ে পরিস্কার করে নিলাম।আপা আমাকে সবকিছু হাতের কাছে এগিয়ে দিয়ে বললেন তুমি তোমার মতো করে রান্না করো।এক চুলায় খাসির মাংস বসিয়ে দিলাম আরেক চুলায় পটল ভাজা,ডিম সিদ্ধ করে ভাজা করলাম।নাজমা আপা রাইস কুকারে ভাত বসিয়ে দিলেন। পোলাও রান্না করতে চেয়েছিলো আপা কিন্তু আমি না করেছি যে রাতের বেলা এতো তেলযুক্ত খাবার খাওয়া ঠিক না তার চেয়ে সাদা ভাত ভালো হবে।
IMG_20230702_215744.jpg

IMG_20230702_215721.jpg

IMG_20230702_215709.jpg

রান্না শেষে সবাই মিলে মেঝেতে বসে খাওয়ার আয়োজন করা হলো।ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়ার চেয়ে মেঝেতে সবাই মিলে খাওয়ার অনেক আনন্দ।তাই সবাই একে একে নিচে বসে পড়লো খাওয়ার জন্য।ওয়ানটাইম প্লেটে সবার জন্য খাবার বাড়া হলো। খাসির মাংস পটল ভাজা,ডিম,নাজমা আপার আগে থেকে রান্না করা ছোট মাছের চচ্চড়ি কাকরো আলু ভাজা সালাদ দিয়ে সবাই একসাথে বসে অনেক হাসিঠাট্টা করে খাবার খাওয়া হলো।নিরব তো খাসির মাংস এতটাই পছন্দ করেছে যে সমানে আমার রান্নার প্রশংসা করেই যাচ্ছে।আমি ওকে বললাম বাবা এবার থামো আমি কিন্তু এখন লজ্জা পাচ্ছি।🫣নিরব সবসময়ই আমার হাতের রান্না খেতে খুবই পছন্দ করে।আগে যখন আসতো তখন দিনের বেশিরভাগ সময় আমার বাসায় কাটাতো এবং আমার কাছে বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে আবদার করতো। আমিও সাথে সাথে ওর আবদার মেটানোর চেষ্টা করতাম।আপার ছেলে দুটো এতটাই ভালো যে এতো পরিমাণ টাকাপয়সা থাকার পরেও ওরা দুজন মানুষের মতো মানুষ হিসেবে তৈরি হচ্ছে।আশাকরি আগামীতে ওরা আরও অনেক ভালো মানুষ হবে।
এখন নিরব আগের থেকে একটু বড় হয়ে গেছে তাই সচারাচর আসতে লজ্জা পায়। আমার মেয়েরা নিরব কে খুবই ভালোবাসে একদম নিজের ভাইয়ের মতো।এখন মাঝে মাঝে নিরবের ছোট ছোট আবদার গুলো খুব মিস করি।
IMG_20230702_215814.jpg

IMG_20230702_220003.jpg

খাওয়াদাওয়া শেষে সব বাচ্চারা লুডু খেলা শুরু করলো তারপর আমরা সবাই মিলে টিভিতে নিরব সাকিবের বিভিন্ন রকমের ভ্লগ গুলো দেখলাম সবাই মিলে গল্প আড্ডা হাসিতামাশা আরও কতকিছু হলো।তারপর শুরু হলো সবার মেহেদী দেওয়া এভাবেই কখন যে রাত ১ টা পার হয়ে গেছে আমরা বুঝতেই পারিনি।গল্প আড্ডা শেষ করে আমরা বাসায় চলে আসলাম।ও আরেক টা কথা আসার সময় আবার নাজমা আপা অনেক গুলো কাঁচা খাসির মাংস দিয়েছে যাতে আমরা পরে খেতে পারি। আমি তো নিতে চাচ্ছিলাম না তার কারন অনেক গুলো রান্না করে খাওয়া হয়েছে আর লাগবে না।আপা বললো আগামীকাল কোরবানি দিয়ে সবাইকে মাংস দিবো তাই তোমাদের জন্য আজকে আলাদা করে খাসি কেটেছি।শুনে আমার খুবই ভালো লাগলো আপা এতো কিছুর মধ্যেও আমাদের কথা মাথায় রেখে এতোকিছুর আয়োজন করেছে যা সত্যিই অনেক ভালো লাগার মতো বিষয়।
IMG_20230702_215921.jpg

IMG_20230702_215910.jpg

একজন বাড়িওয়ালা হলে এইরকমই হওয়া উচিত যে শুধু টাকার জন্য নয় সুন্দর একটি পরিবার পরিবেশ সবকিছু রক্ষা করার মতো গুণ তার মধ্যে থাকা দরকার যা নাজমা আপার মধ্যে রয়েছে।নাজমা আপাকে আমি সবসময়ই মন থেকে শ্রদ্ধা করি।

IMG_20230702_215953.jpg

IMG_20230702_215936.jpg

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং আমাদের নাজমা আপার জন্য অনেক অনেক আশীর্বাদ দোয়া করবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

gPCasciUWmEwHnsXKML7xF4NE4zxEVyvENsPKp9LmDaFuzHVdhPxpzZmxMRjum3UCUidUNsZ38uqhr1mSb5xwkZ13qybC6Wsi14vWfTfa3THnQ53W7Lg654hm98NFkbaXeWLDoZQGBiC7pM2UN.jpeg

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovfEfMUsxphK2C94MUmPesRzxucV6L5C5WztC1e4L1hqcx2mH3BcV9oEFqiwTsErcMQNvVa4puc9hxr4N1FcnerVs (1).gif

Sort:  
 2 years ago 

নাজমা আপা ঈদের আগেরদিন তাহলে অনেক বড় একটি খাসি এনে গ্যারেজে জবাই করলেন। যাহোক আপনি খুব সুন্দর করে হাসির মাংস রান্না করেছেন। আপনার নাজমা আপুর বাচ্চা আপনার হাতে রান্না খেতে চাইলো। তবে আপনার রেসিপি দেখে বোঝা যাচ্ছে সবাই বাসার খুব মজা করে খেয়েছেন। আসলে এরকম অনুভূতিগুলো সত্যি অনেক ভালো লাগে। অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর করে রেসিপিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ঈদের আমেজ অন্য একটি পোস্ট করলেন তা আমি দেখতে পারেনি আপনার।

 2 years ago 

জ্বি ভাইয়া এরকম আনন্দের অনুভূতি গুলো সবসময়ই অনেক ভালো লাগে।অনেক সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে সবাই মিলে সব কিছু উদযাপন করলে খুব ভালো লাগে। নাজমা আপা আপনাদের জন্য খাসি নিয়ে এসেছিল। তারপরে আপনি নিজের হাতে তা রান্না করেছিলেন নিরবের আবদারে। আসলে টাকা-পয়সা থাকলে বেশিরভাগ মানুষ অহংকার করে। কিন্তু নাজমা আপা এবং তার ছেলেদের মধ্যে এরকম কিছুই নেই, তা আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম। সবাই মিলে বেশ ভালো মুহূর্ত কাটিয়েছেন সম্পূর্ণটা বেশ ভালোই উপভোগ করলাম।

 2 years ago 

জ্বি আপু একটু টাকাপয়সা হলেই মানুষ অনেক বেশি অহংকার করে কিন্তু আমাদের আপার মধ্যে কোনো অহংকার নেই।উনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আহা এত সুন্দর সুন্দর রেসিপি দেখে তো লোভ সামলানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। সেদিন অবশ্য আমি সন্ধ্যায় বাসায় গিয়েছিলাম বেড়াতে। আন্টি আমাকে থাকতে বলেছিল তবে থাকতে পারেনি। এখন আফসোস হচ্ছে কেন থাকলাম না। থাকলে আপনাদের সাথে আনন্দ করতে পারতাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.33
JST 0.034
BTC 110258.44
ETH 4278.25
USDT 1.00
SBD 0.83